হায়দ্রাবাদ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় তেলেঙ্গানা রাজ্যর রাজধানী শহর। বিখ্যাত হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি আর হালিমের জন্যে এই শহরটির ব্যাপক সুনাম রয়েছে।
জানুন
সম্পাদনাপূর্বে এটি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যর অন্তর্ভুক্ত ছিলো যা পরবর্তীতে তেলেঙ্গানা রাজ্য সৃষ্টি হয়ে অঙ্গীভূত হয়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যর শহর এই হায়দ্রাবাদ। ১৫৯১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন কুতুবশাহী রাজবংশের শাসক মোহাম্মদ কুলী কুতুব শাহ শহরটির গোড়াপত্তন করেন। শহরটিতে অনেক প্রাচীন ইমারত আর স্থাপনা রয়েছে যা তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী কুতুবশাহী এবং নিজামদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাছাড়া হায়দ্রাবাদ শহরটি ব্যাপক পরিষ্কার আর পরিছন্নতার জন্যে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এছাড়াও শহরটি মুক্তার শহর নামেও পরিচিত কারন শহরটিতে মুক্তা পাওয়া যায় প্রচুর।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
সম্পাদনা- গোলকুণ্ডা দূর্গ
গোলকুণ্ডা দুর্গ হায়দ্রাবাদের কাকট্য রাজবংশ শাসনকালের তৈরি একটি স্থাপনা। কালক্রমে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর হাতবদল হয়ে অবশেষে কুতুবশাহী রাজবংশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এই দূর্গটি। এটি তৎকালীন হায়দ্রাবাদের কুতুবশাহী শাসকগোষ্ঠীর (১৫১৮-১৬৮৭) রাজধানী ছিলো যা হায়দ্রাবাদের ১১ কি:মি: পশ্চিমে গোলকুণ্ডায় অবস্থিত। গ্রানাইট পাহাড়ের উপর এই গোলকুণ্ডা দূর্গটি বহিঃশত্রুর আক্রমণ এবং যুদ্ধের জন্যে তৈরি হয়েছিলো। দূর্গটিতে রয়েছে সেসময়কার অস্ত্রাগার,তারামতি মসজিদ,ধ্বংসপ্রাপ্ত জেলখানা, ওসমানিয়া মসজিদ, হীরাখানা মসজিদ, শিব মন্দির, বারাদারী বা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত কেল্লা, সেলাইখানা ইত্যাদি। গোলকুণ্ডা দূর্গের প্রবেশপথে আপনি দূর্গের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা, তরবারি, চীনামাটির বাসনপত্র ইত্যাদির সংগ্রহ দেখা যায়।
- চারমিনার
চারমিনার কুতুবশাহী যুগের এক অনন্য স্থাপনাকীর্তি যা বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। চারটি মিনার জুড়ে এই স্থাপনাটি তৈরি হয়েছিলো ১৫৯১ খ্রিষ্টাব্দে কুতুবশাহী রাজবংশের পঞ্চম শাসক সুলতান মুহাম্মদ কুলী কুতুব শাহের শাসনকালে যখন রাজধানী গোলকুণ্ডা থেকে হায়দ্রাবাদে স্থানান্তরিত করা হয়েছিলো। ইন্দো-ইসলামী আর পারস্য স্থাপত্যর ছাপ রয়েছে এই নজরকাড়া স্থাপনাটিতে। ১০০ ভারতীয় রূপীর টিকেট কেটে এই চারমিনারের উপরে উঠা যায় যা থেকে হায়দ্রাবাদ শহরের এক অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
- চৌমহল্লা রাজপ্রাসাদ
চৌমহল্লা রাজপ্রাসাদ হায়দ্রাবাদের অন্যতম শাসকগোষ্ঠী নিজামদের বাসস্থান ছিলো যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই প্রাসাদটিতে রয়েছে আসফ জাহী যুগের নজরকাড়া শাহী তখত বা সিংহাসন। এই আসফ জাহী বংশধরেরা পরবর্তীতে নিজাম উপাধি লাভ করে এবং হায়দ্রাবাদ শাসন করে। ১৭৫০ সালে সালাবৎ জং এর সময়কালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় যা পরবর্তীতে আফজাল-উদ-দৌলা (পঞ্চম আসফ জাহ) ১৮৫৭-১৮৬৯ সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করেন। অনেকটা মোঘল স্থাপত্যশৈলীর ছাপ রয়েছে। ৪৫ একর জমির উপর এই রাজপ্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিলো যার ১২ একর বর্তমানে অবশিষ্ট রয়েছে। এই রাজপ্রাসাদটিতে রয়েছে দুটি চত্বর,শাহী খিলওয়াত বা দরবার হল, ফোয়ারা এবং বাগান। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিজাম শাসকদের জন্যে মহল, তাঁদের ব্যবহৃত গাড়ি, আসবাবপত্র, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদির সংগ্রহ রয়েছে এই রাজপ্রাসাদটিতে। এই রাজপ্রাসাদ বা জাদুঘরটির একটি বিশেষত্ব হলো এখানে ৪০ ভারতীয় রূপীর বিনিময়ে ভেতরের সবকিছুর ছবি তুলতে পারা যায়। এই চৌমহল্লা রাজপ্রাসাদটি বিখ্যাত চারমিনারের খুব কাছাকাছি অবস্থিত।
- মক্কা মসজিদ
মক্কা মসজিদ হায়দ্রাবাদের ঐতিহ্যবাহী একটি জামে মসজিদ। এই মসজিদটি ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর মধ্যে একটি। ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে কুতুবশাহী বংশের পঞ্চম শাসক সুলতান মাহমুদ কুলী কুতুবশাহের রাজত্বকালে নির্মিত হয়। এই মসজিদটির ইটপাথর সুদূর মক্কা থেকে নিয়ে আসা হয় যার ফলে এই মসজিদটির নামকরণ হয় মক্কা মসজিদ। ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীর নজরকাড়া মসজিদটি দেখতে অসাধারণ। এই মসজিদটির ভেতরে রয়েছে কুতুবশাহী আর নিজাম শাসকদের কবর। মসজিদটি চারমিনার থেকে একদম কাছে।
- রামোজি ফিল্ম সিটি
রামোজি ফিল্মসিটি হায়দ্রাবাদের অন্যতম ভ্রমণ স্থানগুলোর অন্যতম। এটি অনেকটা বিখ্যাত ইউনিভার্সাল স্টুডিওর আদলে নির্মিত। এখানে বিভিন্ন অবস্থানে শ্যুটিং স্পট তৈরি করা রয়েছে। শ্যুটিং স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর, বিপবি বিতান কিংবা রেলস্টেশন। এছাড়াও এখানে কীভাবে একটি ছবিতে আলো, শব্দ ইত্যাদি সংযোজন করা হয় তা একটি শোয়ের মাধ্যমে দেখানো হয়। সারাদিনের ঘুরে বেড়ানোর জন্যে একটি চমৎকার স্পট এই রামোজি ফিল্মসিটি। রাত্রিযাপনের জন্যে এখানে অনেক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সিতারা অন্যতম। হায়দ্রাবাদ শহর থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার দূরত্ব এই রামোজি ফিল্মসিটি।
- হুসেন সাগর
হুসেন সাগর হায়দ্রাবাদ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি হৃদয়াকৃতির লেক। ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে কুতুবশাহী যুগের শাসক ইব্রাহীম কুলী কুতুবশাহের সময় এই লেকটি খনন করা হয়। ৫.৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এই লেকটির বিস্তৃতি যা মুসি নদের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এই হ্রদটির ঠিক মাঝখানে একটি সুবিশাল বুদ্ধমূর্তি আছে যা ১৯৯২ সালে স্থাপন করা হয়েছে যা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা যায়। রাতেরবেলায় লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আলোর লেসার রশ্মিতে এই বুদ্ধমূর্তির উপর আলোকপাত করায় এটিকে অসাধারণ করে তুলেছে। এই লেকটির রক্ষণাবেক্ষণে আছে তেলেঙ্গানা ট্যুরিজম বোর্ড। ৩০ রূপীর বিনিময়ে নৌকায় করে এই বুদ্ধমূর্তির কাছে যাওয়া যায়।
- সালার জং জাদুঘর
সালার জং জাদুঘর হায়দ্রাবাদ শহরের অন্যতম জাদুঘর। এটি ভারতীয় তিনটি জাতীয় জাদুঘরের একটি। নবাব মীর ইউসুফ আলী খান সালার জং-৩ (১৮৮৯-১৯৪৯) হায়দ্রাবাদের সপ্তম নিজামের প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রায় ত্রিশ বছর বিভিন্ন ঐতিহাসিক জিনিষপত্র সংগ্রহ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সংগৃহীত জিনিষপত্র তাঁর পৈতৃক রাজমহল দেওয়ান দেউড়ি তে রেখে যান যা ১৯৫১ সালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহরু জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করেন। এই জাদুঘরে রয়েছে সালার জংদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিষপত্র, ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতার নিদর্শনের এক বিপুল সংগ্রহশালা।
খাওয়া
সম্পাদনাএই পৃষ্ঠার জন্য নিম্নলিখিত মূল্য পরিসীমা ব্যবহার করে, কোমল পানীয় সহ একজনের জন্য একটি সাধারণ খাবার: | |
বাজেট | < ₹২৫০ |
মধ্যম | ₹২৫০-৭৫০ |
খরুচে | > ₹৭৫০ |
হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি হায়দ্রাবাদে বিখ্যাত। এর খ্যাতি বলতে গেলে জগৎজোড়া। তাছাড়া হায়দ্রাবাদের হালিমের যথেষ্ট কদর রয়েছে। নিম্নে কিছু হোটেলের নাম দেয়া রয়েছে যা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির জন্য জনপ্রিয়:
- প্যারাডাইস টেকওয়ে
- বৌর্কী রেস্তোরাঁ
- শাহ গাউস ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁ
- ক্যাফে বহর এবং রেস্তোরাঁ
- হোটেল শাদাব
- প্যারাডাইস ফুড কোর্ট
- হোটেল আলহামদুলিল্লাহ