রংপুর শহর হলো বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শহর, যা রংপুর বিভাগের অন্তর্গত রংপুর জেলায় পড়েছে। এটি মূলত রংপুর সিটি কর্পোরেশন, যা ৩৩টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এবং রংপুর সদর উপজেলা হতে ১০টি, কাউনিয়া উপজেলা হতে সারাই ও পীরগাছা উপজেলা হতে কল্যাণী - এই ১২টি ইউনিয়নের ১১২টি মৌজা নিয়ে গঠিত।
কীভাবে যাবেন?
সম্পাদনাস্থলপথে
সম্পাদনাসড়ক পথে ঢাকা হতে রংপুরের দূরত্ব ৩০৪ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে রংপুর রেল স্টেশনের দূরত্ব ৫২৯ কিলোমিটার।
সড়কপথ
সম্পাদনাঢাকার গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, শ্যামলী, কল্যানপুর, কলাবাগান, ফকিরাপুল - প্রভৃতি বাস স্টেশন থেকে রংপুর আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৫.৩০ হতে ৮ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে এনা, হানিফ, শ্যামলী, নাবিল, এসআর, আগমনী, ডিপজল প্রভৃতি পরিবহন কোম্পানীর বাস আছে প্রতি ১০ মিনিট পর পর।
- এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রাঃ) লি: মোবাইল +৮৮০১৭৬০-৭৩৭ ৬৫০ (মহাখালী), +৮৮০১৮৭২-৬০৪ ৪৯৮ (এয়ারপোর্ট), +৮৮০১৭৬০-৭৩৭ ৬৫১ (উত্তরা), +৮৮০১৭৬০-৭৩৭ ৬৫৩ (টঙ্গী), +৮৮০১৮৭২-৬০৪ ৪৭৫ (ফকিরাপুল), +৮৮০১৮৬৯-৮০২ ৭৩১ (মিরপুর);
- হানিফ এন্টারপ্রাইজ: মোবাইল +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৬১ (কল্যাণপুর), +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৭১, +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৩১ (আরামবাগ);
- শ্যামলী পরিবহন: ☎ ০২-৯০০৩৩১, ৮০৩৪২৭৫ (কল্যাণপুর)।
- ঢাকা-রংপুর রুটে সরাসরি চলাচলকারী পরিবহনে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলোঃ
- এসি বাসে - ৮০০/- (রেগুলার) ও ১২০০/- (এক্সিকিউটিভ) এবং
- নন-এসি বাসে - ৩০০/- হতে ৫৫০/-।
রেলপথ
সম্পাদনাঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি এখানে আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা – রংপুর রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো হলোঃ
- রংপুর এক্সপ্রেস - রংপুর হতে সকাল ০৮ টা ১০ মিনিটে ছাড়ে ও ঢাকা থেকে সকাল ০৮ টায় ছাড়ে;
- লালমনি এক্সপ্রেস - ঢাকা থেকে রাত ১০ টা ১০ মিনিটে ছাড়ে;
- নীলসাগর এক্সপ্রেস - ঢাকা থেকে সকাল ০৮ টায় ছাড়ে;
- একতা এক্সপ্রেস - ঢাকা থেকে সকাল ০৯ টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে;
- দ্রুতযান এক্সপ্রেস - ঢাকা থেকে বিকাল ০৫ টা ৪০ মিনিটে ছাড়ে
ঢাকা-রংপুর রুটে চলাচলকারী রেলে ঢাকা হতে রংপুর আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো -
- শোভন - ৪২০ টাকা;
- শোভন চেয়ার - ৫০৫ টাকা;
- ১ম শ্রেণির চেয়ার - ৬৭৫ টাকা;
- ১ম শ্রেণির বাথ - ১,০১০ টাকা;
- স্নিগ্ধা - ৮৪০ টাকা;
- এসি সীট - ১,০১০ টাকা এবং
- এসি বাথ - ১,৫১০ টাকা।
ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:
- কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৯৩৫৮৬৩৪,৮৩১৫৮৫৭, ৯৩৩১৮২২, মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭১১৬৯১৬১২;
- বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৮৯২৪২৩৯;
- ওয়েবসাইট: www.railway.gov.bd।
আকাশ পথে
সম্পাদনারংপুরে সরাসরি বিমানে আসা যায়; ঢাকা থেকে রংপুরের সাথে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে। বাংলাদেশ বিমান, জেট এয়ার, নোভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার - প্রভৃতি বিমান সংস্থার বিমান পরিষেবা রয়েছে ঢাকা থেকে রংপুর আসার জন্য।
বাংলাদেশ বিমানের একটি করে ফ্লাইট সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা-রংপুর ও রংপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করে; ভাড়া লাগবে একপথে ৩,০০০/- এবং রিটার্ণ টিকিট ৬,০০০/-। সময়সূচী হলোঃ
- ঢাকা হতে রংপুর - শনি, রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি - দুপুর ০২ টা ২০ মিনিট।
- রংপুর হতে ঢাকা - শনি, রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি - দুপুর ০৩ টা ৩৫ মিনিট।
এই সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:
- ম্যানেজার, সৈয়দপুর বিমান বন্দর, মোবাইল - +৮৮০১৫৫৬-৩৮৩ ৩৪৯।
জল পথে
সম্পাদনাঅপ্রচলিত মাধ্যম হিসাবে নৌপথ ব্যবহৃত হয়ে থাকে; তবে কেবলমাত্র স্থানীয় পর্যায় ছাড়া অন্য কোনো এলাকার সাথে, কিংবা ঢাকা থেকে বা অন্যান্য বড় শহর হতে সরাসরি কোনো নৌযান চলাচল করে না। তবে, শহরের মধ্যে কোনো নৌপথ না-থাকায় কোনো নৌযান চলাচল করে না।
দেখুন
সম্পাদনা- 1 তাজহাট রাজবাড়ি (তাজহাট জমিদার বাড়ি), রংপুর শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে মাহিগঞ্জের তাজহাট গ্রামে অবস্থিত। সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা (গ্রীষ্মকালীন), সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা (শীতকালীন)। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রায় ২০০০ রাজমিস্ত্রির নিরলস পরিশ্রমে বর্তমান তাজহাট জমিদার বাড়ি পূর্ণতা লাভ করে। ১৯১৭ সালে সম্পূর্ণ হওয়া এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করতে তৎকালীন সময়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। তাজহাট জমিদার বাড়ির চত্বরে রয়েছে গাছের সারি, বিশাল মাঠ এবং প্রাসাদের দুই পাশে আছে দুইটি পুকুর। আর আছে বিভিন্ন রকম ফুল ও মেহগনি, কামিনী, আম এবং কাঁঠাল বাগান। জমিদার বাড়িটি দেখতে ঢাকার আহসান মঞ্জিলের মতো। লাল ইট, শ্বেত ও চুনা পাথর দ্বারা নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট তাজহাট জমিদার বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় জমিদার গোপালের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস রাখা আছে। এছাড়া রয়েছে থাকার কক্ষ, গোসলখানা ও অতিথিদের জন্য কক্ষ। প্রায় ২১০ ফুট প্রস্থের প্রাচীন মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত তাজহাট জমিদার বাড়িতে ইতালীয় মার্বেল পাথরে তৈরী ৩১ টি সিঁড়ি আছে। রাজবাড়ীর পেছনদিকে রয়েছে গুপ্ত সিঁড়ি পথ, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাজহাট জমিদার বাড়িকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করে এবং ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে তাজহাট জমিদার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তরিত করে। জাদুঘরের প্রদর্শনী কক্ষে দশম ও একাদশ শতাব্দীর বেশকিছু টেরাকোটা শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এছাড়াও জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে মুঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআন, মহাভারত ও রামায়ণসহ বেশকিছু আরবি এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। রয়েছে ৬৯ হিজরিতে তৈরি মসজিদের 'সনফলক', কালো পাথরের বিষ্ণুর প্রতিকৃতি ছাড়াও জাদুঘরে প্রায় ৩০০ টি মূল্যবান নিদর্শন রয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য ৳২০, মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৳৫। সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য ৳১০০ টাকা এবং অন্য যেকোন বিদেশীদের জন্য ৳২০০।
- 2 বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক, রংপুর (রংপুর শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে রংপুর কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত)। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর শহরের অতি নিকটে হওয়ায় শহরের যে কোন মানের হোটেলে রাত্রিযাপন করা সম্ভব।
- 3 চিকলি বিল ও পার্ক (চিকলির বিল আসার পথ মূলত দুইটি- একটি সাগরপাড়ার দিয়ে আরেকটি শহরের পুলিশ লাইনের সামন দিয়ে হনুমানতলা বাজার পার হয়ে একটু সামনেই হাতের বামেই বিলের প্রবেশ পথ)। চিকলি বিনোদন পার্কের পাশেই আছে রিসোর্ট। আলাদা আলাদা ৫টি সিটিং এরিয়ার রেস্তরাঁ রয়েছে এখানে। এছাড়া আছে জেট স্কি’সহ নানা ওয়াটার রাইড, আর্টিফিশিয়াল ওয়াটার ফলস, টয় ট্রেন ও বিশালাকার চরকি সব আরও নানা রাইড। দর্শনার্থীদের বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে চেয়ার বা বেঞ্চের ব্যবস্থা। ওয়াটার পার্কে ৳২০ টাকা, ওয়াটার গার্ডেন ৳৩০।
- রংপুর চিড়িয়াখানা
চিড়িয়াখানায় রয়েছে শিশু পার্ক, রেস্তোরা, কৃত্রিম হ্রদ এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও বৃক্ষ। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, গণ্ডার, জলহস্তী, হরিণ, বানর, চিতাবাঘ, ভালুক, কুমির, অজগর, কচ্ছপ প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে ময়না, টিয়া, ময়ূর, কাকাতুয়া, কবুতর, বক সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
- কারমাইকেল কলেজ
১৯১৬ সালে প্রতিষ্টিত কারমাইকেল কলেজ বাংলাদেশের পুরাতন কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম। শহরের যেকোন স্থান হতে রিক্সা,অটোরিক্সা, প্রাইভেট কার,মাইক্রোবাস সহযোগে যাওয়া যায়।
জাদুঘর
সম্পাদনা- শ্বাশত বাংলা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, লালকুঠি মোড় (রংপুর সেনানিবাসের সম্মুখস্থ চৌরাস্তা (এমপি চোকপোস্ট) থেকে কোয়ার্টার কিলোমিটার সোজা পূর্বদিকে ধাপ লালকুঠি মোড়ে এ জাদুঘরটি অবস্থিত।)। এ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র, মানচিত্র,দুর্লভ আলোকচিত্র, সে সময় প্রকাশিত বিভিন্ন পোস্টার, পত্র-পত্রিকা, পুস্তক ও অন্যান্য দস্তাবেজ প্রদর্শিত হচ্ছে।
খাওয়া দাওয়া
সম্পাদনা‘সিদল ভর্তা’ রংপুরের জনপ্রিয় খাবার, যা কয়েক ধরনের শুঁটকির সঙ্গে নানা ধরনের মসলা মিশিয়ে বেটে তৈরি করা হয়। এছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত “হাড়িভাঙ্গা” আম, তামাক ও আখ। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এখানে কিছু উন্নতমানের হোটেল রয়েছেঃ
- মালদহ হোটেল;
- নর্থ ভিউ রেস্তোরাঁ, শহীদ মোবারক সরণী, রংপুর;
- সিসিলি চাইনিজ রেস্তোরাঁ, রাজা রামমোহন রায় শপিং কমপ্লেক্স, রংপুর;
- পারভেজ হোটেল, মেডিকেল মোড়, রংপুর;
- কস্তূরী হোটেল, মেডিকেল মোড়, রংপুর;
- স্টার হোটেল, মেডিকেল মোড়, রংপুর;
- বৈশাখী, জাহাজ কোম্পানির মোড় এবং মেডিকেল মোড়, রংপুর।
থাকা ও রাত্রি যাপনের স্থান
সম্পাদনারংপুরে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়াও থাকার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উন্নতমানের কিছু হোটেলও রয়েছে -
- জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, পৌরবাজার, রংপুর;
- হোটেল নর্থ ভিউ, সেন্ট্রাল রোড, রংপুর, ☎ ০৫২১-৫৫৪০৫, ৫৫৪০৬;
- দি পার্ক হোটেল ☎ ০৫২১-৬৫৯২০;
- হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, জাহাজ কোম্পনী মোড়, রংপুর, ☎ ০৫২১-৬৫৯২০;
- হোটেল তিলোত্তমা, ☎ ০৫২১-৬৩৪৮২, মোবাইল - +৮৮০১৭১৮-৯৩৮ ৪২৪;
- হোটেল কাশপিয়া, ☎ ০৫২১-৬১১১১, মোবাইল - +৮৮০১৯৭৭-২২৭৭৪২।
- 1 পর্যটন মোটেল রংপুর, আর, কে রোড, রংপুর, ☎ +৮৮ ০৫২১-৬৩৬৮১, ফ্যাক্স: +৮৮ ০৫২১-৬৩৬৮১, ইমেইল: rangpurmotel@gmail.com। ৳৩০০-৫,৫০০।
- 2 গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেল ও রিসোর্টস, জি এল রায় সড়ক, রংপুর, ☎ +৮৮ +৮৮০১৭১৩৫৫ ৮৮৪৪ , ইমেইল: info.rangpur@grandpalacebd.com। রংপুর বিভাগের একমাত্র ৫ তারকা হোটেল $১২০-৪৫০।
- 3 লিটল রংপুর ইন, কোতোয়ালি থানা রোড, রংপুর (কোতোয়ালি থানা পাশে), ☎ +৮৮ (০১) ২৫২-৩৩৩৩। ৳১,৫০০-৩,৫০০।