ভ্রমণপথ > এশিয়া ভ্রমণপথ > কারাকোরাম হাইওয়ে

শক্তিশালী আঁকাবাঁকা কারাকোরাম হাইওয়ে।

কারাকোরাম মহাসড়ক ( প্রায়শই কেকেএইচ ( kkh) দ্বারা সংক্ষেপিত হয় এবং কখনো কেবল কারাকোরাম হিসাবেও প্রতিবর্ণিত হয় ) হলো বিশ্বের সর্বোচ্চ পাকা আন্তর্জাতিক সড়ক; যা পশ্চিম চীন এবং পাকিস্তানকে সংযুক্ত করেছে। এটি হিমালয় অতিক্রমকারী খুব অল্প কয়েকটি রুটের মধ্যে একটি এবং তা তাদের সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত। ঐতিহাসিকভাবে এ সড়কটি একটি পদযাত্রার জন্য লম্বা রাস্তা হিসেবে বিবেচিত, যা প্রাচীন সিল্ক রোডের একটি শাখা। ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত চীনপাকিস্তান সরকার এই সড়কটি নির্মাণ করে।

কারাকোরাম নামটি একটি তুর্কি শব্দ যার অর্থ কালো নুড়ি ( Black range ) এবং এই নামটি মধ্য এশিয়ার ব্যবসায়ীরা মূলত কারাকোরাম গিরিপথকে বোঝাতে প্রয়োগ করেছিল, যখন মঙ্গোলদের (তুর্কি বংশোদ্ভূত) বিশাল সাম্রাজ্য ছিল এবং পরবর্তীতে তাদের বংশধর ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে; যেমন: মুঘল সাম্রাজ্য, যারা বহু শতাব্দী ধরে ভারত শাসন করে।

সড়কটি একটি দুঃসাহসিক পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠেছে এবং দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্র দ্বারা পাকিস্তানের তৃতীয় সেরা পর্যটন গন্তব্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। সীমান্তের খুঞ্জেরাব পাসে এটি প্রায় ৪,৮০০ মিটার বিস্তৃত ( প্রায় ১৬,০০০ ফুট ), যা উচ্চতায় বিশ্বের সর্বোচ্চ সীমান্ত ক্রসিং। তুলনা হিসেবে তা পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু পর্বত মন্ট ব্ল্যাঙ্কের মত, যার উচ্চতা ৪৮১০ মিটার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিন্দু মাউন্ট হুইটনি এর মত, যার উচ্চতা হল ৪৪২১ মিটার।

পাকিস্তানের পাসার নিকটবর্তী একটি জায়গা থেকে সড়কটির দৃশ্য

নিবেদিতপ্রাণ সাইকেল চালকদের জন্য এটি চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে এই রুটে সাইকেল চালানোর বিষয়ে সংগঠিত সাইকেল ভ্রমণ এবং বেশ কিছু বই রয়েছে। যদিও সন্ত্রাসী হামলার কারণে পাকিস্তানে ভ্রমণ এবং সফরের সংখ্যা কমেছে। এটি এমন একটি ভ্রমণ, যা স্বাধীনভাবে করা সম্ভব। তবে তাপ ও উচ্চতা বিবেচনায় রাখা উচিত, যদি ভ্রমণ অসমর্থিত মনে হয়।

সাইকেল চালকদের জন্য সীমান্ত খোলা নেই। পরিবর্তে আপনি তাশকুরগান (চীন) বা সোস্টের (পাকিস্তান) যে কোনো একটি বাসে উঠতে পারেন। পাকিস্তানের দিক থেকে আপনি গিরিপথ পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে যেতে পারবেন; কিন্তু এর ওপর দিয়ে নয়। তখন পুনরায় বাস ধরতে সোস্টে ফিরতে হবে!

অবস্থান

সম্পাদনা
 
কারাকোরাম মহাসড়কের মানচিত্র

এ মহাসড়কটি উত্তর-দক্ষিণে কারাকোরাম পর্বতমালা জুড়ে ও সীমান্তে খুঞ্জেরাব গিরিপথ দিয়ে চলে গেছে। পাকিস্তানে এটি খাইবার পাখতুনখোয়া ও গিলগিট-বালতিস্তান প্রদেশের মধ্য দিয়ে অ্যাবোটাবাদ থেকে সীমান্ত পর্যন্ত চলে যায়। সীমান্তের পরে এটি চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের কিছু অংশ পেরিয়ে কাশগর পর্যন্ত চলে গেছে । ১৯৭৯ সালে দুই সরকারের যৌথ প্রকল্প হিসেবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৭৯ সালে শেষ হয় এবং ১৯৮৬ সালে মহাসড়কটি সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮০০ জন পাকিস্তানি ও ২০০ জন চীনা শ্রমিক এতে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন; যাদের বেশিরভাগই ভূমিধস এবং নিচে পড়ে গিয়ে মারা যান।

চীনে এটি "ফ্রেন্ডশিপ হাইওয়ে" নামে পরিচিত। এর উচ্চ উচ্চতা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে এর নির্মাণ করা হয়েছিল বলে এটিকে "বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য"ও বলা হয়।

ইতিহাস

সম্পাদনা

ওয়াখান করিডোর

ব্যাকট্রিয়া বা মধ্য আফগানিস্তানের ওয়াগান করিডোর ঐতিহাসিকভাবে এটি একটি ক্ষুদ্র বাণিজ্য পথ ছিল। যাইহোক, এ কথা প্রায় নিশ্চিত যে, এটি আজ একটি কার্যকর রুট নয়। এটা আফগানিস্তানে অবস্থিত, যা খুবই বিপজ্জনক একটি দেশ; ভূখণ্ডটি কঠিন এবং সেখানে ভালো রাস্তা বা সীমান্ত চৌকিও নেই; সেখান থেকে যে কেউ বৈধভাবে চীন বা পাকিস্তানে প্রবেশ করতে পারে।






প্রস্তুতি

সম্পাদনা
 
কারাকোরাম হাইওয়ের চিলাস ভ্যালিতে একটি পাকিস্তানি ঝঙ্কার ট্রাক।

কারাকোরাম হাইওয়ে হল পাকিস্তানের একটি দ্বিমুখী সর্ব-আবহাওয়াময় রাস্তা, খুঞ্জেরাব গিরিপথ ছাড়া যা ভারী তুষারপাতের কারণে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকে। বর্ষাকালে ( জুলাই-সেপ্টেম্বর) কিছু জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখতে পারে এমন ভূমিধ্বস অতি সাধারণ ঘটনা।

মহাসড়কের কিছু অংশ; যেমন পাকিস্তানের বেশাম ও চিলাসের মধ্যবর্তী অঞ্চল এবং চীনা অংশের মরুভূমি অঞ্চলগুলি গ্রীষ্মকালে খুবই গরম থাকে; তাপমাত্রা প্রায় ৪৫ ডিগ্রি সে. (১১৩ ফ.) পৌঁছাতে পারে।

সবমিলিয়ে কারাকোরাম মহাসড়কে বসন্ত বা শরতের শুরুতে ভ্রমণ করা সবচেয়ে ভাল হবে।

আপনি সাইকেল, বাস, বাইক, কার যেকোন উপায়েই ভ্রমণ করতে পারেন; তবে সবচে' বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতি হল মালবাহী গাড়িতে (ভ্যান) চড়ে যাওয়া, যা সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক। কেউ কেউ বলেন, যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাস্তাগুলির একটি; কারণ একদিকে অরক্ষিত রাস্তার প্রান্ত থেকে শত শত মিটার নিচে গর্তে পড়ার সম্ভাবনা; অন্যদিকে রয়েছে অস্থিতিশীল পাহাড়, যা কঠোর আবহাওয়ার সময় ভূমিধ্বসের কারণ হতে পারে। কখনো কখনো রাস্তাটি কিছু জায়গায় এত সরু হয়ে যায় যে, একসময়ে কেবলমাত্র একটি গাড়ি যেতে পারে, অন্যটি তখন রাস্তার খুবই সরু প্রান্তে অপেক্ষা করে। সেখানে আপনি প্রচুর ভাঙ্গা ভারি যান দেখতে পাবেন। বেশিরভাগ ট্রেক পাকিস্তানি অংশে অবস্থিত।

আপনি যদি সীমান্ত অতিক্রম করতে হাইওয়ে ব্যবহার করতে চান; তবে আগে থেকে অন্য দেশের ভিসা পেতে হবে; অন্যথায় সীমান্তে প্রবেশ মঞ্জুর করা হবে না। যারা সাইকেলে যায়, তাদের প্রবেশ মঞ্জুর করা হবে না। তাই আপনাকে অবশ্যই একটি মোটর চালিত গাড়িতে করে যেতে হবে। তাই এই সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য নিকটবর্তী শহর থেকে একটি বাসে উঠুন।

রাস্তার অবস্থা

সম্পাদনা

১৩০০ কি.মি দীর্ঘ এ রাস্তাটির অবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অনেক জায়গায় যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়। হাসান আব্দাল থেকে রাস্তাটি ভালো অবস্থায় শুরু হয়, তবে যখন এটি কোহিস্তান জেলায় উঠতে শুরু করে, উল্লেখযোগ্যভাবে সড়কটি তখন খারাপ হতে শুরু করে। তবে মোটামুটি বেশাম থেকে চিলাস পর্যন্ত তা নদী ও উপত্যকার পাশ দিয়ে জড়িয়ে আছে; নীচে রয়েছে স্রোতস্বিনী সিন্ধু নদী এবং সেখানে রাস্তাটি সংকীর্ণ ও এবড়োখেবড়ো এবং রাস্তায় কাজ করা হচ্ছে। সেখানে যানবাহন খুবই দ্রুত গতিতে চলাচল করে এবং দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আপনি যদি গাড়ি চালান বা সাইকেল চালান; তবে এই বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। রাস্তাটির এই অংশকে পুনর্নির্মাণ করার জন্যে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ হিসাবে এখানে কাজ করা হচ্ছে। তাই আগামী বছরগুলিতে রাস্তার গুণমান এবং প্রস্থের উন্নতি হতে পারে।

চিলাসের পরে রাস্তার উপরিভাগ নাটকীয়ভাবে উন্নত হয় এবং চীন সীমান্ত পর্যন্ত বেশিরভাগ পথ মসৃণ এবং ডামার বা কংক্রিট দ্বারা নির্মিত।

চীনা অংশে হাইওয়েটি সাধারণত ভালো; যদিও ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাশকুরগানের পর থেকে উন্নয়ন কাজের জন্যে ঘন ঘন এবং বিরক্তিকরভাবে রাস্তা খনন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ভূচিত্র চীনের দিকে মালভূমি; তাই পাকিস্তানি অংশে পাওয়া বেশিরভাগ বিপদজনক খাড়া বাঁধ এই অংশে পাওয়া যায় না।

প্রবেশ

সম্পাদনা
 
হুঞ্জা ভ্যালির কোথাওকার দৃশ্য।

কারাকোরামের পাকিস্তানি অংশটি আনুষ্ঠানিকভাবে রাওয়ালপিন্ডির ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হাসান আব্দাল থেকে শুরু হয় এবং চীনা অংশটি জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রধান শহর কাশগড় থেকে শুরু হয়। সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানে এন-৩৫ নামে এবং চীনে জাতীয় মহাসড়ক ৩১৪ বা জি৩১৩ নামে পরিচিত।

যদিও সড়কটি হাসান আব্দালে শুরু হয়; তবে সাধারণ যাত্রার পয়েন্ট হল গিলগিট। আসলে আপনি যে কোন জায়গা থেকেই যাত্রা শুরু করতে পারেন। আপনি যদি গিলগিট থেকেই শুরু করতে চান, তাহলে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে গিলগিট পর্যন্ত একটি পিআইএ ( PIA: পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থা ) বিমানে আরোহণ করতে পারেন। এই বিমানযাত্রাটি আপনার কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর কারণ হল, বিমানটি নাঙ্গা পর্বতের পাশাপাশি কে২ (পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ) এর চারপাশে উড়ে যাবে এবং আপনি পাকিস্তানের এমন ৮২টি চূড়া দেখতে পারেন, যাদের উচ্চতা ৭,০০০ মিটারের বেশি।

যারা হাসান আবদাল থেকে যাত্রা শুরু করতে ইচ্ছুক, তারা পাকিস্তানের দীর্ঘতম হাইওয়ে এন-৫ ধরুন— যা দক্ষিণের শহর করাচি এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারের মাঝে চলে— বা গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড; দুইটিই হাসান আব্দালের সাথে মিলিত হয়। নিকটবর্তী প্রধান শহর হল রাওয়ালপিন্ডি। পেশোয়ার বা অ্যবোটাবাদের মত উত্তরাঞ্চলীয় শহর ও মানসেহরার মত বড় শহরেও প্রচুর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চলে, যার মাধ্যমে আপনি সহজেই হাসান আবদালে নামাতে পারেন; তবে পুরো ভাড়া নিতে পারে। তবে রাওয়ালপিন্ডি থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন বাস ও মালবাহী গাড়ি এক ঘন্টারও কম বিরতিতে ছেড়ে যায়। এসবের কোনোটি অত্যন্ত আরামদায়ক নাও হতে পারে। রাওয়ালপিন্ডি থেকে বাসে যেতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না।

যাওয়া

সম্পাদনা
 
রাস্তার মানচিত্র।

এখানে ভ্রমণসূচীটি দক্ষিণ থেকে উত্তরে নির্দেশ করা হয়েছে। কারণ কারাকোরাম সড়কের বেশিরভাগ অংশ দক্ষিণে পড়ে।

হাসান আবদাল

সম্পাদনা

ঐতিহাসিক শহর হাসান আব্দাল হল সড়কটির সূচনা বিন্দু ও পাঞ্জাবের একমাত্র শহর, যা সড়কটির সাথে যুক্ত রয়েছে। এখানেই দুটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক রাস্তা; গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ও কারাকোরাম সড়ক একে অপরের সাথে মিলিত হয়েছে।

এ শহরে রয়েছে গুরুদ্বার পাঞ্জা সাহেব, যা শিখ ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান এবং এটি শিখদের জন্যে একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান। তারা সারা বিশ্ব থেকে বিশেষ করে বেসাখী মরসুমে এই শহরে আসে।

তক্ষশীলা (Taxila)

সম্পাদনা

হাসান আব্দাল থেকে ২০ কিমি পূর্বে তক্ষশীলা নামের মনোমুগ্ধকর একটি প্রাচীন জনপদ রয়েছে। জনপদটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং এটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থান। তক্ষশিলা গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে অবস্থিত এবং এটি দেখার মতো। এতে প্রচুর আবাসন ও খাওয়ার বিকল্পগুলির পাশাপাশি হরিপুরের সাথে একটি সরাসরি রাস্তা যুক্ত থাকার কারণে ভ্রমণকারীরা এতে একটি দুর্দান্ত যাত্রা উপভোগ করে।

হরিপুর

সম্পাদনা

পশতুনদের আবাসভূমি খাইবার পাখতুনখোয়া এখান থেকে পাহাড়ি এলাকায় আরোহণ করে শুরু হয়। হরি পুর হাসান আব্দাল থেকে প্রায় ৩০ কিমি ও তক্ষশীলা শহর থেকে ৪০ কিমি উত্তরে অবস্থিত। হাসান আব্দাল বা তক্ষশীলা উভয় স্থান থেকে এ শহরে পৌঁছানো যায়, তবে দুইটি সড়কের মধ্যে হাসান আবদালের সড়কটি অধিক প্রশস্ত হওয়ার কারণে বেশিরভাগ বাস সেটিই ব্যবহার করে এবং এটি অধিক সুবিধাজনকও।

হাভেলিয়ান

সম্পাদনা

হরিপুর থেকে প্রায় ২৫ কিমি উত্তরে হাভেলিয়ান শহর। এটি কারাকোরামের মূল শুরুর স্থান। রাস্তা ব্যতীত হাভেলিয়ান পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সড়কের একমাত্র স্থান, যেখানে ট্রেন দ্বারাও পরিষেবা দেওয়া হয়। একটি শীতাতপ অনিয়ন্ত্রিত ট্রেন হাজারা এক্সপ্রেস প্রতিদিন চলাচল করে। ট্রেনটি করাচি থেকে যাত্রা শুরু করে এবং পাঞ্জাবের বিভিন্ন বড় শহর হয়ে হাভেলিয়ান পৌঁছে।

অ্যাবোটাবাদ

সম্পাদনা

অ্যাবোটাবাদ উত্তর-পূর্ব পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের হাজারা অঞ্চলের একটি শহর।

মানসেহরা

সম্পাদনা

কাগান উপত্যকা (বিকল্প)

সম্পাদনা

বালাকোট > কাওয়াই - শোগরান > পারস - শরণ > খানিয়ান - কাগান > নারান > বাবুসার পাস >

বাটাগ্রাম

সম্পাদনা

1 গিলগিট

সম্পাদনা

এটি হাইওয়েটির প্রধান শহর, যা সিল্ক রোডের একটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্টপ ছিল এবং বর্তমানে গিলগিট-বালতিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে কাজ করে। এটি সরবরাহ মজুদ করা এবং কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে একটি ভালো জায়গা। শহরটি একটি বিমানবন্দরের সাথে ভালভাবে সংযুক্ত এবং গিলগিট-বাল্চিস্তানের অধিকাংশ জায়গার পাশাপাশি ইসলামাবাদ ও কাশগরের মতো দূরবর্তী শহরেও বাস সংযোগ রয়েছে।

আলিয়াবাদ

সম্পাদনা

করিমাবাদ

সম্পাদনা

এটি হুনজার রাজধানী; অনেক আবাসন বিকল্প এবং বালতিট দুর্গের ইউনেস্কো স্বীকৃত ঐতিহাসিক স্থানের তালিকাভুক্ত।

গুলমিত

সম্পাদনা

এটি আপার হুনজার প্রাচীন রাজধানী (গোযাল) এবং কারাকোরামের একটি মোটামুটি ছোট শহর। পুরানো শহরে কিছু ঐতিহাসিক ভবন দেখা যায় এবং বড় বড় পাহাড়ের পটভূমি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ( বিশেষ করে তুপোপদানের দৃশ্য)। গুলমিত ও গলকিন হিমবাহসহ এখানে বেশ কয়েকটি ভ্রমণ বিকল্প রয়েছে।

আত্তাবাদ লেক

সম্পাদনা

২০১০ সালে একটি ভূমিধ্বসের ফলে এটি গঠিত এবং ২১ কিলোমিটারের এ হ্রদটি ৫ বছর ধরে কারাকোরাম সড়কের একটি অংশকে নিমজ্জিত করে রাখে। এখন প্লাবিত উপত্যকার তলদেশ ঘেঁষে একাধিক নিরাপদ ও শক্ত টানেল তৈরি করা হয়েছে। তবে এতেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত; কারণ রাস্তাটি ভালো অবস্থায় থাকলেও এর টানেলগুলি কখনো কখনো আলোহীন থাকে। এটি ৩.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ; তাই সাইক্লিস্টদের বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া উচিত। হ্রদটির নিজস্ব একটি আকর্ষণীয় ফিরোজা রঙ রয়েছে এবং এর উত্তর তীরে পর্যটকদের আকর্ষণ রয়েছে।

পাসু বিশাল হিমবাহের পাদদেশে ছোট্ট একটি গ্রাম। আইকনিক মাউন্ট তুপোপদানের সেরা দৃশ্যের সাথে পাসু অবশ্যই দেখার মতো। বিখ্যাত গ্লেসিয়ার ব্রীজ ক্যাফে ও পাসু ঝুলন্ত সেতুও আকর্ষণযোগ্য।

এটি কারাকোরাম সড়কের পাকিস্তানি প্রান্তের শেষ শহর। এখানে আপনাকে আপনার প্রস্থান টিকিট পেতে হবে এবং চীনে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।

খুঞ্জেরাব পাস

সম্পাদনা

এখানে পাকিস্তান-চীন সীমান্ত ৪৬৯৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। খুঞ্জেরাব জাতীয় পার্কের মধ্য দিয়ে এখানে এবং সোস্টের মধ্যবর্তী কারাকেরাম সড়কের বরাবর দৃশ্যগুলি অবিশ্বাস্যভাবে নাটকীয়; যদিও এই পাসটি কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে। আপনি যদি পায়ে বা সাইকেলে থাকেন, তবে এখানে সীমান্ত অতিক্রম করা সম্ভব নয়; আপনাকে অবশ্যই সোস্টে ফিরে যেতে হবে এবং একটি বাস ধরতে হবে।

তাশকুরগান

সম্পাদনা

কারাকোল লেক

সম্পাদনা

নিরাপদ থাকুন

সম্পাদনা

কারাকোরাম সড়কটি পাকিস্তানি নিরাপদ অংশগুলির একটিতে অবস্থিত; কিন্তু আতিথ্যহীন ভূখণ্ডের প্রত্যাশা করে। আপনি যতই উত্তরে যাবেন, ততই নিরাপদ হবে; বিশেষ করে গিলগিট এবং বর্ডার পাসে। গিলগিটের দক্ষিণে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে পুশতুন-অধ্যুষিত হয়ে ওঠে এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া, বিশেষ করে অ্যাবোটাবাদের আশেপাশের অঞ্চলের পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। আপনি যদি আপনার নিরাপত্তার বিষয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, তাহলে ইসলামাবাদ শহর থেকে গিলগিট বা স্কারদুতে সরাসরি ফ্লাইট করা এবং বিমান থেকে কারাকোরাম সড়কের দৃশ্য উপভোগ করার পরামর্শ দেওয়া হবে।

সাধারণ অস্থিরতা, স্থানীয় পুলিশ, সরকার বা স্থানীয় রাজনীতির প্রতি অসন্তোষ মাঝে মাঝে গিলগিটের নিম্নভূমিতে স্থানীয় সমস্যা এবং অসুবিধা তৈরি করতে পারে। অন্য সবাইকে দেখুন, তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় তা দেখুন। দৃশ্য ও সাধারণ জ্ঞানের সাথে এই উপত্যকা এবং এলাকাটি দৃশ্যত অত্যাশ্চর্য। এখানেও বন্ধুত্বপূর্ণ স্থানীয়রা রয়েছে, যারা ভ্রমণকারীদের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং আপনার সাথে যোগাযোগ করতে আগ্রহী। করিমাবাদের কাছে সৈন্যরা অবস্থান করে এবং উপত্যকার উপরের অংশে কেবল স্থানীয় পুলিশ রয়েছে বলে মনে হয়।

উচ্চতার কারণে মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। ২,৫০০ মিটারে শুয়ে থাকার ফলে অনেকেরই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়; যখন ৩,৫০০ মিটারকে খুব উচ্চতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই যদি আপনার দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে অথবা আপনি যখন অসুস্থ বোধ করবেন, তখন একটি অক্সিজেন মাস্ক বহন করবেন।

তুষারপাত ও ভূমিধ্বস থেকে সাবধান থাকুন। ভ্রমণে যাওয়ার কথা ভাবার আগেই স্থানীয় প্রতিবেদনগুলি পরীক্ষা করে দেখুন এবং বৃষ্টি বা প্রচণ্ড তুষারপাত হলে ভ্রমণ করা এড়িয়ে চলুন। শীতকালে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। শুধুমাত্র দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক চিকিৎসা-কিট বহন করুন এবং প্রস্তাবিত গতি সীমা মেনে চলুন, যা ঋতু বা আবহাওয়ার সাথে পরিবর্তিত হয়। বাতাস খুব শক্তিশালী এবং হিমশীতল হতে পারে; তাই প্রচুর গরম পোশাক বহন করুন।

পাকিস্তানে বামে গাড়ি চালানো হয়; তবে চীনে ডানদিকে।

পরবর্তী

সম্পাদনা