পাঞ্জাব ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনবহুল ও সমৃদ্ধ অঞ্চল।
এই নামটি এসেছে ফারসি শব্দ পাঞ্জ (পাঁচ) এবং আব (পানি) থেকে, অর্থাৎ পাঁচ নদীর দেশ। এই পাঁচ নদীর মধ্যে চারটি – ঝিলাম, চেনাব, রাভি এবং শতদ্রু – ইন্দুস নদীর উপনদী, এবং পঞ্চমটি, বেয়াস, শতদ্রুর উপনদী। ইন্দুস নদী অঞ্চলটির পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং কিছু অংশে এটি পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ার মধ্যে সীমানা তৈরি করে।
অঞ্চলসমূহ
সম্পাদনাআজ ভারত ও পাকিস্তানের প্রত্যেকেরই একটি করে পাঞ্জাব রাজ্য রয়েছে। উভয়েরই একটি করে ছোট রাজধানী এলাকা রয়েছে যেগুলো আলাদাভাবে শাসিত হয়।
ভারত
সম্পাদনাপাঞ্জাব (ভারত) উত্তর ভারতের একটি রাজ্য। |
চণ্ডীগড় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যা পাঞ্জাব ও হরিয়ানার রাজধানী হিসাবে কাজ করে। |
ব্রিটিশ শাসনের সময়, বর্তমান হিমাচল প্রদেশ ও হরিয়ানাও পাঞ্জাব প্রদেশের অংশ ছিল।
পাকিস্তান
সম্পাদনাপাঞ্জাব (পাকিস্তান) পূর্ব পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। |
ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল পাকিস্তানের একমাত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যেখানে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ অবস্থিত। |
শহরসমূহ
সম্পাদনা- 1 চণ্ডীগড় — ভারতের প্রথম পরিকল্পিত শহর। এটি হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের রাজধানী হিসাবেও নিযুক্ত আছে।
- 2 অমৃতসর — শিখ ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু যেখানে স্বর্ণমন্দির অবস্থিত।
- 3 ফয়সালাবাদ — পাকিস্তানের একটি টেক্সটাইল শিল্পকেন্দ্র।
- 4 ইসলামাবাদ — পাকিস্তানের রাজধানী শহর।
- 5 লাহোর — পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী এবং পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
- 6 লুধিয়ানা — ভারতের একটি শিল্পনগরী যাকে কখনো কখনো ভারতের ম্যানচেস্টার বলা হয়।
- 7 রাওয়ালপিন্ডি — ইসলামাবাদের কাছাকাছি অবস্থিত একটি প্রাচীন শহর।
অন্যান্য গন্তব্য
সম্পাদনা- 8 নানকানা সাহিব — শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মস্থান।
উপমহাদেশের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান পাঞ্জাবে অবস্থিত:
- 9 সাহিওয়াল – এর কাছেই রয়েছে সিন্ধু সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ধ্বংসাবশেষ যা প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের।
- 10 তক্ষশীলা – গান্ধার যুগের (প্রায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ) একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর এবং শিক্ষা কেন্দ্র।
জানুন
সম্পাদনাপাঞ্জাব অঞ্চলের সমৃদ্ধির মূল কারণ এর জলসেচ ব্যবস্থা এবং সমতল ভূমি। এর এই মূল্যবান ও সমতল ভূখণ্ডের কারণে এটি বহুবার বিজিত হয়েছে। প্রাচীনকালে এটি পারস্য সাম্রাজ্য, মৌর্য সাম্রাজ্য ও মহান আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। পরবর্তীতে এটি মুঘল সাম্রাজ্যর একটি প্রদেশ ছিল, তারপর এটি একটি শিখ সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ১৮৪০-এর দশকে দুটি অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধের পর এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশে পরিণত হয়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি স্বাধীন দেশ ভারত ও পাকিস্তান গঠিত হয়। সেই সময় পাঞ্জাব প্রদেশ ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভক্ত হয়। ভারতের অংশ পূর্ব দিকে রয়ে যায় যার রাজধানী হয় চণ্ডীগড় এবং পাকিস্তানের অংশ পশ্চিম দিকে, যার রাজধানী হয় লাহোর।
পাঞ্জাব ছিল শিখ ধর্মের জন্মস্থান এবং ভারতীয় পাঞ্জাবের প্রধান ধর্ম শিখ ধর্ম। অন্যদিকে পাকিস্তানি পাঞ্জাবে ইসলাম প্রধান ধর্ম।
ভাষা
সম্পাদনাপাঞ্জাবি ভাষাটি এই অঞ্চলের প্রধান ভাষা এবং সীমান্তের দুই পাশেই ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ভারতীয় পাঞ্জাবে অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ হিন্দি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে, এবং পাকিস্তানি পাঞ্জাবে মানুষ উর্দু দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে।
ইংরেজি ভাষার ব্যবহার পাঞ্জাবের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন হতে পারে। বড় শহরগুলিতে শিক্ষার হার সাধারণত বেশি, এবং অনেক মানুষ ইংরেজি বোঝে ও বলতে পারে। বড় শহরগুলিতে ইংরেজিতে যোগাযোগ করতে কোনো সমস্যা হবে না। বেশিরভাগ স্থানে, লোকেরা অন্তত ভাঙা ইংরেজিতে যোগাযোগ করতে সক্ষম।
কীভাবে যাবেন
সম্পাদনাপাঞ্জাবে ছয়টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে: পাঁচটি পাকিস্তানে এবং একটি ভারতে।
গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ভারতীয় পাঞ্জাবকে পাকিস্তানি পাঞ্জাবের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই রাস্তা বাংলাদেশের শহর চট্টগ্রাম থেকে পাকিস্তানের পেশোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত।
যতায়াত
সম্পাদনাকী দেখবেন
সম্পাদনাপাঞ্জাব অনেক ঐতিহাসিক স্থানের জন্য বিখ্যাত, যার মধ্যে রয়েছে শালিমার উদ্যান, হরপ্পা সভ্যতা এবং তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। অমৃতসর বিখ্যাত তার স্বর্ণমন্দির এবং ১৯১৯ সালের জলিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য। চণ্ডীগড় ভারতের প্রথম পরিকল্পিত শহর যা একজন সুইস-ফরাসি স্থপতি দ্বারা নকশা করা হয়েছিল। ওয়াঘা একটি সীমান্ত শহর যা ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে অবস্থিত এবং বিদেশিদের জন্য নিয়মিত খোলা থাকে।
কী করবেন
সম্পাদনাকেনাকাটা
সম্পাদনাখাওয়া
সম্পাদনাপানীয়
সম্পাদনা- চা (ভারত ও পাকিস্তানে চাই নামে পরিচিত) এই অঞ্চলে খুব জনপ্রিয়। এটি কফির চেয়ে বেশি প্রচলিত।
- লাচ্ছি বা লস্যি একটি ঐতিহ্যবাহী উত্তর ভারতীয় পানীয় যা দই, পানি, লবণ ও মশলা দিয়ে ফেটিয়ে তৈরি করা হয়। কখনো কখনো এটি ভাজা ও গুঁড়ো জিরা দিয়ে সুস্বাদু করা হয়। লাচ্ছি মাঝে মাঝে সামান্য দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এর উপরে মালাই দেওয়া হয়। গরম আবহাওয়ায় ঠাণ্ডা লাচ্ছি পান করা হয়। কখনো কখনো এতে হলুদ গুঁড়ো মেশানো হয় এবং এটি পেটের সমস্যার জন্য একটি প্রচলিত ঘরোয়া প্রতিকার।
সতর্কতা
সম্পাদনাপাঞ্জাবের মানুষ অতিথিপরায়ণ। পাঞ্জাবিরা সাধারণত মন থেকে খুবই আন্তরিক। আপনি এখানে সাধারণত নিরাপদ বোধ করবেন, তবে স্বাভাবিক সতর্কতা অবলম্বন করুন। বিশেষত পাকিস্তানে তারা বিদেশিদের বেশ উষ্ণভাবে অভ্যর্থনা জানায়।
পরবর্তী গন্তব্য
সম্পাদনা- ভারত — একটি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দেশ, যেখানে উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা, পশ্চিমে থর মরুভূমি এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর রয়েছে।
- পাকিস্তান — সংস্কৃতি ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ, বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতির দেশ, যেখানে উষ্ণ মরুভূমি থেকে তুষারাবৃত পর্বত পর্যন্ত রয়েছে। এখানে পৃথিবীর ৮০০০ মিটারের মধ্যে ৫টি পর্বত রয়েছে।