গুপ্তিপাড়া পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার একটি প্রাচীন জনপদ। এটি চুঁচুড়া সদর মহকুমা ও বলাগড় থানার অধীন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈষ্ণব কেন্দ্র এবং প্রাচীন মন্দিরের জন্য বিশেষ পরিচিত। গুপ্তিপাড়ার মঠ চত্বরে গড়ে ওঠা মন্দিরগুলি এখনও সেই সব ইতিহাসের সাক্ষী। বাংলার প্রথম বারোয়ারি পূজার প্রচলন হয় গুপ্তিপাড়ায়। তখন এটি বিন্ধ্যবাসিনী জগদ্ধাত্রী পূজা নামে প্রচলিত ছিল। ঐতিহ্য এবং কিংবদন্তি মিলে গুপ্তিপাড়ার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রা ও বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মোহন লালের জন্মস্থানও এই গুপ্তিপাড়াতেই। বাংলার প্রথম ব্র্যান্ডেড মিষ্টি গুপো সন্দেশের উৎপত্তি গুপ্তিপাড়া থেকে।
জানুন
সম্পাদনাকলকাতা থেকে একদিনের ভ্রমণের জন্য গুপ্তিপাড়া সবচেয়ে ভালো। এখানে বৃন্দাবনচন্দ্র মঠের মন্দির কমপ্লেক্স সহ বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। গুপ্তিপাড়ার মন্দিরগুলি আট-চালা, জোড়-বাংলা এবং এক-রত্ন শৈলীর। মন্দিরগুলিতে রয়েছে অপূর্ব পোড়ামাটির অলঙ্করণ ও ফ্রেসকো পেন্টিং তথা দেয়াল চিত্রকলার কাজ।
প্রবেশ
সম্পাদনাআকাশপথে
সম্পাদনারেলপথে
সম্পাদনাগুপ্তিপাড়ার দূরত্ব হাওড়া থেকে রেলপথে ৭৫ কিলোমিটার ও ব্যান্ডেল থেকে ৩৫ কিলোমিটার। গুপ্তিপাড়া রেলওয়ে স্টেশনটি ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইন রেলপথের ওপর অবস্থিত। হাওড়া এবং শিয়ালদহ উভয়ের সাথেই ভালভাবে রেলপথে যুক্ত। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে কাটোয়া লোকাল করে গুপ্তিপাড়ায় আসা যায়। ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেলপথে হুগলি জেলার শেষ স্টেশন হলো গুপ্তিপাড়া।
- 1 গুপ্তিপাড়া রেলওয়ে স্টেশন।
সড়কপথে
সম্পাদনাবর্ধমান, তারকেশ্বর, চুঁচুড়ার সাথে গুপ্তিপাড়ার বাস যোগাযোগ আছে। দিল্লি রোড এবং ৬ নং স্টেট হাইওয়ে হয়ে কলকাতা থেকে গুপ্তিপাড়ার দূরত্ব প্রায় ৮৮ কিলোমিটার।
জলপথে
সম্পাদনাগঙ্গার অপর তীরে নদীয়া জেলার শান্তিপুরের সাথে জলপথে যোগাযোগ আছে।
ঘুরে দেখুন
সম্পাদনারিকশা করে
সম্পাদনারেলওয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে আপনি একাধিক রিকশা এবং টোটো পাবেন। টোটো এবং রিকশা করেও আপনি গুপ্তিপাড়ার দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারেন।
দেখুন
সম্পাদনা- 2 বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির। বাংলার প্রথম বারোয়ারি পূজার স্থান এই মন্দিরটি। তখন এটি বিন্ধ্যবাসিনী জগদ্ধাত্রী পূজা নামে প্রচলিত ছিল। এখনও বিন্ধ্যাবাসিনীর জগদ্ধাত্রী পুজোয় কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়।
- 3 বৃন্দাবনচন্দ্র মঠ (গুপ্তিপাড়ার মঠ), রথসড়ক, বড়বাজার, গুপ্তিপাড়া, পশ্চিমবঙ্গ ৭১২৫১২। বৃন্দাবনচন্দ্র মঠ চত্বরে চারটি প্রধান বৈষ্ণব মন্দির রয়েছে। মন্দিরগুলি হলো চৈতন্যদেব মন্দির, বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির এবং রামচন্দ্র মন্দির। এই চার মন্দিরের সমষ্টিকে বলা হয় গুপ্তিপাড়ার মঠ।
- 4 চৈতন্যদেব মন্দির (চৈতন্য মন্দির)। এই চত্বরের সবচেয়ে পুরোনো মন্দিরটি হল চৈতন্যদেব মন্দির। প্রাচীন জোড় বাংলা রীতিতে তৈরী এই মন্দির। মন্দির গৃহে রয়েছে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব ও শ্রী নিত্যানন্দের মূর্তি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বেশ কিছু মূর্তি। এগুলি রথযাত্রার সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- 5 বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির (শ্রী শ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ মন্দির)। এই মন্দিরটি আটচালা রীতিতে তৈরি। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে রয়েছে টেরাকোটার ভাষ্কর্যমন্ডিত খিলান। মন্দিরের ভেতরে বিভিন্ন রকমের চিত্রকলা রয়েছে, যা ফ্রেসকো পেন্টিং তথা দেয়াল চিত্রকলা বলে অধিকতর পরিচিত। এছাড়াও এই মন্দিরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি, জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরাম সহ গরুড় মূর্তি।
- 6 কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির। এই মন্দিরটি আটচালা রীতিতে তৈরি। মন্দির গৃহে রয়েছে রাধা কৃষ্ণের মূর্তি।
- 7 রামচন্দ্র মন্দির। এই মন্দিরটি একচালার। মন্দিরের দেওয়ালের গায়ে বাংলার পোড়ামাটি তথা টেরাকোটা স্থাপত্যের নয়নাভিরাম নিদর্শন রয়েছে। মন্দির গর্ভে রয়েছে রাম,সীতা, লক্ষ্মণ, হনুমানের মূর্তি।
- 8 দেশকালী মন্দির (দেশকালী মাতা মন্দির)। বৃন্দাবনমঠের নিকটেই রয়েছে প্রাচীন দেশকালী মাতার মন্দির। দেশকালীমাতা গুপ্তিপাড়ার অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
- গোপাল জিউ মন্দির (মাসি বাড়ি)।
করুন
সম্পাদনাউৎসব
সম্পাদনাগুপ্তিপাড়ার প্রধান ও বিখ্যাত উৎসব হল দোল ও রথযাত্রা।
- 1 গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন রথযাত্রা হলো গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা। ১৭৪০ সালে এই রথযাত্রা উত্সব শুরু হয়। রথটি উচ্চতায় প্রায় ৩৬ ফুট। আগে রথের বারোটা চূড়া ছিল কিন্তু বর্তমানে রয়েছে নয়টি চূড়া। গুপ্তিপাড়ার রথের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো উল্টো রথের আগের দিন এখানে ভান্ডার লুট হয়। ভারতবর্ষের আর কোথাও এই ভান্ডার লুট হয়না। এই রথযাত্রা উপলক্ষে মূল মন্দির থেকে গোপালজিউ মন্দির পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন রকমের পসরা নিয়ে মেলা বসে।
কিনুন
সম্পাদনাগুপ্তিপাড়ার ‘গুঁফো সন্দেশ’ বিখ্যাত। কেউ বলেন, ‘গুঁফো সন্দেশ’ আবার কেউ বলেন ‘গুপো সন্দেশ’। জোড়া সন্দেশ হিসেবেও এর পরিচিতি আছে। এখানকার মাখা সন্দেশের স্বাদের কথাও লোকমুখে ফেরে।
রাত্রিযাপন
সম্পাদনা- 1 শ্রী হরি গেস্ট হাউস, গুপ্তিপাড়া বড়বাজার, গুপ্তিপাড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ ৭১২৫১২, ☎ +৯১ ৯৮৩০৪৪৯৯৪৭, +৯১ ৭০০৩৬১৫৬৮৮, ইমেইল: shreeharigup@gmail.com।