বন্যপ্রাণীর জন্য হুমকি

সম্পাদনা

২০২২ সালে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো, ‘বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা করি, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসি’। অর্থাৎ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করলে শুধু যে প্রজাতিসমূহ সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে তা না, বরং তা আমাদের প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারেও ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ সরকার বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে নানাভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছে। তবে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রায়ই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। অবৈধভাবে বনভূমি দখল, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, ব্যক্তি বা সরকারী মালিকানাধীন পাহাড় কেটে ভূমিরূপ পরিবর্তনের ফলে আশংকাজনক হারে বন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হমকির সম্মুখীন হয়।

যত দিন যাচ্ছে, বন ও জলাভূমির পরিমাণ আশংকাজনক হারে কমছে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের পরিমাণ যত কমছে, খাদ্যসংকট, আশ্রয়সংকট ও অন্যান্য কারণে তত কমছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও। আবাসস্থলে খাদ্যের প্রাচুর্যতা কমে যাওয়ায় দিশাহীন হয়ে পড়ছে ওরা, টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে নিজেদের। এছাড়াও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে বর্ধিত পরিমাণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার কারণে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, মারা পড়ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী। তদুপরি খাদ্যসংকটে লোকালয়ে চলে আসছে অনেক প্রজাতির প্রাণী, বাড়ছে মানুষের সাথে সংঘাত। পাশাপাশি মানুষের সীমাহীন লোভ লালসার কারণে শিকারে পরিণত হচ্ছে। এভাবে অসচেতনতা, হিংস্রতা, বুভুক্ষা ইত্যাদি কারণে মানুষের হাতে প্রতিনিয়ত মারা পড়ছে অনেক প্রাণী। এর ফলে কোনো বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, কেউ রয়েছে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। আমরা এই নিবন্ধে বন্যপ্রাণীর জন্য যেসব হুমকি রয়েছে, যেমন – আবাসস্থল কমে যাওয়া, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ শিকারসহ নানা প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ আলোচনা করবো।

5.1 বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের অতীত ও বর্তমান অবস্থা

সম্পাদনা

5.1.1 বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল কমে যাওয়া

সম্পাদনা

গত পাঁচ দশকে, বাংলাদেশ তার বনভূমির দুই-তৃতীয়াংশ হারিয়েছে। যার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের উপর। বন ছাড়াও সমুদ্র, নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, বাড়ির পাশের ঝোপ-ঝাড় অর্থাৎ আমাদের গ্রামীণ পরিবেশের সর্বত্র কোনো না কোনো বন্যপ্রাণীর আবাস। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাসস্থানের বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে বন্যপ্রাণী আবাসস্থল নিধন বা সংকোচনের মাধ্যমে। অধিকতর প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, শিল্পায়ন, নগরায়ন তথা অপরিকল্পিত উন্নয়ন ছাড়াও আর্থিক লাভের আশায় সৃজিত বাগান (সেগুন, রাবার, চা), এবং পাহাড়ে অনিয়ন্ত্রিত জুমচাষ, অপরিকল্পিত হর্টিকালচার সম্প্রসারণকে বন নিধন তথা বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

5.1.2 বন ও জলাভূমি হ্রাস

সম্পাদনা