বরিশাল বিভাগ বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক বিভাগ। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব থেকেই (অর্থাৎ, পাকিস্তান আমল থেকেই) বৃহত্তর বরিশাল (সাবেক বরিশাল জেলা) ও পটুয়াখালী (সাবেক পটুয়াখালী জেলা) ছিল খুলনা বিভাগের অন্তর্গত; পরবর্তীকালে সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কার্যক্রমের সূত্রে ১৯৯৩ সালে ১ জানুয়ারি বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালীর ছয়টি জেলা বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর নিয়ে বাংলাদেশের পঞ্চম বিভাগ বরিশাল গঠিত হয়। ১৩,৬৪৪.৮৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বিভাগের ভৌগোলিক অবস্থান ২১°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২২°২৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯০°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। এর উত্তরে ঢাকা বিভাগ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগ এবং পশ্চিমে খুলনা বিভাগের অবস্থান। বরিশাল বিভাগ কৃষিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, মৎস্য সম্পদ ইত্যাদিতে ভরপুর।
জেলা
সম্পাদনাকীভাবে যাবেন
সম্পাদনাসড়ক পথে ঢাকা হতে বরিশালের দূরত্ব ২৭৭ কিলোমিটার। অপরদিকে বরিশাল হাইডোগ্রাফী বিভাগ ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে জরীপ শেষে ঢাকা-বরিশাল নৌপথের দূরত্ব ১৬১ কিলোমিটার বলে জানিয়েছে।
স্থলপথে
সম্পাদনাবাসে করে
সম্পাদনাঢাকার গাবতলী বাস স্টেশন থেকে বরিশাল আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৬ হতে ৮ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে হানিফ, শ্যামলী, সাকুরা, ঈগল প্রভৃতি পরিবহন কোম্পানীর বাস আছে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর। এ পথে এসি চেয়ার কোচ, হিনো চেয়ার কোচ ও নরমাল চেয়ার কোচ চলাচল করে; এসি চেয়ার কোস ও হিনো চেয়ার কোচগুলো সরাসরি ফেরী পারাপার এবং নরমাল চেয়ার কোচগুলো লঞ্চ পারাপার। ফেরী পারাপারের গাড়ীগুলো সচরাচর পাটুরিয়া ফেরীঘাট দিয়ে গেলেও কিছু গাড়ি মাওয়া হয়েও যায়। লঞ্চ পারাপারের গাড়ীগুলো পাটুরিয়া দিয়ে চলাচল করে।
- ঢাকা-বরিশাল রুটে সরাসরি চলাচলকারী পরিবহনে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলোঃ
- এসি বাসে - ৭০০/- (রেগুলার) ও ৯০০/- (এক্সিকিউটিভ) এবং
- নন-এসি বাসে - ৩০০/- - ৫০০/-।
রেলপথ
সম্পাদনাবরিশাল বিভাগে রেলপথ নেই বিধায় রেলগাড়ীতে ভ্রমণ করার ব্যবস্থা নেই এখানে।
আকাশ পথে
সম্পাদনাবরিশালে সরাসরি বিমানে আসা যায়; ঢাকা থেকে বরিশালের সাথে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ার - প্রভৃতি বিমান সংস্থার বিমান পরিষেবা রয়েছে ঢাকা থেকে সিলেটে আসার জন্য।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি করে ফ্লাইট সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা-বরিশাল ও বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করে; ভাড়া লাগবে প্রমোশনাল ইকোনমি ক্লাসের ৩ হাজার ২শ’ ও ৩ হাজার ৭শ’ টাকা, রেস্টিকটেড ইকোনমি ক্লাসের ৪ হাজার ও ৪ হাজার ৬শ’ টাকা, আপার ক্লাসের ৫ হাজার ২শ’, ৫ হাজার ৭শ’ ও ৬ হাজার ২শ’ টাকা।
সময়সূচী হলোঃ
- মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও রবিবার বিকেল ৩.০০ টায়।
জল পথে
সম্পাদনানদ-নদী ও সমুদ্র বেষ্টিত এই বিভাগে যাতায়াতের জন্য নৌ-পথই সবচেয়ে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম। ঢাকা-বরিশাল নৌপথের দূরত্ব ১৬১ কিলোমিটার। ঢাকা সদরঘাট নদী বন্দর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে যেসব লঞ্চ ছেড়ে যায় সেগুলো হল এম. ভি. সুন্দরবন-৭, এম. ভি. সুন্দরবন-৮, সুরভী-৭, সুরভী-৮, পারাবত-২, পারাবত-৯, পারাবত-১১, কীর্তনখোলা-১, কালাম খান, সাত্তার খান ও দ্বীপরাজ। ঢাকা সদরঘাট থেকে রাত ৮.১৫ মিনিট হইতে রাত ৮.৩০ মিনিটের মধ্যে লঞ্চগুলো বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সকাল ৬টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে লঞ্চগুলো বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে পৌছে।
- ভাড়ার হারঃ লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৮৫০ টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৬০০, ডেকে ২৫০ টাকা।
- বেসরকারি কোম্পানী গ্রীনলাইন বে-ক্রুজার সার্ভিস চালু করেছে। দিনের বেলায় ভ্রমণ পিপাসু ও শৌখিন ব্যক্তিদের জন্য এ সার্ভিসে শ্রেনী ভেদে ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ৮’শ থেকে ১২’শ টাকা এবং এতে সর্ব্বোচ্চ সময় লাগে ৪ ঘণ্টা।
কী দেখবেন
সম্পাদনা- বি.এম. কলেজ;
- কুয়াকাটা,
- আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাসের সাপের খামার;
- শিব বাড়ি মন্দির ও ঠাকুর বাড়ি;
- রাখাইন পল্লী;
- ফাতরার বন ও ইকোপার্ক;
- লালদিয়া বন;
- সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত;
- ঢাল চর;
- মনপুরা দ্বীপ;
- দেউলি;
- এবাদুল্লাহ মসজিদ;
- অশ্বনীকুমার টাউনহল;
- দুর্গাসাগর দিঘী;
- মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ী;
- বিবির পুকুর পাড়;
- বাইতুল আমান জামে মসজিদ
- মাহিলারা মঠ;
- সংগ্রাম কেল্লা;
- শরিফলের দুর্গ;
- শের-ই-বাংলা জাদুঘর;
- শঙ্কর মঠ;
- মাধপ পাশা জমিদার বাড়ি;
- চর কুকরি মুকরি;
- শর্ষীণা দরবার শরীফ;
- মির্জাগঞ্জের মাজার;
- হযরত দাউদ শাহের মাজার;
- লেহাজ চাঁন চিশতীর মাজার;
- কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ী।
আহার করুন
সম্পাদনাস্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো গৌরনদীর দই ও ইলিশ মাছ। এছাড়াও স্থানীয় পেয়ারা, আমড়া, লেবু এবং পানের দারুণ সুখ্যাতি রয়েছে। এই এলাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এখানে কিছু উন্নতমানের হোটেল ও রেস্তোরা রয়েছেঃ
- হোটেল নীরব, চকবাজার, বরিশাল।
- ইলিশ পার্ক, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী।
- নিউ আল জামিয়াহ রেষ্টুরেন্ট, গির্জা মহল্লা, বরিশাল।
- মল্লিকা রেস্তোরাঁ, পটুয়াখালী।
- রাধুনী রেস্তোরাঁ, ফকির বাড়ি রোড, বরিশাল।
- স্টার সুইটস্, চৌরাস্তা, পটুয়াখালী।
- রয়েল রেস্তোরাঁ, সদর রোড, বরিশাল;
- পিৎজ্যা এ্যারিনা, পটুয়াখালী।
- ঘরোয়া রেষ্টুরেন্ট, গির্জা মহল্লা, বরিশাল।
- রয়েল কিং রেষ্টুরেন্ট, এস.পি কমপ্লেক্স, পটুয়াখালী।
- বৈশাখী রেষ্টুরেন্ট, চকবাজার, বরিশাল।
- চিকেন পয়েন্ট, সবুজবাগ, পটুয়াখালী।
কোথায় থাকবেন
সম্পাদনাবরিশালে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়াও থাকার জন্য উন্নতমানের কিছু হোটেলও রয়েছে -
- হোটেল আলী ইন্টারন্যাশনাল : সদর রোড, বরিশাল;
- হোটেল সাফারি ইন্টারন্যাশনাল, পটুয়াখালী।
- হোটেল ইম্পেরিয়াল : গির্জা মহল্লা, বরিশাল;
- হোটেল গোল্ডেন ইন : এনায়েতুর রহমান সড়ক, বরিশাল;
- হোটেল হিলটন, সদর রোড, পটুয়াখালী।
- হোটেল গ্রান্ট প্লাজা : পোর্ট রোড, বরিশাল;
- কুয়াকাটা গ্রান্ড হোটেল এন্ড সী রিসোর্ট, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী।
- এরিনা হোটেল : সদর রোড, বরিশাল;
- হোটেল এ্যাথেনা ইন্টারন্যাশনাল : কাঠপট্টি রোড, বরিশাল।
জরুরি নম্বর
সম্পাদনা- চিকিৎসা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
- শের-এ-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল: ☎ ০৪৩১-২১৭৩৫৪৭, ৬১৬০৭, মোবাইল: +৮৮০১৭৭৮-৩৩৩ ৩২৪;
- জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
- র্যাব-৮, বরিশালঃ ☎ ৪৩১-৭১৭৭৯, ৭১৭৮৩, মোবাইল: +৮৮০১৭১৪-০৯৩ ৬০৯;
- পুলিশ সুপার, বরিশালঃ +৮৮০১৭১৩-৩৭৪ ২৬০;