দক্ষিণ এশিয়ার সার্বভৌম দেশ
(এশিয়া/ভারত থেকে পুনর্নির্দেশিত)
এশিয়া > দক্ষিণ এশিয়া > ভারত

ভারত (ইংরেজি: India; হিন্দি: भारत) দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্র। সুউচ্চ পর্বতমালা, অত্যন্ত জনবহুল শহর ও সুদীর্ঘ নদীর জন্য এই দেশ পরিচিত। এখানকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সেকাল ও একালের মেলবন্ধন। সুবিশাল ও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতে বৈচিত্র্যের সীমা নেই। জাতি, ধর্ম, ভাষা, খাদ্য, পোশাক, স্থাপত্য, সব ব্যাপারেই বৈচিত্র্য রয়েছে এই দেশে। এখানকার শতাব্দী-প্রাচীন স্থাপত্যকলা আজও একইরকম রয়ে গিয়েছে। বিশ্বায়নের কবলে পড়া বিশ্বে এধরনের দেশ পাওয়া সহজ নয় এবং এখানকার সুদীর্ঘ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেকোনো ভ্রমণকারীকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে।

প্রশাসনিকভাবে ভারত ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত এবং ভাষার ভিত্তিতে এই রাজ্যগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতের রাজ্যগুলোর আকার ভিন্ন; বড় রাজ্যগুলো আফ্রিকাদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের চেয়ে বড় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো রাজ্যের তুলনায় সাধারণত অনেক ছোট হয়, কিছুক্ষেত্রে কেবল একটি শহর নিয়ে গঠিত এবং এদের স্বায়ত্বশাসন সীমিত। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে: বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং আরব সাগরে লাক্ষাদ্বীপ

উইকিভ্রমণে ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে নিম্নলিখিত অঞ্চলে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে:

মানচিত্র
ভারতের মানচিত্র
 হিমালয় উত্তর (জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড)
পর্বতময় ও সুন্দর জায়গা, ভ্রমণপিপাসু ও আধ্যাত্মিকদের পছন্দের গন্তব্য। এই অঞ্চলে ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় শৈলশহর ও পীঠস্থান রয়েছে।
 গাঙ্গেয় সমভূমি (উত্তরপ্রদেশ, চণ্ডীগড়, দিল্লি, পাঞ্জাব, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা)
ভারতের শস্যভাণ্ডার বলে পরিচিত এই অঞ্চলের উপর দিয়ে পবিত্র গঙ্গা ও যমুনা নদী এবং তাদের উপনদী গিয়েছে। এই অঞ্চলে জাতীয় রাজধানী দিল্লি, তাজমহলের নগরী আগ্রা এবং পবিত্র নগরী মথুরা, প্রয়াগরাজ, বারাণসীগয়া-বোধগয়া রয়েছে।
 পশ্চিম ভারত (দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ, গুজরাত, গোয়া, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান)
সুবিশাল থর মরুভূমি, রাজস্থানের রঙিন প্রাসাদ ও দুর্গ, দেশের বাণিজ্য নগরী মুম্বই, অজন্তা-ইলোরার মনোমুগ্ধকর গুহা, শান্ত বনজঙ্গল, গোয়ার চিত্তাকর্ষক সৈকত, গুজরাতের গির অরণ্যের সিংহ এবং দ্রুত বর্ধনশীল আহমেদাবাদ, সুরত, জয়পুরপুণে শহর এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য।
 দক্ষিণ ভারত (অন্ধ্রপ্রদেশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, পুদুচেরি)
বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক মন্দির, ক্রান্তীয় অরণ্য, সুবিশাল হ্রদে নৌকাবিহার, সৈকত, শৈলশহর এবং চেন্নাই, বেঙ্গালুরুহায়দ্রাবাদ মহানগর এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। মহীশূর নগর তার প্রাসাদের জন্য জগদ্বিখ্যাত, বিশেষ করে মহীশূর প্রাসাদ। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন আন্দামান ও নিকোবর এবং লাক্ষাদ্বীপের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
 পূর্ব ভারত (ওড়িশা, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম)
অন্যান্য অঞ্চলের মতো উন্নত নয়, কিন্তু এর সংস্কৃতি যথেষ্ট সমৃদ্ধ। আনন্দনগরী কলকাতা, শিল্পনগরী আসানসোলজামশেদপুর, শৈলশহর গ্যাংটকদার্জিলিং এবং মন্দির নগরী কোণার্ক, পুরীভুবনেশ্বর এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। এই অঞ্চল পর্বত থেকে সমুদ্র অবধি বিস্তৃত, যার ফলে জলবায়ুর যথেষ্ট বৈচিত্র্য রয়েছে।
 উত্তর-পূর্ব ভারত (অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়)
মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চল আদিবাসী সংস্কৃতি, বন্ধুর ভূমিরূপ, স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ এবং বিখ্যাত চা বাগানের জন্য পরিচিত। কেবল মণিপুরেই বিশ্বের প্রাচীনতম পোলো মাঠ, বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান, বিশ্বের একমাত্র মাতৃতান্ত্রিক বাজার ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়া মেঘালয় তার মনোমুগ্ধকর ভূমিরূপের জন্য "ভারতের স্কটল্যান্ড" নামে পরিচিত।

নিচে ভারতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শহরের নাম দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চল নিবন্ধে আরও উল্লেখযোগ্য শহর পাওয়া যাবে।

  • 1 দিল্লি — ভারতের জাতীয় রাজধানী ও উত্তর ভারতের কেন্দ্রস্থল।
  • 2 কলকাতা — ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী, বাংলার নবজাগরণের কেন্দ্র, ইংরেজ আমলের স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।
  • 3 চেন্নাই — দক্ষিণ ভারতের মূল বন্দর, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মোটরগাড়ির নগরী।
  • 4 জয়পুর — গোলাপি শহর, মধ্যযুগীয় উত্তর ভারতের রাজপুত আমলের আকর্ষণের জন্য পরিচিত।
  • 5 বারাণসী — গঙ্গাতীরে পবিত্রতম হিন্দু শহর, বিশ্বের প্রাচীনতম নিরবিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী শহরের মধ্যে অন্যতম।
  • 6 বেঙ্গালুরু — সুন্দর উদ্যান নগরী, একদা অবসরপ্রাপ্তদের সময় কাটানো গন্তব্য ছিল। বর্তমানে এটি ভারতের অন্যতম তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) কেন্দ্র।
  • 7 মুম্বই — ভারতের বাণিজ্য নগরী, বলিউডের প্রাণকেন্দ্র, ইংরেজ আমলের আকর্ষণীয় স্থাপত্যের জন্য পরিচিত।
  • 8 শিমলা — হিমাচল প্রদেশের শীতকালীন রাজধানী, টয় ট্রেন ও হিমালয় পর্বতমালার সৌন্দর্য্যের জন্য পরিচিত।
  • 9 হায়দ্রাবাদ — নিজামের শহর, মুক্তা ও হীরার ব্যবসা এবং বিখ্যাত বিরিয়ানির জন্য পরিচিত।

অন্যান্য গন্তব্য

সম্পাদনা

ভারতে অনেক উল্লেখযোগ্য স্মৃতিস্তম্ভ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান রয়েছে। এখানে কিছু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থান তুলে ধরা হলো।

  • 1 অজন্তা2 ইলোরা — পাথরে খোদাই করা চমৎকার সব মঠ-মন্দির, আর হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনদের পীঠস্থান।
  • 3 কোণার্ক — ওড়িশার সূর্য মন্দির, কলিঙ্গ স্থাপত্যের অনন্য উদাহরণ।
  • 4 খাজুরাহো —প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায়-সহস্রাব্দ পুরনো মন্দির চত্বর, যা সেখানকার যৌন ভাস্কর্য জন্য বিখ্যাত।
  • 5 তাজমহল — উত্তর ভারতের অতুলনীয় মার্বেলনির্মিত সৌধ, বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য।
  • 6 বুদ্ধ গয়া — এখানকার মহাবোধি মন্দির চত্বরে শাক্যমুনি বুদ্ধত্ব অর্জন করেছিলেন।
  • 7 মীনাক্ষী মন্দির — দক্ষিণ তামিলনাড়ুর এক অসাধারণ বৃহৎ হিন্দু মন্দির।
  • 8 হরমন্দির সাহিব — পাঞ্জাবে শিখদের পবিত্র সোনার মন্দির।
  • 9 হাম্পি — বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অবিশ্বাস্য ধ্বংসাবশেষ।

আরও দেখুন:

অনুধাবন

সম্পাদনা
রাজধানী নয়াদিল্লি
মুদ্রা ভারতীয় টাকা (INR)
জনসংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন (2020)
বিদ্যুৎ ২৩০ ভোল্ট / ৫০ হার্জ (ইউরোপ্লাগ, টাইপ ডি, বিএস ৫৪৬)
দেশের কোড +91
সময় অঞ্চল ভারতীয় প্রমাণ সময়, Asia/Kolkata
জরুরি নম্বর 112, 100 (পুলিশ), 101 (দমকল বাহিনী), 102 (জরুরি চিকিৎসা সেবা), 108 (জরুরি অবস্থা)
গাড়ি চালানোর দিক বাম

অন্য দেশ থেকে আগত লোকদের এটা জানা উচিত যে ভারত বিভিন্ন ব্যাপারে বৈচিত্র্যপূর্ণ, অর্থাৎ আপনি এই দেশের কোনো এক জায়গায় স্থানীয়দের কাছে যা আচরণ পাবেন, তার মানে এই নয় যে আপনি অন্য জায়গায় একইরকম আচরণ পাবেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করার জন্য ধৈর্য ও ভাগ্যের প্রয়োজন, আর কোনোভাবেই মনে করবেন না যে আপনি ভারতের সবকিছু জানেন; প্রতিদিন নতুন চমকের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকুন।

রাজনীতি

সম্পাদনা

বাংলাদেশের মতো ভারতও একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র ও গণতন্ত্র। রাষ্ট্রপতি ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেও তাঁর ক্ষমতা সীমিত। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা সরকার পরিচালনা করে। ভারতীয় সংসদ দুই কক্ষ নিয়ে গঠিত। নিম্নকক্ষ লোকসভা সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কিন্তু উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত। এর মধ্যে লোকসভা বেশি ক্ষমতাশালী, কারণ সরকার গঠন ও বাজেট অনুমোদনের জন্য লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন এবং প্রথা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সদস্য। ভারত যেন রাজনৈতিক দলের অরণ্য। হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার গঠন করে এবং মধ্যবামপন্থী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (বা শুধু "কংগ্রেস") এর প্রধান বিরোধী দল। ভারতের স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থা এবং স্বাধীন গণমাধ্যম রয়েছে।

ভারত বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটি সংঘ, এবং প্রত্যেক রাজ্যেরই নিজস্ব আইনসভা, মন্ত্রিসভা ও বিচার বিভাগ রয়েছে।

যেকোনো গণতন্ত্রের মতোই ভারতের রাস্তায় প্রতিবাদ, ধর্মঘট, মিছিল ইত্যাদি হয়। এছাড়া মূলত পশ্চিমবঙ্গকেরল রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসাকাণ্ড দেখতে পাওয়া যায়, এবং পর্যটকদের সেখান থেকে বিরত থাকাই ভালো।

সময় অঞ্চল

সম্পাদনা

ভারতীয় প্রমাণ সময় (আইএসটি) সর্বজনীন সমন্বিত সময় (ইউটিসি) থেকে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট এগিয়ে এবং বাংলাদেশ মান সময় (বিএসটি) থেকে ৩০ মিনিট পিছিয়ে। গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সময় একই।

কথাবার্তা

সম্পাদনা
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সড়কে ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলা ভাষায় একটি ত্রিভাষিক ফলক।

কেন্দ্রীয় স্তরে হিন্দিইংরেজি ভারতের সরকারি ভাষা। ভারতের বেশিরভাগ জনগণ বহুভাষিক এবং অনেকেই একের বেশি ভাষা ব্যবহার করেন।

ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৪০–৫০% হিন্দি ভাষায় কথা বলেন এবং এটি উত্তর ও মধ্য ভারতের সাধারণ ভাষা হিসাবে কাজ করে। তবে দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্যের জন্য জাতীয় স্তরে হিন্দি ভাষার ব্যবহার অনেকসময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। দক্ষিণউত্তর-পূর্ব ভারতে হিন্দি তেমন প্রচলিত নয়।

ইংরেজি ভাষা মূলত শহরের মধ্যে প্রচলিত এবং এটি শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাথমিক ভাষা। এটি সমগ্র দেশের সাধারণ ভাষা হিসাবে কাজ করে। ইংরেজি ভাষা জানা থাকলে আপনি ভারতের বহু জায়গায় ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে এই দেশে বেশিক্ষণ থাকার জন্য এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য সেখানকার স্থানীয় ভাষা শেখা উচিত।

ভারতের আঞ্চলিক সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা, অসমীয়া, উর্দু, ওড়িয়া, কন্নড়, গুজরাটি, তামিল, তেলুগু, পাঞ্জাবি, মারাঠি, সংস্কৃত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ভারতে বাংলা ভাষা মূলত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাআসামের বরাক উপত্যকায় প্রচলিত। তবে ওড়িশার অনেক স্থানীয় বাংলা ভাষা বুঝতে পারেন এবং ভারতের অনেক বাঙালি ছুটি কাটানোর জন্য ওড়িশায় যান।

প্রবেশ

সম্পাদনা
ভ্রমণ সতর্কতা ভিসা-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ:
ভারতের কিছু রাজ্যে ভ্রমণের জন্য অনুমতিপত্রের প্রয়োজন। আফগানিস্তান, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশমিয়ানমারের নাগরিক ও প্রাক্তন নাগরিকরা সাধারণত এই অনুমতিপত্রের যোগ্য নন। আপনাকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে।

এইসব এলাকায় ভ্রমণ করার পরিকল্পনা থাকলে ভারতীয় ভিসার আবেদন করার সময় আপনাকে উপযুক্ত অনুমতিপত্র আবেদন করতে হবে এবং যাচাই করা হলে অনুমতিপত্রকে আপনার ভিসার সঙ্গে যোগ করা হবে। তবে এটি সহজে প্রাপ্য ইটিএ বা ই-ভিসার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়, কেবল সাধারণ ভিসার ক্ষেত্রেই সম্ভব।

নাগরিকত্বের উপর ভিত্তি করে ভিসার নিয়ম এবং বৈধতা ভিন্ন হয়ে থাকে। নেপালভুটানের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতে প্রবেশ করতে এবং বসবাস করতে পারেন।

আকাশপথে

সম্পাদনা
দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতের এক অন্যতম প্রবেশ বিন্দু।

আকাশপথে কলকাতা (CCU আইএটিএ), চেন্নাই (MAA  আইএটিএ), দিল্লি (DEL  আইএটিএ), বেঙ্গালুরু (BLR  আইএটিএ), মুম্বই (BOM  আইএটিএ) ও হায়দ্রাবাদ (HYD  আইএটিএ) ভারতের প্রধান প্রবেশ বিন্দু। এই শহরগুলোর বিমানবন্দর হয় নতুন, না হয় উন্নয়নের অধীন। আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ওশেনিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে এইসব শহরে অনেক সরাসরি উড়ান পরিষেবা রয়েছে।

রেলপথে

সম্পাদনা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি রেল পরিষেবা রয়েছে; যেমন মৈত্রী এক্সপ্রেস (ঢাকাকলকাতা), বন্ধন এক্সপ্রেস (খুলনা–কলকাতা) ও মিতালী এক্সপ্রেস (ঢাকা–নিউ জলপাইগুড়ি)।

সড়কপথে

সম্পাদনা

বাংলাদেশ থেকে

সম্পাদনা

সড়কপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার বিভিন্ন প্রবেশ বিন্দু রয়েছে। এর মধ্যে বেনাপোল চেকপোস্টের মাধ্যমে ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত ও আরামদায়ক বাস পরিষেবা সবচেয়ে প্রচলিত উপায়।

বেনাপোল চেকপোস্ট
সম্পাদনা
আরও দেখুন: বেনাপোল

ঘুরে দেখুন

সম্পাদনা

ভারত এক সুবিশাল দেশ এবং এখানে চারিদিকে ঘুরে বেড়ানোর বিভিন্ন উপায় আছে। তবে উত্তর-পূর্বের বেশিরভাগ অঞ্চল (আসাম ব্যতীত), আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, সিকিম এবং উত্তরাখণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, লাক্ষাদ্বীপ, লাদাখহিমাচল প্রদেশের কিছু জায়গায় ভ্রমণ করার জন্য প্রটেক্টেড এরিয়া পারমিট (পিএপি) বা ইনার লাইন পারমিটের (আইএলপি) প্রয়োজন, নিচে দেখুন। তবে সাধারণ ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে এই অনুমতিপত্রগুলো পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ভারতীয় ভিসা আবেদন করার সময় সেই অনুমতিপত্রগুলোর আবেদন করা এবং এগুলো আপনার ভিসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে, যা ইটিএ বা ই-ভিসার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। নাহলে আপনাকে স্থানীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে (অর্থাৎ জেলাশাসক কার্যালয়) যেতে হবে এবং আমলাতন্ত্রের ফাঁদে পড়ে থাকতে হবে। অনেকসময় ভ্রমণ সংস্থা এই অনুমতিপত্রগুলোর ব্যবস্থা করে দেবে, তবে তাদের সঙ্গে ভ্রমণ বুক করা শর্তসাপেক্ষ। ভারতীয় নাগরিকরা অনলাইনে এইসব আবেদনপত্রের আবেদন করতে পারেন।

আকাশপথে

সম্পাদনা
ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দর

ভারতের সুবিশাল আকার ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তাঘাটের জন্য আকাশপথে ভ্রমণ করা এক ভালো উপায়, বিশেষ করে বিমানের ভাড়া গত কয়েক বছরে কমে এসেছে। এমনকি ভারতের সবচেয়ে দূরবর্তী পাহাড় ও দ্বীপেও বিমান পরিষেবা রয়েছে। গত কয়েক বছরের বিমানচালনা বিপ্লবের জন্য বিমানবন্দরগুলো এত বিমান নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ভারতের বেশিরভাগ বিমানবন্দরে কেবল একটি রানওয়ে ও কয়েকটি বোর্ডিং গেট রয়েছে। বিশেষ করে দিল্লি ও মুম্বইতে চেক-ইন ও নিরাপত্তা লাইন অনেক লম্বা হতে পারে। বেঙ্গালুরু ও হায়দ্রাবাদের বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক পরিষেবা রয়েছে। দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম টার্মিনাল।

উত্তর ভারতে, বিশেষ করে দিল্লিতে বড়দিন ও জানুয়ারির সময়কার ধোঁয়াশা বিমান পরিষেবায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে প্রচণ্ড দেরি হতে পারে। আকাশপথে সমভূমি থেকে পাহাড়ে পৌঁছনো (যেমন দিল্লি থেকে লেহ) সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ হয়।

রেলপথে

সম্পাদনা
আরও দেখুন: ভারতে রেল ভ্রমণ

ভারতের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান ঘুরতে গেলে এমনকি ৬ মাসের পরিকল্পনাও যথেষ্ট নয়। সারসংক্ষেপ তো দূর, একটা সম্পূর্ণ বইয়ের মাধ্যমেও ভারতের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানকে তুলে ধরা যায় না। প্রায় প্রত্যেকটি রাজ্যে দশের অধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, এবং সেখানে এমন এমন শহর আছে যা এক সপ্তাহের মধ্যেও উপভোগ করা যায় না। দেশটা ঘুরলে মনে হবে যে ভারত একক রাষ্ট্র নয়, বরং একাধিক পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের সমাহার। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের চেয়েও জনবহুল।

যাইহোক, নিচে ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানের উল্লেখ করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক স্থাপত্য

সম্পাদনা
দিল্লির লালকেল্লা

সম্ভবত আগ্রার তাজমহল ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণ এবং এটি ভারতের ইসলামি শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে বিবেচিত। এছাড়া এটি "বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য" হিসাবেও পরিচিত।

কুতুব মিনারলালকেল্লা দিল্লির দুই সবচেয়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপত্য।

রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর "গোলাপি শহর" নামে পরিচিত এবং এখানে একাধিক প্রাসাদ ও দুর্গ রয়েছে, যেমন আমের দুর্গ, জলমহলহাওয়ামহল

বিহারের নালন্দাবিক্রমশিলায় প্রাচীন বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়, যা তৎকালীন ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার প্রতীক।

একটু অন্যরকম ও আরও আধুনিক ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য আপনি আহমেদাবাদের গান্ধী আশ্রমে ঢুঁ মারতে পারেন, যা মহাত্মা গান্ধী নিজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং সেখানে গান্ধী সম্পর্কিত সবকিছু রয়েছে।

ধর্মস্থান

সম্পাদনা
বেঙ্কটেশ্বর মন্দির, তিরুপতি

ভারতের আকর্ষণীয় মন্দিরগুলো ভ্রমণ না করলে দেশ ভ্রমণ সম্পূর্ণ হবে না। দেশের প্রত্যেক এলাকা মন্দিরে পরিপূর্ণ। দেশে এমন এমন শহর রয়েছে যা মন্দিরে পরিপূর্ণ বা মন্দিরের জন্য পরিচিত এবং এগুলো "মন্দির নগরী" নামে পরিচিত। ভারতের উল্লেখযোগ্য মন্দির নগরীর মধ্যে অম্বিকা কালনা, জম্মু, তিরুপতি, বারাণসী, বিষ্ণুপুর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে বিষ্ণুপুর পোড়ামাটির মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির (শিবমন্দির) ও তিরুপতির বেঙ্কটেশ্বর মন্দির (বিষ্ণু মন্দির) দেশের গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থানের মধ্যে অন্যতম, এবং সেখানে হিন্দু ব্যতীত অন্যের প্রবেশাধিকার নেই। মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দির চত্বর হাজার বছর পুরনো মন্দিরের দেওয়ালের নকশার জন্য বিখ্যাত। এছাড়া তামিলনাড়ুর চোল যুগের মন্দিরগুলো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে চিহ্নিত।

হিন্দুধর্মের পর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হচ্ছে ইসলাম এবং মুসলিম শাসকরা কয়েকশো বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাসন করে গিয়েছে। যার ফলে আপনি মন্দিরের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চিত্তাকর্ষক মসজিদও দেখতে পাবেন। এর মধ্যে দিল্লির সুবিশাল জামে মসজিদের নাম উল্লেখযোগ্য, যা সপ্তদশ শতাব্দী থেকে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এছাড়া দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদে ঐতিহাসিক চারমিনারমক্কা মসজিদ রয়েছে।

মসজিদ ও হিন্দু মন্দির ছাড়াও পাঞ্জাবের অমৃতসরে শিখধর্মের সদর স্বর্ণ মন্দির রয়েছে। লাদাখের লেহ ও তার আশেপাশের জায়গায় একাধিক চিত্তাকর্ষক বৌদ্ধ মন্দির ও মঠ রয়েছে।

ভৌগোলিক আকর্ষণ

সম্পাদনা

ভারতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। দেশের উত্তরে রয়েছে হিমালয় পর্বতমালা, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী। এছাড়া হিমালয় থেকে দূরবর্তী অনেক রাজ্যে পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতে শৈলশহর রয়েছে, যারা নিজেরাই এক একটি আকর্ষণ। একদা রাজা-মহারাজা, পরে ইংরেজরা এবং এখন গরমের সময় পর্যটকদের কাছে এই শৈলশহরগুলো বিখ্যাত। এদের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর বৃহত্তম এবং পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং চা বাগান, টয়ট্রেন, ঐতিহাসিক ভবন ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া উটি, গ্যাংটকশিমলা অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শৈলশহরের উদাহরণ।

ভারত "নদীমাতৃক দেশ" হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতিলাভ করেছে। ভারতের বিভিন্ন নদীর মধ্যে কিছু নদীকে পবিত্র হিসাবে মনে করে হয়, কিন্তু এর মধ্যে গঙ্গা নদী কেবল পবিত্র জলধারাই নয়, বরং এটি ভারতের শস্যভাণ্ডার গাঙ্গেয় সমভূমির মেরুদণ্ড এবং ধার্মিক স্নান, আরতি ও অন্ত্যেষ্টির কেন্দ্র।

বিদেশিদের জন্য ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অনেক কিছু শেখা যায়। এমনকী দেশের একপ্রান্তের লোকেরা অন্যপ্রান্তে এসে অনেক নতুন কিছু জানতে পারে। দেশে এমন শহর বা অঞ্চল রয়েছে যা কোনো কিছুর জন্য জনপ্রিয়।

ভারতে প্রচুর উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে, তবে তার মধ্যে বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অত্যন্ত কম। বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিম্নরূপ:

  • ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান (আইআইটি) (ইংরেজি: Indian Institute of Technology (IIT), হিন্দি: भारतीय प्रद्योगिकी संस्थान)
  • ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) (ইংরেজি: Indian Indtitute of Management (IIM), হিন্দি: भारतीय प्रबंधन संस्थान)
  • জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় (এনএলইউ) (ইংরেজি: National Law University (NLU))

উচ্চমানের শিক্ষার জন্য উচ্চাভিলাষী ছাত্রছাত্রীরা এইসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে, তবে তাদের ভর্তি পরীক্ষাগুলো অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক, আর কেবল হাতেগোনা ছাত্রছাত্রীরাই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তাহলেও সেখানে দেশবিদেশের অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে ও স্নাতক হয়।

তবে প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াও সেখানে হিন্দি ও সংস্কৃত শেখার জন্য পণ্ডিত, আর আরবি, উর্দু ও ফার্সি শেখার জন্য মোল্লা রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন নামকরা ওস্তাদজির কাছ থেকে ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিম নিতে পারেন। ধর্ম, দর্শন, রান্না, নাচ-গান, যাই আপনাকে আকর্ষিত করুক না কেন, ভারতে এইসবের এক বৃহৎ ভাণ্ডার রয়েছে।

মুদ্রা

সম্পাদনা

সম্প্রতি অপ্রচলিত টাকা

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য হলুদ রঙের ৫০০ টাকা ও লাল রঙের ১০০০ টাকার নোট শীঘ্রই বাতিল করা হয়েছিল। ৫০০ টাকার নতুন নোট ধূসর রঙের, আর ১০০০ টাকার নোট এখনও প্রচলিত নয়। আপনার কাছে এখনও এই পুরনো নোটগুলো থাকলে এগুলো আপনি বিনিময়ের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কেউ নিচের দুই নোটের মধ্যে কোনো একটি নোট আপনাকে ধরাতে চায় তাহলে আপনি সেই নোট গ্রহণ করবেন না


ভারতীয় টাকা (প্রতীক: ₹, কোড: INR) দেশের জাতীয় মুদ্রা। বাংলা, অসমীয়া ও মৈথিলীতে মুদ্রাটির নাম একইরকম হলেও হিন্দিসহ বহু ভারতীয় ভাষায় এটি "रुपया" (রুপইয়া) (বহুবচন: रुपये রুপইয়ে) বা অনুরূপ নামে পরিচিত। এক টাকা সমান ১০০ পয়সা, যদিও ভারতে কেবল ৫০ পয়সাই প্রচলিত। ২০১০ সালের জুলাইতে ভারতীয় টাকার ₹ প্রতীকটি চালু করা হয়েছে এবং সেটি বহু জায়গায় প্রচলিত। তবে ইংরেজি ভাষায় এখনও কেউ কেউ টাকা বোঝানোর জন্য আগেকার Rs (একক টাকার জন্য Re) প্রতীক ব্যবহার করে। এছাড়া মূল্যের শেষে "/-" যোগ করলেও টাকা বোঝায়, যেমন "৫০০/-"। তবে অনেক ভারতীয় ভাষায় কোনো বিশেষ প্রতীক ব্যবহার না করে মূল্যের শেষে কেবল "টাকা" (বা অনুরূপ) যোগ করা হয়।

ভারতীয় টাকার নোটের একাধিক একক রয়েছে, যেমন ₹১ (বিরল), ₹৫ (সবুজ, আর মুদ্রণ করা হয় না), ₹১০ (কমলা-বেগুনি অথবা বাদামি), ₹২০ (লালাভ কমলা অথবা সবুজাভ হলুদ), ₹৫০ (বেগুনি অথবা প্রতিপ্রভ নীল), ₹১০০ (সবুজাভ নীল অথবা ফ্যাকাসে বেগুনি) এবং ₹৫০০ (ধূসর)।

এছাড়া টাকা ও পয়সার ধাতব মুদ্রাও প্রচলিত, যেমন ৫০ পয়সা (বিরল), ₹১, ₹২, ₹৫, ₹১০ (হলুদ বলয় ও মাঝে ইস্পাত রং) ও ₹২০ (ইস্পাত রঙের বলয় ও মাঝে হলুদ)। চা-বিস্কুট কেনা (₹৫ থেকে ₹১০), বাস বা রেলগাড়ি ভাড়া দেওয়া (₹২ থেকে ₹১৫) কিংবা রিকশাচালকের সঙ্গে সঠিকভাবে টাকা ভাঙানোর জন্য ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করা যায়।

টাকা ভাঙানো

সম্পাদনা

ভারতে টাকা ভাঙানোর সময় দোকানে দোকানিদের অনেকসময় কাগুজে বা ধাতব মুদ্রার অভাব দেখা দেয়। অনেক দোকান ডিজিটাল লেনদেনের জন্য কিংবা টাকা নিরাপদে রাখার জন্য দোকানে টাকা কম রাখা হয়। তাই হাতের কাছে একাধিক ছোট নোট থাকা ভালো, আর ছোট নোট (₹৪০-₹৫০) ও বড় নোট আলাদা করতে পারলে আরও ভালো। এছাড়া আপনি দোকানিকে জজ্ঞাসা করতে পারেন যে তার কাছে ভাঙানোর টাকা আছে কি না।

বাস কন্ডাক্টর, ডাকঘর বা ব্যাংকে টাকা ভাঙালে সবচেয়ে ভালো, তারা যেকোনো বড় নোট গ্রহণ করবে। এছাড়া ফল-সবজি বিক্রেতাদের কাছেও ভাঙানোর টাকা থাকতে পারে।

এছাড়া ছেঁড়া বা টেপ দেওয়া কোনো নোট গ্রহণ করবেন না। সাধারণত রাস্তার বিক্রেতারা ভালো নোট দিতে পারবে কিন্তু অনেকের কাছে ভাঙানোর টাকা নাও থাকতে পারে, যা আগেই বলা আছে।

অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম)

সম্পাদনা
এটিএম কখনও পৃথক ভবন হিসাবে কিংবা একই ভবনের পৃথক কক্ষে থাকতে পারে।

বেশিরভাগ এটিএমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা অবধই লেনদেন করা যায়। টাকা তোলার সময় আপনি সাধারণত কেবল ৫০০ টাকার নোটই পাবেন। ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (এসবিআই) ভারতের বৃহত্তম ব্যাংক আর বেশিরভাগ এটিএম-ই স্টেট ব্যাঙ্কের। এছাড়া আইসিআইসিআই ব্যাংকের একাধিক এটিএম রয়েছে আর স্বল্প টাকার বিনিময়ে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক কার্ড গ্রহণ করে। ভারতের প্রধান প্রধান শহরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংকের শাখা রয়েছে, যেমন সিটিব্যাংক, এইচএসবিসি, ডয়চে ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।

সে যে ব্যাংকই হোক না কেন, অন্তত দুটি ভিন্ন ব্যাংকের জন্য আলাদা ক্রেডিট, ডেবিট বা অন্য কোনো ব্যাংক কার্ড রাখা ভালো, কারণ আপনার ব্যাংক আপনার কোনো একটি কার্ড সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে কিংবা কোনো একটি কার্ড কোনো বিশেষ এটিএম-এ কাজ নাও করতে পারে।

স্টেট ব্যাঙ্ক, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (পিএনবি), কানাড়া, ইউনিয়ন, এইচডিএফসি, বরোদা, সেন্ট্রাল, আইডিবিআই, ডিসিবি ও এইচএসবিসি ব্যাংকের এটিএম-গুলোতে টাকা তোলার বিনিময়ে কোনো ফি দিতে হবে না। কার্ডের ধরন, আপনার ব্যাংক শাখার অবস্থান অথবা কখনও কখনও আপনি যে এটিএম ব্যবহার করেন তার উপর ফি নির্ভর করে। আগে ব্যবহার করা হয়নি এমন এটিএম ব্যবহার করার সময় ফি দেখে নেবেন। এছাড়া ভিন্ন কার্ড দিয়ে একই এটিএম ব্যবহার করলেও একই জিনিস করবেন।

ফি ও লেনদেনের সীমা (নভেম্বর ২০২৪)
ব্যাংকফিলেনদেনের সীমা
ব্যাঙ্ক অব বরোদা নেই₹১০,০০০
সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক নেই₹১০,০০০
কানাড়া ব্যাঙ্ক ₹০-₹২০০₹১০,০০০
ডিসিবি ব্যাংক নেই₹১০,০০০
এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক ₹০-₹২০০₹১০,০০০
এইচএসবিসি ব্যাংক নেই₹১০,০০০
আইডিবিআই ব্যাংক নেই₹১০,০০০
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ₹০-₹১৫০₹১০,০০০
ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক ₹০-₹২৫০₹১০,০০০
ইউনিয়ন ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নেই₹১০,০০০
সিটিব্যাংক ₹২০০₹১০,০০০
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক ₹২০০₹১০,০০০
ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক ₹২০০₹১০,০০০
কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক ₹২০০₹১০,০০০
ফেডারেল ব্যাংক ₹২৩৮₹১০,০০০
অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ₹৩০০₹১০,০০০
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ₹৩৩৫₹১০,০০০

ক্রেডিট কার্ড ও ডিজিটাল লেনদেন

সম্পাদনা

অনেক ছোটবড় শহরের দোকান ও রেস্তোরাঁ ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করে, তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সাধারণত ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করে না।

মোবাইলে পেটিএম, ফোনপে, গুগল পে ইত্যাদি মোবাইল পেমেন্ট অ্যাপগুলো ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় আর এগুলো "ইউপিআই" (ইউনাইটেড পেমেন্ট ইন্টারফেস) নামক জাতীয় ডিজিটাল লেনদেন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। প্রায় সমস্ত দোকানই এরকম ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ করে, এমনকী টিনের চালের দোকান কিংবা রাস্তায় ভবঘুরে বিক্রেতারাও। এক্ষেত্রে আপনাকে কিউআর কোড স্ক্যান করে প্রাপককে প্রয়োজনীয় টাকা দিতে হবে। এর ফলে টাকা ভাঙানোর সমস্যা না থাকলেও ডিজিটাল লেনদেন করতে গেলে ভারতীয় ফোন নম্বর (+৯১ দিয়ে শুরু) ও ভারতীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগবে।

বিদেশি মুদ্রা ভাঙানো

সম্পাদনা

ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রা ভাঙানো দপ্তরে আপনি বিদেশি মুদ্রাকে ভারতীয় টাকায় রূপান্তরিত করতে পারেন।

তবে ভারতীয় টাকা সরকারিভাবে রূপান্তরযোগ্য নয়; ভারতীয় টাকা নিয়ে বিদেশিরা দেশের ভিতরে বা বাইরে যেতে পারবে না, আর ভারতীয় নাগরিকরা সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা নিয়ে দেশের ভিতরে বা বাইরে যেতে পারবে। বিদেশে ভারতীয় টাকা বিনিময় হার অনেকসময় ভালো হয় না, যদিও দুবাইসিঙ্গাপুরের মতো বহুজাতিক জায়গায় ভারতীয় টাকা বিনিময় হার ভালো হয়।

সাশ্রয়ী

সম্পাদনা

ভারতে সাশ্রয়ী ভ্রমণ খুবই সহজ। এখানকার হোটেলের খরচ কম করে ২০০–৮০০ টাকা হয়, যদিও এরকম সস্তা হোটেলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি থাকবে না। হোস্টেলের খরচ ১৫০ টাকা থেকে শুরু আর তা সাধারণত ৩০০–৫০০ টাকা হয়। গোয়ার কম খরচের কোনো গন্তব্যে সৈকতবর্তী হোটেলের দাম রাত পিছু ৮০০ টাকা। ৩০ টাকায় রাস্তার খাবার খাওয়া যায়, যদিও রেস্তোরাঁতে এরকম খাবারের খরচ ১০০–২০০ টাকা হতে পারে। দূরত্ব অনুযায়ী রাতের বাস ও রেলগাড়ির ভাড়া ৩০০–৫০০ টাকা। কিছু সরকারি বাসের ক্ষেত্রে তা অর্ধেক হতে পারে, যদিও সেখানে কেবল আসন থাকবে আর ভ্রমণও অস্বস্তিকর হবে। নিয়মিত বাসের ভাড়া কিলোমিটার পিছু ২ টাকা, আর ৩–৪ ঘণ্টার স্বল্প দূরত্বের বাস ভাড়া ২০০ টাকা বা তার বেশি।

এছাড়া পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করলে অনেক টাকা সাশ্রয় করা যায়। এছাড়া অনেক দর্শনীয় স্থান বিনামূল্যে, আর মন্দির-মসজিদে ঘুরে বেড়ানো ও বই পড়ার দাম নামমাত্র।

ঋষিকেশ বা অমৃতসরে ন্যূনতম দৈনিক খরচ নিম্নরূপ:

  • রাত্রিযাপন: ০–২০০ টাকা (হোস্টেল)
  • আহার: ৩৫০ টাকা (২টি পূর্ণ আহার, ফল)
  • পানীয়: ১০০ টাকা (চা, জল, মৃদু পানীয়)
  • পরিবহন: ১০০–২০০ টাকা
  • মোট: মাথাপিছু ৪০০–৮০০ টাকা

জাঁকজমকপূর্ণ

সম্পাদনা

এবার আপনি ট্যাক্সি ভ্রমণ, তিনতারা বা তার উচ্চ হোটেলে থাকা, আড়ম্বরপূর্ণ খাওয়াদাওয়া যোগ করুন, তাহলে আপনার দৈনিক খরচ বেড়ে হবে মাথাপিছু ৪,০০০–৮,৫০০ টাকা। পেটিভি, এসি ও কখনও কখনও ফ্রিজ-সহ এক ভালো রুমের ভাড়া ২,০০০–৫,০০০ টাকা। কোনো ভালো খাবারের খরচ ৪০০ টাকা। ট্যাক্সি বা রিকশার ভাড়া কিলোমিটার পিছু ২০–৩০ টাকা। প্রধান শহরে কিলোমিটার পিছু ২০–২৫ টাকা ভাড়ায় রেডিও ট্যাক্সি পাওয়া যায়, আর সেখানে জিপিএস ও এসি থাকবে, আর পেমেন্টের জন্য ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড গ্রহণ করবে। তাহলে জাঁকজমকপূর্ণ দৈনিক খরচ নিম্নরূপ:

  • রাত্রিযাপন: ২,৫০০–৫,৫০০ টাকা প্রতি দিন
  • আহার: ১,২৫০–১,৩০০ টাকা প্রতি দিন
  • পরিবহন: ট্যাক্সি ও বাস মিলে ১,৬৫০–১,৭০০ টাকা
  • মোট: একক ব্যক্তির জন্য প্রায় ৫,০০০ টাকা, দম্পতির জন্য প্রায় ৭,৬০০ টাকা

বাংলাদেশের আশেপাশের ভারতীয় রাজ্যের খাদ্যাভ্যাস একইরকম হলেও অন্যান্য রাজ্যের খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই আলাদা। ভারতীয় খাবার অনেকসময় মশলাদার হয়, আর সবুজ লংকা বা লাল লংকার গুঁড়ো আপনার চোখে পানি/জল আনতে পারে। এমনকী কর্নফ্লেক্স বা মিঠাই মশলাদার হতে পারে। তবে মশলার ব্যবহার অঞ্চলভেদে ভিন্ন। অন্ধ্রপ্রদেশের খাবারের ঝাল ভয়ঙ্কর, আবার গুজরাতের খাবারে তেমন ঝাল নেই, যদিও সুরতের খাবারে ঝাল রয়েছে।

স্থানীয় খাবার উপভোগ করতে গেলে আস্তে আস্তে করে শুরু করতে হবে, তাড়াহুড়োর কিছু নেই। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনি মশলাদার খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। রেস্তোরাঁয় মশলাহীন খাবার খেতে চাইলে তা বলে দেবেন। তবে মনে রাখবেন যে "মশলাদার" মানেই কিন্তু লংকার প্রাচুর্য নয়, ভারতের খাবারে সুনিপুণভাবে বিভিন্ন মশলার সঙ্গে আদা-রসুনের মতো সুগন্ধি উপকরণ ব্যবহার করে।

উত্তর ভারত

সম্পাদনা
Chuni roti

গমভাণ্ডার হিসাবে পরিচিত উত্তর ভারতে হরেক প্রকারের রুটি রয়েছে, যেমন চাপাটি, পরোটা, নান, পুরি ইত্যাদি। ভারতের বেশিরভাগ হিন্দিভাষী এলাকায় রুটি, ভাত ও ডালের প্রচলন রয়েছে, যা বিভিন্নরকম উপায়ে প্রস্তুত করা হয় আর স্বাদে মশলাদার করা হয়। এছাড়া মূল খাবারের পাশে ঝালযুক্ত "রায়তা" (দই, লাউ, কুমড়ো ইত্যাদি নিয়ে প্রস্তুত ব্যঞ্জন) আর হয় চাটনি কিংবা আচার দেওয়া হবে।

উত্তর ভারতজুড়ে একাধিক আঞ্চলিক খাবারদাবার রয়েছে। সেখানে "তন্দুরি চিকেন" খুবই জনপ্রিয়, যা দেশ বিভাজনের সময় পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আগত ব্যক্তিরা চালু করেছিল।

পানীয়

সম্পাদনা

রাত্রিযাপন

সম্পাদনা

নিরাপদ থাকুন

সম্পাদনা

সুস্থ থাকুন

সম্পাদনা

শ্রদ্ধা

সম্পাদনা

মোকাবেলা

সম্পাদনা