শেরপুর জেলা বাংলাদেশের একটি জেলা যা ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত; ২৫° উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৫° উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ হতে ৯০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বিস্তৃত। এই জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণ ও পশ্চিমে জামালপুর ও পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ।
কীভাবে যাবেন?
সম্পাদনাস্থলপথে
সম্পাদনাসড়কপথে ঢাকা হতে শেরপুরের দূরত্ব ২০৩ কিলোমিটার।
সড়কপথ
সম্পাদনাঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে শেরপুর আসা যায়।
ঢাকা থেকে শেরপুর আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো-
- এসি বাসে - ৪০০ টাকা এবং
- নন-এসি বাসে -৩০০ টাকা।
পরিবহন সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
ঢাকা (মহাখালী) টু শেরপুর (নবীনগর) এ,সি ডিলাক্স - ০১৭১৬৪৮৬৪৬৭ বধূয়া - ০১৯২৪৮৬৬৬৭৪ সাদিকা - ০১৭১২১১৯১৮১
ঢাকা (মহাখালী) টু শেরপুর (থানা মোড়) বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন ২নং - ০১৭২৪৪৫৪৩৫৭
ঢাকা (গুলিস্থান) টু শেরপুর (নবীনগর) শেরপুর কালেক্টরেট কর্মচারী কল্যাণ সমিতি - ০১৯১২৫৬৭৫৩০
ঢাকা (গুলিস্থান) টু শেরপুর (নিউমার্কেট) শেরপুর চেম্বার অব কমার্স - ১৭১৬৪৮৬৪৬৭
ঢাকা (গুলিস্থান) টু শেরপুর (ঝিনাইগাতী) ঝিনাইগাতী ক্ষুদ্র বণিক সমবায় সমিতি লি: ০১৭১৯৫৩০৬৮৭ - ০১৭১১৩৩৩৯১৩ চট্রগ্রাম টু শেরপুর (থানা মোড়) প্রতিনিধি - ০১৭২৬৫৬৪৭৭১
জনতা মিতালি শামীম এন্টারপ্রাইজ
সিলেট টু শেরপুর (নবীনগর) জালালাবাদ - ০১৭১২৮০৭০০৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জ টু শেরপুর (নিউমার্কেট) এস. কে. জননী - ০১৭০৬২৯৩১০৮ - ০১৭০৬২৯৩১১০ - ০১৭০৬৯৪১৬৯৭
রংপুর টু শেরপুর (থানা মোড়) সীমান্ত এক্সপ্রেস - ০১৭৩৪৩৭০৩৯০ - ০১৭২৬৫৬৪৭৭১
বগুড়া (চারমাথা) টু শেরপুর (থানা মোড়) সীমান্ত এক্সপ্রেস - ০১৭২৬৫৬৪৭৭১
রেলপথ
সম্পাদনাশেরপুরে সরাসরি ট্রেনে আসা যায় না। ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যেকোন ট্রেনে জামালপুর পর্যন্ত আসা যায়। জামালপুর থেকে সিএনজি অথবা বাস যোগে শেরপুর আসতে হবে। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ঢাকা – জামালপুর রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো হলোঃ
- ৭০৭-৭০৮ তিস্তা এক্সপ্রেস - ঢাকা হতে সকাল ০৭ টা ৩০ মিনিটে ছাড়ে এবং জামালপুরে দুপুর ১১ টা ২৮ মিনিটে পৌছে (সোমবার বন্ধ) ও জামালপুর থেকে দুপুর ০৩ টা ৫৫ মিনিটে ছাড়ে এবং ঢাকায় পৌছে রাত ০৮ টা ১০ মিনিটে (সোমবার বন্ধ);
- ৭৩৫-৭৩৬ অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস - ঢাকা হতে সকাল ০৯ টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ে এবং জামালপুরে দুপুর ০১ টা ৪৫ মিনিটে পৌছে ও জামালপুর থেকে সন্ধা ০৫ টা ৫৫ মিনিটে ছাড়ে এবং ঢাকায় পৌছে রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটে;
- ৭৪৩-৭৪৪ ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস - ঢাকা হতে সন্ধা ০৬ টা ০০ মিনিটে ছাড়ে এবং জামালপুরে রাত ১০ টা ২৮ মিনিটে পৌছে (কোন বন্ধ নেই) ও জামালপুর থেকে সকাল ০৭ টা ৩৫ মিনিটে ছাড়ে এবং ঢাকায় পৌছে দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে (কোন বন্ধ নেই);
- ৭৪৫-৭৪৬ যমুনা এক্সপ্রেস - ঢাকা হতে বিকাল ৪ টা ৪০ মিনিটে ছাড়ে এবং জামালপুরে রাত ০৯ টা ২৫ মিনিটে পৌছে ও জামালপুর থেকে রাত ০৩ টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে এবং ঢাকায় পৌছে সকাল ০৭ টা ৪০ মিনিটে;
- ৪৭-৪৮ ব্রহ্মপুত্র কমিউটার - ঢাকা হতে সকাল ০৫ টা ৪০ মিনিটে ছাড়ে এবং জামালপুরে দুপুর ১১ টা ৪০ মিনিটে পৌছে (কোন বন্ধ নেই) ও জামালপুর থেকে দুপুর ০১ টা ০০ মিনিটে ছাড়ে এবং ঢাকায় পৌছে রাত ০৭ টা ১৫ মিনিটে (কোন বন্ধ নেই);
- ৫১-৫২ জামালপুর কমিউটার - ঢাকা হতে দুপুর ০৩ টা ৪০ মিনিটে ছাড়ে এবং জামালপুরে রাত ১০ টা ১৫ মিনিটে পৌছে (কোন বন্ধ নেই) ও জামালপুর থেকে সকাল ০৫ টা ০০ মিনিটে ছাড়ে এবং ঢাকায় পৌছে সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে (কোন বন্ধ নেই);
ঢাকা-জামালপুর রুটে চলাচলকারী রেলে ঢাকা হতে জামালপুর আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো -
- ২য় শ্রেণির সাধারণ - টাকা;
- ২য় শ্রেণির মেইল - টাকা;
- কমিউটার - টাকা;
- সুলভ - টাকা;
- শোভন - টাকা;
- শোভন চেয়ার - টাকা;
- ১ম শ্রেণির চেয়ার - টাকা;
- ১ম শ্রেণির বাথ - টাকা;
- এসি সীট - টাকা এবং
- এসি বাথ - টাকা।
ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেনঃ
- কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৯৩৫৮৬৩৪,৮৩১৫৮৫৭, ৯৩৩১৮২২, মোবাইল নম্বর: ০১৭১১৬৯১৬১২
- বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৮৯২৪২৩৯
- ওয়েবসাইট: www.railway.gov.bd
আকাশপথে
সম্পাদনাএই শহরটিতে বিমানে চলাচলের কোনো ব্যবস্থা এখনো তৈরি হয় নি।
জলপথে
সম্পাদনাঅপ্রচলিত মাধ্যম হিসাবে নৌপথ ব্যবহৃত হয়ে থাকে; ঢাকা থেকে সরাসরি কোনো নৌযান চলাচল করে না।
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনা- কংশ নদী ভারতের তুরা পাহাড়ে বিভিন্ন ঝর্ণার সম্মিলনে কংশ নদীর উৎপত্তি। শেরপুরের হাতিবাগার এলাকা দিয়ে কংশ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
- কলা বাগান কান্দাপাড়া, শেরপুর সদর, শেরপুর
- গজনী অবকাশ কেন্দ্র শেরপুর থেকে আনুমানিক দূরত্ব ৩০ কিমি, বাসভাড়া ৫০ টাকা, সিএনজি ভাড়া ২৫০ টাকা। এখানে আসার জন্য সড়কপথে যাতায়ত খুব সহজ। গজনী অবকাশ পর্যন্ত রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মসৃণ পিচঢালা পথ। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াতই সবচেয়ে উত্তম। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়কপথে। শেরপুর শহর থেকে গজনীর দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেট কারে গজনী অবকাশ যেতে পারেন। ঢাকা থেকে নিজস্ব বাহনে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টায় ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশে আসা যায়। এ ছাড়া ঢাকার মহাখালি থেকে ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর আসা যায়। ভাড়া ২৫০ টাকা। মহাখালী থেকে দুপুর ২টায় ছাড়ে এসিবাস। ভাড়া ৩৫০টাকা। এছাড়া ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়াম ৪ নং গেইট থেকে সরাসরি বিকাল ৩-৪টায় শিল্প ও বণিক সমিতির গাড়ি ঝিনাইগাতীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ভাড়া ৩০০টাকা। যারা ড্রিমল্যান্ডে আসবেন, তারা শেরপুর নেমে নিউমার্কেট থেকে মাইক্রোবাস ৫০০ টাকায় সোজা গজনী যেতে পারবেন। শেরপুর থেকে লোকাল বাস,টেম্পু, সিএনজি অথবা রিক্সায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যাওয়া যায়।
- গড়জরিপা বার দুয়ারী মসজিদ স্থাপত্যনিদর্শনের অন্যতম গড় জরিপা বার দুয়ারী মসজিদ। এটিও এ অঞ্চলের ঐতিহ্য। জনশ্রুতিতে আনুমানিক ৭-৮ শত বৎসর পূর্বে জরিপ শাহ নামক এক মুসলিম শাসক কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল এই মসজিদটি। তবে এটি বর্তমানে পুনঃনির্মান করা হয়েছে। আসল মসজিদটি ভূ গর্ভেই রয়ে গেছে। তার উপরেই স্থাপিত হয়েছে বর্তমান মসজিদটি। জামালপুর সদর উপজেলার তিতপলস্না ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটী(কুতুবনগর) গ্রামের (ব্রাহ্মণ ঝি বিলের উত্তর পাড়ে) জনৈক পীর আজিজুল হক ছাহেব খনন কার্য চালান এবং বের করেন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। মসজিদটির ইটের ধরন কৌশলে খান বাড়ি মসজিদের ইটের সাথে যথেষ্ট মিল লক্ষ্য করা যায়। প্রাচীন রীতির সাথে আধুনিক রীতির সংমিশ্রণে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে যা সহজেই দর্শকদের মন জয় করে। অপরূপ সুন্দর এই মসজিদটি আসলে পুরাকীর্তির নিদর্শন। ১২টি দরজা থাকায় এর নাম করণ করা হয় বার দুয়ারী মসজিদ। পূর্বেও তাই ছিল। অপূর্ব কারুকাজ সমবলিত মেহরাব ও কার্ণিশ গুলো সকলের দৃষ্টি কাড়ে। এছাড়াও কিছু দূরে জরিপ শাহ এর মাজার অবস্থিত। এর অনতিদূরে কালিদহ সাগর রয়েছে। জনশ্রুতিতে আছে চাঁদ সওদাগরের ডিঙ্গা এখানেই ডুবেছিল। নৌকার আদলে কিছু একটা অনুমান করা যায় এখনও। অঞ্চলটিতে একবার ঘুরে এলে যে কোন চিন্তশীল মানুষকে ভাবিয়ে তুলবে। খনন কার্য চালালে হয়তো বেরিয়ে আসবে এ অঞ্চলের হাজার বৎসরের প্রাচীন সভ্যতার নানা উপকরণ।
- গোপী নাথ ও অন্ন পূর্ন্না মন্দির নির্মান কাল ১৭৮৩ খ্রিঃ। নির্মাতা জমিদার সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী। মন্দিরটি স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন। পাঁচটি কক্ষ বিশিষ্ট মন্দির টি পদ্মস্তম্ভ দ্বারা দন্ডায়মান। স্তম্ভ শীর্ষে ও কার্নিশে ফুল ও লতা পাতার নকশা সমবলিত এক অপরূপ স্থাপত্য। ডরিক ও গ্রিক ভাব ধারায় নির্মিত। বেদীর উপরে স্থাপিত অনেক গুলো ধাপে। জানালা গুলোর উপরেও রয়েছে অনেক অলংকার। দক্ষিণ ও পূর্ব পার্শ্বে উপরের কার্নিশ রাজকীয় মুকুট বিশিষ্ট তাজিয়া স্থাপন করা হয়েছে যা দেখে মৌর্য যুগের স্থাপত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
- ঘাঘড়া খান বাড়ি জামে মসজিদ নির্মাণকাল আনুমানিক ৬০০ বৎসর পূর্বে। কথিত আছে ‘ পালানো খা ’ ও জববার খা দুই ঘাগড়া খান বাড়ি মসজিদ সহোদর কোন এক রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। পরাজিত হয়ে ভ্রাতৃদ্বয় এই অরণ্যে আশ্রয় নেন এবং সেখানে এই মসজিদ টি স্থাপন করেন। মসজিদটির বিশেষত হল যে এর ইট গুলো চারকোণা টালির মত। আজ হতে ছয় থেকে সাতশত বৎসর পূর্বে এই ইট গুলির ব্যবহার ছিল। আস্তরণ বা পলেস্তার ঝিনুক চূর্ণ অথবা ঝিনুকের লালার সাথে সুড়কী, পাট’ বা তন্তু জাতীয় আঁশ ব্যবহার করেছে। এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণ কৌশল গ্রিক ও কোরিন থিয়ান রীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। প্রবেশ পথের উপর রয়েছে আরবী ভাষায় নির্মাণকাল ও পরিচয় শিলা লিপি দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে, সেই যুগেও দক্ষ স্থপতি এ অঞ্চলে ছিল। মসজিদটি পুরাকীর্তির এক অনন্য নিদর্শন। যা দেখে যে কোন পর্যটক আকৃষ্ট হবেন, বিমোহিত হবেন।
- জিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ কাল ১৯১৯ সাল। প্রতিষ্ঠাতা জমিদার গোবিন্দ কুমার চৌধুরী। বৃটিশ ধারায় নির্মিত প্রতিষ্ঠানটিতে অনেকগুলো পাঠদান কক্ষ, সুপ্রশস্ত জানালা রয়েছে। সমস্ত ভবন টিতে ফর্মের ব্যবহার এমন ভাবে করা হয়েছে যে, দৃষ্টি সকল স্থানেই সমান পড়ে। ইটের গাঁথুনি দিয়ে সমস্ত ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর সম্মুখভাগের পুকুরটি স্কুলের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে বিশাল সবুজের সমাহার। এটি শের আলী গাজি পৌর পার্কের পশ্চিম পাশে অবস্থান করছে। প্রাচীনতম স্থাপনার মধ্যে এটিও জনসাধারণকে মুগ্ধ করে।
- নয়আনী জমিদার বাড়ির রংমহল জমিদার বাড়ির ঠিক দক্ষিণ পূর্ব কোণে অবস্থিত রং মহল। যা দেখে সহজেই ধারণা করা যায় জমিদাররা ছিল সংস্কৃতি প্রিয়। নাচ-গানের প্রতি ছিল অনুরাগ। ফলে অনেক জমিদার বাড়িতেই রং মহল ছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি এই স্থাপত্যটিতে রয়েছে অনেক গুলো কাঠের জানালা। জানালার উপরে দর্শানীয় ভেন্টিলেশনের ব্যবহারও রয়েছে যা ইচ্ছা মত ব্যবহার করা য়ায়। এ ছাড়াও ছাদের নিচের অংশে কাঁচের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা করা হয়েছে যা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ও বাতাস প্রবেশ করতে পারে। সমস্ত ভবনটির গা জুড়ে বিভিন্ন রকমের নকশা ফুল, লতা-পাতা ও মটিভ ব্যবহার করা হয়েছে। কার্ণিশ ও কার্ণিশের নিচে রয়েছে অপরূপ নকশা। দক্ষিণ অংশটিতে অনেক কারু কাজের ব্যবহার। এ দিকটাই ভবনটির সম্মুখ অংশ। ছয়টি গোলাকৃতি স্তম্ভ ও দুই কোণায় দুইটি চার কোণা স্তম্ভের নিচ থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত নকশাখচিত। দক্ষিণ দিকের অংশের সম্মুখভাগে রয়েছে ৬টি গোলাকার স্তম্ভ। দুই কোণায় কোণাকৃতির স্তম্ভে ব্যবহার করা হয়েছে ব¬ক। স্তম্ভগুলির নিচে থেকে শেষ পর্যন্ত অলংকৃত। ছাদ এবং কার্নিশের উপরের অংশে পাঁচটি প্রধান ও অনেকগুলো মিনারাকৃতি গম্বুজ এর আদলে নকশা রয়েছে যা স্থাপত্যটিকে অধিক আকর্ষণীয় করেছে। কার্নিশেও বিভিন্ন ফর্মের ব্যবহার দেখা যায়।
- নয়াবাড়ির টিলা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাসে বা যে কোনো যান বাহনে আসা যায় শেরপুর শহরে। এখান থেকে মাত্র ৩৪ কিলোমিটার দূরে শ্রীবরদী।
- পানিহাটা-তারানি পাহাড় শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার এবং শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এ স্থানটি। তবে ঢাকা থেকে শেরপুর জেলা শহরে না এসেই নকলা উপজেলা শহর থেকেই নালিতাবাড়ী যাওয়ার সহজ ও কম দূরত্বের রাস্তা রয়েছে। এরপর নালিতাবাড়ী শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় হয়ে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের কাছাকাছি গিয়ে পূর্ব দিকটায় মোড় নিয়ে ভোগাই ব্রিজ পাড়ি দিতে হয়। এরপর সোজা পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গেলে চায়না মোড়। এ মোড়ে এসে আবারও গতিপথ বদলে যেতে হয় উত্তরে। উত্তরের এ রাস্তা ধরে প্রায় এক কিলোমিটার গেলেই পানিহাটা-তারানির মূল পয়েন্ট। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিকশা, সিএনজি অটোরিশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় নালিতাবাড়ী শহর থেকে মাত্র ৩৫-৪৫ মিনিটের ব্যবধানে এবং অল্প খরচের মধ্যেই। এতে মোটরসাইকেল ভাড়া আসা-যাওয়ায় প্রায় ১ শ ৫০ টাকা।
- পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি জমিদার সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বাড়িকে বলা হত পৌনে তিন আনি জমিদার বাড়ি। গ্রিক স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত স্থাপত্যটি এখনো অক্ষত অবস্থার সাক্ষ্য বহন করছে জমিদারী আমলের। এ বাড়িটির নির্মাণ কাল গোপীনাথ মন্দির নির্মাণেরও অনেক পূর্বে। সুপ্রশস্ত বেদী। প্রবেশ পথে অনেকগুলো ধাপ। প্রবেশদ্বারের দুই প্রান্তে অনেক গুলো অলংকৃত স্তম্ভ। স্তম্ভগুলির নিচ থেকে উপর পর্যস্ত কারুকাজ খচিত নকশা। কার্ণিশেও বিভিন্ন প্রকারের মটিভ ব্যবহার করা হয়েছে। তা ভবনটিকে অনেক আকর্ষণীয় করে তুলেছে। চার পাশের স্তম্ভগুলো চতুষ্কোণ বিশিষ্ট এবং এতে বর্গাকৃতি ফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে। আস্তরণ ও পলেস্তারে চুন ও সুড়কীর ব্যবহার লক্ষণীয়। ছাদগুলিতে গতানুগতিক ভাবে লোহার রেলিং এর সাথে চুন সুড়কীর ঢালাই।
- বারোমারি গির্জা ও মরিয়ম নগর গীর্জা দুটিই শেরপুর জেলার নানা ধর্মের ঐতিহ্য বহন করে। স্থাপত্য কলার অন্যতম নিদর্শন গির্জা গুলির নির্মাণে অনেক কলা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। শেরপুর শহর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যতগুলি স্থাপত্য নির্মান হয়েছিল তার বেশীর ভাগই নির্মাণ হয়েছিল জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা তাদের প্রয়োজনেই। যেমন বাস ভবন, রংমহল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা ভবনের মধ্যে শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমী ১৮৮৭ সালে জমিদার রায় বাহাদুর চারু চন্দ্র চৌধুরী কর্তৃক নির্মিত ভবনটি ছিল অনিন্দ্য সুন্দর যা বর্তমানে ধ্বংস প্রাপ্ত।
- ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয়ের মানস সরোবর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদটি চীন ও ভারত হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে নদটি যমুনা নাম ধারণ করে প্রধান অংশ জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ হয়ে চলে যায় এবং জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ হয়ে এই নদের বাকি অংশ শেরপুর-জামালপুর সীমারেখায় প্রবাহমান হয়ে এই নদ ময়মনসিংহ হয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নাম ধারণ করে।
- ভোগাই নদী ভারতের তুরা পাহাড়ে বিভিন্ন ঝর্ণার সম্মিলনে কংশ নদীর উৎপত্তি। শেরপুরের হাতিবাগার এলাকা দিয়ে কংশ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী পর্যন্ত এ নদীটির নাম ভোগাই। নালিতাবাড়ীর ৫ মাইল ভাটিতে এসে দিংঘানা, চেল্লাখালী, দেওদিয়া মারিসি, মালিঝি নামে উপনদীগুলো ভোগাইয়ের সাথে মিলিত হয়েছে। ভোগাই সে স্থানে বেশ খরস্রোতা বলে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ফুলপুরের কাছাকাছি এসে খড়িয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
- মধুটিলা ইকোপার্ক ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুরে আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। নন্নী বাজার থেকে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ভাড়ায় পাওয়া যায়। শেরপুর থেকে ভাড়ায় মাইক্রোবাস, অটোরিকশা অথবা মোটরসাইকেলে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যাবে। অথবা ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি নালিতাবাড়ী পর্যন্ত গেটলক সার্ভিস রয়েছে। জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ টাকা। নালিতাবাড়ী থেকে অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে ২০-২৫ মিনিটে মধুটিলায় যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দিনে এসে দিনেই ফিরে যাওয়া যায়।
- মাইসাহেবা জামে মসজিদ নির্মান কাল আনুমানিক ২৫০ বৎসর পূর্বে। এটিও এ জেলার প্রাচীন নিদর্শনের একটি। বর্তমানে মসজিদটি আধুনিক ভাব ধারায় পুনঃ নির্মাণ হয়েছে। বক্রাকারে খিলানের ব্যবহার এবং সুউচ্চ মিনার ২টি সত্যি দৃষ্টি নন্দিত। স্থাপত্য কলার আধুনিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এই মসজিদটিতে। এটি শেরপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে শেরপুর সরকারি কলেজর দক্ষিণ পশ্চিম পাশে অবস্থিত। শেরপুর শহরের প্রবেশের সময় এর মিনার দুইটি অনেক দূর থেকেও দেখা যায়। বিশাল এই মসজিদের সামনের অংশে অনেক জায়গা রয়েছে। এখানে প্রতি বছর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। শেরপুর শহরে প্রবেশের পর যে কারো এই মসজিদটি দৃষ্টি কাড়বে।
- রাজার পাহাড় ও বাবেলাকোনা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাসে বা যে কোনো যানবাহনে আসা যায় শেরপুর শহরে। এখান থেকে মাত্র ৩৪ কিলোমিটার দূরে শ্রীবরদীর কর্ণঝোরা বাজার। বাস, টেম্পুসহ যে কোনো যানবাহনে আসা যায় মনোমুগ্ধকর নয়নাভিরাম স্থান রাজার পাহাড় থেকে বাবেলাকোনায়। পাশেই রয়েছে অবসর কেন্দ্র। রাত হলে সেখানে থাকার জন্য রয়েছে নিরাপত্তাবেষ্টিত আবাসিক ভবন। কম খরচে, কম সময়ে এ গারো পাহাড় আপনাকে দেবে অনাবিল আনন্দ।
- লোকনাথ মন্দির ও রঘুনাথ জিওর মন্দির এ মন্দিরের প্রতিমা গুলির একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটাও রঘুনাথ জিওর মন্দির বেদীর উপর স্থাপিত। দর্শনার্থীরা সহজেই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারে। দেয়াল, কার্নিশ স্তম্ভ গুলি ফুল, লতা, পাতার নকশা খচিত নানা রঙে রঞ্জিত করা হয়েছে। এটাও একটি দর্শনীয় প্রাচীন স্থাপত্য।
- সুতানাল দীঘি নালিতাবাড়ী আড়াইআনী বাজার হতে সুতিয়ারপাড় বাজার হয়ে শালমারা রাস্তায় যাওয়া যায়। টেম্পু, অটোরিক্সা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
- অলৌকিক গাজির দরগাহ, রুনিগাও, নকলা
- আড়াই আনী জমিদার বাড়ি
- কসবা মুঘল মসজিদ
- গড়জরিপা কালিদহ গাং এর ডিঙি
- গড়জরিপা ফোর্ট (১৪৮৬-৯১ খ্রিস্টাব্দ)
- জরিপ শাহ এর মাজার
- নয়আনী জমিদার বাড়ি
- নয়াআনী বাজার নাট মন্দির
- নালিতাবাড়ির বিখ্যাত রাবারড্যাম
- পানি হাটা দিঘী
- মঠ লস্কর বারী মসজিদ (১৮০৮ খ্রিস্টাব্দ)
- মুন্সি দাদার মাজার, নয়াবাড়ি, বিবিরচর, নকলা
- শাহ কামাল এর মাজার (১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ)
- শের আলী গাজীর মাজার
- 1 খেরুয়া মসজিদ (সড়ক ও রেলপথে মসজিদটিতে যাওয়া যায়। রেলপথে যেতে চাইলে শুরুতে আপনাকে নামতে হবে বগুড়া রেলস্টেশনে। তারপর বগুড়া থেকে বাসে অথবা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা করে শেরপুর যেতে হবে। আর ঢাকা থেকে সড়ক পথে রওনা দিলে, শেরপুরে নেমে যেতে হবে। শেরপুর শহর থেকে ১ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। শহরের ধুনট মোড় থেকে মাজার গেট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে গেলেই দেখা মিলবে এই মসজিদটির।)। খেরুয়া মসজিদ মুঘল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে নির্মিত এই মসজিদ। প্রায় ৪৩৫ বছরের পুরনো এই মসজিদের অবস্থান বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা সদরের খোন্দকার টোলা মহল্লায়।
খাওয়া দাওয়া
সম্পাদনাশেরপুরে স্থানীয় পর্যায়ের বিশেষ কোনো বিখ্যাত খাদ্য নেই, কেবল রসগোল্লা ব্যতীত। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
হোটেল এবং রেস্তোরাঁ
সম্পাদনাশেরপুরে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু হোটেল রয়েছে। হোটেলের নাম টেলিফোন নম্বর
- হোটেল সম্পদ প্লাজা (আবাসিক) +৮৮০৯৩১-৬১৭৭৬
- কাকলি গেস্ট হাউজ (আবাসিক) +৮৮০৯৩১-৬১২০৬
- বর্ণালি গেস্ট হাউজ (আবাসিক) +৮৮০৯৩১-৬১৫৭৫
- আরাফাত গেস্ট হাউজ (আবাসিক) +৮৮০৯৩১-৬১২১৭
- শাহী খানা খাজানা +৮৮০৯৩১-৬১৬৪৭
- হোটেল শাহজাহান +৮৮০১৯১১৪১১৭৭১