ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী

বেঙ্গালুরু বা পূর্বতন বাঙ্গালোর ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী। এই শহরকে "ভারতের সিলিকন ভ্যালি" বলা হয়ে থাকে। বেঙ্গালুরু দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সমুদ্র সমতল থেকে ৯০০ মিটার (৩,০০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত।এটি মহীশূর মাভূমি অঞ্চলের অর্ন্তগত।এই শহরের আয়তন প্রায় ৭৪১ বর্গ কিলোমিটার (২৮৬ বর্গ মাইল)।

জনগোষ্ঠী

সম্পাদনা

জনসংখ্যার বিচারে ব্যাঙ্গালোর ভারতের পঞ্চম জনবহুল মহানগর এবং বিশ্বের অষ্টাদশতম জনবহুল শহর। ব্যাঙ্গালোর তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হওয়ায় দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকে প্রচুর মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য এ শহরে আসে। ২০১১ সালের ভারতের জনগণনা অনুযায়ী, ব্যাঙ্গালোরের মোট জনসংখ্যার ৭৮.৯% হিন্দু, ১৩.৯% মুসলমান, ৫.৬% খ্রীষ্টান এবং ১.০% জৈন ধর্মাবলম্বীর মানুষ বসবাস করেন। কন্নড় ব্যাঙ্গালোরের প্রধান ভাষা।এছাড়া উত্তর ভারত ও পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী রাজ্যগুলি থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য আসা লোকজনের মধ্যে ইংরাজী, তামিল, তেলেগু, উর্দু ও হিন্দি ভাষার প্রচলন রয়েছে।

একসময় কলকাতার পর ব্যাঙ্গালোরে অ্যাঙ্গলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বসতি ছিল। বর্তমানে প্রায় ১০,০০০ জন অ্যাঙ্গলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।

ইতিহাস

সম্পাদনা

দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজবংশ যেমন - পশ্চিম গঙ্গা, চোল, হোয়সালা এখানে রাজত্ব করেছে। ১৫৩৭ খ্রীষ্টাব্দে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কেম্পে গৌড়া নামে এক জমিদার এখানে একটি মাটির দুর্গ তৈরী করেছিলেন। মনে করা হয় যে, এটি আধুনিক ব্যাঙ্গালোর শহরের প্রথম ভিত্তি স্থাপন। ১৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দে মারাঠারা ব্যাঙ্গালোর অধিকার করে এবং প্রায় ৫০ বছর মারাঠা সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। এরপর মুঘলরা ব্যাঙ্গালোর দখল করে এবং তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে মহীশূর রাজ্যের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই সময় ওয়াডিয়ার রাজবংশ মহীশূরে রাজত্ব করছিল। ১৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে ব্রিটিশরা জয়লাভ করে এবং তারা মহীশূরের রাজাকে এই শহরের প্রশাসনিক দায়িত্বভার দেয়। বেঙ্গালুরু মহীশূর রাজ্যের রাজধানী হয়।মহীশূর রাজ্য যা কিনা নামেই স্বাধীন রাজ্য ছিল, এর তত্ত্বাবধানে পুরোনো ব্যাঙ্গালোর শহর গড়ে ওঠে। ১৮০৯ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশরা তাদের ক্যান্টনমেন্ট ব্যাঙ্গালোরে স্থানান্তরিত করে এবং পুরানো শহরের বাইরে নতুন একটি শহর গড়ে ওঠে যা ব্যাঙ্গালোর ক্যান্টনমেন্ট নামে পরিচিত হয়। এই নতুন শহর ব্রিটিশ ভারতের শাসনাধীন ছিল।১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ও মহীশূর রাজ্যের রাজধানী ব্যাঙ্গালোর শহর ই থাকে। ১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দে ব্যাঙ্গালোর শহর ও ব্যাঙ্গালোর ক্যান্টনমেন্ট দুটিকে মিলিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দে কন্নড় ভাষাভুক্ত অঞ্চলগুলি নিয়ে নতুন কর্ণাটক রাজ্য স্থাপিত হলে রাজধানী ব্যাঙ্গালোরকে করা হয়।২০০৬ সালে ব্যাঙ্গালোর এর কন্নড় নাম বেঙ্গালুরু সরকারীভাবে গ্রহণ করা হয়।

যাতায়াতব্যবস্থা

সম্পাদনা

ব্যাঙ্গালোরের প্রধান বিমান বন্দর কেম্পেগৌড়া আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর শহরের মূলকেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০ কি.মি. (২৫ মাইল) দূরে দেভানাহাল্লিতে অবস্থিত।আগে এর নাম ছিল বেঙ্গালুরু আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর। এটি একটি বেসরকারী বিমানবন্দর। ২০০৮ সালের ২৪ শে মে এই নতুন বিমানবন্দরের বিমান ওঠা-নামা শুরু হয়। এর আগে শহরের পূর্বদিকে বিমানাপুরায় অবস্থিত হাল (হিন্দুস্তান এরোনটিকস লিমিটেড) বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল করত।যাত্রী সংখ্যা ও বিমান ওঠা-নামার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দিল্লী ও মুম্বাইয়ের পর ব্যাঙ্গালোর ভারতের তৃতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।বিমানবন্দর থেকে শহরের সংযোগের ক্ষেত্রে ট্যাক্সি ও বিএমটিসি পরিচালিত শীততাপনিয়ন্ত্রিত ভলভো বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় রেলপথের দক্ষিণ-পশ্চিম শাখার বিভাগীয় সদর দপ্তর ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত।

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা
লাল বাগ
লাল বাগ এবং কাবন পার্ক

অষ্টাদশ শতকে হাইদার আলী ও তাঁর পুত্র টিপু সুলতান এই সুন্দর লাল বাগের পত্তন করেন। বাগানের ২৪০ একরের জমিতে পৃচুর গাছপালা এমনকি দুর্লভ গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছপালা রয়েছে। এখানে একটি হরিণ পার্কও রয়েছে। পরবর্তীতে কাচনির্মিত একটি সংরক্ষণাগার তৈরী করা হয় বার্ষিক ফুল ও ফল প্রদর্শনের জন্য। ৩০০ একরের সুন্দর কুব্বন পার্ক ১৮৬৪ সালে নির্মিত হয়। পাবলিক লাইব্রেরী, হাই কোর্ট, সরকারি জাদুঘর এবং বিশ্বেশ্বরাইয়া শিল্প ও প্রযুক্তি জাদুঘর এই পার্ক ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থিত। হাই কোর্ট বিল্ডিং ১৮৬৪ সালে এবং সরকারি জাদুঘর ১৮৮৬ সালে নির্মিত হয় প্রচুর প্রাচীন সংগ্রহসহ। হেলবিড ও বিজয়নগর কালের মুদ্রা, শিল্প এখানে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত আছে এবং এগুলি জাদুঘরের উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ।

গ্রীষ্ম প্রাসাদ

সিটি মার্কটের কাছাকাছি যে দুর্গের অবশেষ রয়েছে তা ছিল টিপু সুলতানের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ। এই সুবিশাল প্রাসাদ দেখতে অত্যন্ত চমৎকার। এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে যেখানে টিপু সুলতান ও হাইদার আলীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র রয়েছে।

মন্দির

বেঙ্গালোরে প্রচুর সুন্দর সুন্দর মন্দির রয়েছে। শহরের দক্ষিণে রয়েছে নগরীর প্রতিষ্ঠাতা কেমপে গৌড়ার বাসভাঙ্গুড়ী ষাঁড় মন্দির। এটা একক বোল্ডার দিয়ে তৈরী ষাঁড়ের সদৃশ ১৫ ফুটের খোদিত কাঠামো। গ্রীষ্ম প্রাসাদের কাছে ৩০০ বছরের পুরনো উদয়ার্স নির্মিত ভেঙ্কটারমনাস্বামী মন্দির রয়েছে। মন্দিরের অবস্থা এখনও সুন্দর রয়েছে।

গাভী গঙ্গাধারাশ্বেরা মন্দির অন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এটা এমনভাবে তৈরী একটি গুহা মন্দির যেখানে সংক্রান্তি উৎসবের সময় সূর্য বাইরে নির্মিত ষাঁড়ের উভয় শিঙের মধ্য দিয়ে কিরণ দেয় যাতে করে শিবের ছায়া ফুটে উঠে। শিবের উদ্দেশ্যে কেমপে গৌড়া নির্মিত উলসুর একটি বিখ্যাত মন্দির যেটা সোমেশ্বরা মন্দির নামে পরিচিত।

হ্রদসমূহ

নগরীর আশপাশে কয়েকটি হ্রদ রয়েছে যেখানে নৌবিহারের ব্যবস্থা রয়েছে। অবশ্য দর্শনীয় হ্রদগুলি হলো উলসুর হ্রদ, শংক ট্যাংক, ইয়েদিউর ট্যাংক এবং লাল বাগ হ্রদ। এই হ্রদগুলি ভ্রমণে দর্শনার্থীগন মৃদু বাতাস ও বিশ্রাম উপভোগ করতে পারবেন।

পার্শবর্তী স্থান

সম্পাদনা

শহরের ৩৫ কি.মি. দুরে হেসারাঘাটা নামে অজ গ্রাম রয়েছে যেখানে মানুষ তৈরী একটি আকর্ষনীয় হ্রদ রয়েছে। এখানে বিখ্যাত নৃত্য গ্রাম রয়েছে যেখানে নাচের বিভিন্ন কলার উপর চমতকার প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এই সুন্দর গ্রামটি চমৎকার এক দর্শনীয় স্থান। বিষয়শ্রেণী তৈরি করুন