রাজ্য হিসাবে ভারত দ্বারা শাসিত অঞ্চল
অরুণাচল প্রদেশের জেলা মানচিত্র

অরুণাচল প্রদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতে অবস্থিত ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। এর দক্ষিণে ভারতের অঙ্গরাজ্য অসম, পশ্চিমে ভুটান, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে গণচীন, এবং পূর্বে মিয়ানমার। অরুণাচল প্রদেশের আয়তন ৮৩,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার। গণচীন অঙ্গরাজ্যটির অংশবিশেষ নিজেদের বলে দাবী করেছে। এর রাজধানী ইটানগর

অরুণাচল প্রদেশের ভূপ্রকৃতি দক্ষিণে পাহাড়ের পাদদেশীয় এলাকা দিয়ে শুরু হয়ে ক্ষুদ্রতর হিমালয় পর্বতমালায় উপনীত হয়েছে এবং সেখান থেকে উত্তরে তিব্বতের সাথে সীমান্তের কাছে বৃহত্তর হিমালয় পর্বতমালায় মিশেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ (এখানে সিয়াং (Dihang)নামে পরিচিত) ও তার বিভিন্ন উপনদী তিরাপ, লোহিত, সুবর্ণসিড়ি ও ভারেলি এখানকার প্রধান নদনদী। দক্ষিণের পাহাড়ের পাদদেশীয় এলাকার জলবায়ু উপক্রান্তীয় প্রকৃতির। পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। বার্ষিক ২০০০ থেকে ৪০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। অঙ্গরাজ্যটির উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজীবনে এর বিচিত্র ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। এখানে ৫০০-রও বেশি প্রজাতির অর্কিড গাছ আছে। বিস্তৃত অরণ্য উপক্রান্তীয় থেকে শুরু করে আল্পীয় ধরনের হতে পার। প্রাণীর মধ্যে বাঘ, চিতাবাঘ, হাতি, লাল পান্ডা এবং হরিণ উল্লেখযোগ্য।

ইতিহাস

সম্পাদনা

হিন্দু পুরাণে অঞ্চলটির উল্লেখ পাওয়া গেলেও এর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। ১৬শ শতকে অসমের রাজারা এর কিছু অংশ দখলে নিয়েছিলেন। ১৮২৬ সালে অসম ব্রিটিশ ভারতের অংশে পরিণত হয়, কিন্তু ১৮৮০-র দশকের আগ পর্যন্ত অরুণাচল প্রদেশকে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আনার কোন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি। ১৯১২ সালে অঞ্চলটি আসামের একটি প্রশাসনিক অঞ্চলে পরিণত হয় এবং এর নাম দেয়া হয় নর্থ ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার ট্র‌্যাক্ট (North Eastern Frontier Tract সংক্ষেপে NEFT)। ১৯৫৪ সালে এটির নাম বদলে North East Frontier Agency রাখা হয়। ১৯১৩ সাল থেকেই উত্তরে তিব্বতের এর সীমান্ত নিয়ে বিবাদ রয়েছে। ব্রিটিশেরা হিমালয়ের শীর্ষরেখাকে সীমান্ত হিসেবে প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু চীনারা তা প্রত্যাখান করে। এই প্রস্তাবিত রেখাটি ম্যাকমাহন রেখা (McMahon line) নামে পরিচিত এবং বর্তমানে এটিই কার্যত ভারত চীন সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৪৭ সালে চীন প্রায় সম্পূর্ণ অরুণাচল প্রদেশের উপর কর্তৃত্ব দাবী করে। ১৯৫৯ ও ১৯৬২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে চীনা সেনারা বেশ কয়েকবার ম্যাকমাহন রেখা অতিক্রম করে ও সাময়িকভাবে ভারতের সীমান্ত ঘাঁটিগুলি দখল করে। ১৯৬২ সালে চীন অরুণাচল প্রদেশ থেকে পশ্চাদপসরণ করে। এরপর বহুবার সীমান্ত বিবাদটি সমাধানের চেষ্টা করা হলেও আজও কোন সমঝোতা হয়নি। ১৯৭২ সালে অঞ্চলটি অরুণাচল প্রদেশ ইউনিয়ন অঞ্চলে পরিণত হয় এবং ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে একে পূর্ণাঙ্গ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়।

পর্যটন

সম্পাদনা
গোল্ডেন প্যাগোডা, নামসাই, অরুণাচল প্রদেশ
অরুণাচলের সিয়াং নদী
ইটা দূর্গ

ইটা দুর্গ হল উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশের এক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থান। "ইটা দুর্গ"র অর্থ হল ইট নির্মিত দুর্গ (আহোম ভাষার থেকে এসেছে)। ইটানগরে অবস্থিত এই দুর্গটি ইট দ্বারা নির্মিত। সেজন্য একে "ইটা দুর্গ" বলে ডাকা হয়। এই দুর্গটি ১৪শ অথবা ১৫শ শতকের শুরুতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। একটির ওপরে অন্য একটি ইট চাপিয়ে এই দুর্গটি নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬,২০০ ঘন মিটারের এই বিশাল দুর্গটিকে কিছু বিদ্বান লোক "জিতারী বংশ"এর রামচন্দ্রের মায়াপুর বলে চিহ্নিত করেছেন। এই দুর্গটিতে তিনটা দিক - পশ্চিম দিক, পূর্ব দিক ও দক্ষিণ দিকে তিনটি দুয়ার আছে। পুরাতাত্বিক বিভাগ এর থেকে কিছু সামগ্রী সংগ্রহ করে জওহরলাল নেহরু রাজ্যিক সংগ্রহালয়এ রেখেছে।

ঈগলনেস্ট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

ঈগলনেস্ট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অরুণাচল প্রদেশের ওয়েষ্ট কামেং জেলাতে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ এর উত্তর-পূর্ব দিকে 'চেচা অর্কিড উদ্যান' ও পূর্বে কামেং নদীর পাড়ে পাক্কে ব্রাঘ্র প্রকল্প অবস্থিত৷ ঈগলনেস্ট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ - ৩২৫০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ৷ এই 'কামেং হস্তী সংরক্ষিত বনাঞ্চল এর অন্তর্ভুক্ত ৷ ১৯৫০ এর দশকে এই অঞ্চলের বাইরে থাকা ভারতীয় সেনার চতুর্থ ইনফেন্ট্রির রেড ঈগল ডিভিজনের নামে এই অভয়ারণ্যের নাম ঈগলনেস্ট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রাখা হয় বলে জানা যায়৷ এই অভয়ারণ্য প্রধানত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এর জন্য বিখ্যাত৷

মালিনী থান

মালিনী থান এক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থাকা একটি স্থান। প্রতি বছর এই পবিত্র স্থানে অনেক পর্যটকের ভিড় দেখা যায়৷ এই স্থানে অরুণাচল প্রদেশএর পশ্চিম সিয়াং জেলার দক্ষিণ সীমান্তের চিলাপথার নামক স্থান থেকে কয়েক মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এই থানের ধ্বংসাবশেষসমূহ একে ১৪-১৫ শতকের বলে প্রতীয়মান করে৷

ভালুক পুং

ভালুকপুং ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর পারে তেজপুরএর থেকে প্রায় ৬০ কি: মি: দূরে অবস্থিত একটি অতি মনোরম ও প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর স্থান। ভালুকপুং অসমএর সীমায় এবং অরুণাচল প্রদেশএর অকা পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। এর জীয়াভরলী নদী ও কাছের পর্বতমালার দৃশ্য অতি মনোরম। প্রতি বছরেই বৃহৎ সংখ্যক প্রকৃতিপ্রেমী ও বনভোজনকারীর দল এখানে সমাগত হয়। জীয়াভরলী নদীতে পাহাড়ী মাছ ধরার (নিয়ন্ত্রিত) সুবিধা থাকা ও কাছে নামেরি রাষ্ট্রীয় উদ্যান অবস্থিত হওয়ার জন্য এর আকর্ষণ অারো বাড়ছে। এখানে একটি গরম জলের প্রস্রবণ (পুং, উঁহ) আছে। এখানে অসম সরকারের পর্যটন বিভাগের দ্বারা পরিচালিত ও থাকা-খাওয়ার ভাল সুবিধা থাকা একটি পর্যটনগৃহও অাছে। ভালুকপুং বাণ রজার নাতি ভালুকের একসময়ের রাজধানী ছিল