ধর্মতলা বা এসপ্ল্যানেড কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র এবং ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ভবন এখানে রয়েছে। এই এলাকা আপনাকে সেই ইংরেজদের আমলে নিয়ে যাবে। এখানে শহরের অংক গুরুত্বপূর্ণ ভবন রয়েছে এবং এটি শহরের পুরনো কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল। বড়বাজার, বিবাদী বাগ ও এসপ্ল্যানেড রো এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
জানুন
সম্পাদনাযখন ইংরেজরা বাংলায় এসেছিল, তখন তারা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কারণ এই অঞ্চলে কোলাহল তুলনায় কম ছিল। প্রথমদিকে এখানেই ফোর্ট উইলিয়াম তৈরি করেছিল (যেখানে এখন জেনারেল পোস্ট অফিস আছে) এবং ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করার পর তারা গোবিন্দপুরে নতুন ফোর্ট উইলিয়াম তৈরি করেছিল, যা ময়দান অঞ্চলের অন্তর্গত। যাইহোক, ধর্মতলা কলকাতার "হোয়াইট টাউন"-এর কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, এবং ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে কোনো ভারতীয়দেরই সেখানে বসবাস করার সাহস ছিল না। তারা দিনের বেলায় সেখানে কাজ করতে আসত এবং সূর্যাস্তের আগে তারা "ব্ল্যাক টাউন"-এ (উত্তর কলকাতা) ফিরে যেত। উত্তরদিকে রাইটার্স বিল্ডিং (বর্তমান মহাকরণ) ও চারিদিকে একাধিক বাণিজ্যিক কার্যালয় থাকার ফলে এটি কলকাতার প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ, সংক্ষেপে বিবাদী বাগ, বলতে কলকাতার লালদীঘির চারিদিকের অঞ্চলকে বোঝায়। এটি ব্রিটিশ শাসনের কেন্দ্রস্থল ছিল এবং এখানে মহাকরণ, জেনারেল পোস্ট অফিস, কলকাতা উচ্চ আদালত ইত্যাদি ঔপনিবেশিক আমলের ভবন রয়েছে।
এছাড়া ধর্মতলায় টেরিটি বাজার রয়েছে, যা কলকাতার আসল চায়নাটাউন বা চীনাপল্লি। যদিও বেশিরভাগ চীনা লোক ট্যাংরায় চলে গেছে, হাতেগোনা কিছু চীনা রেস্তোরাঁ এখনও টেরিটি বাজারে রয়ে গেছে।
প্রবেশ
সম্পাদনাবাসে
সম্পাদনা- 1 ধর্মতলা বাস টার্মিনাস । এখানে বাংলাদেশ, ভুটান, সিকিম, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ভারতের অন্যান্য প্রান্ত থেকে বাস পরিষেবা রয়েছে।
মেট্রো করে
সম্পাদনাউত্তর–দক্ষিণ মেট্রো ১ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও চৌরঙ্গী রোড দিয়ে যায় এবং এসপ্ল্যানেড স্টেশনে এর স্টপেজ রয়েছে। পূর্ব–পশ্চিম মেট্রোর ২ হাওড়া ময়দান–এসপ্ল্যানেড অংশ হুগলি নদীর নিচ দিয়ে যায় এবং এসপ্ল্যানেড স্টেশনে এটি শেষ হয়ে যায়। মহাকরণ স্টেশনে এর এক স্টপেজ রয়েছে।
রেলপথে
সম্পাদনাচক্ররেলের মাধ্যমে ধর্মতলায় পৌঁছনো যায় এবং 2 বিবাদী বাগ চক্ররেল স্টেশনে এর স্টপেজ রয়েছে।
ট্রামে
সম্পাদনাকলকাতার ট্রাম ব্যবস্থা সংকুচিত হয়ে গেলেও 3 ধর্মতলা থেকে এখনও কিছু ট্রাম পরিষেবা রয়েছে।
দেখুন
সম্পাদনাসরকারি ভবন
সম্পাদনা- 1 কলকাতা উচ্চ আদালত, এসপ্ল্যানেড রো ওয়েস্ট, ☎ +৯১ ৩৩ ২২৫৪৮০০০, ফ্যাক্স: +৯১ ৩৩ ২২৪৮৭৮৩৫, ইমেইল: calcuttahighcourtprotocol@gmail.com। ভারতের প্রাচীনতম উচ্চ আদালত। ১৮৬২ সালে এটি হাই কোর্ট অব জুডিকেচার অ্যাট ফোর্ট উইলিয়াম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বেলজিয়ামের ইপ্রেসে অবস্থিত ক্লথ হলের এক প্রতিরূপ।
- 2 জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও), নেতাজি সুভাষ রোড। চিত্তাকর্ষক ২২০ ফুট (৬৭ মিটার) উঁচু গম্বুজ এবং লম্বা আয়নীয়-করিন্থীয় স্তম্ভের জন্য এই ভবন বিখ্যাত। ১৮৬৮ সালে পুরনো ফোর্ট উইলিয়ামের জায়গায় এই ভবন তৈরি করা হয়েছিল এবং সেই সময় থেকে এটি শহরের অন্যতম প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
- 3 বিধানসভা ভবন, এসপ্ল্যানেড রো ওয়েস্ট। এখানে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা আয়োজিত হয়।
- 4 মহাকরণ (রাইটার্স বিল্ডিং), ১৬, বিবাদী বাগ উত্তর (মেট্রো: মহাকরণ ২ ; ট্রাম: বিবাদী বাগ )। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন কার্যালয়। ১৯৩০ সালে বিনয় বসু, বদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ইংরেজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে রাইটার্স বিল্ডিঙে আক্রমণ করেছিলেন। সেইজন্য ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে ডালহৌসি স্কোয়ার "বিনয়-বদল-দীনেশ বাগ" বা সংক্ষেপে "বিবাদী বাগ" নামে পরিচিত। এখন এই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ চলছে এবং এখানে জনসাধারণের প্রবেশ সীমিত। রাতের বেলায় এই ভবন ভূতুড়ে হয়ে যায় বলে জনশ্রুতি আছে।
- 5 রাজভবন (পূর্বনাম "লাটভবন")। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের বাসগৃহ। ১৮০৩ সালে ইংল্যান্ডের লর্ড কার্জনের বাসগৃহ কেডলস্টন হলের আদলে এই ভবন তৈরি করা হয়েছিল। এখানে অনেক বিরল শিল্পকলা ও অন্যান্য জিনিসপত্র রয়েছে। জনসাধারণের জন্য এই ভবন উন্মুক্ত।
জাদুঘর
সম্পাদনা- 6 কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট মেরিটাইম অ্যান্ড হেরিটেজ মিউজিয়াম, জিএফ-৬, ফেয়ারলি ওয়্যারহাউস, স্ট্র্যান্ড রোড (শহরতলি: বিবাদী বাগ চক্ররেল )। সোম–শুক্র ১০:০০ পূর্বাহ্ণ–৪:৩০ অপরাহ্ণ। এই জাদুঘরে কলকাতা বন্দরের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। এখানে বন্দরের অনেক জাহাজের আকর্ষণীয় প্রতিরূপ রয়েছে।
- 7 ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জাদুঘর (আরবিআই জাদুঘর), ৮, কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট। এই জাদুঘরে বিনিময় ও কড়ি প্রথা থেকে শুরু করে কাগুজে মুদ্রা, ধাতব মুদ্রা, শেয়ার বাজার ও আধুনিক বৈদ্যুতিক ট্রানজাকশন, ভারতের মুদ্রার এই ক্রমবিবর্তনের কথা তুলে ধরা হয়।
- 8 স্মরণিকা ট্রাম জাদুঘর, ৬, এসপ্ল্যানেড রো ইস্ট (মেট্রো: এসপ্ল্যানেড ১ ২ ; ট্রাম: ধর্মতলা )। ৩:০০ অপরাহ্ণ–৮:০০ অপরাহ্ণ (বুধ বন্ধ)। একটি অব্যবহৃত ট্রামের মধ্যে একটি জাদুঘর। এখানে কলকাতার ট্রাম ব্যবস্থার ১৫০ বছরের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে যেখানে সাধারণ চা ও কফি বিক্রি হয়। এই ক্যাফেটেরিয়াতে খুব ভাল আড্ডা দেওয়া হয় বলে জানা যায়। ₹৫।