শ্রী শ্রী চিনিশপুর কালীবাড়ী বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায় অবস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পূণ্যতীর্থ ক্ষেত্র। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর ভেলানগর বাসস্ট্যান্ড থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী চিনিশপুর কালীবাড়ী মন্দিরের অবস্থান। পায়ে হেঁটে বা অটো কিংবা রিক্সায় চড়ে শ্রী শ্রী চিনিশপুর কালীবাড়ীতে যাওয়া যায়।
জানুন
সম্পাদনাআনুমানিক ১৭৬০ সালে এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। দ্বীজ রাম প্রসাদ নামী একজন বীর সাধক মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। কালীবাড়ী প্রতিষ্ঠাতা সাধক দ্বীজরাম প্রসাদ ‘চীন ক্রম’ নামের সাধন প্রণালীতে অভ্যস্ত ছিলেন। চীন ক্রম থেকেই চিনিশপুর গ্রামের নামকরণ হয়। তিনি নাটোরের মহারাজা রামকৃষ্ণ রায়ের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন। দেবীর অনুগ্রহ লাভ ও আদেশপ্রাপ্ত হয়ে চিনিশপুর গ্রামের জঙ্গলাকীর্ণ পরিবেশে আশ্রয় লাভ করেন। বট বৃক্ষটির নিচে পঞ্চমুখী আসন প্রস্তুত করে ইষ্ট দেবতার কৃপা লাভের সাধন-ভজন শুরু করেন। এক পর্যায়ে বৈশাখ মাসের অমাবস্যা তিথিতে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। এরপর থেকেই বটবৃক্ষটি জনসাধারণের নিকট তীর্থকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাভ করতে শুরু করে। প্রতিদিন হাজারো নর-নারী বট বৃক্ষের নিচে সাধু দর্শনে ভিড় করতে থাকেন। ফলে তিনি জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথি ইষ্ট দেবতার নামে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দক্ষিণা কালী মূর্তি স্থাপন করেন। তখন থেকেই এ মন্দিরটি পরিচিতি পেয়ে আসছে।
চিনিশপুর কালীবাড়ীটিকে মায়ের লীলাক্ষেত্রও বলা হয়। এখানে মা তার ভক্তদের সাথে অনেক লীলা করেছেন। যেমন কালীবাড়ীর পুকুরে হাত দেখিয়ে তার ভক্তকে বলেছিলেন দেখ তোর শাঁখা আমি হাতে পরেছি।
যতীন্দ্র মোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’ গ্রন্থে শ্রী শ্রী চিনিশপুর কালিবাড়ীটির ইতিহাস জানা যায়। ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতির কর্মকাণ্ড বিপ্লবী মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। তিনি নির্জন কালীবাড়ীতে বট বৃক্ষের নিচে বসে বিপ্লবীদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান, লাঠিখেলা, ছোড়াখেলা ও কুস্তিখেলার আয়োজন করতেন। বিপ্লবীরা মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে দেশমাতৃকার সদস্য হওয়ার জন্য জীবন বিসর্জন দেয়ার দীক্ষা নিতেন।
কীভাবে যাবেন
সম্পাদনাঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর ভেলানগর বাসস্ট্যান্ড থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী চিনিশপুর কালীবাড়ী মন্দিরের অবস্থান। এছাড়াও, চরনগরদি বাইপাস থেকে ১ কিলোমিটার পূর্বদিকের ১৫ মিনিটের রাস্তা ধরে এগুতে হয়।
দেখুন
সম্পাদনাপুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা হাড়িধোয়া নদীর দক্ষিণ তীরে সদর থানার চিনিশপুর গ্রামে অবস্থিত এ মন্দির ছায়া সুনিবিড় নির্জন পরিবেশে গড়ে উঠেছে। কালীবাড়ীর মূল আকর্ষণ হচ্ছে প্রায় এক একর জমির উপর বেড়ে উঠা বিশালাকার বট বৃক্ষ। একসময় কালীবাড়ীর অদূরেই নীল কুঠি ছিল। বর্তমানে নীল কুঠির ভাঙ্গা ভিটা ও পরিত্যক্ত ইঁদারা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। নীলকর জেমস ওয়াইজের দেওয়ান রামকৃষ্ণ রায় বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন।
প্রাত্যহিক অনুষ্ঠানমালায় সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় পূজা-অর্চনা, ভোগের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, ভক্তদের অনুষ্ঠান হিসেবে অন্নপ্রাসন, সেবার আয়োজন করা হয়। বার্ষিক অনুষ্ঠানের মধ্যে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসের ১ম অমাবস্যায় কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে তিথি অনুসারে এক অথবা দুইদিনব্যাপী বিরাট মেলার আসর বসে।
মন্দিরের জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে আট বিঘা। নির্মাণাধীন সুন্দর, মনোরম মন্দিরসহ ছোট্ট গাভী, বেশ কয়েকটি বিশ্রামাগার ও সেবার আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় দুই বিঘা আয়তনের পুকুর রয়েছে। তবে রাত্রিযাপনকল্পে থাকার সুব্যবস্থা নেই। ৮ বৎসর যাবৎ নকশা অনুযায়ী মন্দির নির্মাণ, উন্নয়ন, বাউন্ডারী সীমানা নির্মাণে ভক্তদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ মন্দির নির্মাণে আরও পাঁচ বছর লাগবে।