সতর্কীকরণ: মুইডুম্বে জেলা এবং পুরো কাবো ডেলগাডো প্রদেশে আইএসআইএস/আইএসআইএল-সংশ্লিষ্ট একটি দলের বিদ্রোহের ফলে একটি মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সন্ত্রাসীরা পালমা শহরও দখল করে। উত্তর-পূর্ব জেলার এবং উপকূলীয় দ্বীপগুলিতে ভ্রমণ নিরাপদ নয়। | |
সরকারি ভ্রমণ পরামর্শ
| |
(সর্বশেষ হালনাগাদ: জানু ২০২৪) |
মোজাম্বিক (পর্তুগিজ: Moçambique) দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি দেশ। দেশটির সর্বোচ্চ শিখর হলো মন্টে বিনগা, যা ২,৪৩৬ মি (৭,৯৯২ ফু) মিটার উঁচু। মনোরম সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি, মোজাম্বিক বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের দেশ। এখানে রয়েছে আফ্রিকার অন্যতম সেরা ঔপনিবেশিক যুগের স্থাপত্য ও নিদর্শন। পাশাপাশি মোজাম্বিক তার নিজস্ব আফ্রিকান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, যা শিল্পকলা, সঙ্গীত এবং খাবারের মাধ্যমে অনুভব করা যায়। দেশটির পূর্ব উপকূলজুড়ে ভারত মহাসাগরের তটরেখা ১,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা, যা স্কুবা ডাইভিং, মাছ ধরা, পালতোলা নৌকা চালানো এবং সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
অঞ্চল
সম্পাদনামোজাম্বিকের ১০টি প্রদেশ রয়েছে যা নিম্নলিখিত তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়:
উত্তর মোজাম্বিক কাবো দেলগাদো, নামপুলা এবং নিয়াসা প্রদেশ |
মধ্য মোজাম্বিক মানিকা, সোফালা, তেতে এবং জাম্বেজিয়া প্রদেশ |
দক্ষিণ মোজাম্বিক গাজা, ইনহামবান এবং মাপুটো প্রদেশ, এবং বাজারুটো ন্যাশনাল সী পার্ক |
শহর
সম্পাদনা- 1 মাপুতো - দেশের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত প্রাণবন্ত রাজধানী।
- 2 বেইরা - একটি ব্যস্ত বন্দর শহর এবং সোফালা প্রদেশের রাজধানী।
- 3 মোজাম্বিক দ্বীপ - একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং পর্তুগিজ শাসনের অধীনে পূর্বের রাজধানী।
- 4 ইনহাম্বেন - উপসাগরের পাশে একটি সুন্দর ঐতিহাসিক শহর।
- 5 নাম্পোলা - উত্তরাঞ্চলের একটি শিল্পশহর এবং নামপুলা প্রদেশের রাজধানী।
- 6 পেম্বা - উত্তর মোজাম্বিকে অবস্থিত, মোজাম্বিকবাসীদের জন্য একটি জনপ্রিয় অবকাশযাপন গন্তব্য, যদিও এর বিচ্ছিন্নতা বেশিরভাগ ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য এটি অপরিচিত রেখেছে।
- 7 পেম্বা - মধ্য মোজাম্বিকে অবস্থিত, মানিকা প্রদেশের রাজধানী, চিমানিমানি জাতীয় উদ্যান এবং মাউন্ট বিঙ্গা (মোজাম্বিকের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ) ভ্রমণের জন্য প্রস্থান বিন্দু, জিম্বাবুয়ে ও মালাউইয়ের সংযোগস্থল।
অন্যান্য গন্তব্য
সম্পাদনা- 8 Bazaruto Archipelago — একটি সুন্দর দ্বীপ রিসোর্ট এবং পানির নিচের সামুদ্রিক উদ্যান, যেখানে উচ্চমানের পর্যটকদের জন্য দুর্দান্ত ডাইভিং-এর সুযোগ রয়েছে।
- 9 সংগো বাঁধ — জাম্বেজি নদীর উপর অবস্থিত একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ এবং আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ।
- 10 গোরঙ্গোসা জাতীয় উদ্যান
- 11 মোজাম্বিক দ্বীপ — একটি ঐতিহাসিক শহর যা মোজাম্বিক এবং সমগ্র আফ্রিকার মধ্যে অন্যতম সুরক্ষিত ঐতিহ্য ধারণ করে। ১৯৯১ সাল থেকে এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
- 12 লিম্পোপো জাতীয় উদ্যান
- 13 পোন্টা ড’ওরো — একটি দুর্দান্ত ডাইভিং স্থান, যা মাপুটোর তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সহজে পৌঁছানো যায়।
- 14 কিরিম্বাস দ্বীপপুঞ্জ — দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং সাদা বালির সৈকত ও স্ফটিক নীল পানির জন্য পরিচিত একটি শান্তিপূর্ণ ছুটির গন্তব্য। পেম্বার মাধ্যমে পৌঁছানো যায়।
- 15 তোফো — ইনহামবান শহরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত, ব্যাকপ্যাকারদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য, যেখানে চমৎকার ডাইভিং-এর সুযোগ রয়েছে। তিমি হাঙ্গরও দেখা যায়!!
- 16 ভিলানকুলোস/ভিলানকুলো — একটি জনপ্রিয় ছুটির গন্তব্য এবং বাজারুটো দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশের প্রধান প্রবেশদ্বার।
অনুধাবন
সম্পাদনাভূগোল
সম্পাদনামোজাম্বিক আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল বরাবর ১,৫৩৫ মাইল (২,৪৭০ কিমি) বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ক্যালিফোর্নিয়ার দ্বিগুণ। উত্তরে তানজানিয়া, পশ্চিমে মালাউই, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে, আর দক্ষিণে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এসওয়াতিনি অবস্থিত। দেশটি সাধারণত নিম্নাঞ্চলীয় মালভূমি দ্বারা গঠিত, যেখানে ২৫টি বড় নদী ভারত মহাসাগরে প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নদী জাম্বেজি, যা মধ্য আফ্রিকার সাথে সংযোগ স্থাপন করে। দেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি পর্বতমালা দেশের মূলভিত্তি হিসেবে অবস্থান করছে।
ইতিহাস
সম্পাদনাপর্তুগিজ অভিযাত্রী ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে মোজাম্বিকে পৌঁছান, যা কেপ রুট ধরে ভারত যাওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থলচিহ্ন ছিল।
১৫০০ সালে পর্তুগিজরা বর্তমান ইলহা দে মোজাম্বিক বা মোজাম্বিক দ্বীপ (তখন শুধুমাত্র মোজাম্বিক নামে পরিচিত এবং এখান থেকেই দেশের আধুনিক নামের উৎপত্তি) সহ উপকূলজুড়ে একাধিক দুর্গ এবং পোস্ট স্থাপন করে। পর্তুগিজরা ১৮৯১ সাল পর্যন্ত মোজাম্বিক থেকে মশলা ও দাস ব্যবসা পরিচালনা করত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর্তুগিজরা স্থানীয় জনগণের জন্য বাণিজ্যিক, শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, পরিবহন এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগ শুরু করে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সহায়ক হয়। এই উন্নয়নগুলো ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত চলতে থাকে।
১৯৬২ সালে কয়েকটি উপনিবেশ-বিরোধী রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে মোজাম্বিক মুক্তি ফ্রন্ট (ফ্রেলিমো) গঠন করে এবং পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। ১০ বছরের অপ্রতিসাম যুদ্ধের পর, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন মোজাম্বিক স্বাধীনতা লাভ করে। ফ্রেলিমো একটি রূপান্তরিত সরকারের মাধ্যমে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যেই প্রায় সব পর্তুগিজ উপনিবেশবাদী মোজাম্বিক ছেড়ে চলে যায়—কিছু নতুন সরকার কর্তৃক বিতাড়িত হয়, কিছু ভয়ে পলায়ন করে।
স্বাধীনতা লাভের সময় পুরো মোজাম্বিকে মাত্র ৫ জন প্রকৌশলী ছিল এবং পূর্বের উপনিবেশিক অবকাঠামো বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দেশের অনেক অবকাঠামো দ্রুত ভেঙে পড়ে। ফ্রেলিমো তাদের সম্পদের অভাব এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি শীতল যুদ্ধের রাজনীতির প্রেক্ষিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রদের সাথে সংযুক্ত হয়। ফ্রেলিমো একটি একদলীয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং দ্রুত কিউবা ও সোভিয়েত ব্লক দেশগুলোর কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়।
১৯৭৫ সালে রোডেশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত একটি সাম্যবাদ-বিরোধী দল মোজাম্বিক জাতীয় প্রতিরোধ (রেনামো) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা পরিবহন পথ, স্কুল এবং স্বাস্থ্য ক্লিনিকের উপর একাধিক হামলা চালায়, যা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়।
১৯৯০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্য নীতি দুর্বল হয়ে আসলে এবং রেনামোর প্রতি সমর্থন কমে যাওয়ায়, ফ্রেলিমো সরকার ও রেনামোর মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালের নভেম্বরে একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করা হয়। মোজাম্বিক তখন একটি বহুদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যেখানে নিয়মিত নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। ১৯৯২ সালের ১৫ অক্টোবর রোম সাধারণ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে।
জলবায়ু
সম্পাদনামোজাম্বিক | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
জলবায়ু চার্ট (ব্যাখ্যা) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
মোজাম্বিকের প্রায় পুরো অঞ্চলই ক্রান্তীয় অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত, তাই এটি প্রধানত ক্রান্তীয় জলবায়ুর অধীনে থাকে।
উপকূল বরাবর মোজাম্বিকে উষ্ণ, ক্রান্তীয় আবহাওয়া বিরাজ করে। জুন ও জুলাই মাসের কয়েকটি রাত ছাড়া রাতের তাপমাত্রা সাধারণত ঠান্ডা হয় না এবং বৃষ্টিপাতও খুব বেশি হয় না। গ্রীষ্মকালে, তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং আর্দ্রতার মাত্রা বাড়ে। উত্তরের পেম্বা এবং জাম্বেজি নদীর আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা সাধারণত বেশি থাকে।
অভ্যন্তরীণ সমভূমিতে উপকূলের চেয়ে সাধারণত বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করে এবং এখানে সারা বছর ধরে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। পার্বত্য অঞ্চলে সারা বছর ধরে আবহাওয়া শীতল থাকে।
সরকারি ছুটির দিন
সম্পাদনামোজাম্বিকে সার্বজনীন ছুটির দিনগুলো হল:
- ১ জানুয়ারি – নববর্ষ।
- ৩ ফেব্রুয়ারি – বীর দিবস।
- ৭ এপ্রিল – নারী দিবস।
- ১ মে – শ্রমিক দিবস।
- ২৫ জুন – স্বাধীনতা দিবস।
- ৭ সেপ্টেম্বর – লুসাকা চুক্তি দিবস।
- ২৫ সেপ্টেম্বর – সশস্ত্র বাহিনী দিবস।
- ৪ অক্টোবর – শান্তি দিবস।
- ২৫ ডিসেম্বর – পরিবার দিবস।
ধূমপান
সম্পাদনা২০০৭ সালে মোজাম্বিকে সকল জনসমাগমস্থলে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়। তবে অনেক রেস্টুরেন্ট এবং বার এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলেছে, কারণ এটি কার্যত প্রয়োগ করা হয় না।
জাতি গোষ্ঠী
সম্পাদনামাকুয়া মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বড় জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে বিদ্যমান। সেনা এবং এনডাউ জাম্বেজি উপত্যকায় এবং শাঙ্গান মোজাম্বিকের দক্ষিণাঞ্চলে প্রভাবশালী।