বিশ্ব মেলা (সাধারণত বিশ্ব প্রদর্শনী বা শুধু এক্সপো নামে পরিচিত) একটি বৃহৎ আন্তর্জাতিক শিল্প ও বিজ্ঞান উৎসব। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জাতীয় শিবিরে শিল্পকলা এবং শিক্ষামূলক প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশ্ব সমস্যা বা তাদের দেশের সংস্কৃতি এবং ইতিহাস প্রদর্শন করে। এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলির ব্যাপকতার কারণে এগুলো ব্যুরো ইন্টারন্যাশনাল দেস এক্সপোজিশনস (BIE) m দ্বারা অনুমোদিত হয়, যাতে খরচ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং অন্যান্য প্রদর্শনী ও আন্তর্জাতিক বড় অনুষ্ঠান, যেমন অলিম্পিক, ইত্যাদির সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানো যায়।
জানুন
সম্পাদনাইতিহাস
সম্পাদনাবিশ্ব মেলার উৎপত্তি ফরাসি জাতীয় প্রদর্শনীর ঐতিহ্য থেকে, এবং ১৮৪৪ সালে ফরাসি শিল্প প্রদর্শনীর সাফল্য প্রতিবেশী ইউরোপীয় দেশগুলোকে এই ধরনের অনুষ্ঠান গ্রহণ করতে প্রভাবিত করে। এই ধারণাটি যুক্তরাজ্যে পৌঁছায়, যেখানে ১৮৫১ সালে অনুষ্ঠিত হয় "গ্রেট এক্সিবিশন অফ দ্য ওয়ার্কস অফ ইন্ডাস্ট্রি অফ অল নেশন্স", যা সাধারণভাবে "দ্য গ্রেট এক্সিবিশন" নামে পরিচিত। এই অনুষ্ঠানটি ব্যাপকতা ও বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে একটি নজির স্থাপন করে, যা একক বিষয়ের বাইরে প্রসারিত হয় এবং সমাজের বিস্তৃত দিকগুলো, যেমন শিল্প ও নকশা শিক্ষা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সম্পর্ক, এবং পর্যটন ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই পদ্ধতি ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের গোড়ার দিকে প্যারিসসহ আরও কয়েকটি শহর অনুকরণ করে, যারা বহুবার বিশ্ব মেলা আয়োজন করেছে।
বিশ্বমেলার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা সময়সূচি এবং স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করে। ১৯২৮ সালে নিয়মিত বিশ্ব মেলার সময়সূচির জন্য একটি সম্মেলন গঠিত হয় এবং বিশ্ব মেলা আয়োজন সমন্বয়ের জন্য BIE তৈরি হয়। এর কিছু পরেই, বিশ্ব মেলার জন্য নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হতে শুরু করে। ১৯৩৯-৪০ সালে নিউ ইয়র্কের একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির প্রদর্শনী থেকে মানবিক ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার প্রদর্শনীর দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই ধারা অব্যাহত থাকে, এবং ১৯৬৭ সালে মন্ট্রিয়ালের আন্তর্জাতিক ও ইউনিভার্সাল প্রদর্শনীতে, বা এক্সপো ১৯৬৭-তে 'এক্সপো' শব্দটি প্রথমবার বিশ্ব মেলার জন্য ব্যবহার করা হয়।
শেষ পর্যন্ত, বিশ্ব মেলাকে দেশের প্রচারণার জন্য একটি চমৎকার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের ধারণা জনপ্রিয় হয়, এবং শিবিরগুলোতে প্রদর্শনকারী দেশগুলোর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক উপাদানগুলির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়। বর্তমানে, বিশ্ব মেলা শুধু দেশীয় ব্র্যান্ডিংয়েই নয়, পুরোনো বিশ্ব মেলার ধারণাগুলোও পুনরুজ্জীবিত করছে, যেখানে নতুন এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রদর্শন এবং বর্তমান মানবিক পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতার উপর প্রতিফলন তুলে ধরা হয়।
প্রকারভেদ
সম্পাদনাBIE অনুযায়ী তিন ধরনের বিশ্ব মেলা রয়েছে:
- ইউনিভার্সাল এক্সপোজিশন (বিশ্ব প্রদর্শনী) সবচেয়ে বড় এবং 'প্রধান' প্রদর্শনী হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অনুষ্ঠানগুলি প্রতি পাঁচ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয় এবং তিন সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এগুলো সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং প্রায়ই সবচেয়ে জমকালো প্রদর্শনী হিসেবে পরিচিত, কারণ বড় আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রতিটি দেশকে তাদের জাতীয় ব্র্যান্ড প্রচারের জন্য যথেষ্ট এলাকা দেওয়া প্রয়োজন হয় পড়ে। অংশগ্রহণকারীদের নিজেদের শিবির নির্মাণ করতে হয়। এর ফলে প্রচুর ব্যয় হয়, যা প্রায়ই এক অসাধারণ প্রদর্শনীর দিকে নিয়ে যায়। থিমগুলো সাধারণত মানব অভিজ্ঞতার সার্বজনীন বিষয়ে নিয়েই হয়। ১৯২৮ সালের পূর্বে উপযুক্ত মাত্রার সব অনুষ্ঠানকে ইউনিভার্সাল এক্সপোজিশন হিসেবে পূর্বাবস্থায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২০ সালের এক্সপো ২০২১ সালে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
- ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোজিশান (বিশেষ প্রদর্শনী) ইউনিভার্সাল এক্সপোজিশনের তুলনায় ছোট এবং 'মাইনর' প্রদর্শনী হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অনুষ্ঠানগুলি সাধারণত অনেক বেশি সংকীর্ণ বা বিশেষায়িত ধারণাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই ধরনের অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি নেই, তবে বৃহত্তর ইউনিভার্সাল এক্সপোজিশনের পাঁচ বছরের ব্যবধানের মধ্যে একটি মাত্র ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হতে পারে।
- ইন্টারন্যাশনাল হর্টিকালচার এক্সপোজিশান হল বিশেষায়িত ইভেন্ট, যা ফুলের প্রদর্শনী, উদ্ভিদ উদ্যান এবং উদ্ভিদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত করে। যদিও তাত্ত্বিকভাবে এগুলো প্রতি বছর (ভিন্ন ভিন্ন দেশে) অনুষ্ঠিত হতে পারে, বাস্তবে তা হয় না। এই ইভেন্টগুলো সাধারণত তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং ৫০ হেক্টরের বা তার বেশি এলাকা জুড়ে আয়োজিত হয়। এই অনুষ্ঠানগুলি BIE এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ হর্টিকালচারাল প্রোডিউসার্স (AIPH) দ্বারা যৌথভাবে অনুমোদিত হয়। ২০১৯ সালের অনুষ্ঠানটি বেইজিং, চীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ঐতিহাসিক কারণবশত, BIE "মিলান ট্রিয়েনিয়াল(ত্রিবার্ষিক) প্রদর্শনীকে" (ডেকোরেটিভ আর্টস এবং মডার্ন আর্কিটেকচার) এই শর্তে স্বীকৃতি দেয়, যে তার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি যেন বজায় থাকে। ট্রিয়েনালে আধুনিক সজ্জাশিল্প এবং শিল্পকলার প্রদর্শনী দেখা যায়। ২০১৯ সালের, XXII ট্রিয়েনালে মানুষের, প্রকৃতির এবং অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধানকারী নকশা পদ্ধতিগুলোর উপর দৃষ্টিপাত করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠান
সম্পাদনাআসন্ন অনুষ্ঠান
সম্পাদনাName | Type | Location | Dates | Theme |
---|---|---|---|---|
এক্সপো বেইজিং ২০১৯ | হর্টিকালচার এক্সপোজিশান | বেইজিং, চীন | লিভ গ্রিন, লিভ বেটার | |
expo ২০২০ | ইউনিভার্সাল এক্সপোজিশান | দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত | কানেক্টিং মাইন্ড, ক্রিয়েটিং ফিউচার | |
ফ্লোরিডা ২০২২[অকার্যকর বহিঃসংযোগ] | হর্টিকালচার এক্সপোজিশান | আলমের, নেদারল্যান্ড | গ্রোইং গ্রীন সিটিজ |
পূর্ববর্তী অনুষ্ঠান
সম্পাদনাইন্টারন্যাশনাল গার্টেনাউসস্টেললাং ২০১৭ (IGA ২০১৭), একটি উদ্যানতত্ত্ব(হর্টিকালচার) প্রদর্শনী, ৭ এপ্রিল থেকে ৬ অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত বার্লিন, জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হয়।
এক্সপো আস্তানা ২০১৭, একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী, ১০ জুন থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত আস্তানা, কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত হয়, যার থিম ছিল ভবিষ্যতের শক্তি।
XXI ট্রিয়েনালে(ত্রিবার্ষিক) আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী, এটি মিলান, ইতালিতে, ২ এপ্রিল থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার থিম ছিল একবিংশ শতাব্দী: ডিজাইন আফটার ডিজাইন।
এক্সপো ২০১৬, একটি হর্টিকালচার প্রদর্শনী, ২৩ এপ্রিল থেকে ৩০ অক্টোবর ২০১৬ পর্যন্ত আন্তালিয়া, তুরস্কে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার থিম ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ জীবন।
এক্সপো মিলান ২০১৫, একটি ইউনিভার্সাল এক্সপোজিশন, ১ মে থেকে ৩১ অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত মিলান, ইতালিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার থিম ছিল গ্রহের খাদ্য, জীবনের জন্য শক্তি।
এক্সপো ২০১২ (২০১২ 여수 세계 박람회 ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোজিশন ইয়োসু কোরিয়া ২০১২) ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োসুতে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। এই অনুষ্ঠানের থিম ছিল 'জীবন্ত সমুদ্র ও উপকূল', এবং এটি ১২ মে থেকে ১২ আগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত তিন মাস ধরে চলেছিল। এক্সপো ২০১২-তে ৮০,০০,০০০ এর বেশি দর্শনার্থী অংশগ্রহণ করে এবং ১০৩টি দেশ এবং ৮টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এতে অংশ নেয়।
ফ্লোরিডে ২০১২ ছিল নেদারল্যান্ডসের দশবার্ষিক ফুল এবং বাগান প্রদর্শনীর সর্বশেষ আয়োজন, যা BIE এবং AIPH দ্বারা ষষ্ঠবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক উদ্যানতত্ত্ব প্রদর্শনী হিসেবে অনুমোদিত হয়। এটি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ভেনলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার থিম ছিল 'প্রকৃতির মঞ্চের অংশ হোন; জীবনের মানের আরও কাছাকাছি আসুন'।
Expo 2010 (上海世博会 সাংহাই সিবহুই), একটি ইউনিভার্সাল এক্সপোজিশন, চীনের সাংহাই শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইভেন্টের থিম ছিল 'বেটার সিটি – বেটার লাইফ', যা শহুরে উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে। এই ইভেন্টটি ১৮৪ দিন ধরে চলেছিল, ১ মে থেকে শুরু হয়ে ৩১ অক্টোবর, ২০১০-এ শেষ হয়। এক্সপো ২০১০ বিশ্ব মেলার ইতিহাসে দর্শনার্থীর সংখ্যা রেকর্ড ভেঙে দেয়, ছয় মাসে ৭৩,০০,০০০ এর বেশি দর্শনার্থী অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে শুধুমাত্র ১৬ অক্টোবরেই ১০,০০,০০০ এর বেশি দর্শনার্থী ছিল। ইভেন্টটিতে ১৮০টিরও বেশি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল।
{{#assessment:প্রসঙ্গ|রূপরেখা}}