বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা
গোপালগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের একটি জেলা যা ঢাকা বিভাগ এর অন্তর্গত। গোপালগঞ্জ জেলার আয়তন ১৪৮৯.৯২ বর্গ কিলোমিটার। গোপালগঞ্জ জেলার উত্তরে ফরিদপুর জেলা, দক্ষিণে পিরোজপুর জেলা ও বাগেরহাট জেলা, পূর্বে মাদারীপুর জেলা ও বরিশাল জেলা, পশ্চিমে নড়াইল জেলা।
কীভাবে যাবেন?
সম্পাদনাস্থলপথে
সম্পাদনাঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ সাধারনত সড়ক পথেই যাতায়াত করা হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ জেলায় সড়ক পথে যাতায়াত করতে সময় লাগে ৫ থেকে ৫:৩০ ঘণ্টা, তবে ফেরী পারাপারের সময় যানজট থাকলে সময় বেশি লাগে।
গাবতলী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এ সব বাস গুলোর মধ্যে আজমেরী পরিবহন, কমপোর্ট পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, আনন্দ পরিবহন, বনফুল পরিবহন ও হামিম পরিবহন অন্যতম।
আকাশ পথে
সম্পাদনাএখানে কোন বিমানবন্দর নেই।
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনা- শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ - জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় অবস্থিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছুসংখ্যক বিপথগামী সেনা অফিসারের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধুকে এখানে সমাধিস্থ করা হয়। সমাধি সৌধটিকে বর্তমানে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় পরিণত করা হয়েছে।
- মুকসুদপুরের ঐতিহাসিক নিদর্শন - ঐতিহাসিক নিদর্শনে মুকসুদপুর সমৃদ্ধ। স্থাপত্য শিল্পে আভিজাত্যের স্বাক্ষর বহন করে আসছে বাটিকামারীর রায় বাড়ী, বনগ্রাম ভুঁইয়া বাড়ি ও নারায়ণপুরের মুন্সী বাড়ীর বহু কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতলা ইমারত সমূহ। মার্বেল ও মোজাইক পাথরের ব্যবহার ও নির্মাণ শৈলিতে যা আজও কালের সাক্ষী। এখানকার মন্দির সমূহের বিশেষ কারুকাজ আজও বিস্ময়ের বিষয়। গোহালার বাজার সংলগ্ন ভবন সমূহ, মোচনা, উজানীর জমিদার বাড়ি, চাওচার দত্ত বাড়ি, চ্যাটার্জি ও মুখার্জি বাড়ি, মহারাজপুরের দত্ত বাড়িসহ শতাধিক ভবন স্থাপত্যের নিদর্শন। খানপুরা চৌধুরী বাড়ির মসজিদ, বালিয়াকান্দী মসজিদও স্থাপত্যের বিশেষ নিদর্শন বহন করে।
- থানা পাড়া জামে মসজিদ- গোপালগঞ্জ শহরের প্রথম মসজিদ হলো থানাপাড়া মসজিদ। ১৯২০ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। খেলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও পাকিস্তান আন্দোলনের সময় থানাপাড়া মসজিদ ছিল এ এলাকায় মুসলমানদের মিলন কেন্দ্র।
- খাগাইল গায়েবী মসজিদ- গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাসপুর ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামে একটি পুরাতন পাকা মসজিদ রয়েছে। মসজিদটির নির্মাণের সন তারিখ জানা যায় না, তবে স্থানীয় লোকজন এটিকে 'গায়েবী মসজিদ' বলে অবহিত করে থাকেন। মসজিদটির নির্মাণ শৈলি দেখে অনুমান করা যায় এটি আনুমানিক ১৫০ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে।
- কোর্ট মসজিদ- গোপালগঞ্জ জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেলার কেন্দ্রীয় মসজিদ কোর্ট মসজিদ। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন মসজিদটির শুভ উদ্ধোধন করেন এবং পরবর্তীতে স্থানীয় মহকুমা প্রশাসক কাজী গোলাম আহাদের বদান্যতায় তা নির্মিত হয়। মসজিদটিতে সুদৃশ্য উচ্চ মিনারসহ বৃহদাকার প্রবেশ গেট এবং একটি সুদৃশ্য বড় গম্বুজ ও দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির নির্মাণ শৈলি দৃষ্টিনন্দন।
- সেন্ট মথুরানাথ এজি চার্চ- গোপালগঞ্জ জেলা সদরে থানাপাড়ায় ১৮৭৫ সালে খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য সেন্ট মথুরানাথ এজি চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মথুরা নাথ বোস। জেলা সদরের থানাপাড়ায় প্রাচীন স্থাপত্যের মধ্যে এটি অন্যতম।
- সর্বজনীন কালিমন্দির- সদর উপজেলাধীন খাটরা মৌজায় বর্ণিত মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি ইংরেজি ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর কালিপূজা, দুর্গাপূজা ও নাম যজ্ঞের সময় এখানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। এছাড়াও বর্ণিত পূজা পার্বণ উপলক্ষ্ মাসিক, পাক্ষিক ও দিন ব্যাপী মেলা বসে। কালিপূজা মেলায় যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ, নাগরদোলা প্রদর্শিত হয়।
- বিলরুট ক্যানেল- বৃটিশ আমলে ভেড়ার বাজার ছিল এ এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। মধুমতির মানিকদাহ বন্দরের নিকট থেকে উত্তর এবং উত্তর পূর্ব দিকে উরফি, ভেড়ারহাট, উলপুর, বৌলতলী, সাতপাড়, টেকেরহাট হয়ে আড়িয়াল খাঁর শাখা নদী উতরাইল বন্দরের কাছাকাছি পর্যন্ত ৬০/৬৫ কিলোমিটার র্দীঘ ক্যানেল খনন করা হয়। ক্যানেলটি ৪০০ ফুট প্রশস্ত, গভীরতা ৩০ ফুট। ক্যানেলটি ১৮৯৯-১৯০৫ সালে নির্মিত হয়। এ ক্যানেলটি খননের ফলে নদী পথে ঢাকা-খুলনার দুরত্ব ১৫০ মাইল কমে যায় এবং বঙ্গোপসাগর হয়ে আসা পণ্য সহজেই কলকাতা বন্দরে পাঠানো সহজ হয়। এটি বঙ্গের সুয়েজখাল নামে পরিচিত। তৎকালীন সময়ে ক্যানেলটির নির্মান ব্যয় হয় ৩৩,৬৬,৮৭৯/- টাকা।
- আড়পাড়া মুন্সিবাড়ী- ভেড়ারহাটের অপর পাড়ে আড়পাড়া গ্রামে প্রকৌশলী মুন্সি ইকরামুজ্জামান সৃজন করেছেন একটি মনোরম উদ্যান। ঘাট বাঁধানো দীঘির পাড়ে আধুনিক স্থাপত্য শৈলির দালান কোঠা, পাকা রাস্তা, দীঘির অপর পাশে নয়নাভিরাম বৃক্ষরাজি, ক্যাকটাস এবং দেশি-বিদেশি সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ। পাশেই শতাব্দী প্রাচীন মসজিদের মিনার। বাগানের পাশ ঘেষে রয়ে চলেছে সুন্দর বিলরুট ক্যানেল। সম্প্রতি বাগানের অদুরে এ নদীর উপরে নির্মিত হয়েছে হরিদাসপুর সেতু যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পেয়েছে পিকনিক ও পর্যটন স্পটের মর্যাদা।
- শুকদেবের আশ্রম- সদর উপজেলাধীন তেঘরিয়া মৌজায় বৈরাগীর খালপাড় ছুঁয়ে শুকদেবের আশ্রমটি অবস্থিত। আশ্রমটি আনুমানিক ১৮০২ সালে চন্দ্রগোঁসাই নামে এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মূল উদ্দেশ্য অনাথদের আশ্রয়সহ সেবা প্রদান। পরবর্তীতে শুকদেব আশ্রমের দায়িত্বভার বহন করেন এবং সংসার ত্যাগী শুকদেব ঠাকুর ভগবানের কৃপায় আরাধনার মাধ্যমে অনেক বধির, বিকলাঙ্গ, বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ মানুষের আরোগ্য লাভে সক্ষম হয়। বর্তমানে উক্ত আশ্রমে ডাঃ মিহির ঠাকুর এর তত্বাবধানে একটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসালয় চালু আছে। নয়নাভিরাম গাছ-গাছালি আর পাখ-পাখালির ছায়াঘেরা পরিবেশ অনেক হিন্দু ভক্তকে আকৃষ্ট করে। এছাড়াও দীর্ঘদিনের জটিল ব্যাধির চিকিৎসার জন্য সকল ধরণের মানুষ ছুটে যায় শুকদেব এর আশ্রমে।