তামিলনাড়ু ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ২৮টি রাজ্যের অন্যতম। এই রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই (পূর্বতন মাদ্রাজ)। তামিলনাড়ু ভারতীয় উপদ্বীপের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত। এই রাজ্যের সীমানায় পুদুচেরি, কেরল, কর্ণাটকঅন্ধ্রপ্রদেশ অবস্থিত। তামিলনাড়ুর ভৌগোলিক উত্তর সীমায় পূর্বঘাট, পশ্চিম সীমায় নীলগিরি, আন্নামালাই পর্বতপালাক্কাদ, পূর্ব সীমায় বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ পূর্ব সীমায় মান্নার উপসাগরপক প্রণালী এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর অবস্থিত।

আয়তনের বিচারে তামিলনাড়ু ভারতের একাদশ (এই রাজ্যের আয়তন গ্রিসের সমান) এবং জনসংখ্যার বিচারে সপ্তম বৃহত্তম রাজ্য।

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রায় ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে তামিলনাড়ু ভূখণ্ড তামিল জাতির আবাসস্থল। প্রায় ১৫০০-২০০০ বছর ধরে এই অঞ্চলের ধ্রুপদি ভাষা তামিল বিভিন্ন লেখ ও সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তামিলনাড়ু প্রাকৃতিক সম্পদ, দ্রাবিড় স্থাপত্যের বিশালাকার হিন্দু মন্দির, শৈলশহর, সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন ধর্মের তীর্থস্থানে পরিপূর্ণ। এই রাজ্যে আটটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে।

শহর সম্পাদনা

ক্রমিক সংখ্যা শহরের নাম জেলা
চেন্নাই চেন্নাই,কাঞ্চিপুরম,তিরুভাল্লুর
কোয়েম্বাটুর কোয়েম্বাটুর
মাদুরাই মাদুরাই
তিরুচ্চিরাপল্লী তিরুচ্চিরাপল্লী
তিরুপপুর তিরুপপুর
সালেম সালেম
এরোডে এরোডে
তিরুনেলভেলী তিরুনেলভেলী
ভেলোর ভেলোর
১০ তুথুকুডি তুথুকুডি

পর্যটন সম্পাদনা

কন্যাকুমারী
 
কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ, বিরাট থিরুভাল্লুভার মূর্তি ও বিবেকানন্দ স্মারকভবন দেখা যাচ্ছে।
 
গান্ধীমণ্ডপম্‌

কন্যাকুমারী ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কন্যাকুমারী জেলার অন্তর্গত একটি শহর। এই শহরটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম বিন্দুতে অবস্থিত। অন্তরীপটি ভারতের পশ্চিম উপকূল ধরে প্রসারিত পশ্চিমঘাট পর্বতমালার এলাচ পর্বতশ্রেণীর দক্ষিণতম প্রান্তে অবস্থিত। কন্যাকুমারী জেলার সদর শহর নাগেরকইল এই শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কন্যাকুমারী একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রাচীনকালেও কন্যাকুমারী ছিল তামিলাকাম বা প্রাচীন তামিল দেশের দক্ষিণতম অঞ্চল। কন্যাকুমারী নামটি এসেছে হিন্দু দেবী কন্যাকুমারীর (যাঁর স্থানীয় নাম কুমারী আম্মান) নামানুসারে। এই শহরের সৈকত অঞ্চলে যেখানে আরব সাগর, ভারত মহাসাগরবঙ্গোপসাগর পরস্পর মিলিত হয়েছে, সেখানেই দেবী কুমারীর মন্দির অবস্থিত। এই শহরের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলি হল দেবী কুমারীর মন্দির, বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল, প্রাচীন তামিল কবি তিরুবল্লুবরের ১৩৩ ফিট উঁচু মূর্তি এবং গান্ধীমণ্ডপম্‌ (ভারত মহাসাগরের জলে মহাত্মা গান্ধীর চিতাভষ্ম বিসর্জনের আগে এখানে তা রাখা হয়েছিল)।

মহান চোল মন্দিরসমূহ

মহান চোল মন্দিরসমূহ বা গ্রেট লিভিং চোল টেম্পলস দক্ষিণ ভারতে চোল রাজাদের রাজত্বকালে নির্মিত কয়েকটি মন্দির। এই মন্দিরগুলি হল তাঞ্জাভুরের বৃহদীশ্বর মন্দির, গঙ্গইকোণ্ডচোলীশ্বরম মন্দির ও দরসুরমের ঐরাবতেশ্বর মন্দির। ১৯৮৭ সালে বৃহদীশ্বর মন্দিরটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা লাভ করে। ২০০৪ সালে গঙ্গইকোণ্ডচোলীশ্বরম ও ঐরাবতেশ্বর মন্দিরদুটিও এই তালিকায় একযোগে যুক্ত হয়। এই কেন্দ্রটি “মহান চোল মন্দিরসমূহ” নামে পরিচিত।

কৃষ্ণের মাখন নাড়ু

কৃষ্ণের মাখন নাড়ু (অপর নাম: বাণ ইরাই কল ও কৃষ্ণের বিশালাকায় মাখন নাড়ু) হল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ শহর মহাবলীপুরমে অবস্থিত বিশালাকার একটি গ্র্যানাইট প্রস্তরখণ্ড। ভূমিতল থেকে ১.২-মিটার (৪ ফু) উচ্চতায় একটি ঢালু অংশে সামান্য নত অবস্থায় অথচ ভারসাম্য বজায় রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই পাথরটির। এটির উচ্চতা প্রায় ৬ মিটার, প্রস্থ ৫ মিটার ও ওজন প্রায় ২৫০ টন। একাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় পাথরটিকে এখন অর্ধ-গোলাকৃতি মনে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, বিগত ১,২০০ বছর ধরে পাথরটি একই স্থানে রয়েছে। কথিত আছে, পল্লব সম্রাট নরসিংহবর্মণ পাথরটি স্থানচ্যূত করার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। ১৯০৮ সালে মহাবলীপুরমের তৎকালীন গভর্নর আর্থার হ্যাভলক নিরাপত্তাজনিত কারণে সাতটি হাতির সাহায্যে পাথরটি সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টাও সফল হয়নি।

ধর্মরাজা রথ

ধর্মরাজা রথ হল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কাঞ্চীপুরম জেলায় বঙ্গোপসাগরের করোমণ্ডল উপকূলে মহাবলীপুরমে অবস্থিত পঞ্চরথ স্মারকস্থলের একটি স্মারক। এটি একটি একশিলায় খোদিত ভারতীয় প্রস্তরখোদাই স্থাপত্যের নিদর্শন। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে পল্লব রাজা প্রথম মহেন্দ্রবর্মণ ও তাঁর পুত্র নরসিংহবর্মণ (৬৩০-৬৯০ খ্রিস্টাব্দ; ইনি "মামল্ল" বা মহাবীর নামেও পরিচিত ছিলেন) এই স্মারকটি নির্মাণ করান। সমগ্র চত্বরটি এখন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) তত্ত্বাবধানে আছে। ১৯৮৪ সালে গোটা চত্বরটি "মহাবলীপুরম স্মারকস্থল" ("গ্রুপ অফ মনুমেন্টস অ্যাট মহাবলীপুরম") নামে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা পায়।

পঞ্চরথ

পঞ্চরথ বা পাণ্ডবরথ হল বঙ্গোপসাগরের করমণ্ডল উপকূলের মহাবলীপুরমে অবস্থিত একটি স্মারক চত্বর। এই চত্বর ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কাঞ্চীপুরম জেলায় অবস্থিত। পঞ্চরথ ভারতের মনোলিথিক প্রস্তরখোদাই স্থাপত্য শিল্পকলার একটি নিদর্শন। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে পল্লব রাজা প্রথম মহেন্দ্রবর্মণ ও তাঁর পুত্র প্রথম নরসিংহবর্মণের (৬৩০–৬৮০ খ্রিস্টাব্দ; এঁদের "মামল্ল" বা "মহাযোদ্ধা"-ও বলা হত) রাজত্বকালে এই রথগুলি নির্মিত হয়। এই স্মারকগুলি প্রথম নরসিংহবর্মণের বিশেষ কৃতিত্ব। কারণ, এই ধরনের স্থাপত্য ভারতে তাঁর আগে নির্মিত হয়নি।

ভোজন সম্পাদনা

ইডলি, দোসা এখানকার প্রধান খাবার। এছাড়া বিবিধ মিষ্টি খাবারের চল রয়েছে। দোসা হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি রুটিজাতীয় খাবার যা আটার গোলা বা খামি থেকে তৈরী করা হয়। এর প্রধান উপাদান চাল এবং কলাইয়ের ডাল। দোসা দক্ষিণ ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এটা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ ভারতীয় উপমহাদেশে জনপ্রিয়। প্রথাগতভাবে গরম সাম্বার, আলু তরকারি, পনির বা চাটনির সঙ্গে দোসা পরিবেশন করা হয়।

পরিবহন সম্পাদনা

আকাশপথে সম্পাদনা

রাজ্যে ৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। চেন্নাই (৩.৬ কিমি রানওয়ে), কোয়েম্বাটুর (৩.১ কিমি রানওয়ে), তিরুচ্চিরাপল্লী (২.৪ কিমি রানওয়ে) এবং মাদুরাই (২.২ কিমি রানওয়ে)

রেল সম্পাদনা

দক্ষিণ রেলের (SR) সদর দপ্তর এই রাজ্যের চেন্নাই শহরে অবস্থিত।