এশিয়া> দক্ষিণ এশিয়া> নেপাল> পূর্ব তরাই> বীরগঞ্জ
বীরগঞ্জ হল নেপালের পারসা জেলার একটি শহর। এটি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ১৩৫ কিমি (৮৪ মাইল) দক্ষিণে ভারতীয় রাজ্য বিহারের রক্সৌল শহরসংলগ্ন সীমান্তে অবস্থিত। পাটনা এবং কলকাতা থেকে সড়কপথে বীরগঞ্জ নেপালের প্রবেশপথ হওয়ার কারণে একে নেপালের প্রবেশদ্বার বলা হয়। নেপালের অর্থনীতিতে বীরগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সাথে নেপালের অধিকাংশ বাণিজ্য বীরগঞ্জ এবং ভারতীয় শহর রক্সৌলের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
অনুধাবন
সম্পাদনাএই শহরটি ভারতের বিহার রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত এবং এটি ভারত থেকে আসা পণ্যদ্রব্যের প্রধান প্রবেশ পয়েন্ট। এখান থেকে কলকাতা বন্দরেও পণ্য আসে।
প্রবেশ
সম্পাদনাএই শহরে কাঠমান্ডু থেকে জিপুর-সিমারা নামে একটি বিমানবন্দরের বিমান পাওয়া যায় এবং সেখান থেকে বীরগঞ্জে পৌঁছাতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। যদি আপনার হোটেল বুক করা থাকে; তাহলে বিমানবন্দর থেকে হোটেলে পৌঁছানোর সুবিধাও থাকতে পারে বা আপনি ট্যাক্সি ভাড়া নিতে পারেন।
যদি স্থলপথে ভ্রমণ করতে চান তাহলে কাঠমান্ডু থেকে অনেক বাস ছাড়ে এবং কিছু বাসের সেবা খুব ভালো। কাঠমান্ডু থেকে বীরগঞ্জের জন্য রাতের বাসও রয়েছে এবং এসব নেপালের সেরা বাস পরিষেবা হিসেবে বিবেচিত।
বীরগঞ্জ থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার জন্যে টাটা সুমো (জিপ) গাড়ি ভ্রমণ ৪-৫ ঘণ্টা সময় নেয়; তবে রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এ ধরনের ভ্রমণ দুর্বল হৃদয়ের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। ভাড়া হতে পারে ৩৫০-৪০০ ভারতীয় রুপি (৬০০ নেপালি রুপি)।
ভারত থেকে বীরগঞ্জে প্রবেশের জন্য আরও তথ্যের জন্য তার পার্শবর্তী শহর রক্সৌলের 'পরবর্তী ভ্রমণ' বিভাগটি দেখুন।
ঘোরাঘুরি
সম্পাদনাএটি দেখার মত একটি জায়গা; যদিও তা পর্যটনকেন্দ্র নয়। আপনি বিশ্বা নামের একটি ছোট পাহাড়ের উপর বুদ্ধের স্তূপ দেখতে পারেন। এছাড়াও, গাধিমাই নামের একটি বিখ্যাত হিন্দু দেবীর মন্দির রয়েছে, যেখানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি বিশাল মেলা বসে। তখন বিশ্বব্যাপী হিন্দুরা এখানে দেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পশু উৎসর্গ করে। এই উৎসর্গকৃত পশুর সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় উৎসর্গকৃত পশুর তুলনায় অনেক বেশি। বীরগঞ্জের পশ্চিমে বিন্দাবাসিনী মাই নামে আরেকটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্থান রয়েছে। প্রথম প্রধানমন্ত্রী রানা জং বাহাদুর রানা এখানে একটি ষড়যন্ত্রের ফলে শত শত লোককে হত্যা করেছিলেন। শহরের উত্তরে পার্সা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং চিত্তবন জাতীয় উদ্যান নামে দুটি বৃহৎ উদ্যান রয়েছে, যেখানে শতাধিক বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। বাঘ, হাতি, কস্তুরী হরিণ, ঘড়িয়াল এবং লাল শিংযুক্ত হাঁড়িজাতীয় পাখি ইত্যাদি এখানকার প্রধান আকর্ষণ।
- 1 পার্সা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এক সময়ে এটি রাজপরিবারের শিকারভূমি ছিল; কিন্তু এখন এটি সংরক্ষিত এলাকা ও জাতীয় উদ্যান। এখানে গর, চিতা, হাতি, সাম্বার হরিণসহ বিভিন্ন পাখির প্রজাতি দেখা যায়।
- 2 ঘাড়িয়ারওয়া পখারি, ড্রাইপোর্ট বাইপাস রোড দিয়ে। সুন্দর একটি হ্রদ ও বাগান; যদিও কখনও কখনও পানি ঘোলা হয়ে যায়। এটি নেপালি তরুণদের জন্য একটি জনপ্রিয় ঘোরাঘুরির জায়গা।
- 3 বীরগঞ্জ ঘড়িঘর, বীরগঞ্জ বাজারের মধ্যে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় স্থাপনা
- 4 মাইস্থান মন্দির, রাস্তা ২, বীরগঞ্জের ঘড়িঘর বাজারের মধ্যে। শহরের অনেক হিন্দু মন্দিরের মধ্যে একটি। এটি প্রায় ২০০ বছর পুরানো।
করণীয়
সম্পাদনাআহার
সম্পাদনাবীরগঞ্জে কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে যা কোনো হোটেলের অংশ নয়; যেমন: শ্রী ঋদ্ধি সিদ্ধি, অন্মল সুইটস, কাঞ্চা সুইটস, মঙ্গলম সুইটস, পরোটা হাউস, হুক্কা বার এবং বিরিয়ানি হাউস। এছাড়াও, ভালো ভালো হোটেলের সাথে সংযুক্ত রেস্তোরাঁও থাকে। যেমন: হোটেল মাকালু রেস্টুরেন্ট, হোটেল পূজন রেস্টুরেন্ট, হোটেল বিশ্ব রেস্টুরেন্ট, হোটেল হিমাল রেস্টুরেন্ট, হোটেল শাহ প্যারাডাইস রেস্টুরেন্ট, হোটেল সুরজ রেস্টুরেন্ট, হোটেল ইচ্ছা ( জিপুর সিমারা বিমানবন্দরের কাছে) ইত্যাদি। এই রেস্তোরাঁগুলোতে পশ্চিমা, ভারতীয় ও নেপালি খাবার পরিবেশন করা হয়।
বীরগঞ্জে স্থানীয় এবং ভারতীয় রাস্তার খাবারের একটি সুন্দর মিশ্রণ পাওয়া যায়। সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর দোকান প্রধান রাস্তা, মাইস্থান এবং আদর্শনগর এলাকায় অবস্থিত।
- 1 ম্যাজিক বেলস, গীতা মন্দির রোড, ☎ +৯৭৭ ৫১ ৫২০৮৮৮। দ্রুত খাবার পরিবেশন এবং ভারতীয় খাবার। এখানে একটি সুস্বাদু কালো বন কেক পাওয়া যায়। কর্মীরা খাদ্য এবং অ্যালার্জির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে খাবার পরিবেশন করে।
পানীয়
সম্পাদনাপ্রধান রাস্তার একটি ব্লকের দুই পাশে অনেক মদের দোকান রয়েছে। এছাড়া হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলিতেও মদ পরিবেশন করা হয়।
রাত্রিযাপন
সম্পাদনাবেশিরভাগ হোটেলই প্রধান সড়কের উপর বা কয়েক মিটার দূরে অবস্থিত।
- হোটেল সুরাজ, মেইন রোড, আদর্শনগর, বীরগঞ্জ (শহরের প্রধান সড়কে এনসেল স্টোরের বিপরীতে), ☎ +৯৭৭ ৫১ ৫২২৮৫৯, +৯৭৭৫১৫২২২০০, +৯৭৭৫১৫২২৮০০, ইমেইল: info@hotelsuraj.com। আগমন: দুপুর, প্রস্থান: দুপুর। শহরের অন্যতম বিখ্যাত হোটেল। ২০০০-৫০০০ নেপালি রূপি সেই সাথে ১৩% ভ্যাট ট্যাক্স।
- কাউন্টি ইন হোটেল, হোটেল সুরাজ থেকে ২০০ মিটার দক্ষিণে যান, যতক্ষণ না আপনি কোণে অন্য একটি হোটেলে পৌঁছান, তারপর সেই পাশের রাস্তায় ২০ মিটার নিচে যান এবং তখন আপনার বাম দিকে একটি বড় ভবন হবে। চারপাশে জিজ্ঞাসা করুন, এটি বেশ পরিচিত। । লবি ও প্রথম তলায় বিনামূল্যে ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে; তবে প্রায় মাঝরাতে বন্ধ হয়ে যায়। দ্বৈত বিছানা: ৮০০ নেপালি রূপি।
- হোটেল পুজান, আদর্শ নগর (কান্ট্রি ইন হোটেল থেকে রাস্তার পাশে), ☎ +৯৭৭ ৫১ ৫৩৩৬০০, +৯৭৭ ৫১ ৫২৮১০০, +৯৭৭ ৫১ ৫২৪৫০০, ইমেইল: info@hotelpujan.com। একটি রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে যে কেউ যেতে পারেন। ২০০-৫০০ নেপালি রূপি।
- হোটেল মাকালু, আলখিয়া মঠ (ঘন্টাঘরের দক্ষিণে প্রধান সড়কে) , ☎ +৯৭৭ ৫১ ৫২৩০৫৪। $50 বা তার বেশি।
- হোটেল শাহ প্যারাডাইস , নতুন বাস পার্ক, ☎ +৯৭৭ ৫১ ৫২৭৪৬৯। বাজেট হোটেল $৫ বা তার বেশি।
- হোটেল বিশ্ব, নতুন বাস পার্ক, বিশ্ব (নতুন বাস পার্কের উত্তরে, বাই পাস রোড থেকে পূর্বে), ☎ +৯৭৭ ৫১ ৫২৭৭৭৭। $৫০ বা তার বেশি।
- হোটেল ইচ্ছা , জিতপুর সিমারা মেইন রোড, ☎ +৯৭৭ ৫৩ ৫২০৫৯১। এটি বীরগঞ্জের উপকণ্ঠে অবস্থিত। জায়গাটির নাম জিতপুর সিমারা। $৫০ বা তার বেশি।
এপ্রিল মাসে প্রচুর পরিমাণে মশা হয় এবং তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে। তাই এপ্রিলের শুরুতে একটি ভালো ফ্যান ছাড়া ঘুম প্রায় অসম্ভব করে তোলে।
সংযোগ
সম্পাদনাযদি আপনি স্থানীয় এনসেল সিমের কার্ড খুঁজতে চান, তাহলে বীরগঞ্জের প্রধান রাস্তার মাঝামাঝি ডান পাশে একটি দাপ্তরিক এনসেল স্টোর রয়েছে, সেখান যান। তারা ইংরেজিতে খুব ভালো।
পরবর্তী ভ্রমণ
সম্পাদনাকাঠমান্ডুতে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বাস বা জিপ (টাটা সুমো) ব্যবহার করতে পারবেন। বাসগুলো সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ছাড়ে। একটি 'বিলাসবহুল' বাস প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় ছাড়ে। জিপ সাধারণত সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পাওয়া যায় এবং ১০ জনের জন্য একটি যৌথ জিপের ক্ষেত্রে প্রতি জনের ভাড়া ৫০০ নেপালি রুপি। পুরো একটি ব্যক্তিগত জিপ ভাড়া নিতে চাইলে খরচ হবে ৬০০০ নেপালি রুপি। বাস অথবা জিপ ধরতে হলে আপনাকে বাস স্টেশনে যেতে হবে, যা প্রধান রাস্তার কিছুটা দূরে অবস্থিত। সীমান্ত থেকে উত্তরে প্রায় ৩ কিলোমিটার গিয়ে একটি বড় গোলচত্বর (রাউন্ডআবাউট)-এর মাঝখানে একটি টাওয়ার দেখতে পাবেন। সেখানে ডান দিকে ঘুরলে ৫০ মিটার সামনে বাস স্টেশন পাবেন. যদিও এটি শহরের উত্তরে একটি ধুলোমাখা এলাকা। প্রচুর বাস দাঁড়িয়ে থাকলে বুঝবেন যে, আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। সাইকেল রিকশায় যাতায়াতের ভাড়া হবে প্রায় ৮০ নেপালি রুপি। জিপগুলি সম্পূর্ণ যাত্রী পূর্ণ হলে রওনা দেয় এবং সেগুলি বাস স্টেশনের সামনের দিকে থাকে (পিছনের দিকে নয়)। তাই জিপে গেলে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে।
ভারতে সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য তথ্যের প্রয়োজন হলে রক্সৌল নিবন্ধের 'পরবর্তী ভ্রমণ' বিভাগটি আপনাকে সহায়তা করতে পারে।