আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণের একটি রাষ্ট্র
আফ্রিকা > দক্ষিণ আফ্রিকা


দক্ষিণ আফ্রিকা একটি চমৎকার গন্তব্যস্থল যা সংস্কৃতি, প্রাণীজগৎ, উদ্ভিদজগৎ এবং ইতিহাসে সমৃদ্ধ। আফ্রিকার দক্ষিণতম দেশটি একটি বড় দেশ যার ভূদৃশ্যগুলো বৈচিত্র্যময়, এখানে ১২টি সরকারি ভাষা রয়েছে এবং সমানভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ জনসংখ্যা। এটি প্রায়শই "রেইনবো নেশন" বা "রংধনু জাতি" নামে পরিচিত।

দক্ষিণ আফ্রিকা আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত রাষ্ট্র। দেশটির পূর্ণ সরকারি নাম দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র। দেশটির দক্ষিণে ভারত মহাসাগরদক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত; দুই মহাসাগর মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলীয় তটরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০০ কিলোমিটার। দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর সীমান্তে নামিবিয়া, বতসোয়ানাজিম্বাবুয়ে এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমানায় মোজাম্বিকইসোয়াতিনি (প্রাক্তন সোয়াজিল্যান্ড) রাষ্ট্রগুলি অবস্থিত। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র লেসোথোকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আয়তন প্রায় ১২,২১,০৩৭ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় সাড়ে আট গুণ ও ভারতের আয়তনের এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি)। এখানে ৫ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি অধিবাসী বাস করে, ফলে এটি বিশ্বের ২৪তম সর্বোচ্চ জনবহুল রাষ্ট্র। জনঘনত্ব খুবই কম, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪২.৪ জন, যা বিশ্বে ১৬৯তম। রাষ্ট্রটির তিনটি রাজধানী আছে। প্রিটোরিয়া বা তশোয়ানে নির্বাহী রাজধানী, কেপ টাউন আইন বিভাগীয় রাজধানী এবং ব্লুমফন্টেইন বা মানগাউং বিচার বিভাগীয় রাজধানী। দেশটির বৃহত্তম নগরী জোহানেসবার্গ; এছাড়া ডারবানপোর্ট এলিজাবেথ অন্যতম প্রধান কিছু নগরী। প্রশাসনিকভাবে নয়টি প্রদেশে বিভক্ত দেশটিতে একটি বহুদলীয় দ্বিকাক্ষিক আইনসভাবিশিষ্ট প্রজাতন্ত্র। রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।

দক্ষিণ আফ্রিকার ভূগোলকে তিনটি বৃহৎ অঞ্চলে ভাগ করা যায়। অভ্যন্তরভাগে একটি প্রশস্ত মালভূমি দেশটির সিংহভাগ এলাকা গঠন করেছে। মধ্যভাগের এই মালভূমিটিকে এস্কার্পমেন্ট নামক একটি পার্বত্য অঞ্চল ঘিরে রেখেছে এবং একই সাথে উপকূলীয় নিম্ন সমভূমির একটি সরু বেষ্টনী থেকে মালভূমিটিকে পৃথক করেছে। পূর্বে ড্রাকেন্সবার্গ পর্বতশ্রেণীটি দেশের সর্বোচ্চ পর্বতাঞ্চল। দেশের পশ্চিমভাগে কালাহারি মরুভূমিনামিব মরুভূমির কিয়দংশ অবস্থিত। অরেঞ্জ নদীলিম্পোপো নদী দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান দুই নদী। দক্ষিণ আফ্রিকার জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ উপক্রান্তীয় প্রকৃতির। শুষ্ক জলবায়ুর কারণে মাঝে মাঝে খরার সমস্যা দেখা দেয়। দেশটিতে স্বর্ণ, কয়লা, হীরা, প্লাটিনামভ্যানাডিয়ামের মজুদ আছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সিংহভাগ বিক্ষিপ্ত বৃক্ষরাজিতৃণভূমি (স্থানীয় আফ্রিকান্স ভাষায় "ভেল্ড") দিয়ে আচ্ছাদিত। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে প্রচুর ফুল-ফলের গাছ জন্মে। পশ্চিমের শুষ্ক অঞ্চলে ঝোপঝাড় ও গুল্ম জন্মে যেগুলি খুব কম বৃষ্টিপাতেও বেঁচে থাকতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার যে স্বল্পসংখ্যক অরণ্য আছে, সেগুলি মূলত উপকূল ঘেঁষে কিংবা পার্বত্য উপত্যকাগুলিতে অবস্থিত। দেশটিতে সীমিত সংখ্যায় সিংহ, হাতি, গণ্ডার, জলহস্তী, চিতাবাঘকৃষ্ণসার হরিণের মতো বন্যপ্রাণীগুলি দেখায় যায়। এগুলি মূলত বন্যপ্রাণী উদ্যানে সুরক্ষিত অবস্থায় বাস করে।

দক্ষিণ আফ্রিকা নৃতাত্ত্বিকভাবে একটি বহু-গোষ্ঠীয় রাষ্ট্র, যেখানে বহু বিচিত্র সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মের মেলবন্ধন ঘটেছে। এ কারণে এটিকে "রংধনু জাতি" হিসেবেও ডাকা হয়। জনসংখ্যার চার-পঞ্চমাংশ কৃষ্ণাঙ্গ বান্টু বংশোদ্ভূত লোক; এদের মধ্যে জুলু, খোসা, সোথোতসোয়ানা নৃগোষ্ঠীর লোক প্রধান। ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ (৮%), মিশ্র জাতির লোক (প্রায় ৯%) ও দক্ষিণ এশীয় বা ভারতীয় (২%) বংশোদ্ভূত লোকেরা জনসংখ্যার বাকী এক-পঞ্চমাংশ গঠন করেছে। প্রতিটি কৃষ্ণাঙ্গ নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা আছে। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত লোকেরা হয় ওলন্দাজ ভাষা থেকে উদ্ভূত আফ্রিকান্স ভাষাতে কিংবা ইংরেজি ভাষাতে কথা বলে। আফ্রিকান্স ভাষাভাষীরা মূলত ওলন্দাজ, ফরাসিজার্মান বংশোদ্ভূত। ইংরেজিভাষীরা মূলত ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত। এশীয়রা মূলত ভারত থেকে এসেছে। মিশ্র জাতির লোকেদের দেহে ইউরোপীয়, এশীয় ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ রক্তের মিশ্রণ ঘটেছে। আফ্রিকান্স, ইংরেজি, এনদেবেলে ভাষা, পেদি (উত্তরীয় সোথো ভাষা), সোথো (দক্ষিণী সোথো ভাষা), সোয়াতি ভাষা, তসোঙ্গা ভাষা, তসোয়ানা ভাষা, ভেন্দা ভাষা, খোসা ভাষাজুলু ভাষা --- এই ১১টি ভাষার সবগুলিকেই দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। খ্রিস্টধর্ম এখানকার প্রধান ধর্ম; এছাড়া ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান ধর্ম, হিন্দু ধর্মইসলাম ধর্মও প্রচলিত। দেশের অর্ধেকের বেশি লোক পৌর এলাকায় ও মূলত দেশের পূর্বভাগে বাস করে।

দক্ষিণ আফ্রিকা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির রাষ্ট্র। মানব উন্নয়ন সূচকে এর অবস্থান ১১৩তম, যা আফ্রিকার মধ্যে ৭ম সর্বোচ্চ। স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সারা বিশ্বের ৩৩তম সর্ববৃহৎ অর্থনীতি। দেশটির মুদ্রার নাম র‍্যান্ড। বিশ্বব্যাংক দেশটিকে একটি "নব্য শিল্পায়িত দেশ" হিসেবে শ্রেণীকরণ করেছে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি মধ্যম শক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। জি২০ দলের সদস্য এই রাষ্ট্রটি আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। তবে দেশটির সর্বব্যাপী এখনও অপরাধ, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরাজমান; জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই বেকার এবং দিনে ১.২৫ মার্কিন ডলারের কম আয় করে।

ব্যাংকিংপর্যটনের মতো সেবাখাতগুলি দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এছাড়া খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও উৎপাদন এবং শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি খাত। দক্ষিণ আফ্রিকা বিভিন্ন খনিজের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক, যেমন সোনা, প্লাটিনামক্রোমিয়াম। এছাড়া এখানে কয়লা ও হীরা খনন করা হয়। শিল্পকারখানাগুলিতে লোহা, ইস্পাত, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্যাদি, মোটরযান ও অন্যান্য পণ্য প্রস্তুত করা হয়। দেশের কৃষিখাতে উৎপাদিত প্রধান ফসলগুলি হল ভুট্টা, গম, আখ, কমলা বা লেবু জাতীয় ফল ও আলু। এছাড়া কৃষকেরা আঙুর ফলান, যা থেকে দ্রাক্ষারস বানানো হয়। অন্যান্য খামারজাত দ্রব্যের মধ্যে মাংস, পশমদুধ উল্লেখযোগ্য।

প্রস্তর যুগে আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে এখানে সানখোয়েখোয়ে (খোইসান ভাষাভাষী) জাতির লোকেরা খাদ্য শিকার ও সংগ্রহের জন্য চরে বেড়াত। খোয়েখোয়েরা পরবর্তীতে পশুচারণ সংস্কৃতি গড়ে তোলে। আজ থেকে ২ হাজার বছর আগে এখানে বান্টু ভাষাভাষী জাতিরা বসতি স্থাপন করে; তারা এখানে সোনা ও তামার খনি প্রতিষ্ঠা করে ও পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলির সাথে বাণিজ্যে সক্রিয়ভাবে অংশ নিত। বান্টুরাই বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের মূল পূর্বসুরী। ১৫শ শতকের শেষভাগে আফ্রিকার সর্বদক্ষিণ বিন্দুতে পর্তুগিজরা একটি বসতি স্থাপন, যা ছিল অঞ্চলটির ইউরোপীয় উপনিবেশিকীকরণের সূচনা। ১৬৫২ সালে ওলন্দাজরা দক্ষিণ-পশ্চিমের উত্তমাশা অন্তরীপে একটি উপনিবেশ স্থাপন করে। তারা ধীরে ধীরে তাদের বসতির আয়তন বৃদ্ধি করতে থাকে, কৃষিকাজ ও গবাদি পশুপালন শুরু করে। এই ঔপনিবেশিক ওলন্দাজদেরকে "বুর" (অর্থাৎ "কৃষক") নামে ডাকা হত। পরবর্তীতে তারা ওলন্দাজ ভাষা থেকে উদ্ভূত আফ্রিকান্স ভাষায় কথা বলার কারণে "আফ্রিকানার" নামে পরিচিত লাভ করে। বুররা পূর্বে বসতি স্থাপন করার চেষ্টা করার সময় স্থানীয় অনেক আফ্রিকান জাতিগোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, যাদের মধ্যে খোসা জাতি ছিল অন্যতম। ১৭৯৫ সালে ব্রিটিশ সেনারা উত্তমাশা অন্তরীপটি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং ১৮০৬ সাল নাগাদ সমগ্র ওলন্দাজ উপনিবেশটিকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হতে ১৮৩৬ সাল থেকে শুরু করে প্রায় দুই দশক ধরে ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত আফ্রিকানার জাতির লোকেরা দেশের উত্তর দিকে এক মহাযাত্রা সম্পাদন করে এবং ১৮৫০-এর দশকে সেখানে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটদক্ষিণ আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (বর্তমান ট্রান্সভাল অঞ্চল) নামের দুইটি স্বাধীন বুর প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে। ব্রিটিশরা উত্তমাশা অন্তরীপে কেপ কলোনি নামের যে ব্রিটিশ উপনিবেশটি স্থাপন করেছিল, সেটিকে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তের সমগ্র অংশ জুড়ে প্রসারিত করে। এরপর ব্রিটিশরা বুরদের রাষ্ট্রগুলিকে বিজয় করতে উদ্যত হয়। ১৮৯৯ সাল থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ও বুরেরা একটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়, যার নাম ছিলে দক্ষিণ আফ্রিকান যুদ্ধ বা বুর যুদ্ধ। যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় ঘটে এবং তারা এই দুইটি ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্রকে ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত করে। ১৯১০ সালে কেপ কলোনি বা অন্তরীপ উপনিবেশ, ট্রান্সভাল, নাটালঅরেঞ্জ রিভার নামের ব্রিটিশ উপনিবেশগুলি একত্রিত হয়ে ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা নামের একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে। নতুন এই রাষ্ট্রের দায়িত্বে ছিল শ্বেতাঙ্গ একটি সরকার। তারা ১৯৬১ সালে ব্রিটিশ কমনওয়েলথ পরিত্যাগ করে। ২০শ শতক জুড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতির মূল অমীমাংসিত প্রশ্নটি ছিল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর উপরে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য বজায় রাখার প্রশ্ন। ২০শ শতকের শুরু থেকেই শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে পৃথক থাকলেও ১৯৪৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটিতে আপার্টহাইট অর্থাৎ "পৃথকাবস্থা" নীতির প্রবর্তন করা হয়। এই ব্যবস্থার সুবাদে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর হাতে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা, সিংহভাগ জমি ও সেরা চাকুরিগুলি কুক্ষিগত হয়। ১৯১২ সালেই দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্রবর্ণের অধিবাসীরা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। তারা শুরুতে শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন পালন করত। ১৯৬০-এর দশকে শার্পভিল নগরীতে শ্বেতাঙ্গ পুলিশেরা শত শত কৃষ্ণাঙ্গ মিছিলকারীদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এর প্রতিক্রিয়াতে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বোমা বিস্ফোরণসহ অন্যান্য সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপার্টহাইটের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত রাখে। তাদের অনেক নেতাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও ধিক্কারের ঝড় ওঠে। ১৯৯০ সালে এসে নতুন রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকার আপার্টহাইট আইনগুলি একে একে রদ করা শুরু করে এবং নেলসন ম্যান্ডেলাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়। ১৯৯৪ সালে সমস্ত জাতি ও বর্ণের জন্য একটি উন্মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে নেলসন ম্যান্ডেলা দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে একটি স্থায়ী বর্ণবৈষম্যরোধী সংবিধান প্রণীত হয়।

শহরসমূহ

সম্পাদনা
 
কিম্বার্লি এবং বিগ হোল
  • 1 প্রিটোরিয়া – দেশের প্রশাসনিক রাজধানী। এখানে অনেক দূতাবাস রয়েছে। এটি এপিজ নদী অতিক্রম করে এবং ম্যাগালিজবার্গ পর্বতমালার পাদদেশে পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার তিনটি রাজধানীর মধ্যে একটি হলো প্রিটোরিয়া। এখানে সরকারের প্রশাসনিক শাখাগুলো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিদেশী দূতাবাসগুলো অবস্থিত। অন্যদিকে কেপ টাউন হলো আইন বিভাগীয় রাজধানী এবং ব্লুমফন্টেন হলো বিচার বিভাগীয় রাজধানী। প্রিটোরিয়াতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্ব শহরতলিতে একটি বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (সিএসআইআর) রয়েছে। ফলে একাডেমিক শহর হিসেবে এর বেশ খ্যাতি রয়েছে। এই শহরটি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যুরো অব স্ট্যান্ডার্ড কেও হোস্ট করে, যার ফলে শহরটি গবেষণার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
  • 2 কেপ টাউন – আইন প্রণয়নকারী রাজধানী এবং সংসদীয় আসন। এটি কেপ অব গুড হোপ-এর নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এর নামকরণ করা হয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শহর, যা সাগর ও টেবিল পর্বতের মাঝে অবস্থিত। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণপ্রিয় একটি গন্তব্য এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এটি দেশের প্রাচীনতম শহর। এটি জোহানেসবার্গের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং পশ্চিম কেপের বৃহত্তম শহর। শহরটি সিটি অফ কেপ টাউন মেট্রোপলিটন পৌরসভার অংশ। কেপ টাউন শহরের পত্তন হয় পূর্ব আফ্রিকা, ভারত ও এশিয়া মহাদেশগামী ওলন্দাজ জাহাজের জ্বালানী কেন্দ্র হিসাবে। ১৬৫২ সালের ৬ই এপ্রিল জ্যান ভান রিবেকের আগমণের মাধ্যমে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে প্রথম স্থায়ী ইউরোপীয় আবাসস্থল স্থাপিত হয়। জোহানেসবার্গের প্রসারণের পূর্ব পর্যন্ত এটিই দক্ষিণ আফ্রিকার জনবহুলতম শহর ছিল।
  • 3 ব্লোমফন্টেইন – সুপ্রিম কোর্ট অফ আপিলের অবস্থান, যা সংবিধানবিহীন বিষয়গুলির জন্য সর্বোচ্চ আদালত।
  • 4 ডারবানকোয়াজুলু-নাটাল এর বৃহত্তম শহর, দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম শহর, এবং ভারতীয় সম্প্রদায়ের কেন্দ্রস্থল। এটি স্থানীয় পর্যটকদের কাছে সমুদ্র উপকূলীয় গন্তব্য হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ডারবান দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম উত্‍পাদন কেন্দ্র (জোহানেসবার্গের পর)। এই শহরটি দক্ষিণ আফ্রিকা দেশের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দেশের ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর। মনোরম জলবায়ু এবং দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত থাকার জন্য শহরটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও জনপ্রিয়। প্রায় ৩৪.৪ লক্ষ অধিবাসী সমন্বিত এই শহরটি আংশিকভাবে এ-থেকোয়িনী পৌরনিগমের অন্তর্ভুক্ত। ২০১৫ র মে মাসে একে দোহা, হাভানা, প্রভৃতি শহরের সাথে সাথে নুতন সপ্তম আশ্চর্য নগরীর তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
  • 5 জোহানেসবার্গ – দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং সাউদার্ন আফ্রিকা তে প্রবেশের সবচেয়ে সাধারণ প্রবেশদ্বার। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বৃহত্তম শহর। এই শহর গুটেং এর অঘোষিত রাজধানী।গুটেং দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক রাজধানী। ২০১১ সালে, জোহানেসবার্গ শহরের জনসংখ্যা ৪,৪৩৪,৮২৭ জন ছিল, এটা দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যায় বৃহত্তম শহর। একই বছরে, বৃহত্তর জোহানসবার্গ মেট্রোপলিটান এলাকার জনসংখ্যা ৭,৮৬০,৭৮১ জন ছিল। ১৮৮৬ সালে এই শহর প্রতিষ্ঠিত হয় যখন এখানে সোনার খনি আবিস্কার করা হয়েছিল। ১০ বছরের মধ্যে অঞ্চলটিতে ১,০০,০০০ স্থানীয় বাসিন্দার সমাবেশ ঘটে। ১৯৯৪ সালে সোয়েটো জোহানেসবার্গের অংশ হয়ে যায়। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল শহর। এ শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৩৬৪ জন/প্রতি বর্গ কিলোমিটারে।
  • 6 কিম্বার্লিকিমবার্লি হ'ল দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর অন্তরীপ প্রদেশে অবস্থিত রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। শহরটি ভাল এবং অরেঞ্জ নদীর সঙ্গমস্থল থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। অতীত হীরার খনি এবং দ্বিতীয় অ্যাংলো-বোয়ার যুদ্ধ এর সময় অবরোধ এর কারণে শহরটির যথেষ্ট ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। ব্রিটিশ ব্যবসায়ী সিসিল রোডস এবং বার্নি বার্নাতোর সৌভাগ্যের উন্মেষ এই কিমবার্লিতেই ঘটেছিল। খনির শহরের প্রথম দিনগুলিতে রোডস ডি বিয়ারস নামের প্রখ্যাত হীরক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
  • 7 পোলোকোয়ানেলিম্পোপো'র রাজধানী (পূর্বে পিটার্সবার্গ নামে পরিচিত) এবং ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কজিম্বাবুয়ে এর উত্তরের অংশ পরিদর্শনের জন্য একটি ভালো কেন্দ্রস্থল।
  • 8 গকেবার্হা/পোর্ট এলিজাবেথগকেবেরহা (স্থানীয়ভাবে: [ᶢǃʱɛ̀ɓéːxà]; ইংরেজি:/kɛˈbɛərxə/keb-AIR-khə), পূর্বে নামকরণ করা হয়েছে পোর্ট এলিজাবেথ দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব কেপ প্রদেশের প্রধান সমুদ্রতীরবর্তী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর। এর নাম বন্ধুত্বপূর্ণ বা বায়ুপূর্ণ শহর।  গকেবেরহা নেলসন ম্যান্ডেলা বে মেট্রোপলিটন এলাকার সদর দপ্তর। এটি পূর্ব কেপের সবচেয়ে জনবহুল ও দক্ষিণ আফ্রিকার ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর। গকেবেরহা পূর্ব কেপ প্রদেশের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। শহরটি মনোরম আবহাওয়ার জন্য বিশ্বের প্রধান পাঁচটি শহরের একটি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।  এর শহরের উপকূলীয় রেখায় অনেকগুলো সৈকত রয়েছে। ম্যালেরিয়ামুক্ত বিগ ফাইভ গেম সংরক্ষণাগারের নিকটে অবস্থিত একমাত্র শহর। পোর্ট এলিজাবেথের অর্থনীতি গাড়িশিল্পের সাথেও সম্পর্কিত। দক্ষিণ আফ্রিকা ও সাবসাহারান আফ্রিকার বিনিয়োগের জন্য এটি এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। গত এক দশকে এখানে ১৯.৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ফরচুন ৫০০ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকটিই পোর্ট এলিজাবেথে কার্যক্রম পরিচালনা করে। শার্ক রক পিয়ের, নেলসন ম্যান্ডেলা বে স্টেডিয়াম ও ডোনকিন সংরক্ষণাগার শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অবকাশযাপন করতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যটকরা বিপুল সংখ্যায় পোর্ট এলিজাবেথে আগমন করেন।
  • 9 আপিংটন – এটি শুষ্ক উত্তর কেপ প্রদেশে অবস্থিত, এবং কালাহারি মরুভূমি এবং উত্তর কেপ'র জাতীয় উদ্যানগুলো অন্বেষণ করার জন্য একটি ভালো ভিত্তি।

অন্যান্য গন্তব্যস্থল

সম্পাদনা

জাতীয় উদ্যান

সম্পাদনা
আরও দেখুন: দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় উদ্যানসমূহ
 
ম্পুমালাঙ্গায় একটি ব্যক্তিগত রিজার্ভে গন্ডার

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রাকৃতিক ইতিহাসে আগ্রহী যে কারও জন্য একটি স্বর্গরাজ্য। পার্ক, খামার, ব্যক্তিগত রিজার্ভ এবং এমনকি রাস্তায়ও বিপজ্জনক এবং বিপন্ন বিভিন্ন প্রজাতি দেখা যেতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় উদ্যান সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য দেখুন আফ্রিকার উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় উদ্যান। প্রায় সমস্ত পার্ক এবং ভৌগোলিক স্থানে হাইকিং ট্রেইল পাওয়া যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় হাইকিং এর মধ্যে সেসব তথ্য রয়েছে।

 
রাজধানী প্রিটোরিয়া
মুদ্রা rand (ZAR)
জনসংখ্যা ৬২ মিলিয়ন (2022)
বিদ্যুৎ ২৩০ ভোল্ট / ৫০ হার্জ (ইউরোপ্লাগ, টাইপ ডি, বিএস ৫৪৬, IEC 60906-1)
দেশের কোড +27
সময় অঞ্চল ইউটিসি+০২:০০, ইউটিসি+০৩:০০, Africa/Johannesburg
জরুরি নম্বর 112 (পুলিশ, জরুরি চিকিৎসা সেবা, দমকল বাহিনী)
গাড়ি চালানোর দিক বাম

যদি আপনি দক্ষিণ আফ্রিকাতে ভ্রমণ করতে চান, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি ভালো জায়গা হতে পারে আপনার যাত্রা শুরু করার জন্য। যদিও আপনি দক্ষিণ আফ্রিকার যেকোনো দেশে উড়ে যেতে পারেন, বেশিরভাগ ফ্লাইট যাই হোক না কেন দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্য দিয়ে যাবে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা আপনাকে এই অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য মানিয়ে নিতে সহায়ক।

যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু গ্রামীণ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র এবং কম উন্নত অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে এবং শহরের কিছু অংশে দারিদ্র্যের মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে এবং রাতারাতি বস্তি গড়ে উঠতে পারে, তবুও অগ্রগতি হচ্ছে। প্রায় ৪৬ বছর ধরে চলমান বর্ণবৈষম্যের শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রকৃতপক্ষে, দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন সূচক (Human Development Index), যা বর্ণবৈষম্যের শেষের দিকে ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছিল, ১৯৯৬ সালের পর থেকে নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে, যার মূল কারণ এডস মহামারি, তবে প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রের সম্পদের অপব্যবহারও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের বৈষম্য আরো বেশি হয়েছে। তবুও, দক্ষিণ আফ্রিকা একটি সু-উন্নত রাষ্ট্র এবং বেসরকারি বিনিয়োগে সমৃদ্ধ অবকাঠামো গড়ে তুলেছে এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রযুক্তির সাথে আপডেট রয়েছে। নির্মাণ, সড়ক, প্রযুক্তি, পণ্য উৎপাদন, ওষুধ এবং হাসপাতাল, যোগাযোগ এবং আইটি, বিমানচালনা, ব্যাংকিং, বিনিয়োগ, পানীয় এবং খাদ্য সরবরাহের জাতীয় মানের মান বিশ্বের সেরা মানের সাথে তুলনীয়।

সরকার স্থিতিশীল, যদিও কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখা গেছে, যেমন সীমান্ত চেকপোস্টে পাসপোর্টে সিল দেওয়ার জন্য অভিবাসন কর্মকর্তারা ফি দাবি করা বা ভিসা ও পারমিট নিয়ে কাজ করা হোম অ্যাফেয়ার্সের কর্মকর্তা, ট্রাফিক অফিসারদের অবৈধভাবে জরিমানা আরোপের চেষ্টা, এবং অপরাধমূলক সিন্ডিকেটের দায়মুক্তি কেনা। বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কখনো কখনো উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে সুবিধা আদায় করে। তবুও সরকার এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং মানবাধিকার সম্পর্কে উচ্চ মর্যাদা পোষণ করে এবং প্রেস মুক্ত এবং সেন্সরবিহীন। বিচারব্যবস্থা এবং সংবিধানিক আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন।

যদিও দেশটি কাঠামোগত সমস্যার সম্মুখীন, দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বহুমুখী অর্থনীতির অধিকারী, এবং এটি একমাত্র আফ্রিকান দেশ যা প্রধান অর্থনীতির এলিট জি২০ গ্রুপের সদস্য।

অর্থনীতি

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকা তার মদ এবং ফলের জন্য সুপরিচিত। এর কৃষি উৎপাদন দেশটিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখে, যেখানে ভুট্টা, আখ এবং সূর্যমুখী তেল প্রধান শস্য। সমুদ্র মাছ ধরা এবং প্রক্রিয়াকরণ ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এটি প্লাটিনাম এবং এর সাথে সম্পর্কিত ধাতুর বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক এবং সোনা, লোহা, কয়লা, হীরা, নিকেল, ক্রোমিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল এবং ইউরেনিয়ামের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের প্রধান উৎপাদক। দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক শিল্পজাত পণ্যও উৎপাদন করে এবং কৃত্রিম জ্বালানি উৎপাদনে পথপ্রদর্শক। এটি একটি বিশাল সশস্ত্র বাহিনী বজায় রাখে এবং আফ্রিকার রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী খেলোয়াড়।

এই সমস্ত সত্ত্বেও, অর্থনীতির আরো সম্ভাবনা রয়েছে যা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, যা ৩৫% বেকারত্বের হার দ্বারা প্রতিফলিত হয়। অনেক দক্ষিণ আফ্রিকান এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক একমত যে এর কারণ হলো দুর্নীতি এবং অপশাসন। তবে, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ক্ষমতায় আসা নতুন প্রশাসন শাসনব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা পরিষ্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবং ইতিমধ্যে তা বাস্তবায়নে কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো দক্ষ পেশাদারদের "ব্রেন ড্রেন", যা ২০০০ সাল থেকে আরও খারাপ হয়েছে এবং এতে ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিল্পী এবং শিক্ষকদের মতো সমস্ত ধরনের দক্ষ পেশাদাররা অন্তর্ভুক্ত।

দক্ষিণ আফ্রিকা আফ্রিকার দক্ষিণতম প্রান্তে অবস্থিত, যার দীর্ঘ উপকূলরেখা ২,৫০০ কিমি (১,৫৫৩ মাইল) এরও বেশি বিস্তৃত এবং এটি দুটি মহাসাগরের (দক্ষিণ আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগর) বরাবর বিস্তৃত। এটি দেশের অভ্যন্তরে অপেক্ষাকৃত শুষ্ক, এবং কালাহারি মরুভূমি, বিশেষত উত্তর কেপ এবং উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক অঞ্চলে এই শুষ্কতার প্রমাণ। প্রধান দুটি নদী ব্যবস্থা হলো লিম্পোপো, যা উত্তর সীমান্ত বরাবর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়, এবং অরেঞ্জ নদী, যা প্রায় মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। ড্রাকেনসবার্গ পর্বতমালা পূর্ব কেপ থেকে শুরু করে কোয়াজুলু-নাটাল এবং ইসওয়াতিনি পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে উচ্চতা ৩০০০ মিটারেরও বেশি (মাফাদি ৩৪৫০ মিটার)। ফ্রি স্টেট, গৌতেং, ম্পুমালাঙ্গা, লিম্পোপো এবং উত্তর-পশ্চিমের হাইফেল্ট এবং প্লাটারল্যান্ড অঞ্চলগুলো ১২০০ থেকে ১৮০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং এটি বিশ্বের সেরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলোর কিছু অবস্থান। দক্ষিণ কেপ এবং কৃষি জমির অঞ্চল থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরের উপকূলরেখা ধরে কোয়াজুলু-নাটাল এবং ইসওয়াতিনি ও মোজাম্বিক সীমান্ত পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলগুলো দেশের সবচেয়ে ঘন সবুজ অঞ্চল সরবরাহ করে।

ইতিহাস

সম্পাদনা

আফ্রিকার দক্ষিণপ্রান্ত হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে খোইখোই (হটেন্টটদের জন্য সম্মিলিত নাম, যদিও এটি একটি (অপমানজনক) শব্দ), বুশম্যান (সান) এবং বান্তু জনগোষ্ঠীর বসবাসস্থল ছিল। খোইসান বা আধুনিক খোয়েখোয়েগোওব অরথোগ্রাফি অনুসারে খোয়েসান (উচ্চারণ: [kxʰoesaːn]), একটি কৃত্রিম সমষ্টিগত নাম যা দক্ষিণ আফ্রিকার তথাকথিত "নন-বান্তু" আদিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হয়, খোয়েখোইন (পূর্বে "খোইখোই") এবং সান বা সাখোয়েন (ডাচ ভাষায়: বুসম্যান, ইংরেজিতে: বুশম্যান) সংমিশ্রণে। খোইসান উপজাতির রক আর্ট এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক স্থানে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, বান্তু উপজাতিরা আজকের দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরতম অঞ্চলে ধীরে ধীরে প্রায় ২,৫০০ বছর আগে প্রবেশ শুরু করে। বর্তমানের মতো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলি তখন থেকেই উত্তর, পূর্ব, মধ্য-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত ছিল। পশ্চিম এবং উত্তর কেপ প্রদেশগুলির মরুভূমি এবং আধা-মরুভূমি অঞ্চল এবং পূর্ব কেপ প্রদেশের পশ্চিম অংশগুলো বান্তুদের দ্বারা বাসযোগ্য ছিল না, কারণ শুষ্ক জলবায়ু, সীমিত ঋতুকালীন বৃষ্টিপাত, বিরল উদ্ভিদকুল এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব বড় আকারের জনসংখ্যা এবং গবাদি পশুর পালকে সমর্থন করতে পারেনি।

এনগুনি গবাদি পশু ছিল বান্তুদের প্রধান জীবিকা এবং এটি উপজাতীয় সমাজে বহু সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করত, যখন বান্তু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং তারা সবুজ উর্বর অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। গবাদি পশু আজও মর্যাদার প্রতীক এবং প্রাথমিক মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে বিনিময়ের দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মত মূল্যের মাধ্যমে এটি টাকার কার্যক্রম পূরণ করত।

কারু, কেপ উপদ্বীপ, কালাহারি, নামাকুয়া, গ্রাকুয়া এবং বুশম্যানল্যান্ড অঞ্চলগুলো ধীরে ধীরে "খোইসান" অঞ্চলে পরিণত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। এই শুষ্ক এলাকাগুলোতে, "খোইসান" যারা আগে থেকেই আধা-যাযাবর ছিল, স্থায়ীভাবে বসবাস করত না বলে বিশ্বাস করা হয়, কারণ শুষ্ক মরুভূমি গেম এবং ক্রমহ্রাসমান জল সম্পদ খোঁজার জন্য তাদের শীতকালীন অভিবাসন নির্ধারিত ছিল। বোর "ভূর্ত্রেকাররা" (দেখুন পরবর্তী প্যারাগ্রাফ) যখন এই এলাকায় প্রবেশ করে এবং বোর্হোল এবং কন্টেইনমেন্ট পন্ড স্থাপন করে, তখন এই অঞ্চলে স্থায়ী বসতি স্থাপন সম্ভব হয়।

দক্ষিণ-পূর্বে, জুলু রাজ্য রাজা শাকার অধীনে একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়, যিনি ১৮১৬-১৮২৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেন এবং তিনি একজন দক্ষ যোদ্ধা এবং সামরিক কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

আজকের দিনে, আরো নির্ভরযোগ্য জল সরবরাহের উৎস এবং আধুনিক জল সংরক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষিকাজ প্রধানত ভেড়া এবং উটপাখির খামার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, কারণ এই প্রাণীগুলি বিরল খাদ্য এবং সীমিত জলের সাথে ভালভাবে খাপ খায়।

ঔপনিবেশবাদ

সম্পাদনা

পর্তুগিজ নাবিক বার্তোলোমিও ডিয়াস ১৪৮৮ সালে প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে কেপ অফ গুড হোপ-এর চারপাশে ভ্রমণ করেন। ১০ বছর পরে, বাস্কো দা গামা তার প্রথম ভারত ভ্রমণ করেন, তবে পর্তুগিজরা কেপ অফ গুড হোপকে স্টপওভার হিসেবে উপেক্ষা করেছিল; প্রথম স্থায়ী ইউরোপীয় বসতি ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৫২ সালের এপ্রিল মাসে কেপটাউনে স্থাপন করে। ১৭০০ এর শেষের দিকে, বোয়াররা (অর্থাৎ স্থায়ী কৃষকরা) ধীরে ধীরে প্রথমে পশ্চিমে উপকূল বরাবর এবং পরে উত্তরদিকে অভ্যন্তরে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৭৯৫ সালে, ব্রিটেন নেপোলিয়নের যুদ্ধের ফলে ডাচদের কাছ থেকে কেপের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে, এবং ১৮২০ সালে একটি বড় ব্রিটিশ উপনিবেশিক দল সেখানে বসতি স্থাপন করে, যা ডাচ বোয়ারদের জীবনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। ১৮৩৫ সালে, "ভূর্ত্রেকাররা" নামে পরিচিত একটি বড় বোয়ার দল ব্রিটিশ শাসনে অসন্তুষ্ট হয়ে গ্রুট ট্রেক নামে পরিচিত বৃহত্তর অভিবাসন শুরু করে এবং উত্তর দিকে অভ্যন্তরে নিজেদের ওরাঞ্জ ফ্রি স্টেট এবং ট্রান্সভাল প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ছিল। এদিকে, ব্রিটিশরা ১৮৭৯ সালে জুলু রাজ্যকে অ্যাংলো-জুলু যুদ্ধ এ পরাজিত করে, ফলে জুলু জনগণের উপর ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

আধুনিক ইতিহাস

সম্পাদনা
আরও দেখুন: ২০শ শতাব্দীর দক্ষিণ আফ্রিকাকিম্বারলিতে বৃহৎ হীরার মজুদ এবং ট্রান্সভালে সোনার সন্ধান পাওয়ার পর, ১৮৮০ এবং ১৮৯৯ সালে দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধগুলো ইংরেজ বিনিয়োগ স্বার্থ দ্বারা পরিকল্পিত ছিল, যা বোয়ার প্রজাতন্ত্র এবং ব্রিটিশদের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি করে, উদ্দেশ্য ছিল খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ বোয়ারদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া। দ্বিতীয় যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল যখন ব্রিটিশ উপনিবেশিকরা ১৮৮৬ সালে উইটওয়াটারস্যান্ড অঞ্চলে সোনা আবিষ্কারের পর সেখানে ছুটে আসে। দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধ (আফ্রিকান: Die Tweede Vryheidsoorlog বা 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ') বিশেষভাবে নিষ্ঠুর ছিল, কারণ ব্রিটিশ প্রশাসন বোয়ার বেসামরিক জনসংখ্যাকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি করেছিল, যা ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন গণহত্যার রেকর্ডগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। এই যুদ্ধটি প্রথম চলচ্চিত্রায়িত যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি, এবং এর ফলাফল হিসাবে যুক্তরাজ্যের জনমত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল।

১৯০২ সালে ভারেনিজিং চুক্তি দ্বারা শান্তি প্রতিষ্ঠার পর, ১৯১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিয়ন গঠিত হয়, যা বিভিন্ন বোয়ার প্রজাতন্ত্র এবং ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিকে একটি একীভূত রাষ্ট্রে পরিণত করে। এই ইউনিয়ন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং কোরীয় যুদ্ধ-এ কাঁচামাল, অস্ত্র উৎপাদন এবং সৈন্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ১৯৬১ সালে, গণপ্রজাতন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকা গঠিত হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিটিশ কমনওয়েলথ থেকে বেরিয়ে আসে। এই সময়ে, অ-ইউরোপীয় জনগণ এই রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলির বাইরে রাখা হয়েছিল, যেহেতু তাদের নিজ নিজ উপজাতীয় আইনি ব্যবস্থার অধীনে স্বশাসনের জন্য নিজস্ব সার্বভৌম ভূমি প্রদান করা হয়েছিল।

 
রোবেন দ্বীপে নেলসন ম্যান্ডেলার কারাগার

১৯৪৮ সালে, ন্যাশনাল পার্টি ক্ষমতায় আসে। এনপি (ন্যাশনাল পার্টি) বেশ কিছু এপার্টহেইড আইন প্রণয়ন করে, যা বিভিন্ন উপজাতির জন্য পৃথক, স্বাধীন এবং সার্বভৌম "হোমল্যান্ড" গঠন করে, যাতে তারা নিজেদের আইন ও শাসনব্যবস্থা অনুযায়ী স্বশাসন পরিচালনা করতে পারে। তবে, খুব শিগগিরই এপার্টহেইড প্রথা বর্ণবৈষম্য এবং দমননীতির সমার্থক হয়ে ওঠে, কারণ লক্ষ লক্ষ অশ্বেতাঙ্গ মানুষকে জোরপূর্বক তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) নিষিদ্ধ করা হয় এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়, কারণ তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়েছিল। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও বিপজ্জনক এবং উপদ্রব হিসাবে বিবেচনা করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, এবং অবাধ চিন্তার মানুষ এবং অ-পক্ষপাতদুষ্ট এপার্টহেইড বিরোধী কর্মীদেরও হয়রানি, একঘরে করা, কারাবন্দি করা বা হত্যা করা হয়।

এই সময়ে, এপার্টহেইড ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশে ক্রমাগত বিক্ষোভ দেখা যায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে অলিম্পিক গেমস এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে, অনেক শ্বেতাঙ্গ নাগরিক পরিবর্তন অনিবার্য বলে স্বীকার করতে শুরু করেন, কারণ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দক্ষিণ আফ্রিকায় তীব্র প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। এ কারণে নিরাপত্তা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং ন্যাশনাল পার্টির মধ্যপন্থীরা এএনসি নেতাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার উদ্যোগ নেন, যা ১৯৯০ সালে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়।

১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে, রাজনৈতিক সহিংসতা তীব্রতর হয়, যখন চরমপন্থীরা তাদের নিজস্ব স্বপ্নের দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এএনসি-এনপি শান্তি আলোচনাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে। ১৯৯২ সালে, ৭৩% শ্বেতাঙ্গ জনগণ একটি গণভোটে এপার্টহেইড ব্যবস্থা বিলোপের পক্ষে ভোট দেয়। এর ফলে ১৯৯৩ সালে একটি নতুন সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো একটি সর্বজনীন গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সমস্ত দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকরা তাদের জাতিগত বা সাংস্কৃতিক পটভূমি নির্বিশেষে ভোট দিতে সক্ষম হয়। প্রাক্তন রাজনৈতিক বন্দী নেলসন ম্যান্ডেলা দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। এএনসি ৬৩% সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং ন্যাশনাল পার্টির সাথে মিলিত হয়ে একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে। যদিও নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বের পর "রেইনবো নেশন" তৈরির ব্যাপারে অনেক আশা ছিল, ১৯৯৯ সালে ম্যান্ডেলা পদত্যাগ করার পর এবং থাবো এমবেকি ক্ষমতায় আসার পরে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি খারাপ হতে শুরু করে। এমবেকি বিতর্কের মধ্যে পড়েন যখন তিনি এইডস এবং এইচআইভির মধ্যে সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং দাবি করেন যে দারিদ্র্য এইডসের প্রধান কারণ। এমবেকি দক্ষিণ আফ্রিকার হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ড্রাগ নিষিদ্ধ করেন, যার ফলে অগণিত এইচআইভি পজিটিভ রোগী অকাল মৃত্যুর সম্মুখীন হন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এমবেকিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং ২০০৯ সালের মে মাসে জ্যাকব জুমা তার স্থলাভিষিক্ত হন। জুমা দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন এবং কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি, তাই গরিব কালো দক্ষিণ আফ্রিকান জনগণ আশা করেছিলেন যে তিনি তাদের জন্য দারিদ্র্য বিমোচনের নীতি বাস্তবায়ন করবেন। তবে, জুমার শাসনকালে ব্যাপক দুর্নীতি কেলেঙ্কারি সামনে আসে এবং ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হন সিরিল রামাফোসা, যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা এবং বিশাল সম্পদের ফাঁক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদিও তার নীতিগুলো সফল হবে কিনা তা এখনও দেখা বাকি।

যদিও বৈষম্যমূলক নীতিগুলির কারণে একটি কালো উচ্চবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছে, তবে বেশিরভাগ কালো জনগণ এখনও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে এবং তাদের কাছে সঠিক স্বাস্থ্য সুবিধা বা ভালো শিক্ষার সুযোগ নেই। এর ফলে জাতিগত উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যেখানে কালো সম্প্রদায়ের কিছু চরমপন্থী সদস্যরা সাদা সম্প্রদায়ের সম্পত্তি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে, যা ঔপনিবেশিক শাসন এবং বর্ণবাদের সময়ে সংঘটিত অত্যাচারের প্রতিশোধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে, অনেক ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ মানুষ কালো সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দোষারোপ করে যে তারা দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেশটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিচালনা করছে। ভারতীয় এবং রঙিন সম্প্রদায়, যারা বর্ণবাদের অধীনে কালো সম্প্রদায়ের মতো বৈষম্যের শিকার হয়েছিল কিন্তু কম মাত্রায়, তারা "তখন সাদা নয়, এখন কালো নয়" এই কথার মাধ্যমে বৈষম্য মোকাবিলা করে আসছে। একইভাবে, কোইসান জনগণ, যারা কালো বান্টু জনগণের আগমনের অনেক আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করেছিল, তাদের অনেকাংশই পরবর্তীকালে বৈষম্যমূলক নীতির বাইরে রয়ে গেছে, যার ফলে বান্টু-প্রধান সরকার সম্পর্কে কিছু মাত্রায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

আধুনিক দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, এবং বহু জাতিগত গোষ্ঠী এই জনসংখ্যার অংশ। জুলু জনগণ, যাদের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০%, তাদের মধ্যে বৃহত্তম গোষ্ঠী। শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যেও দুটি প্রধান জাতিগত গোষ্ঠী রয়েছে; আফ্রিকানাররা, যারা ডাচ বসতি স্থাপনকারীদের বংশধর এবং শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ, এবং অ্যাংলো-দক্ষিণ আফ্রিকানরা, যারা ব্রিটিশ বসতি স্থাপনকারীদের বংশধর। দক্ষিণ আফ্রিকায় আফ্রিকার বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায়ও রয়েছে, বেশিরভাগই লিথুয়ানীয় বংশোদ্ভূত আশকেনাজি ইহুদি। এই বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে, মালাওয়ি, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয়, মালয়, চীনা, পর্তুগিজ, গ্রীক, ইংরেজি, ইতালীয় এবং মিশ্র বংশোদ্ভূত জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা একটি সত্যিকারের রেইনবো জাতির প্রতিফলন ঘটায়। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকায় কোইখোই এবং সান জনগণের পুরনো সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য এখনো টিকে আছে, যা ১০,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় অপরিবর্তিত জীবনধারা প্রদর্শন করে। সাধারণভাবে, বেশিরভাগ মানুষ তাদের পটভূমি, রঙ বা ধর্ম নির্বিশেষে বন্ধুত্বপূর্ণ, সহায়ক এবং দর্শকদের সম্পর্কে কৌতূহলী।

অবসর গন্তব্য

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার ইমিগ্রেশন নিয়মাবলী একটি বিশেষ "অস্থায়ী আবাসিক পারমিট" সিস্টেম প্রদান করে যা কিছু বছর পরে "স্থায়ী আবাসিক মর্যাদা" তে উন্নীত করা যেতে পারে। এটি বয়স্ক বা অবসরপ্রাপ্ত বিদেশীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ হতে পারে যারা সান্নিকটে ভাল স্বাস্থ্য অবস্থায় আছেন এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বৈধ আয়ের উৎস বা পেনশন আছে এবং একটি পরিচ্ছন্ন অপরাধমূলক রেকর্ড আছে। এমন সুযোগটি উত্তর ইউরোপীয়দের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে যারা রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সন্ধানে আছেন, যেখানে জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম এবং আফ্রিকান ঐতিহ্যগুলো এখনও বজায় রাখা হচ্ছে। এছাড়া, সময় অঞ্চলও প্রায় একই, যা তাদের নিজ দেশ থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। এই ধরনের পারমিটধারীরা আইনি দিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকদের মতো আচরণ করা হয় এবং দেশটির সকল আইন ও নিয়মের অধীন হতে হয়।

স্থানীয় নাম

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ পরবর্তী সময়ে অনেক অঞ্চলের, শহরের, রাস্তার এবং ভবনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, এবং কিছু নাম এখনও পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো মাঝে মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে কারণ নতুন নামগুলো এখনও খুব বেশি পরিচিত নয়। এই ভ্রমণ নির্দেশিকা নতুন আনুষ্ঠানিক নাম ব্যবহার করবে, তবে সম্ভব হলে পুরানো নামগুলোও উল্লেখ করা হবে।

আবহাওয়া

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া উত্তর-পশ্চিমে মরুভূমি এবং আধা-মরুভূমি থেকে পূর্ব উপকূল বরাবর উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে বৈচিত্র্যময়। দেশের বেশিরভাগ অংশের জন্য বৃষ্টির মৌসুম গ্রীষ্মকালে হয়, তবে ওয়েস্টার্ন কেপ অঞ্চলে বৃষ্টি শীতকালে হয়। ইস্টার্ন কেপ এলাকায় সারা বছরই সমানভাবে বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালে তাপমাত্রা প্রায় শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে, এবং গ্রীষ্মকালে কিছু স্থানে তাপমাত্রা ৩৫ °সেলসিয়াস (৯৫ °ফারেনহাইট) এর উপরে চলে যায়।

দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া পরিষেবা আপডেটকৃত আবহাওয়ার তথ্য, পূর্বাভাস এবং রাডার চিত্র সরবরাহ করে।

ফুটবল, ক্রিকেট, রাগবি ইউনিয়ন এবং ট্র্যাক এবং ফিল্ড অ্যাথলেটিক্স দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং অংশগ্রহণমূলক খেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার সাঁতার, সাইক্লিং এবং টেনিস মাঝে মাঝে বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদ তৈরি করে। ২০১০ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করে, যা আফ্রিকা মহাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৫ সালে রাগবি বিশ্বকাপ-এরও আয়োজন করেছিল, যা আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত একমাত্র টুর্নামেন্ট ছিল।

সরকারি ছুটির দিন

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি ছুটির দিনগুলো হলো:

  • নিউ ইয়ার্স ডে (১ জানুয়ারি)
  • মানবাধিকার দিবস (২১ মার্চ)
  • ইস্টার উইকেন্ড মার্চ বা এপ্রিল মাসের একটি ৪ দিনের লম্বা ছুটির সপ্তাহান্ত, যার মধ্যে রয়েছে "গুড ফ্রাইডে", "হলি স্যাটারডে", "ইস্টার সানডে" এবং "ইস্টার মানডে", তারিখগুলো পশ্চিমা খ্রিস্টান ঐতিহ্য অনুসারে নির্ধারণ করা হয়।
  • স্বাধীনতা দিবস (২৭ এপ্রিল)
  • শ্রমিক দিবস (১ মে)
  • যুব দিবস (১৬ জুন)
  • নারী দিবস (৯ আগস্ট)
  • ঐতিহ্য দিবস (২৪ সেপ্টেম্বর)
  • সমঝোতা দিবস (১৬ ডিসেম্বর) - দেখুন Bloodriver
  • বড়দিন (২৫ ডিসেম্বর)
  • দয়া দিবস (২৬ ডিসেম্বর)

যদি কোনো সরকারি ছুটি রবিবারে পড়ে, তবে পরবর্তী সোমবারও ছুটির দিন হিসেবে গণ্য হবে।

স্কুল বছর চারটি মেয়াদে বিভক্ত। স্কুল ছুটি ডিসেম্বরের শুরু থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি, এপ্রিলের শুরুতে, জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি এবং সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে হয়। এই সময়গুলোতে বেশিরভাগ দক্ষিণ আফ্রিকান ছুটিতে যায় এবং থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। প্রধান ছুটির সময় হল গ্রীষ্মের মাঝামাঝি (ডিসেম্বর-জানুয়ারি)।

 
প্রোটিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় ফুল

পর্যটন তথ্য

সম্পাদনা

সাউথ আফ্রিকান ট্যুরিজম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু অফিস পরিচালনা করে। তাদের ওয়েবসাইট চেক করুন অথবা আপনার দেশে তাদের অফিসের সাথে যোগাযোগ করুন অতিরিক্ত তথ্য বা সাহায্যের জন্য।

কথোপকথন

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় ১১টি সরকারি ভাষা রয়েছে, যথা আফ্রিকানস, সাউদার্ন ন্দেবেলে, খোসা, জুলু, সোয়াজি, নর্দান সোথো, সাউদার্ন সোথো, ত্সওয়ানা, ত্সোঙ্গা, বেন্ডা এবং ইংরেজি।

আফ্রিকানস ভাষাটি সাদা এবং রঙিন জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের মাতৃভাষা, যা প্রায় ১৪% মানুষের প্রথম ভাষা এবং ৩০% মানুষের দ্বারা কথ্য। প্রায়ই বিদেশিরা ভুল করে আফ্রিকানসকে 'আফ্রিকান' বা 'আফ্রিকান ভাষা' বলে থাকেন, যা ভুল। কারণ 'আফ্রিকান' বলতে স্থানীয় আফ্রিকান ভাষাগুলি বোঝায়, যেমন: জুলু, খোসা, পেদি ইত্যাদি। আফ্রিকানস ভাষার উৎপত্তি ১৭শ শতাব্দীর ডাচ উপভাষা থেকে, তাই ডাচ ভাষাভাষীরা এটি বুঝতে পারেন এবং কিছু ক্ষেত্রে জার্মান ভাষাভাষীরাও এটি নির্ধারণ করতে সক্ষম হন।

অন্যান্য প্রধান ভাষার মধ্যে রয়েছে জুলু (২৩%/৪৬%; প্রধানত KwaZulu-Natal অঞ্চলে; দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ভাষাগোষ্ঠী) এবং খোসা (১৬%/৩৩%; প্রধানত Western Cape এবং Eastern Cape এলাকায়), পেদি (৯%/২৩%), ত্সওয়ানা (৮%/২০%), সোথো (৮%/২০%) এবং ত্সোঙ্গা (৫%/১০%)।

ইংরেজি হলো লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা, যা অধিকাংশ শহুরে দক্ষিণ আফ্রিকানদের দ্বিতীয় ভাষা, যদিও এটি প্রথম ভাষা হিসেবে কেবলমাত্র একটি ছোট সাদা সম্প্রদায়ের (মোটামুটি ১০%/৩৩%) দ্বারা কথ্য। গ্রামীণ কালো সম্প্রদায়গুলিতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সীমিত হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকান ইংরেজি প্রধানত ব্রিটিশ বানান এবং শব্দভান্ডার অনুসরণ করে, তবে এটি আফ্রিকানস এবং অন্যান্য স্থানীয় ভাষার দ্বারা প্রভাবিত।

কিছু সাধারণ শব্দ যা আপনি শুনতে পারেন:

  • eish — যেমন, "eish, আজকে অনেক গরম", "eish, এটি অনেক দামি" বা "eish, এটা অনেক দূরে"
  • lekker — সুন্দর, উপভোগ্য
  • howzit — কেমন আছো? (সাধারণত এটি একটি আনুষ্ঠানিক প্রশ্ন নয়)
  • yebo — হ্যাঁ
  • boet, bru, china বা ou — ভাই বা বন্ধু (dude বা bro এর সমতুল্য)
  • koppie — একটি ছোট পাহাড় (এটি কাপও বোঝাতে পারে)
  • Madiba — নেলসন ম্যান্ডেলা
  • Molo — খোসা ভাষায় হ্যালো
  • robot — ট্রাফিক লাইট
  • tannie — (আন্টি) একজন বয়স্ক মহিলার জন্য শ্রদ্ধাসূচক শব্দ
  • oom — (আঙ্কেল) একজন বয়স্ক পুরুষের জন্য শ্রদ্ধাসূচক শব্দ
  • tinkle — ফোন কল
  • just now — কিছুক্ষণের মধ্যে (আফ্রিকানস থেকে "net-nou")
  • now nowjust now এর চেয়ে দ্রুত! (আফ্রিকানস থেকে "nou-nou")
  • braai — বারবিকিউ
  • cheers — বিদায় জানানো, ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি টোস্ট করার জন্য ব্যবহৃত
  • heita — হ্যালো
  • sharp — (সাধারণত দ্রুত উচ্চারিত হয়) ঠিক আছে
  • sure-sure — সঠিক, সম্মতি, ধন্যবাদ
  • ayoba — কিছু কুল বা দারুণ
  • zebra crossing — ক্রসওয়াক, যা কালো ও সাদা দাগযুক্ত যা সাধারণত ক্রসওয়াকে আঁকা থাকে
  • bakkie — পিক-আপ ট্রাক (আফ্রিকানস থেকে)
  • Ekse — কেমন আছো?

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশ

সম্পাদনা
 
দক্ষিণ আফ্রিকার ভিসা নীতির মানচিত্র, যেখানে সবুজ রঙে চিহ্নিত দেশগুলোর নাগরিকরা ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন

প্রবেশের শর্তাবলী

সম্পাদনা

নিম্নলিখিত দেশ/অঞ্চলের বিদেশি নাগরিকরা ভিসা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশ করতে পারেন:

অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশের জন্য ভিসার আবেদন প্রয়োজন। কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ই-ভিসা সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যাদের ৯০ দিনের প্রবেশাধিকার রয়েছে এবং তাদের জোহানেসবার্গের ও.আর. ট্যাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে: আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, বেলারুশ, বুলগেরিয়া, ক্যামেরুন, কমোরোস, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, আইভরি কোস্ট, ক্রোয়েশিয়া, কিউবা, মিশর, ইথিওপিয়া, ঘানা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, লাইবেরিয়া, লিথুয়ানিয়া, মালি, মেক্সিকো, মরক্কো, নাইজার, নাইজেরিয়া, ওমান, চীন, ফিলিপাইন, গিনি প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া, সৌদি আরব, সেনেগাল, স্লোভাকিয়া, উগান্ডা। ই-ভিসার জন্য যোগ্য নয় এমন দেশগুলির নাগরিকদের দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাস বা কনস্যুলেটে কাগজে ভিসার আবেদন করতে হবে।

প্রয়োজন হলে, আপনি দক্ষিণ আফ্রিকায় আপনার ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারেন। ভিসা বাড়ানোর মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। অতিরিক্ত তথ্য এবং ভিসার আবেদন ফর্ম পাওয়া যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে[অকার্যকর বহিঃসংযোগ], ফোন: +27 012 810 8911।

সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসার আবেদন পরিচালনা করে না: VFS.Global, একটি পৃথক অফিস, ইমিগ্রেশন পরিষেবা, ভিসার আবেদন এবং প্রসেসিং নিয়ে কাজ করে। VFS.Global পোর্টাল দেশের অফিস এবং অনলাইন সেবার তথ্য সরবরাহ করে। জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন অফিসটি রিভোনিয়া বুলেভার্ডে অবস্থিত, শপরাইট চেকার্স সুপারমার্কেটের পাশে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভিসার জন্য আবেদন করুন এবং ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্যও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর একটি উপায় হলো মোজাম্বিকের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে আবার প্রবেশ করা। ৩০ দিনের ভিসা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশগুলি যেমন লেসোথো, ইসওয়াতিনি, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং বতসোয়ানা থেকে প্রবেশ করলে পুনরায় চালু হয় না। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ৩০ দিনের ভিসা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশ করেন এবং ৫ দিন পর লেসোথো বা ইসওয়াতিনিতে যান, এবং ৫ দিন পর আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে আসেন, তবে আপনি আপনার মূল ভিসার অবশিষ্ট ২০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন এবং নতুন ৩০ দিনের ভিসা পাবেন না। তবে, আপনি যদি ইউরোপে উড়ে যান বা মোজাম্বিকে যান, এবং সেখান থেকে ফিরে আসেন, তাহলে নতুন ৩০ দিনের ভিসা ইস্যু করা হবে।

পাসপোর্টে পিছনে পিছনে ২টি ফাঁকা পাতা থাকতে হবে এবং এটি আপনার পরিকল্পিত প্রস্থানের তারিখের পরে অন্তত ৩০ দিনের জন্য বৈধ হতে হবে, না হলে আপনাকে ফেরত পাঠানো হবে! আপনার ফেরত টিকেট নিশ্চিতভাবে থাকা উচিত, তা না হলে তারা আপনাকে ফেরত পাঠাবে। যদি আপনার বিমানবন্দরে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়, তবে ফ্লাইট নম্বর এবং বিবরণ প্রস্তুত রাখুন এবং কাস্টমস অফিসারের সাথে কথা বলুন। তারা আপনার কাহিনী যাচাই করে আপনাকে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে (দৃঢ় থাকুন)। ক্ষতিগ্রস্ত পাসপোর্ট নিয়ে আসার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আপনার প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুদের সাথে ভ্রমণ

সম্পাদনা

শিশু পাচার প্রতিরোধের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় শিশুদের সাথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠোর আইন ছিল। তবে, ২০১৯ সালে এটি পরিবর্তিত হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে, সব বিদেশি শিশুদের জন্য অতিরিক্ত নথি যেমন জন্ম সনদ বা সম্মতিপত্র বহন না করেও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

নথি সংরক্ষণ

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায়, যদি আপনি ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন, যেমন গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাহলে আপনি মূল নথির সুরক্ষার জন্য নথির কপি ব্যবহার করতে পারেন। পাসপোর্ট, আইডি কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথির কপিগুলি যে কোনো পুলিশ স্টেশনে বিনামূল্যে প্রমাণীকৃত করতে পারেন। শুধু মূল নথি এবং কপিগুলি নিয়ে যান এবং কর্তব্যরত এজেন্টদের সাহায্য চাইুন। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে, ভিসা এবং প্রবেশের সিল প্রদর্শিত পৃষ্ঠাগুলিও কপি করে ব্যক্তিগত তথ্যের পৃষ্ঠার সাথে সংযুক্ত করতে হবে। এই প্রমাণীকৃত কপিগুলি শুধুমাত্র জাতীয় সীমানার মধ্যে স্বীকৃত।

বিমানপথে

সম্পাদনা
 
ও.আর. টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আফ্রিকার ব্যস্ততম বিমানবন্দর

দক্ষিণ আফ্রিকা দক্ষিণ আফ্রিকার অঞ্চলে বিমান ভ্রমণের একটি প্রধান কেন্দ্র। দেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা, দক্ষিণ আফ্রিকান এয়ারওয়েজ (SAA), বিশ্বব্যাপী এবং আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানের সাথে বিস্তৃত সংযোগ প্রদান করে, যার কিছু সেবা তার স্বল্প পাল্লার সহায়ক সংস্থা SA Airlink দ্বারা পরিচালিত হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ১০টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। প্রধান আন্তঃমহাদেশীয় কেন্দ্রটি ও.আর. টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যা জোহানেসবার্গে অবস্থিত; এবং দ্বিতীয় বৃহত্তমটি কেপ টাউন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এগুলো পর্যটক এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য গেটওয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ভ্রমণের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে।

ও.আর. টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের প্রধান শহর, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, কয়েকটি মার্কিন শহর, ব্রাজিল এবং অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে।

ডারবানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর এবং এর মাধ্যমে আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে নিয়মিত ফ্লাইট চালু রয়েছে।

জোহানেসবার্গের ও.আর. টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-এ লাগেজ চুরির ঘটনা বেশ সাধারণ, তাই আপনার প্রধান লাগেজে মূল্যবান জিনিস রাখা এড়িয়ে চলুন। চোরেরা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের সময় পায়, তাই তাদের জন্য কাজটি কঠিন করতে আপনি সমস্ত জিপার প্লাস্টিক কুইক-টাই দিয়ে বন্ধ করতে পারেন, এমনকি ধাতব তালা থাকলেও। এছাড়াও, আপনার লাগেজকে ক্লিং ফিল্ম দিয়ে মোড়ানো হলে চুরির সম্ভাবনা কমে যায়। বিমানবন্দরে এটি R80 খরচে মোড়ানো যায়, অথবা যে কোনো সুপারমার্কেট থেকে একটি বড় রোল কিনে এটি নিজেরাই অনেক কম খরচে করতে পারেন।

গাড়িতে করে

সম্পাদনা

যদি আপনি দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মধ্যে থেকে প্রবেশ করতে চান, তাহলে গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকা তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বেশ কয়েকটি স্থল সীমানা পোস্ট পরিচালনা করে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিছু পোস্ট হলো:

বতসোয়ানা সীমান্ত

  • Skilpadsnek (জিরুস্ট থেকে ৫৪ কিমি/৩৪ মাইল দূরে N4 রাস্তায়), +২৭ ১৮ ৩৬৬-১৪৬৯  সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা

লেসোথো সীমান্ত

  • Maseru Bridge (Ladybrand থেকে ১৫ কিমি/৯ মাইল দূরে N8 রাস্তায় Maseru এর দিকে), +২৭ ৫১ ৯২৪-৪০০৪  ২৪ ঘণ্টা খোলা
  • Ficksburg Bridge (Ficksburg এর ঠিক বাইরে), +২৭ ৫১ ৯৩৩-২৭৬০  ২৪ ঘণ্টা খোলা
  • Sani Pass (KwaZulu-Natal Drakensberg পার্কে), +২৭ ৫১ ৪৩০-৩৬৬৪  সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা

মোজাম্বিক সীমান্ত

  • Lebombo (Mbombela এবং Maputo এর মধ্যে N4 রাস্তায়), +২৭ ১৩ ৭৯০-৭২০৩  সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা
  • Kosi Bay (Hluhluwe এবং Ponta do Ouro এর মধ্যে R22 রাস্তায়), +২৭ ৩৫ ৫৯২-০২৫১  সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা

নামিবিয়া সীমান্ত

  • Nakop (Upington থেকে ১৩২ কিমি/৮২ মাইল দূরে N10 রাস্তায় Ariamsvlei এর দিকে), +২৭ ৫৪ ৫৭১-০০০৮  ২৪ ঘণ্টা খোলা
  • Vioolsdrift (Springbok এর উত্তরে N7 রাস্তায়), +২৭ ২৭ ৭৬১-৮৭৬০  ২৪ ঘণ্টা খোলা

ইসওয়াতিনি সীমান্ত

  • Oshoek (Ermelo থেকে ১২০ কিমি/৭৫ মাইল দূরে N17 রাস্তায় Mbabane এর দিকে), +২৭ ১৭ ৮৮২-০১৩৮  সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা

জিম্বাবুয়ে সীমান্ত

  • Beit Bridge (Messina এর উত্তরে প্রায় ১৬ কিমি (১০ মাইল) N1 রাস্তায়), +২৭ ১৫ ৫৩০-০০৭০  ২৪ ঘণ্টা খোলা

দক্ষিণ আফ্রিকার ছুটির সময় সীমানা খোলার সময় প্রায়ই বাড়ানো হয়। সম্পূর্ণ প্রবেশ পোর্টের তালিকা বা অতিরিক্ত তথ্যের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকান বর্ডার ইনফরমেশন সার্ভিস বা +27 086 026-7337 এ যোগাযোগ করতে পারেন।

নৌকায়

সম্পাদনা

বৃহত্তর ক্রুজ লাইনগুলির অধিকাংশ, যেমন প্রিন্সেস ক্রুজ কেপ টাউন কে তাদের গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি হিসাবে অফার করে, তবে অন্যান্য রুটও বিদ্যমান।

চারপাশে ঘুরুন

সম্পাদনা
আরও দেখুন: দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিবন্ধীদের ভ্রমণ

বিমানে

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি সুপ্রতিষ্ঠিত অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের অবকাঠামো রয়েছে যা সমস্ত প্রধান কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। দেশের সব প্রধান বিমানবন্দরে প্রতিদিন বহু ফ্লাইট রয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য যেকোনো বিমান সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। নিম্ন মূল্যের এয়ারলাইন যেমন Mango এর অফারগুলি SAA এর হারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যেহেতু তারা প্রায়ই অনলাইনে বিশেষ ছাড় প্রদান করে যা সাধারণত "নিম্নমূল্য" বিমান সংস্থার থেকেও সস্তা হতে পারে।

গাড়িতে

সম্পাদনা
আরও দেখুন: দক্ষিণ আফ্রিকায় গাড়ি চালানোদক্ষিণ আফ্রিকায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য গাড়ি চালানো একটি বাস্তবসম্মত উপায় হতে পারে, বিশেষ করে জাতীয় উদ্যানগুলি দেশের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, তবে সেখানে সাধারণত জনপরিবহনের কোনো সুবিধা নেই। ভ্রমণকারীরা গাড়ি ভাড়া করা বা কেনার পদ্ধতি প্রায়ই ব্যবহার করে।

প্রধান রাস্তাগুলোর অবস্থা সাধারণত ভালো থাকে, তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনার হার এখনও বেশি। ট্রাফিকের নিয়ম, বিশেষ করে গতির সীমা সবসময় মেনে চলা হয় না এবং গ্রামীণ এলাকায় রাস্তার পাশে বা রাস্তায় পশু (বন্য বা গৃহপালিত) দেখা যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

কেপ টাউন, জোহানেসবার্গ, ডারবান এবং অন্যান্য শহরের মধ্যে নির্ধারিত বাস পরিষেবা রয়েছে (মাঝে থামা সহ), পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সংযোগ রয়েছে। প্রধান বাস কোম্পানিগুলো হলো:

উপরের বাসগুলির জন্য Computicket এর মাধ্যমে বুকিংও করা যায় [অকার্যকর বহিঃসংযোগ]

ছোট বাস পরিষেবার মধ্যে City Bug এবং Lowveld Link[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] অন্তর্ভুক্ত।

একটি বিকল্প হলো Baz Bus। এটি নিয়মিত হপ-অন-হপ-অফ পরিষেবা প্রদান করে কিছু আকর্ষণীয় রুটে (কেপ টাউন থেকে ডারবান গার্ডেন রুট দিয়ে; ডারবান থেকে জোহানেসবার্গ Drakensberg দিয়ে)। Baz Bus আপনাকে বিভিন্ন হোস্টেলে তুলে এবং নামিয়ে দেয়, তাই আপনাকে রাতের বেলা শহরের বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে হবে না।

যদি আপনি সত্যিই সমস্যায় পড়েন, তাহলে আপনি মিনিবাস ট্যাক্সি ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো সাধারণত ভাল রক্ষণাবেক্ষিত নয় এবং নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে চলে না। এগুলো ধৈর্য্য চায় কারণ এগুলো অনেক বাঁক এবং ট্যাক্সি র‌্যাঙ্ক (হাব)-এ যাত্রীরা বাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তবে এগুলো প্রধান বাস পরিষেবার দ্বারা কভার করা হয় না এমন অনেক রুট কভার করে এবং বেশ সস্তা (প্রতি কিমি প্রতি ব্যক্তির জন্য ২৫ সেন্ট প্রধান রুটে)।

সতর্কতা: অনেক বাসকে পুলিশ পরিষেবা থেকে সরিয়ে দেয়, কারণ এগুলো আইনসম্মতভাবে সড়কে চলার উপযোগী নয়। কোন কোম্পানি বেশি সম্মানজনক সে সম্পর্কে সর্বশেষ পরামর্শ নিন। মাঝে মাঝে চালকের গাড়ি চালানোর ধরন খুবই বেপরোয়া হতে পারে এবং যদি আপনি গাড়িতে বমি করার প্রবণতা থাকেন, তাহলে প্রস্তুত থাকুন।

ট্রেনে

সম্পাদনা
 
Shosholoza Meyl যাত্রীবাহী ট্রেনের রুট

প্যাসেঞ্জার রেল এজেন্সি অব সাউথ আফ্রিকা (PRASA) হলো জাতীয় রেল অপারেটর। প্রধান দক্ষিণ আফ্রিকান শহরগুলোর মধ্যে বাজেট যাত্রীবাহী পরিষেবা রয়েছে (Shosholoza Meyl[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] নামে পরিচিত) এবং বিলাসবহুল পরিষেবা (Premier Classe নামে পরিচিত) জোহানেসবার্গ, কেপ টাউন এবং ডারবান এর মধ্যে চলাচল করে।

সেন্ট্রাল রিজার্ভেশন (Shosholoza Meyl এবং Premier Classe দুটির জন্য) এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে নিম্নরূপ:

  • দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরে, ফোন করুন 086 000 8888 (শেয়ার-কল)
  • দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে থেকে ফোন করুন +27 11 774 4555
  • 0027 প্রিফিক্স ব্যবহার করলে ফোন কলের খরচ কম হতে পারে, SA থেকে বাইরে কল করার ক্ষেত্রেও একই প্রযোজ্য।
  • ইমেইল mmabathop@spoornet.co.za বা info@premierclasse.co.za

টিকিট বুক করতে, উপরের দেওয়া নম্বরগুলোর মধ্যে একটি দিয়ে সেন্ট্রাল রিজার্ভেশনে ফোন করুন এবং আপনার বুকিং করুন। আপনি পরে যেকোনো ট্রেন স্টেশনে গিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে এবং মূল্য পরিশোধ করতে পারেন।

বড় শহরগুলিতে (জোহানেসবার্গ, প্রিটোরিয়া, কেপ টাউন, ডারবান, গকেবার্হা/পোর্ট এলিজাবেথ এবং ইস্ট লন্ডন) যাত্রীবাহী ট্রেনও রয়েছে; এগুলো মেট্রোরেল দ্বারা পরিচালিত। বেশিরভাগ পরিষেবা নিরাপদ, তবে কিছু রুট খুবই ভিড় করে এবং সবসময় নিরাপদ নয়।

জুলাই ২০২৩ এর হিসাবে, COVID-19 মহামারীর কারণে ২০২০ সালে বাতিল হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব কম সংখ্যক ট্রেন পরিষেবা পুনরায় শুরু হয়েছে। এটি রিপোর্ট করা হয়েছে যে একমাত্র নির্ধারিত দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেন সপ্তাহে একবার জোহানেসবার্গ থেকে ইস্ট লন্ডন এবং জোহানেসবার্গ থেকে পোর্ট এলিজাবেথ এর মধ্যে চলাচল করে এবং এটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মধ্যম-দামের

সম্পাদনা

বিলাসিতা

সম্পাদনা

ট্যাক্সিতে

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় রাইড-শেয়ারিং পরিষেবা উপলব্ধ এবং নিম্নলিখিতগুলি সবচেয়ে জনপ্রিয় সরবরাহকারী:

লিফট চাওয়া

সম্পাদনা

লিফট চাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকায় তেমন কঠিন নয়, তবে বেশিরভাগ লোক ভাববে আপনি স্থানীয় ট্যাক্সির সাথে যাত্রা করছেন এবং সেই অনুযায়ী অর্থ প্রদান করতে বলবে। আপনি গাড়িতে ওঠার আগে তাদের জানাতে পারেন যে আপনি ফ্রি রাইড খুঁজছেন। প্রধান সমস্যাটি হলো অপরাধ: কিছু চালক আপনাকে এবং আপনার জিনিসপত্র চুরি করতে পারে। লিফট চাওয়া সাধারণত খারাপভাবে দেখা হয় এবং এটি নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয় না। চালকরাও অপরাধমূলক যাত্রীদের বিষয়ে সতর্ক থাকে। কখনো রাতের বেলা লিফট চাইবেন না। আপনি যদি একটি অনিরাপদ এলাকায় থাকেন তবে রাতের বেলা বাইরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মনে রাখবেন, বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত বাড়িতে প্রাচীর এবং সশস্ত্র প্রহরী রয়েছে; এর একটি কারণ রয়েছে।

সাইকেলে

সম্পাদনা

সাইক্লিং সম্ভবত দেশটি উপভোগ করার সেরা উপায়, কারণ এতে আপনি প্রকৃতির দৃশ্য ভালোভাবে দেখতে পারেন এবং স্থানীয়দের সাথে মেলামেশার সুযোগ পান। তবে শহরগুলোর মধ্য দিয়ে সাইকেল চালানো নিরাপদ নাও হতে পারে অপরাধ এবং বেপরোয়া চালকদের কারণে। তবে কেপ টাউন কিছুটা সাইকেল-বান্ধব, বেশ কয়েকটি সাইকেল লেন রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় অনেক খামারের রাস্তা বা মাটির রাস্তা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং কৃষকরা সাধারণত খাবার এবং থাকার জায়গা দিতে ইচ্ছুক, যদি আপনি তাদের সাথে কথা বলতে রাজি থাকেন।

দেখার জন্য

সম্পাদনা
 
অ্যাডো এলিফ্যান্ট ন্যাশনাল পার্কে লাল হার্টবিস্ট
 
উখাহলাম্বা দ্রাকেনসবার্গ পার্ক, যা সান জনগণের শিলাচিত্র এবং অতুলনীয় সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত
 
টাউনশিপে ভ্রমণ বর্তমানে ক্রমশ জনপ্রিয় পর্যটন কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে

প্রতিবছর দক্ষিণ আফ্রিকায় শত শত হাজার দর্শক দেশটির অসংখ্য প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণ দেখতে আসেন। বুনো হাতি থেকে শুরু করে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, গুহার চিত্রকর্ম, ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য এবং ব্যস্ত টাউনশিপ – দক্ষিণ আফ্রিকা একটি বৈপরীত্যপূর্ণ এবং অসাধারণ সৌন্দর্যের দেশ।

দর্শকদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা উপভোগের সেরা উপায়গুলির মধ্যে কিছু হলো রাজ্য-উন্নত সংস্থাগুলির মাধ্যমে সরবরাহকৃত বিভিন্ন প্রাদেশিক উদ্যান বোর্ড এবং জাতীয় প্রাকৃতিক রিজার্ভ। এছাড়াও সরকারের পরিচালিত বিভিন্ন রিসর্ট রয়েছে, যেগুলো সাধারণত ফরএভার রিসর্টস ব্র্যান্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। এসব রিসর্টের মধ্যে ২০টিরও বেশি রয়েছে দেশজুড়ে। ছোট বা বড় দলগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে – যেমন তাপীয় জল স্পা, বিনোদনমূলক কার্যক্রম, শিশুদের জন্য নানা কর্মসূচি, পর্বতারোহণ, শিবির স্থাপন, মাউন্টেন বাইকিং এবং গাইডেড গেম ভিউইং।

এসব রিসর্টে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা স্কুলের ছুটির বাইরে বা দীর্ঘ সপ্তাহান্তে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। হোটেল, বাংলো, কটেজ, খড়ের ছাউনি দেওয়া রন্ডাভেল, ক্যারাভান পার্ক এবং শিবির স্থাপনের জন্য স্থান রয়েছে। সাধারণত প্রতিটি ইউনিটের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়, যা ছয় জনের জন্য একটি বাংলো বা চার জনের জন্য একটি কটেজকে খুব সাশ্রয়ী করে তোলে। রিসর্টগুলিতে সব ধরনের সুবিধা থাকে এবং আপনি চাইলে রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন বা নিজে রান্না করে খেতে পারেন। তবে খাবার এবং পানীয়, যেমন মদ, বিয়ার, হুইস্কি এবং অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী, বাইরে থেকে আনার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এগুলি রিসর্টের ভিতরে সাধারণত বেশি দামে বিক্রি হয়।

বুনো প্রাণী তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাফারি গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি, এবং অনেক দর্শনার্থীর জন্য "বিগ ফাইভ" এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখা একটি অবশ্যকর্তব্য বিষয়। কৃগার ন্যাশনাল পার্ক সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত স্থান যেখানে বন্যপ্রাণী দেখা যায়, কিন্তু পূর্ব কেপের অ্যাডো এলিফ্যান্ট ন্যাশনাল পার্ক আরেকটি জনপ্রিয় স্থান। এছাড়াও, কাগালাগাদি ট্রান্সফ্রন্টিয়ার পার্ক-এর বিশাল শুকনো সমভূমি, যা দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বতসোয়ানার অংশ জুড়ে বিস্তৃত, পরিযায়ী গ্নুর পাল নিয়ে আসে। মোজাম্বিকের সীমান্ত বরাবর আরেকটি ট্রান্সফ্রন্টিয়ার পার্ক iSimangaliso Wetland Park, যেখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং বন্যপ্রাণী দেখা যায়।

ডুবুরিদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার পানির নিচের বন্যপ্রাণী অনেক আকর্ষণীয়। বার্ষিক সার্ডিন রান একটি প্রধান আকর্ষণ। জনপ্রিয় সমুদ্র তীরবর্তী শহর হারমানাস সম্ভবত বিশ্বের সেরা স্থানগুলির মধ্যে একটি তিমি দেখার জন্য। যারা সত্যিকারের সাহসী, তাদের জন্য রয়েছে খাঁচায় বন্দী হয়ে সাদা হাঙরের সঙ্গে ডুব দেওয়ার সুযোগ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উদ্ভিদগত আগ্রহের এলাকা

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত বিশাল এবং বৈচিত্র্যময়, যেখানে সমতল মরুভূমি থেকে শুরু করে সবুজ উপকূলীয় অঞ্চল এবং উঁচু পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত। বিখ্যাত, সমতল-শীর্ষ টেবিল মাউন্টেন থেকে দৃশ্য দেখা একটি চিরাচরিত আফ্রিকান অভিজ্ঞতা। কেপ টাউনের এলাকায়, সুন্দর সমুদ্র সৈকত হাজার হাজার সূর্যপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। সবুজ উপকূলীয় গার্ডেন রুট একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা, যেখানে অসংখ্য লেগুন, কয়েকটি আকর্ষণীয় শহর এবং মনোমুগ্ধকর টিসিতসিকামা ন্যাশনাল পার্ক রয়েছে। অগ্রাবিস ফলস ন্যাশনাল পার্ক-এ ৬০ মিটার উঁচু জলপ্রপাত রয়েছে। কৃগার পার্কের কাছাকাছি রয়েছে গডস উইন্ডো এবং ব্লাইড রিভার ক্যানিয়ন, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সবুজ ক্যানিয়ন হিসেবে পরিচিত। এর কাছেই ড্রাকেনসবার্গ পর্বতশ্রেণীর উঁচু শৃঙ্গ রয়েছে। উখাহলাম্বা দ্রাকেনসবার্গ পার্ক তার ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সান জনগণের অসংখ্য শিলাচিত্রের জন্য ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। নামাকুয়াল্যান্ড-এর বসন্ত ঋতুতে মনোক্রোমাটিক শুকনো দৃশ্য থেকে রঙিন ফুলের প্রাচুর্য দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা, তবে অনেকগুলি অন্য স্থানও রয়েছে যেখানে কালাহারি মরুভূমির মতো এলাকায় কঠিন পরিবেশের মধ্যেও স্থানীয় জীববৈচিত্র্য বিস্ময়করভাবে বেড়ে ওঠে।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রচুর এবং বিশ্বের প্রাচীনতম হোমিনিড জীবাশ্মগুলির কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে, বিশেষ করে হিউম্যানকাইন্ডের পালনা-তে, যা আরেকটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এখানে ৩০টিরও বেশি গুহায় গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম রয়েছে, তবে স্টার্কফন্টেইন গুহাগুলি সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকটা সাম্প্রতিককালে, ১৭শ শতাব্দীর গুড হোপ দুর্গ সুন্দর কেপ টাউন-এর অন্যতম ঔপনিবেশিক সময়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য স্থান। রোবেন দ্বীপ, যেখানে নেলসন ম্যান্ডেলাকে বন্দী রাখা হয়েছিল, বর্তমানে একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্য। বর্ণবৈষম্য যুগ সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান পেতে, কেপ টাউনের ডিস্ট্রিক্ট সিক্স মিউজিয়াম বা জোহানেসবার্গ-এর বর্ণবৈষম্য মিউজিয়াম পরিদর্শন করুন। নেলসন ম্যান্ডেলা লেগেসি সাইটস ইউনেস্কো দ্বারা অন্তর্ভুক্ত ১৪টি স্থান যেখানে ম্যান্ডেলার জীবন এবং ক্যারিয়ার সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা যুক্ত রয়েছে।

অন্যান্য আকর্ষণ

সম্পাদনা
  • যদিও নিয়মিত সমালোচিত হয়, তথাপি কুখ্যাত টাউনশিপ পরিদর্শন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কেউ কেউ বলেন এই ধরনের সফরগুলো দারিদ্র্যকে বিনোদনে পরিণত করে, আবার কেউ কেউ মনে করেন এতে সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হয়। যেভাবেই হোক, একটি টাউনশিপ ভ্রমণ একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
  • কাঙ্গো গুহা ওউড্টশর্নের নিকটে একটি বিস্তৃত এবং জটিল গুহা ব্যবস্থা যা স্বর্টবার্গ পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত এবং এতে অনেক অনন্য প্রাকৃতিক চুনাপাথরের গঠন রয়েছে। এই সাইটটি ওয়েস্টার্ন কেপ পার্কস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধীনে পরিচালিত হয় এবং দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। এক ঘণ্টার "স্ট্যান্ডার্ড ট্যুর" সবাই নিতে পারে, তবে "অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর" শুধুমাত্র অভিজ্ঞ গুহা অনুসন্ধানকারীদের জন্য খোলা, যা ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এতে বিভিন্ন সংকীর্ণ স্থান এবং চেম্বার অতিক্রম করতে শারীরিক সক্ষমতা প্রয়োজন।
  • সোয়েটো, জোহানেসবার্গ-এর একটি বিশেষভাবে পরিচিত এলাকা।
  • দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বব্যাপী একটি প্রসিদ্ধ মদ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে, এবং যদি আগ্রহী হন, ৮০০টিরও বেশি ওয়াইনারির মধ্যে যেকোনো একটি পরিদর্শন করা আপনার ভ্রমণে একটি দুর্দান্ত সংযোজন হতে পারে। স্টেলেনবস এলাকার আশেপাশের কেপ ওয়াইনল্যান্ডস এলাকায় কিছু সেরা ওয়াইনারি দেখতে পাবেন।
  • র্যান্ড এয়ারপোর্ট জোহানেসবার্গের কাছে জারমিস্টনে অবস্থিত একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর যা প্রধানত ব্যক্তিগত পাইলট, ছোট বিমান পরিষেবা অপারেটর এবং ফ্লাইং স্কুলগুলিকে সেবা প্রদান করে। এখানে কয়েকটি ভালোভাবে সংরক্ষিত এবং রক্ষণাবেক্ষিত প্রাচীন বিমান রয়েছে যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের "হার্ভার্ড স্কোয়াড্রন", যা সাধারণত সপ্তাহান্তে সক্রিয় থাকে। হেলিকপ্টার দৃশ্যমান ভ্রমণ এবং নস্টালজিক বিমান ট্যুরও উপলব্ধ, বিশেষ করে একটি "ডাকোটা ডিসি৩" এবং "টাইগার মথ" বাইপ্লেনে ভ্রমণ করা যায়।
  • আশ্চর্য হবেন না যে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে এখানে প্রচুর সংখ্যক সার্বভৌমত্বহীন রাজ্য পরিদর্শন করা সম্ভব যেগুলি তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী শাসকদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

যা করতে পারেন

সম্পাদনা
  • হট এয়ার বেলুনিং, "ক্রেডল অব ম্যানকাইন্ড" (মানবজাতির পালনা) গৌটেং-এ, জোহানেসবার্গের কাছে, কওয়া-জুলু ন্যাটাল এবং ওয়েস্টার্ন কেপ-এ কিছু দর্শনীয় বেলুন সাফারি প্রস্তাব করে। বুকিংয়ের জন্য বিভিন্ন অনলাইন অপারেটরের মাধ্যমে সহজেই ব্যবস্থা করা যায়।
  • ডাইভিং, বিস্তারিত জানতে দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাইভিং দেখুন।
  • নদীতে রাফটিং: নামিবিয়া সীমান্তে অবস্থিত অরেঞ্জ নদী রাফটিং ট্যুরের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। বেশ কিছু ট্যুর অপারেটর ভিওলসড্রিফ থেকে ৪-৬ দিনের রাফটিং সফর আয়োজন করে, যেখানে ফোলানো নৌকায় যাত্রা এবং রাতের আকাশের নিচে ক্যাম্পিং করা হয়।
  • হাইকিং এবং পর্বতারোহণ কওয়া-জুলু ন্যাটাল হাইল্যান্ডস এবং পূর্ব ও পশ্চিম কেপ-এর নির্দিষ্ট এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিছু ইকো-সংবেদনশীল এলাকায় প্রতি বছরে সীমিত সংখ্যক লোকের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, তাই আগাম বুকিং প্রয়োজন হতে পারে।
  • রাগবি ইউনিয়ন, ক্রিকেট এবং ফুটবল দক্ষিণ আফ্রিকায় জনপ্রিয় দর্শনীয় খেলা, যা ঐতিহ্যগতভাবে আফ্রিকান, অ্যাংলো-দক্ষিণ আফ্রিকান এবং কালো দক্ষিণ আফ্রিকান সংস্কৃতির সাথে যুক্ত, যদিও এই সংস্কৃতি বর্ণবৈষম্যের পতনের পর পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৯৫ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত রাগবি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়লাভ করে, সেই সময়ে নেলসন ম্যান্ডেলা স্প্রিংবক জার্সি পরে উপস্থিত ছিলেন। ২০১৯ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকা তৃতীয়বারের মতো রাগবি বিশ্বকাপ জিতেছিল, সেইবার একটি বহু-জাতিগত দল এবং কালো অধিনায়ক সহ।
  • ফ্রেন্ডস অব দ্য রেল প্রিটোরিয়ায় ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা যারা স্টিম লোকোমোটিভ এবং পুরাতন সময়ের রোলিং স্টকের দেখভাল করে। তারা নিয়মিত স্টিম ট্রেন সফর আয়োজন করে, যা প্রিটোরিয়ার হারমানস্টাড স্টেশন থেকে সকালে ছেড়ে কুলিনানে দীর্ঘ বিরতির জন্য থামে, যেখানে দুপুরের খাবার বা পিকনিকের পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়, তারপর বিকেলে ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
  • মাগালিজবার্গ স্টিম ট্রেন দক্ষিণ আফ্রিকান রেলওয়ে (ট্রান্সনেট) দ্বারা পরিচালিত আরেকটি পুরাতন স্টিম ট্রেন ভ্রমণ। এটি মাসে এক বা দুইবার জোহানেসবার্গের প্রধান পার্ক স্টেশন থেকে সকালে ছেড়ে মাগালিজবার্গ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে একটি মনোমুগ্ধকর দিনের সফর প্রদান করে। একটি প্যাকড লাঞ্চ বা পিকনিক বাস্কেট প্রয়োজনীয়।
  • যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন: অনেক সুপরিচিত জুলু-মূলবাসী, বুয়ার-মূলবাসী, জুলু-ব্রিটিশ এবং বুয়ার-ব্রিটিশ যুদ্ধক্ষেত্রগুলি খুবই সুন্দরভাবে সংরক্ষিত, সহজেই প্রবেশযোগ্য এবং পরিদর্শনের উপযুক্ত। বেশিরভাগই কওয়া-জুলু ন্যাটাল প্রদেশে পাওয়া যায়। জোহানেসবার্গের ওয়ার মিউজিয়াম পর্যটকদের সহায়তা করার জন্য মানচিত্র এবং সাহিত্য সরবরাহ করে যাতে তারা কোথায় যেতে পারে তা পরিকল্পনা করতে পারে।
  • স্ব-চালিত ট্যুর: দেশের বিশালতা এবং জাতীয় সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নত উন্নতির কারণে, দেশটি দেখার একটি ব্যবহারিক এবং সন্তোষজনক উপায় হল গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করা। "গোল্ডেন গেট", "গডস উইন্ডো", "গার্ডেন রুট", "ওয়াইল্ড কোস্ট", "সেন্ট লুসিয়া এবং কেপ ভিডাল" এর মতো এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থানীয়দের সাথে মেলামেশা বা খামারবাড়িতে থাকার মত বিভিন্ন অনুভূতি দেয় যা অন্য কোনো উপায়ে অনুভব করা যায় না।
  • মোটর রেসিং গৌটেং-এ একটি নিয়মিত ক্যালেন্ডার ইভেন্ট, যেখানে কায়ালামি এবং সোয়ার্টকপস রেসওয়ে সুবিধাগুলি জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের দুই এবং চার চাকার প্রতিযোগিতার মূল পটভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মুদ্রা

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকান র‌্যান্ড-এর বিনিময় হার

সেপ্টেম্বর ২০২৪ হিসাবে:

  • US$1 ≈ র‌্যান্ড১৭
  • €1 ≈ র‌্যান্ড১৯
  • UK£1 ≈ র‌্যান্ড২৩
  • CA$1 ≈ র‌্যান্ড১৩
  • Japanese ¥100 ≈ র‌্যান্ড১২

বিনিময় হার ওঠানামা করে। এই এবং অন্যান্য মুদ্রার বর্তমান রেট XE.com থেকে পাওয়া যায়

দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রা হলো র‌্যান্ড, যা "R" প্রতীকে প্রদর্শিত হয় (আইএসও কোড: ZAR)। এটি ১০০ সেন্টে বিভক্ত। নোটগুলোর মূল্যমান হলো R২০০, R১০০, R৫০, R২০ এবং R১০। উচ্চ মূল্যমানের নোটগুলো আকারে বড় হয় এবং প্রতিটি নোটে একটি ধাতব সুরক্ষা স্ট্রিপ এবং জলছাপ থাকে। বর্তমানে দুটি সিরিজের ব্যাংকনোট প্রচলিত আছে: "বিগ ফাইভ" সিরিজ (২০০৫ সালে জারি করা) এবং "নেলসন ম্যান্ডেলা" সিরিজ (২০১২ সালে প্রবর্তিত)।

মুদ্রাগুলো হলো R৫, R২, R১, ৫০c, ২০c, ১০c এবং ৫c। ২০০২ সালে ২c এবং ১c মুদ্রার উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে, তবে এখনও চলমান মুদ্রা বৈধ। সকল লেনদেনকে নিকটস্থ ৫c-এ নিম্নগামী করে রাউন্ড করা হয় যাতে ২c এবং ১c মুদ্রার প্রয়োজন না হয়। R৫ মুদ্রার দুটি ধরন প্রচলিত আছে: একটি রূপালি রঙের এবং অন্যটি রূপালি রঙের মধ্যে তামার ইনসার্ট সহ। উভয়ই বৈধ মুদ্রা।

দক্ষিণ আফ্রিকা দক্ষিণ আফ্রিকান কমন মনিটারি এরিয়া-র অংশ, এবং র‌্যান্ড নামিবিয়া, লেসোথো এবং এসওয়াতিনিতে ব্যবহার করা যায়। নামিবিয়ায় এটি নামিবিয়ান ডলারের সাথে সরকারী মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, লেসোথো এবং এসওয়াতিনিতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও সরকারী মুদ্রা নয়।

ট্রাভেলার্স চেক নিরাপদভাবে টাকা বহন করার একটি পদ্ধতি। এগুলো আপনি যে কোনো ব্যাংকে (গ্রামের এলাকাগুলোতেও ব্যাংক পাওয়া যায়) বিনিময় করতে পারেন এবং চুরি হলে আপনি ফেরত পাবেন। তবে, এগুলো ব্যবহার করে আপনি সরাসরি পেমেন্ট করতে পারবেন না এবং বিনিময় করার সময় পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। এটিএম ব্যবহার করা ভালো বিকল্প হতে পারে।

অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম), যা প্রধান আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত, দেশজুড়ে পাওয়া যায় এবং সাধারণত R২০০ থেকে R১০ পর্যন্ত বিভিন্ন মূল্যমানের মিশ্রণে টাকা বিতরণ করে। আপনি যে কোনো সার্কাস বা মাস্ট্রো কার্ড এবং সকল প্রধান ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাংকের এটিএম-গুলি আপনার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারা আরোপিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ফি নেয়: উদাহরণস্বরূপ, মার্চ ২০২৩ অনুযায়ী নেডব্যাঙ্ক R৫০ এবং এবিএসএ R৭৫ ফি নেয়।

এটিএম-গুলি নিরাপদ অবস্থানে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়, যেমন শপিং মল বা ভবনের ভেতর। টাকা তোলার সময় আপনার পিন কেউ দেখছে কিনা তা নিশ্চিত করুন এবং প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক থাকুন (যেমন মেশিনগুলো আপনার কার্ড আটকে রাখলে বা পিন প্রবেশের পরেও টাকা ফেরত না দিলে)। কারো কাছ থেকে এটিএম ব্যবহারের সময় অনাহূত সহায়তা গ্রহণ করবেন না। যদি কেউ আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, তাহলে লেনদেনটি তৎক্ষণাৎ বাতিল করুন এবং অন্য একটি এটিএম-এ যান।

কিছু বড় রিটেইল স্টোরের (যেমন Pick 'n Pay) টিল পয়েন্ট এটিএম হিসেবেও কাজ করে; কেবল ক্যাশিয়ারকে জানান যে আপনি টাকা তুলতে চান। এটিএম-এর তুলনায় এখানে লেনদেনের খরচ কম হতে পারে।

ভিসা এবং মাস্টারকার্ড প্রায় সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। আমেরিকান এক্সপ্রেস এবং ডিনার্স ক্লাবও গ্রহণযোগ্য, তবে তা অনেক কম স্থানে।

অধিকাংশ খুচরা দোকান ক্রেডিট কার্ড এবং পিন-ভিত্তিক ডেবিট কার্ডকে পেমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইউরোপের মতো একটি চিপ-এবং-পিন ক্রেডিট কার্ড সিস্টেমে চলে গেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশগুলির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের কার্ড ব্যবহার করতে কোনো সমস্যায় পড়বেন না, তবে তাদের ব্যাংককে ভ্রমণ পরিকল্পনার আগে জানানো উচিত।

ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) প্রায় সব পণ্যে ১৫% হারে আরোপিত হয়। সরকার আইন অনুযায়ী রুটি (চৌকো রুটি) এবং মৌলিক খাদ্যদ্রব্য যেমন: কাঁচা মাংস, তাজা দুধ, কাঁচা ও অপরিশোধিত ফল এবং সবজি করমুক্ত। আইনের দ্বারা বিজ্ঞাপিত মূল্য ভ্যাটসহ অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত, যদি না তা ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়। বিদেশি পাসপোর্টধারীরা কেবলমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকায় কেনা এবং দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া বস্তুগত পণ্যের ভ্যাট ফেরত দাবি করতে পারেন, তবে আবাসন, খাদ্য খরচ বা গাড়ি ভাড়ার জন্য নয়। পণ্যের মোট মূল্য R২৫০ এর বেশি হলে ভ্যাট ফেরত পাওয়া যায়। প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায় এবং নতুন ট্যাক্স রিফান্ডের জন্য পর্যটকদের সাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নেওয়া যায়। ভ্যাট রিফান্ড প্রশাসকের অফিস জোহানেসবার্গ (O.R. টাম্বো) এবং কেপ টাউন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপলব্ধ। রিফান্ড আপনাকে একটি ট্রাভেলেক্স ভিসা কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করা হবে, যা মার্কিন ডলার বা ইউরোতে প্রদেয় হবে, তবে এই কার্ডের রূপান্তর ফি প্রায় ১০% কম পেতে পারে। এই কার্ডগুলো কেবলমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে ব্যবহার করা যেতে পারে।

পেট্রোল এবং ডিজেল

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় তরল জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রিত হয় এবং অঞ্চলভেদে মাসিক নির্ধারিত হয়। সাধারণত, পোর্টগুলির কাছাকাছি (ডারবান, কেপ টাউন, পোর্ট এলিজাবেথ) পেট্রোলের মূল্য কম হয়। এক লিটার পেট্রোলের দাম প্রায় R১৭ (২০১৮)।

  • টায়ার পাংচার এবং ছোট যানবাহনের মেরামত প্রায় সব জায়গায় গ্যারেজে করা যায়। প্রাইভেট বা চেইন/ফ্র্যাঞ্চাইজ টায়ার দোকান সহজেই পাওয়া যায় এবং প্রায় R৯০/১২০ চার্জ করে, যার মধ্যে পাংচার মেরামত কিট, নতুন এয়ার ভালভ এবং চাকা পুনরায় ভারসাম্য অন্তর্ভুক্ত। নতুন রেডিয়েটর হোস, এয়ার এবং তেলের ফিল্টার, নতুন ব্যাটারি, এয়ারকন গ্যাস রিফিল ইত্যাদির জন্য খরচ কম করার জন্য কেনাকাটা বুদ্ধিমানের হতে পারে, তবে এই পরিষেবাগুলি আপনি অপেক্ষা করার সময়ও সম্পন্ন করা যায়।
  • উইন্ডস্ক্রিন চিপিং প্রায়শই দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্তা বা মাটির রাস্তায় ঘটে। প্রধান নগর কেন্দ্রগুলিতে উইন্ডস্ক্রিন মেরামত বিশেষজ্ঞরা ছোট চিপ এবং ফাটল স্থায়ীভাবে মেরামত করতে সক্ষম। এর খরচ প্রায় R৫০০। অনলাইনে না পাওয়া গেলে, কোনো সঠিক গ্যারেজ বা উইন্ডস্ক্রিন এজেন্ট আপনাকে কাছাকাছি একজন বিশেষজ্ঞের সুপারিশ করতে পারবে। যদি অন্য কোনো গাড়ির কারণে ফাটল হয় এবং আপনি বীমাকৃত হন, সময়, তারিখ, স্থান এবং অন্য গাড়ির নিবন্ধন নম্বর, রঙ এবং মডেলের তথ্য আপনার বীমাকারীকে দিতে হবে।

টোল রোড

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল টোল প্লাজা হলো N৪-এ Swartruggens টোল প্লাজা, যার খরচ একটি সাধারণ গাড়ির জন্য R৭১। প্রিটোরিয়া থেকে এমবোম্বেলা বা জোহানেসবার্গ থেকে কেপ টাউন পর্যন্ত টোল রোডের মোট খরচ প্রায় R১০০। Beitbridge থেকে কেপ টাউন যাওয়ার পথে, N১ ধরে টোলের খরচ R২৭০ পর্যন্ত হতে পারে।

  • একটি McDonald's Big Mac-এর দাম প্রায় R৩৯.৯০ (২০২০)।
  • একটি গড় রেস্তোরাঁয় বসে দুপুরের খাবারের খরচ প্রায় R১২০ (২০১৮)।
  • একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় ডিনারের খরচ R২০০ থেকে R৫০০ প্রতিজন (পানীয় ছাড়া)।
  • একটি সাধারণ ৩০ সেমি পিৎজার দাম প্রায় R৮৫ (২০১৮)। তবে কিছু চেইন ব্যাপক ডিসকাউন্ট অফার করে।
  • বেশিরভাগ রেস্তোরাঁয় পানীয়ের দাম অনেক বেশি। অনুমতিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে "কর্ক ফি" চার্জ করতে পারে, যা অনেক সময় খুব বেশি হয়ে যায়।

কেনাকাটা

সম্পাদনা

দোকানের মূল্য স্থির থাকে, তবে খোলা বাজার বা রাস্তার বিক্রেতাদের সাথে দর কষাকষি করা যেতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সাধারণ ভোগ্যপণ্য, ইলেকট্রনিকস বা সরঞ্জামের জন্য সেরা স্থান নয়। বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য এখন চীনে উৎপাদিত হয়, আর বিলাসবহুল পণ্যগুলো ইউরোপে তৈরি হয়। আইনের দ্বারা, সব পণ্যে উৎপত্তি দেশ এবং পোশাক, আনুষঙ্গিক ও জুতার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উপকরণের ধরন ও শতাংশ উল্লেখ করতে হবে। তা সত্ত্বেও, দক্ষিণ আফ্রিকার পোশাক ও জুতা শিল্প নতুন করে জীবন লাভ করছে। স্থানীয় ডিজাইনারদের সাথে যৌথ উদ্যোগে উন্নতমানের এবং সাশ্রয়ী পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে কেপ টাউন এগিয়ে আছে। ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্য যাচাই করা উচিত, যেমন একটি সাধারণ GPS নেভিগেটরের দাম প্রায় R২০০০, যা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের তুলনায় দ্বিগুণ। তবে জোহানেসবার্গ ও কেপ টাউনের মতো প্রধান নগর কেন্দ্রে রিটেইল পার্কে কারখানা থেকে সরাসরি বিক্রি করা পণ্য পাওয়া যায়, যেখানে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের পোশাক, স্পোর্টস জুতা ও সরঞ্জাম, আনুষঙ্গিক, গৃহ বিনোদন ও ইলেকট্রনিক্সে বড় ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।

তবে, দক্ষিণ আফ্রিকা আফ্রিকান শিল্পকর্ম, হস্তশিল্প এবং স্মৃতিচিহ্ন কেনার জন্য একটি শ্রেষ্ঠ গন্তব্য। জোহানেসবার্গে জুয়েলারি কাউন্সিল অফ সাউথ আফ্রিকা এবং ডায়মন্ড বোর্ড অফ সাউথ আফ্রিকার প্রত্যয়িত ডায়মন্ড ও রঙিন রত্ন পাথরের ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ বা প্ল্যাটিনামের গয়না বিক্রি করেন, যা প্রখ্যাত নির্মাতাদের কাছ থেকে ভালো দামে পাওয়া যায়। এই ব্যবসাগুলো জোহানেসবার্গের জুয়েল সিটি, মেইন স্ট্রিট বা দ্য হ্যামলেট, পার্কটাউন-এ অবস্থিত। সব ব্যবসা দেশ ছাড়ার সময় পূর্ণ ভ্যাট ফেরত পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রদান করে।

টিপ দেওয়া

সম্পাদনা

রেস্তোরাঁয় টিপ দেওয়ার প্রথা রয়েছে। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ কর্মচারীদের আইনানুগ সর্বনিম্ন মজুরি প্রদান করে এবং গ্রাহকদের টিপ তাদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। বিলের প্রায় ১০% টিপ দেওয়া সাধারণ হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে খাবার বা পরিষেবা ভালো না হলে আপনি টিপ দিতে না চাইলে সমস্যা নেই। কিছু রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপনা সব "সরকারি" টিপ ভাগ করে দেয়, তাই আপনি চাইলে নগদ টিপ সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে দিতে পারেন, বিলের সাথে কার্ডে যোগ করার পরিবর্তে।

পেট্রোল স্টেশনের কর্মীদের ছোট পরিমাণ টিপস, সাধারণত ৫ র‌্যান্ড বা এর বেশি, দেওয়া হয় যখন তারা অতিরিক্ত সেবা প্রদান করে, যেমন গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন পরিষ্কার করা। বড় রাস্তার পাশে থাকা সার্ভিস স্টেশনগুলোর টয়লেট পরিষ্কার রাখার জন্য টয়লেট কর্মীদেরও টিপস দেওয়া হয়, যদি তারা ভালো পরিষেবা দেয় এবং স্থাপনাগুলো পরিষ্কার রাখে। "গাড়ির প্রহরী", যারা গাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় বলে দাবি করে, তাদেরও ছোট টিপস দেওয়া হয় যদি তারা ইউনিফর্ম পরা থাকে এবং অনুমোদিত হয়; তবে যাদের ইউনিফর্ম নেই, তাদের সাধারণত বিরক্তিকর মনে করা হয় এবং তাদের টিপস দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, যদিও তারা প্রায়শই গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে অর্থ চেয়ে বিরক্ত করে।

ট্যাক্সি ভ্রমণের সময়ও ১০% টিপস দেওয়ার নিয়ম প্রযোজ্য। অধিকাংশ ট্যাক্সি নগদে কাজ করে, তাই ট্যাক্সিতে ওঠার আগে ভাড়ার পরিমাণ জেনে নেওয়াই ভালো। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনি সর্বদা চালককে টিপস দেওয়ার জন্য যথেষ্ট অর্থ রাখছেন।

শেষে, হোটেলে চেক-ইন করার সময় আপনার পোর্টারকেও টিপস দেওয়া রীতি। সাধারণভাবে স্বীকৃত নিয়ম হলো, প্রতি ব্যাগের জন্য পোর্টারকে R5 টিপস দেওয়া।

খাওয়া

সম্পাদনা
 
ব্রাইভলিস

রন্ধনশৈলী

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার রান্নাবান্না এর সংস্কৃতির মতোই বৈচিত্র্যময়, যার মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ, ডাচ, জার্মান, ভারতীয়, মালয়, পর্তুগিজ, গ্রিক, ইতালীয় এবং অবশ্যই স্থানীয় আফ্রিকান প্রভাব।

  • ব্রাইভলিস হল মাংস যা খোলা কাঠ বা কয়লার আগুনে রোস্ট করা হয় এবং এটি সাধারণত সাপ্তাহিক সামাজিক অনুষ্ঠানে করা হয়। মাংস রোস্ট করার কাজ এবং সেই সামাজিক অনুষ্ঠান উভয়কেই braai বলা হয়।
  • প্যাপ, এটি ভুট্টার ময়দা দিয়ে তৈরি একটি পোরিজ। Slappap (পাতলা পোরিজ) সকালে খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, Stywepap (মোটা পোরিজ) চাল বা অন্যান্য শর্করার পরিবর্তে খাওয়া হয়। "Krummel" পোরিজ (crumbly pap) প্রায়শই braai এর সাথে পরিবেশন করা হয়।
  • পোটজিকোস হল মাংস ও শাকসবজি দিয়ে তৈরি স্টু, যা খোলা আগুনে তৈরি করা হয়। এটি braai এর একটি প্রিয় খাবার।
  • বোয়ারওয়ার্স একটি মসলাদার সসেজ। বোয়ারওয়ার্স রোলস হটডগ বান হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণত পেঁয়াজ ও টমেটোর রেলিশ দিয়ে সাজানো হয়।
  • বিল্টং এবং ড্রোয়ার্স, এটি মশলা দেওয়া মাংস বা সসেজ যা শুকানো হয়। গরুর মাংস, খেলা এবং উটপাখির মাংস ব্যবহৃত হয়। এটি খেলাধুলার ইভেন্ট এবং ভ্রমণের সময় জনপ্রিয়।
  • বানি ছোউস, এটি একটি রুটি যার ভেতরের অংশ মাংসের কারি দিয়ে পূর্ণ করা হয়, যা ডারবান এর ভারতীয় সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ খাবার।
  • বোবটি, মাংসের লোফ যা কেপ মালয় প্রভাবিত, কারি এবং মসলায় মিশ্রিত এবং উপরিভাগে কাস্টার্ড দেওয়া হয়।
  • মোরোগো, এটি একটি বুনো পালং শাক, যা প্রায়ই pap এর সাথে পরিবেশন করা হয়।
  • ওয়াটারব্লোমেটজিব্রেডি, এটি মাটন এবং স্থানীয় জল লিলি দিয়ে তৈরি একটি স্টু।
  • মাসোঞ্জা, যারা নতুন স্বাদের সন্ধানে থাকেন, তাদের জন্য এটি ভাজা Mopane কীটপতঙ্গ।
  • মেল্কটার্ট, "দুধের টার্ট", এটি দুধের উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি মিষ্টি।
  • কোয়েকসির্স্টাস, এটি একটি গভীর ভাজা মিষ্টান্ন।
  • ভেটকোয়েক, এটি একটি গভীর ভাজা আটা বল, যা কারি মাংস বা এপ্রিকট জ্যাম দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
  • উমভুবো, এটি খামির দুধ এবং umphokoqo মিশ্রিত করে তৈরি, যা সাধারণত Xhosa জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়।

ফাস্ট ফুড

সম্পাদনা

আপনি সাধারণ আন্তর্জাতিক ফাস্ট ফুড আউটলেটগুলি পাবেন। ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, ডমিনোস পিজা এবং উইম্পি সারা দেশ জুড়ে পাওয়া যায়।

স্থানীয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির মধ্যে ব্ল্যাক স্টিয়ার, স্পার এবং স্টিয়ারস উল্লেখযোগ্য যারা সেরা বার্গার সরবরাহ করে এবং Nando's peri-peri মুরগি জন্য বিখ্যাত। চিকেন লিকেনও স্থানীয়দের মধ্যে খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তাদের গরম উইংসের জন্য।

বিশেষ খাদ্য

সম্পাদনা
  • শাকাহারি এবং ভেগান: শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। Kauai ফ্র্যাঞ্চাইজি সাধারণত শপিং মল এবং সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টগুলিতে পাওয়া যায়। এছাড়া উলওয়ার্থ, পিক এন পে, স্পার এবং চেকার এর ডেলি বিভাগ থেকেও বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়।
  • কোশার এবং হালাল: দক্ষিণ আফ্রিকাতে কোশার এবং হালাল খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা সুপরিচিত। যেসব এলাকায় ইহুদি এবং মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে, সেখানে হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং সুপারমার্কেট সহজে পাওয়া যায়।

ধূমপান

সম্পাদনা

বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট এবং পাব ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এটি অনেক সময় উপেক্ষা করা হয়। কিছু রেস্টুরেন্টে ধূমপায়ীদের জন্য নির্ধারিত এলাকা থাকে। সাধারণ নিয়ম হল আপনার টেবিলে অ্যাশট্রে রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা। এছাড়া প্রবেশদ্বারে আপনাকে "ধূমপান বা ধূমপান নয়" এমন প্রশ্ন করা হতে পারে।

পানীয়

সম্পাদনা

সাধারণত পৌরসভার সরবরাহকৃত কলের পানি পান করার জন্য নিরাপদ। তবে কিছু এলাকায়, যেমন হার্টবিসপোর্ট ড্যামে, পানি পান করার আগে ফোটানো পরামর্শ দেওয়া হয়।

দুধ বেশিরভাগ সুপারমার্কেটে সহজলভ্য, তবে বোতলজাত কমলা জুস (যা কনসেন্ট্রেট থেকে তৈরি নয়) উত্তর আমেরিকার তুলনায় এখানে পাওয়া বেশ কঠিন। বেশিরভাগ দক্ষিণ আফ্রিকান রিটেইলার কেবল কনসেন্ট্রেট থেকে পুনর্গঠিত কমলা জুস বা অন্যান্য ফলের রস বা দুধ মিশ্রিত কমলা জুস বিক্রি করে। কোকাকোলা এবং পেপসি মতো সফট ড্রিঙ্কস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় মদ কিনতে এবং পান করতে আইনি বয়স ১৮ বছর। প্রায় সব রেস্টুরেন্টই মদ পরিবেশন করার লাইসেন্স পেয়েছে।

উইটবিল্টস বা ম্যাম্পোয়ার স্থানীয়ভাবে ডিস্টিল করা হয় কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং একটি ম্যানুফ্যাকচারার লাইসেন্স দেওয়া হয়। এগুলি নিরাপদ এবং উপভোগ্য, এবং এগুলি চাঁদের আলো বা আগুনের পানি ধরনের পানীয় নয়। অ্যালকোহলের পরিমাণ এবং মান নিয়ন্ত্রিত হয়।

বিয়ার

সম্পাদনা
 
বিয়ার ফেস্টিভালে বিভিন্ন বিয়ার

স্থানীয় বিয়ার উৎপাদন SABMiller দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে ক্যাসল, হানসা, ব্ল্যাক লেবেল এবং ক্যাসল মিল্ক স্টাউট সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে মাইক্রো ব্রিউয়ারিগুলিও রয়েছে। আমদানি করা বিয়ার, যেমন স্টেলা আরতোইস, গ্রোলশ এবং লরেন্টিনা সহজলভ্য। নামিবিয়ান উইন্ডহোক ব্র্যান্ডের বিয়ারও জনপ্রিয় এবং সাধারণত পাওয়া যায়।

দামের বৈচিত্র্য প্রতিষ্ঠান অনুসারে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। ৫০০ মিলি বিয়ারের জন্য R25 এর আশেপাশে (জুলাই ২০১৭) খরচ করতে হবে।

ওয়াইন

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি প্রতিষ্ঠিত ওয়াইন শিল্প রয়েছে, যেখানে বেশিরভাগ ওয়াইন উৎপাদিত হয় ওয়েস্টার্ন কেপ এর কেপ উইনল্যান্ডস এবং নর্দার্ন কেপ এর অরেঞ্জ নদীর পাশে। সারা দেশে ওয়াইন সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী। একটি ৭৫০ মিলি ভালো লাল ওয়াইন শুরু হয় R100 থেকে, আর চার্ডনে শুরু হয় R90 থেকে। ৫ লিটার এবং ৩ লিটারের কার্টনে ভালো মানের ওয়াইন পাওয়া যায়। ৩ লিটারের ভালো লাল ওয়াইন প্রায় R110 এবং ৩ লিটার চার্ডনে প্রায় R95। যেহেতু দাম নির্ধারিত নয়, তাই ক্রয়ের সময় দামে মিলিয়ে নেওয়া ভালো।

অমরুলা ক্রিম মারুলা ফল দিয়ে তৈরি। এই ফলটি আফ্রিকান হাতি, বানর এবং বাবুনদের প্রিয় খাবার এবং লিকার আকারে এটি মানুষের জন্যও উপভোগ্য। বরফের উপর ঢেলে উপভোগ করুন। এর স্বাদ, রং এবং টেক্সচার বেইলি'স আইরিশ ক্রিমের মতো। Cape Velvet কেপটাউন এবং আশেপাশের এলাকায় জনপ্রিয়।

চা এবং কফি

সম্পাদনা

স্থানীয় রুইবোস চা, যা সেডারবার্গ পর্বতমালা থেকে একটি ভেষজ দিয়ে তৈরি, অনেক দক্ষিণ আফ্রিকানের প্রিয়। আপনি বেশিরভাগ শপিং মলে কফি শপ পাবেন, যেমন মগ এবং বিন এবং House of Coffees। স্টারবাকসের মতো কফি শপ, যেমন Seattle Coffee Company এবং Vida e Caffe (পর্তুগিজ থিমযুক্ত), এখন সাধারণ হয়ে উঠছে।

রাত্রিযাপন

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেকে ৫-তারকা ভিত্তিক রেটিং পদ্ধতিতে গ্রেড করিয়ে নিতে পারে, যা দক্ষিণ আফ্রিকার পর্যটন গ্রেডিং কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান এই পরিষেবাটি ব্যবহার করে এবং তাদের বিজ্ঞাপন সামগ্রীতে তারকা গ্রেডিং দেখানো হয়। এখানে কিছু জায়গায় একটি অনিয়মিত মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান "প্রতি রুম" হার দেওয়ার পরিবর্তে "প্রতি ব্যক্তির" মূল্য নির্ধারণ করে। এছাড়া অনেক সময় পরিষ্কার করে বলা হয় না যে, প্রাতঃরাশ অন্তর্ভুক্ত কিনা এবং যদি না থাকে তবে অতিরিক্ত কত খরচ হবে।

যদি আপনি বাজেট সংবেদনশীল হন, তবে গত কয়েক বছরে অনেক প্রতিষ্ঠান, বড় বা ছোট শহর নির্বিশেষে, তাদের আবাসনের খরচ প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতির সাথে সম্পূর্ণ অমিল রেখে বাড়িয়েছে, তাই আগে থেকে বুকিং দেওয়ার আগে ভালোভাবে অনুসন্ধান করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কিছু ক্ষেত্রে, একটি বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড বা সমমানের হোটেলের খরচ ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক বেশি হতে পারে। এর একটি কারণ হিসেবে মুদ্রা বিনিময় হারকে দায়ী করা হয়, তাই ভালোভাবে দোকানপত্র ঘুরে দেখুন। একটি অন্যরকম বিষয় হল তারকা রেটিং এর মধ্যেও অসঙ্গতি রয়েছে। একটি তিন বা চার তারকা অতিথি নিবাস, বিয়্যান্ডবি বা হোটেল, একই এলাকার পাঁচ তারকা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক ভালোভাবে সজ্জিত, আরও প্রশস্ত, ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হতে পারে। তাই এটি একটি প্রাথমিক গাইড হিসেবে কাজ করে, কিন্তু একটি সিস্টেম্যাটিক নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড নয়।

খরচ-সংবেদনশীল এবং গড় পর্যটকদের জন্য, গেম রিজার্ভ অভিজ্ঞতা প্রাদেশিক উদ্যান কর্তৃপক্ষ বা জাতীয় উদ্যান বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন গেম ক্যাম্পগুলিতে করা ভালো। সেখানে আবাসন, খাদ্য এবং গাইডেড সাফারির জন্য মূল্য খুবই যুক্তিসঙ্গত।

  • ১ তারকা - পরিষ্কার, আরামদায়ক এবং কার্যকরী।
  • ২ তারকা - ভালো: মানসম্পন্ন আসবাবপত্র, সেবা এবং অতিথি যত্ন।
  • ৩ তারকা - খুব ভালো: ভালো আসবাবপত্র, সেবা এবং অতিথি যত্ন।
  • ৪ তারকা - সুপিরিয়র: অত্যন্ত আরামদায়ক এবং উচ্চ মানের আসবাবপত্র, সেবা এবং অতিথি যত্ন।
  • ৫ তারকা - অসাধারণ: শীর্ষ মানের এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিলাসবহুল আবাসন। নিখুঁত সেবা এবং অতিথি যত্ন।

ব্যাকপ্যাকার লজ

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে ব্যাকপ্যাকার লজ বা হোস্টেল ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে এলাকার ট্যুর এবং কার্যক্রমের জন্য ভালো মূল্য প্রদান করা হয়। দেশে পরিবহনের একটি বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে যা একক এবং তরুণ ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত। কিছু লজ খাবার সরবরাহ করে, বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকায়। বেশিরভাগেরই স্ব-ক্যাটারিং সুবিধা এবং শেয়ার করা বাথরুম রয়েছে, যদিও এন-সুইট বাথরুমও সাধারণ।

বিঅ্যান্ডবি (বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট)

সম্পাদনা

বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট প্রতিষ্ঠানগুলি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাধারণত পরিবারের বাড়িতে আবাসন প্রদান করা হয় এবং মালিক বা ম্যানেজার বাড়িতে বা সম্পত্তিতে বসবাস করেন। সাধারণত প্রাতঃরাশ সরবরাহ করা হয়। বাথরুমের সুবিধা এন-সুইট হতে পারে। সাধারণত অতিথিরা মালিক পরিবারের সাথে পাবলিক এলাকাগুলি শেয়ার করে।

স্ব-ক্যাটারিং

সম্পাদনা

একটি বাড়ি, কটেজ, চ্যালেট, বাংলো, ফ্ল্যাট, স্টুডিও, অ্যাপার্টমেন্ট, ভিলা, হাউসবোট, তাঁবু বা একই ধরণের আবাসন যেখানে অতিথিরা নিজেরাই রান্না করার জন্য সরঞ্জাম এবং সুবিধা সরবরাহ করা হয়। (এর মধ্যে একটি ফ্রিজ, ওভেন, স্টোভ এবং মাইক্রোওয়েভ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।) সুবিধাগুলি এমন হওয়া উচিত যা বিজ্ঞাপিত সংখ্যক বাসিন্দার জন্য যথেষ্ট।

অতিথি নিবাস

সম্পাদনা

একটি অতিথি নিবাস হল একটি বাড়ি বা ম্যানর যা রাতারাতি অতিথিদের জন্য পুনর্গঠিত করা হয়েছে বা এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্মিত সুবিধা হতে পারে। এটি একটি বাণিজ্যিক অপারেশন হিসেবে পরিচালিত হয় এবং সাধারণত মালিক পরিচালিত হয়। একটি অতিথি নিবাসের এলাকাগুলি অতিথির একচেটিয়া ব্যবহারের জন্য হয়। মালিক বা ম্যানেজার হয় সম্পত্তির বাইরে বসবাস করেন, অথবা সম্পত্তির একটি পৃথক এলাকায় বসবাস করেন।

ক্যাম্পিং এবং ক্যারাভ্যানিং

সম্পাদনা
 
গামটুস নদীর একটি ছোট ক্যারাভান পার্ক

ক্যাম্পিং গন্তব্য হিসাবে বেশিরভাগ শহরে ক্যারাভান পার্ক রয়েছে। বেশিরভাগ ক্যারাভান পার্ক ক্যাম্পিং সাইটও সরবরাহ করে যেখানে আপনি একটি তাঁবু পিচ করতে পারেন (যদিও কিছু জায়গায় তাঁবু নিষিদ্ধ থাকতে পারে)।

পার্কগুলিতে সাধারণত কেন্দ্রীয় স্নানাগার সুবিধা থাকে। এছাড়াও মোটরহোম দ্বারা এবং অফরোড গাড়ি দ্বারা ক্যাম্পিং বিকল্পগুলি দেখুন।

টাইমশেয়ার

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক টাইমশেয়ার রিসোর্ট রয়েছে, এবং বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক বিনিময় চুক্তিতে অংশগ্রহণ করে। অনেক টাইমশেয়ার মালিক তাদের সময় ভাড়া দেয় যখন তারা এটি ব্যবহার করতে পারে না।

দীর্ঘমেয়াদী

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক রিয়েল এস্টেট এজেন্ট ভাড়ার পরিষেবাও সরবরাহ করে। ভাড়ার সম্পত্তিগুলি মূলত আসবাবপত্রবিহীন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির জন্য উপলব্ধ, তবে আপনি আসবাবপত্রসহ ১ থেকে ১২ মাসের লিজের জন্যও সম্পত্তি খুঁজে পাবেন।

আপনার স্থানীয় আন্তর্জাতিক রিয়েল এস্টেট এজেন্টের শাখা, যার দক্ষিণ আফ্রিকায় উপস্থিতি রয়েছে, আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

শিক্ষা

সম্পাদনা
 
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় পড়াশোনা করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক নন এমন ব্যক্তিদের অবশ্যই একটি স্টাডি পারমিট (শিক্ষা ভিসা) প্রয়োজন। আপনি আপনার দেশ বা নিকটবর্তী দেশের দক্ষিণ আফ্রিকার হাই কমিশন, দূতাবাস, কনসুলেট বা ট্রেড মিশনে এই পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার জন্য সরকারী ফর্ম BI-1738[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] পূরণ করতে হবে।

স্টাডি পারমিট পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মধ্যে অন্তত একটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রহণযোগ্যতার চিঠি, প্রবাসী গ্যারান্টি, ফেরত যাওয়ার বিমান টিকিট এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার সময় জীবনযাপনের খরচ বহন করতে পারার প্রমাণ লাগবে। এছাড়া মেডিকেল প্রয়োজনের ক্ষেত্রে কভার বা বীমার প্রয়োজন হবে। আপনার যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিবারের কোনো সদস্য বা ভাল সামাজিক অবস্থানসম্পন্ন বন্ধু থাকে, তাহলে এই প্রক্রিয়া সহজতর হতে পারে। স্টাডি পারমিটের জন্য খরচ R425 এবং আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় ৬ সপ্তাহ সময় লাগে।

সাধারণ জীবনযাপন খরচ (আবাসন, খাদ্য, যাতায়াত, ইত্যাদি) হিসেবে টিউশন ফি ছাড়াও মাসে কমপক্ষে R6,000 খরচ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। ২০০৭ সালের টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী, কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয় আফ্রিকার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বের ১৯৮তম স্থানে রয়েছে। উইটওয়াটারসর্যান্ড, স্টেলেনবোশ, প্রিটোরিয়া এবং কাওয়াজুলু-নাটালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিয়মিতভাবে শাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ৫০০ র‌্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসে।

পিপিএল এবং বোট স্কিপার: দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন দক্ষতা শেখার জন্যও এটি একটি চমৎকার জায়গা, যেমন ফ্লাইং, নৌকাচালনা এবং স্কুবা ডাইভিং, কারণ উন্নত দেশের তুলনায় এখানে খরচ কম, তবে প্রশিক্ষণের মান সমান বা ভালো।

বাণিজ্যিক ডাইভিং: দক্ষিণ আফ্রিকা বাণিজ্যিক ডাইভার প্রশিক্ষণের জন্যও জনপ্রিয়, কারণ এর যোগ্যতাটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, এবং আন্তর্জাতিক মেরিন কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (IMCA) সদস্য। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্রম বিভাগের ক্লাস I বা ক্লাস II ডাইভারের সার্টিফিকেশন উত্তর সাগর এবং নাইজেরিয়ার অফশোর তেলক্ষেত্র সহ বিশ্বের অনেক স্থানে অফশোর কাজে গ্রহণযোগ্য।

দক্ষিণ আফ্রিকায় উচ্চ বেকারত্বের কারণে বিদেশিদের জন্য কাজের সুযোগ সীমিত।

নাগরিক নন এমন ব্যক্তিরা শুধুমাত্র তখনই দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করার অনুমতি পাবেন, যদি তারা একটি বৈধ ওয়ার্ক পারমিট (কাজের ভিসা) নিয়ে থাকেন। কানাডার শিক্ষার্থীরা SWAP-এর মাধ্যমে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন, যদিও এর খরচ বেশি, তবে এই পরিষেবাটি সহায়ক এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়।

ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া স্টাডি পারমিটের মতোই। আপনার দেশ বা নিকটবর্তী দেশের দক্ষিণ আফ্রিকার হাই কমিশন, দূতাবাস, কনসুলেট বা ট্রেড মিশনে যোগাযোগ করতে হবে, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি নেই। আবেদন করার জন্য সরকারী ফর্ম B1-159 (A&C) পূরণ করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় লাগে।

দুর্লভ দক্ষতা এবং ওয়ার্ক পারমিট কোটাস

সম্পাদনা

দেশে কিছু দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার স্বরাষ্ট্র বিভাগ একটি কোটা ওয়ার্ক পারমিট প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা বিদেশ থেকে এই দক্ষতাগুলি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তৈরি। প্রতিটি বছরের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার তালিকা এবং নির্ধারিত কোটাগুলি প্রকাশিত হয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতা থাকা আবেদনকারীরা কোটা ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই পারমিটের খরচ প্রায় R1600 এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে। যদি আবেদন গৃহীত হয়, তবে আবেদনকারীকে (দেশে প্রবেশের সময় থেকে) ৯০ দিনের মধ্যে সেই ক্ষেত্রে চাকরি খুঁজে নিতে হবে যেটির জন্য পারমিট ইস্যু করা হয়েছে। একবার চাকরিতে যোগ দিলে, পারমিটটি বৈধ থাকবে যতক্ষণ আবেদনকারী একই কাজের ক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকবেন (নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করা যেতে পারে)। আরও তথ্য এবং চলতি বছরের দক্ষতা ও কোটার তালিকা স্বরাষ্ট্র বিভাগের হোমপেজে[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] পাওয়া যাবে।

নিরাপদ থাকুন

সম্পাদনা

দ্রষ্টব্য: দর্শনার্থীদের জন্য সর্বশেষ নিরাপত্তা পরামর্শ নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয় ব্রিটিশ সরকার এবং মার্কিন সরকার দ্বারা।

ও.আর. টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-এ নিরাপত্তা সম্পর্কিত সতর্কতার দিকেও নজর দিন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমিকম্প, সাইক্লোন, টর্নেডো, বন্যা, সন্ত্রাসী ঘটনা বা সংক্রামক রোগ (এইচআইভি ব্যতীত) খুবই কম দেখা যায়।

তবে, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বের অন্যতম উচ্চ হিংসাত্মক অপরাধের হার রয়েছে, তবে সতর্ক থেকে এবং সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করে, আপনি প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মতো নিরাপদ এবং আনন্দময় ভ্রমণ করতে পারেন। মূল বিষয় হল সাধারণ নিরাপত্তা সতর্কতা মেনে চলা: রাতে নির্জন এলাকায় হাঁটা বা টাকার বা দামী জিনিসপত্র প্রদর্শন করা এড়িয়ে চলুন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অপরাধের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী বেশিরভাগ অপরাধ কার্যকলাপ নির্দিষ্ট কিছু টাউনশিপে কেন্দ্রীভূত এবং এটি সাধারণত তামা চুরি, গাড়ি চুরি, পণ্য পরিবহন ও নগদ চুরির সাথে সম্পর্কিত অপরাধী সংস্থাগুলির দ্বারা সংঘটিত হয়। যেসব এলাকা অপরাধপ্রবণ, সেই এলাকাগুলি ছাড়া অন্যান্য স্থানে বিচ্ছিন্ন হামলা বা ছিনতাই খুবই বিরল। পর্যটকদের জন্য, বেশিরভাগ দূতাবাস ও পর্যটন সংস্থা এড়ানোর জন্য পরিচিত এলাকা সম্পর্কে তালিকা প্রদান করে। গাড়ি চালানোর সময়, আপনার মূল্যবান জিনিসগুলি গাড়ির বাইরে দৃশ্যমান না রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।

বন্ধুত্বপূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না। সমস্ত মূল্যবান জিনিসপত্র একটি নিরাপদ স্থানে রাখুন। যদিও বেশিরভাগ ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ অফিস আপনার পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে র‌্যান্ডে অর্থ বিনিময়ের জন্য, তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় মূল নথির পরিবর্তে যাচাই করা ফটোকপি ব্যবহার করা বৈধ। বড় অঙ্কের অর্থ বহন করবেন না। রাতে নির্জন জায়গায় হাঁটা এড়িয়ে চলুন এবং আপনার পর্যটক পরিচয় লুকিয়ে রাখুন। গাড়ি চালানোর সময় মূল্যবান জিনিস দৃশ্যমান অবস্থায় রাখবেন না, কারণ নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় "স্ম্যাশ এবং গ্র্যাব" আক্রমণ ঘটে।

টাউনশিপ ভ্রমণ সম্ভব, তবে একা যাবেন না যদি না আপনি এলাকা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। কিছু টাউনশিপ নিরাপদ হলেও অন্যগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। একজন অভিজ্ঞ গাইডের সাথে যান।

দক্ষিণ আফ্রিকায় গাড়ি চালানোর সময় পুলিশ আপনাকে থামিয়ে আপনার বিদেশি ড্রাইভার লাইসেন্স পরীক্ষা করতে পারে। যদি আপনার লাইসেন্স ইংরেজিতে লেখা থাকে অথবা আপনার একটি আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট থাকে, তবে তারা কিছু করতে পারবে না।

রাতে গাড়ি চালানোর সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন। গ্রামীণ এলাকায় অনেক রাস্তা, বিশেষত মহাসড়কগুলো, প্রায় সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে। ছোট শহরগুলোতে রাস্তার মাঝে বন্যপ্রাণী এবং মানুষ প্রায়ই হাঁটে। কারজ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থাকায় রাস্তায় আরও সতর্ক থাকুন।

গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বর

সম্পাদনা
 
রাস্তার চিহ্নগুলো আপনাকে জরুরি নম্বরগুলি মনে করিয়ে দেবে

স্থির ফোন থেকে

সম্পাদনা
  • 107 - জরুরি (কেপ টাউনে, শুধুমাত্র স্থির লাইনের জন্য)
  • 10111 - পুলিশ
  • 10177 - অ্যাম্বুলেন্স

মোবাইল ফোন থেকে

সম্পাদনা
  • 112- সকল জরুরি সেবা

বন্যপ্রাণী

সম্পাদনা
 
টসওয়ালু কালাহারি রিজার্ভে সতর্ক মিয়ারক্যাট

ভ্রমণকারীরা দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ হল বাইরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা এবং বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ পাওয়া।

বন্যপ্রাণী রিজার্ভে গাড়ি চালানোর সময় সর্বদা গতি সীমা মেনে চলুন এবং গাড়ির ভেতরেই থাকুন। গেম ড্রাইভ বা হাঁটার সময়, আপনার গাইডের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।

হাতিদের কাছাকাছি গাড়ি চালাবেন না। যদি হাতিরা আক্রমণ করে, দ্রুত পিছিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন। হাতিরা ছোট গাড়িগুলোকে উল্টাতে সক্ষম এবং তারা ছোট গাড়ি ধ্বংস করতে পারে, গাড়ির উপর বসে সমস্ত টায়ার ফাটিয়ে এবং জানালাগুলো ভেঙে ফেলতে পারে, যার ফলে গাড়ির কাঠামো স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং আপনি ভেতরে আতঙ্কে চিৎকার করতে পারেন।

জঙ্গলে হাঁটার সময় সর্বদা মোজা এবং বুট পরিধান করুন; খোলা স্যান্ডেল পরবেন না। একটি ভালো জোড়া বুট সাপ এবং পোকামাকড়ের কামড় থেকে রক্ষা করতে পারে এবং সম্ভাব্য কাটার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে যা সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

অনেক এলাকায় পাবলিক রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় বন্যপ্রাণী দেখতে পাবেন, বিশেষ করে বানর এবং বাবুন। ছবি তোলার জন্য গাড়ি থেকে নামবেন না বা প্রাণীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবেন না। এগুলো বন্যপ্রাণী এবং তাদের আচরণ অনির্দেশ্য হতে পারে।

কখনও কখনও আপনি নিজেকে বন্যপ্রাণীদের মাঝে দেখতে পারেন (বিশেষ করে কেপ পয়েন্টে বাবুনের ক্ষেত্রে)। তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যে প্রাণীগুলো শুধুমাত্র একদিকে আছে, কখনও দুইটি দলের মধ্যে হাঁটবেন না। একটি মা বাবুন রেগে যেতে পারে যদি আপনি তার এবং তার বাচ্চার মধ্যে চলে যান।

নদী বা হ্রদে সাঁতার কাটার আগে সর্বদা স্থানীয়দের সাথে পরামর্শ করুন, কারণ সেখানে কুমির বা জলহস্তী থাকতে পারে। বেশিরভাগ প্রধান সৈকতে, বিশেষ করে KwaZulu-Natal-এ, শার্ক জাল স্থাপন করা হয়েছে। প্রধান সৈকত ছাড়া অন্য কোথাও সাঁতার কাটার পরিকল্পনা থাকলে প্রথমে স্থানীয়দের সাথে কথা বলুন।

বার্ষিক সার্ডিন দৌড়ের সময় (সাধারণত মে মাসের শুরুর দিকে এবং জুলাই মাসের শেষের দিকে KwaZulu-Natal উপকূল বরাবর) শার্ক জালগুলি কয়েক দিনের জন্য সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। এটি অতিরিক্ত শার্ক এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের মৃত্যু এড়ানোর জন্য করা হয়। এই সময়ে সৈকতে নোটিশ দেওয়া হয়।

লোডশেডিং

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকা তার চলমান জ্বালানি সংকটের জন্য সুপরিচিত, যার ফলে গত দশকের বেশিরভাগ সময়জুড়ে প্রতিদিন ব্ল্যাকআউট ঘটে। স্থানীয়রা একে 'লোডশেডিং' নামে জানে। বিদ্যুৎ গ্রিডের এই ব্যর্থতা দক্ষিণ আফ্রিকার অনেকের জন্য স্বাভাবিক জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে, তবে এটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত বাধা হিসেবে দেখা দেয়।

লোডশেডিং সময়সূচী বিভিন্ন 'স্টেজ'-এ শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। স্টেজ যত বেশি হবে, প্রতি দিনে ব্ল্যাকআউট তত বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। ২০২৪ সালের হিসাবে, শুধুমাত্র ছুটির দিনগুলোতে কোনো নির্ধারিত লোডশেডিং থাকবে না, তাই এটি ভ্রমণের সেরা সময়। বর্তমান সময়সূচী এবং স্টেজ আপনি এসকমের ওয়েবসাইটে আপনার স্থানীয় পৌরসভা টাইপ করে দেখতে পারেন। ব্ল্যাকআউট প্রতিদিন এক বা দুইবারের মতো হতে পারে, যা স্টেজ ১-২ এ প্রতিটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী হয়, এবং উচ্চতর স্টেজে এটি দিনে ৩-৫ বার হতে পারে, কখনও কখনও চার থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কিছু দিন শুধুমাত্র কয়েক ঘণ্টার বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে।

স্টেজ প্রায়ই কোনো সতর্কতা ছাড়াই ৪-৫ বার বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তবে, বেশিরভাগ হোটেল, শপিং মল এবং রেস্টুরেন্টে ইনভার্টার এবং সোলার প্যানেল থাকে এবং অন্তত কিছু সুবিধা যেমন ওয়াইফাই উপলব্ধ থাকে। ভ্রমণকারীদের পরামর্শ দেওয়া হয় তাদের নিজস্ব পোর্টেবল ফোন চার্জার নিয়ে আসতে, কারণ কিছু সময় চার্জিং পোর্ট সহজলভ্য নাও হতে পারে।

কেপ টাউন শহর তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা ব্যবহার করে লোডশেডিং-এর প্রভাব হ্রাস করে, যা কেপ টাউন শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ কিনে নেওয়া এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য। প্রভাব সাধারণত দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এক স্তর কম থাকে। বেসরকারি শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাকআপ পাওয়ার ব্যবহার করে, কিন্তু বেশিরভাগ সরকারি অফিস এবং রাষ্ট্র-পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো লোডশেডিং চলাকালীন সময়ে কাজ করে না। কেপ টাউনের কিছু এলাকায় সরাসরি এসকম থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় এবং তারা পুরো লোডশেডিং সময়সূচী পালন করে। কিছু জায়গায় হাসপাতালগুলো লোডশেডিং থেকে অব্যাহতি পেতে পারে, যেমন যে কেউ একই সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ পায়।

ব্ল্যাকআউটের সময় অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, কারণ ক্যামেরা এবং বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায়ই অকার্যকর থাকে এবং এমনকি পুলিশ লাইনগুলোও নিচে থাকে। বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করা ভাড়ার বাড়ি বা হোটেল খুঁজে পাওয়া আদর্শ হতে পারে, যদিও এটি প্রায়ই দেশের ধনী অংশগুলোতে দেখা যায়।

স্বাস্থ্য সচেতন থাকুন

সম্পাদনা

জরুরি এবং চিকিৎসা সহায়তা

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশ কয়েকটি স্বাধীন জরুরি সহায়তা কোম্পানি রয়েছে:

  • Netcare 911, 49 New Rd, Midrand, +২৭ ১১ ২৫৪-১৯২৭কিছু ট্রাভেল এজেন্ট Netcare911 কাভার বিকল্প হিসেবে প্রদান করে, তবে আপনি এটি ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স প্রোভাইডারের মাধ্যমেও পেতে পারেন। আপনার বর্তমান ইনস্যুরেন্স কভার তাদের সাথে কোনো সংযোগ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা মূল্যবান।
  • Travel Insurance, +২৭ ১১ ৭৮০-৩৩০০Netcare-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণকারীদের জন্য সমগ্র এমএস কভার প্রদান করে।
  • ER24, Manor 1, Cambridge Manor Office Park, corner Witkoppen and Stonehaven, Paulshof, Sandton, ০৮৪ ১২৪ (দেশীয়)একটি বৃহৎ এবং ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করা জরুরি সহায়তা সংস্থা যা Medi-Clinic হাসপাতালের শৃঙ্খল অন্তর্ভুক্ত করে।

হাসপাতাল

সম্পাদনা

যতটা সম্ভব সরকারি হাসপাতাল এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। বেসরকারি হাসপাতালগুলি বিশ্বমানের সেবা প্রদান করে।

ফার্মেসি

সম্পাদনা

পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় শপিং সেন্টারগুলোতে (যেমন, স্যান্ডটন সিটি, V&A ওয়াটারফ্রন্ট) প্রধান ফার্মেসি চেইন হিসেবে Clicks এবং Dischem পাওয়া যায়। কিছু সুপারমার্কেট চেইন যেমন Checkers-এর ইন-স্টোর ফার্মেসিও রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ফার্মেসিগুলি সাধারণত ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার ফার্মেসির মতো। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকার ফার্মেসির রিটেইল তাকগুলোতে ওষুধের নির্বাচন তুলনামূলকভাবে কম এবং আরও বেশি ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। অনেক OTC ওষুধ পাওয়া যায়, তবে যদি তাকগুলোতে না দেখতে পান, ফার্মাসিস্টের উপস্থিতিতে কাউন্টারে জিজ্ঞাসা করতে হবে।

সারা দেশের প্রায় সব জায়গায় পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা নলকূপের পানি সাধারণত পান করার জন্য নিরাপদ। ওয়েস্টার্ন কেপের পর্বত অঞ্চলের পানিও নিরাপদ, যদিও উদ্ভিদের কারণে পানির রং বাদামী হতে পারে। তবে স্থির জলে বিলহারজিয়া সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি থাকে।

রোদে পোড়া

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক কার্যক্রম বাইরের পরিবেশে হয়, তাই নিজেকে রোদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য রোদে পোড়া এবং সান প্রোটেকশন ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শ পড়ুন।

এইচআইভি এবং এইডস

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বের মধ্যে অন্যতম উচ্চ এইচআইভি সংক্রমণের হার রয়েছে। ৪৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ৫.৪ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভি-পজিটিভ।

দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে সংক্রমণের হার পশ্চিম কেপে প্রায় ২% থেকে শুরু করে কওয়াজুলু-নাটালে ১৭% পর্যন্ত রয়েছে। মোট ১৮.৮% দক্ষিণ আফ্রিকান, যারা ১৫ বছরের বেশি বয়সী, তারা এইচআইভি-পজিটিভ। অনুমান করা হয় যে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের প্রতি চারজন মহিলার মধ্যে একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের মধ্যে একজন সংক্রমিত।

ম্যালেরিয়া

সম্পাদনা
 
ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কে সূর্যোদয়

দেশের উত্তর-পূর্ব অংশ (যেমন ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক এবং সেন্ট লুসিয়া ও এর আশেপাশের এলাকা) মৌসুমি ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, প্রায় নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হলো বর্ষার পরে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত। আপনি কোন সময় ভ্রমণ করবেন তার উপর ভিত্তি করে যথাযথ সতর্কতা নিতে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলো হলো:

ট্যাবার্ড এবং পিসফুল স্লিপ সাধারণত ব্যবহৃত মশারোধী স্প্রে, যা প্রায় সব জায়গায় কেনা যায়।

ম্যালেরিয়া এবং মশারোধী ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শও পড়ুন।

ধূমপান

সম্পাদনা

সমস্ত আবদ্ধ পাবলিক জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ, এর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর, পাব, শপিং মল এবং থিয়েটার। তবে, এই নিয়ম প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়।

বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে ধূমপানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে, যা হয় ভালভাবে বায়ুচলাচল করা ইনডোর এলাকা অথবা খোলা আউটডোর এলাকা।

সম্মান

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ সাধারণত ভদ্র, বন্ধুবৎসল এবং পর্যটকদের প্রতি সদয় আচরণ করে থাকে। বাইরে একটু উচ্চস্বরে কথা বলা এখানে স্বাভাবিক, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকানরা সাধারণত স্বাধীনচেতা এবং প্রাণবন্ত মানুষ। বন্ধু এবং পরিচিতদের মাঝে এমন আচরণ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য। তবে অপরিচিতদের সাথে প্রথমে ভদ্রতার সাধারণ নিয়ম মেনে চলা উচিত, এবং পরে যদি আপনাকে গ্রহণ করা হয়, তখন "রোমে রোমানদের মতো আচরণ করুন"। অপরিচিতদের প্রতি হাসিমুখে স্বীকৃতি জানানো একটি সাধারণ অভ্যাস, এবং হালকা মাথা নাড়ানো বা হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানানো একটি প্রচলিত প্রথা। বাসস্টপ, সুপারমার্কেট, বার, সরকারি ভবন, গণপরিবহন, পেট্রোল স্টেশন, দোকানপাট ইত্যাদি স্থানে সম্পূর্ণ অপরিচিতদের সাথে মাঝে মাঝে আলাপচারিতা হওয়াও স্বাভাবিক।

সর্বসাধারণের আচরণ অনেকটা ইউরোপের মতোই। জনসমক্ষে পুরুষ ও নারীর মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশ সাধারণত কোনো সমস্যা তৈরি করে না, যতক্ষণ না তা অতিরিক্ত হয়ে যায়। সমকামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনসমক্ষে ভালোবাসা প্রকাশ কিছুটা অস্বস্তিকর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে, যদিও জোহানেসবার্গের (স্যান্ডটন, রোজব্যাংক এবং পার্কহার্স্ট), কেপ টাউনের (গ্রিনপয়েন্ট, ক্লিফটন এবং ডি ওয়াটারকান্ট) এবং ডারবান শহরের সমকামী-বন্ধুত্বপূর্ণ ও কসমোপলিটান এলাকায় তা সহনীয় এবং সম্মানজনকভাবে গ্রহণযোগ্য। দক্ষিণ আফ্রিকা একমাত্র আফ্রিকান দেশ যেখানে সরকার সমকামী সম্পর্ক স্বীকার করে এবং সমকামী বিয়েও আইনি স্বীকৃতি পায়।

পুরুষরা সাধারণত একটি দৃঢ় হ্যান্ডশেক দিয়ে অভিবাদন জানায়, আর মহিলারা গালে চুম্বন দিয়ে কন্টিনেন্টাল অভিবাদন করে।

নির্দিষ্ট সমুদ্রসৈকত ব্যতীত, নগ্ন সূর্যস্নান করা অবৈধ, যদিও মহিলাদের জন্য টপলেস সূর্যস্নান ডারবান এবং উমহলাঙ্গা সৈকত, এবং কেপ টাউনের ক্লিফটন এবং ক্যাম্পস বে সৈকতগুলোতে গ্রহণযোগ্য। মহিলাদের জন্য থং বিকিনি বা পুরুষদের জন্য সাঁতারের পোশাক (যদি খুব প্রয়োজন হয় তবে স্পিডোস) এবং সাধারণ সাঁতারের পোশাকই প্রচলিত, অন্যথায় আপনাকে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে পারে।

খাওয়ার সময় সাধারণত ব্রিটিশ স্টাইলে কাঁটাচামচ বাম হাতে ধরে এবং নিচের দিকে মুখ করে খাওয়া হয়। বার্গার, পিৎজা, বানী চাউ এবং অন্যান্য ফাস্টফুড হাত দিয়ে খাওয়া হয়। বুরে沃রস (সসেজ) থেকে ব্রাই (বারবিকিউ গ্রিল) থেকে একটি টুকরো চুরি করে হাত দিয়ে খাওয়া সাধারণত গ্রহণযোগ্য। আপনি কোন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাথে আছেন তার উপর নির্ভর করে এই নিয়মগুলো পরিবর্তিত হতে পারে। ভারতীয়রা প্রায়ই ব্রেয়ানি (ভাত-ভিত্তিক) খাবার হাত দিয়ে খায়, একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত সাদা ব্যক্তি হয়তো তার পিৎজা ছুরি এবং কাঁটাচামচ দিয়ে খেতে পছন্দ করবেন বা একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হয়তো প্যাপ-এন্ড-স্ট্যু চামচ দিয়ে খাবেন। নমনীয় থাকুন, তবে নিজের মতো করেও করতে ভয় পাবেন না; যদি সত্যিই অগ্রহণযোগ্য হয়, তবে লোকেরা সাধারণত আপনাকে জানিয়ে দেবে, অপমান নেবে না।

দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ তাদের দেশ এবং যা তারা অর্জন করেছে তা নিয়ে গর্বিত। যদিও তারা প্রায়ই এখনও বিদ্যমান সমস্যা এবং দুর্বলতাগুলো নিয়ে অভিযোগ করে, আপনি দেশের ইতিহাসের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি অপমানজনক হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ তাদের দেশ সম্পর্কে আপনার চেয়ে বেশি জানে।

যদিও নীতি-আচরণ বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্ন হতে পারে, দক্ষিণ আফ্রিকানরা সাধারণত সরাসরি যোগাযোগকারী। একজন দক্ষিণ আফ্রিকান আপনাকে ঠিক যা মনে করে তা বলবে বা সরাসরি আপনার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করবে, এবং মাঝে মাঝে তারা কঠিন বা আক্রমণাত্মক বলে মনে হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ সাধারণত কাউকে অপমান করার উদ্দেশ্য রাখে না।