পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশ
রাজধানী তেহরান
মুদ্রা ইরানি রিয়াল (IRR)
জনসংখ্যা ৮৬.৭ মিলিয়ন (2022)
বিদ্যুৎ ২২০ ভোল্ট / ৫০ হার্জ (ইউরোপ্লাগ, Schuko)
দেশের কোড +98
সময় অঞ্চল ইউটিসি+০৩:৩০, ইরান মান সময়, Asia/Tehran
জরুরি নম্বর 110 (পুলিশ), 115 (জরুরি চিকিৎসা সেবা), +98-125 (দমকল বাহিনী)
গাড়ি চালানোর দিক ডান

ইরান দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। ইরান বিশ্বের সবচেয়ে পর্বতময় দেশগুলির একটি; এখানে হিমালয়ের পরেই এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ দামভান্দ অবস্থিত। দেশটির জনগণ জাতিগত ও ভাষাগতভাবে বিচিত্র হলেও এরা প্রায় সবাই মুসলিম। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলটি ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের কেন্দ্র। ইরানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার আছে। পারস্য উপসাগরের অন্যান্য তেলসমৃদ্ধ দেশের মতো ইরানেও তেল রপ্তানি ২০শ শতকের শুরু থেকে দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বর্তমান ইরান ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য পারস্যের কেন্দ্র। প্রায় ২০০০ বছর ধরে এ অঞ্চলের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে "ইরান" (ইরন্‌) নামে ডাকত। ইরান নামটি এই এলাকায় বসতি স্থাপনকারী আর্য গোত্রের নাম থেকে নেয়া। কিন্তু গ্রিকরা এই অঞ্চলকে পার্স্‌ (বর্তমান ইরানের ফার্স প্রদেশ) বলে ডাকত, এবং সেখান থেকে ইউরোপীয় ভাষায় এর নাম হয় পার্সিয়া বা পের্সিয়া। ১৯৩৫ সালে ইরানের শাসক দেশটিকে কেবল "ইরান" বলে ডাকার অনুরোধ জানানোর পর থেকে এখন এই নামেই সারা বিশ্বে দেশটি পরিচিত। ১৫০১ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্রী ইরান হয় শাহ কিংবা রাজারা শাসন করতেন। ১৯৭৯ সালে ইরানী বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ঘটায় এবং ইরানে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে।

ইরান ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সম্পর্কিত অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। এর উত্তরে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাস্পিয়ান সাগর ও তুর্কমেনিস্তান; পূর্বে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান; দক্ষিণে ওমান উপসাগর, হরমুজ প্রণালী ও পারস্য উপসাগর, এবং পশ্চিমে ইরাক ও তুরষ্ক। তেহরান ইরানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী; শহরটি ইরানের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত।

ইরান ৩০টি প্রদেশে বিভক্ত। ফার্সি ভাষায় এগুলির নাম ওস্তান (استان ostān ওস্তান, বহুবচনে استان‌ها ওস্তান্‌হা)। প্রতিটি প্রদেশ একটি স্থানীয় (সাধারণত বৃহত্তম) শহর থেকে শাসিত হয়, যাকে প্রদেশটির রাজধানী (ফার্সি ভাষায়: مرکز মার্কাজ) বলা হয়। প্রদেশের প্রশাসক হিসেবে থাকেন একজন গভর্নর (ফার্সি ভাষায়: استاندار ওস্তানদার), এবং তাঁকে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় নিয়োগদান করে। প্রতিটি প্রদেশ আবার অনেকগুলি অংশে বিভক্ত, যাদেরকে ফার্সি ভাষায় বলে শাহ্‌রেস্তান (شهرستان)। প্রতিটি শাহ্‌রেস্তান আবার অনেকগুলি জেলায় বিভক্ত, যেগুলিকে বাখ্‌শ বলে। (بخش)। একেকটি শাহ্‌রেস্তান সাধারণত একাধিক শহর (ফার্সি ভাষায়: شهر শাহ্‌র) এবং অনেক গুচ্ছগ্রাম (ফার্সি ভাষায়: دهستان দেহেস্তান) নিয়ে গঠিত। শাহ্‌রেস্তানের একটি শহরকে সাধারণত সেটির রাজধানী বা কেন্দ্রীয় শহরের মর্যাদা দেয়া হয়।

পর্যটন

সম্পাদনা
  • জগ্রোস পর্বতমালা - প্রধান পর্বত
  • দামভান্দ - সর্বোচ্চ পর্বত

বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

সৌদি আরবের পর ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটির মোট আয়তন ১৬,৪৮,০০০ বর্গকিলোমিটার। দেশটি মোটামুটি ত্রিভুজাকৃতির, যার দীর্ঘতম বাহু প্রায় ২,৫০০ কিমি দীর্ঘ এবং যা উত্তর-পশ্চিমে তুরষ্কের সাথে সীমান্তে শুরু হয়ে দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তান সীমান্তে এসে শেষ হয়েছে। ত্রিভুজের তৃতীয় শীর্ষটি উত্তর পূর্বে ইরানের সাথে তুর্কমেনিস্তানের সীমানার মাঝামাঝি অবস্থিত। উত্তর-দক্ষিণে ইরানের সর্বোচ্চ বিস্তার ১,৬০০ কিমি, আর পূর্ব-পশ্চিমে ১,৭০০ কিমি।

ইতিহাস

সম্পাদনা

ইরান পৃথিবীর প্রাচীনতম কাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত অস্তিত্বশীল বৃহৎ সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইরানের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের যার সূচনা হিসেবে বলা যায় ইরানী প্লেট-এ অবস্থিত আজারবাইজানের Mannaean সভ্যতা। এর পর আসে আসে জাবোলের শহর-ই-সোখতা এবং প্রাচীন জিরফ্ট সম্রাজ্য যা এলাম সম্রাজ্যএবং Achaemenid সাম্রাজ্য দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে আসে পার্সিয়ান এবং সাসানীয় সাম্রাজ্য যার পতনের মাধ্যমেই আধুনিক ইসলামী প্রজাতন্ত্রী ইরানের অভ্যুদয় ঘটে। পৃথিবীর উত্তরাংশ থেকে আর্যদের আগমনের পূর্বেই ইরানী প্লেটে অনেক প্রাচীন এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অগ্রগামী সভ্যতার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় যদিও আর্য জাতির অনেক ইতিহাসই এখনও পর্যন্ত অনেক ঐতিহাসিকের কাছে অজানা রয়ে গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ফলাফল অনুসারে পারস্যের ইতিহাসের সূচনা ধরা হয়েছে প্যালিওলিথিক যুগের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১০০,০০০ বছর আগে। ৭ম শতাব্দীরে ইসলামের পারস্য বিজয়-পরবর্তী ইরানের ইতিহাস নিচে দেয়া হল। আরব মুসলিমেরা ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সাসানীয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ শুরু করে। পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে তারা এলবুর্জ পর্বত ও কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী সমভূমি ব্যতীত সমগ্র ইরান করায়ত্ত করে। ৬৫১ সালে তারা সাসানিদ সাম্রাজ্যের পূর্ণ পতন ঘটাতে সক্ষম হয়। এর পর প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ইরান আরব ইসলামিক সাম্রাজ্যের অধীনে থাকে। এসময় মূল ইরানের বাইরে বর্তমান পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাতেও এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটেছিল। ইসলামের খলিফারা প্রথমে মদীনা, ও পরবর্তীকালে সিরিয়ার দামেস্ক ও শেষ পর্যন্ত ইরাকের বাগদাদ থেকে ইরান শাসন করতেন। ৯ম শতাব্দীর শেষে এসে পূর্ব ইরানে স্বাধীন রাজ্যের আবির্ভাব ঘটে এবং ১১শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাগদাদের আরব খলিফা ইরানের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।(বাংলা) ইসলামের ইরান বিজয়ের পর ইরানীরা ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া শুরু করে। এর আগে বেশির ভাগ ইরানী সাসানিদ সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম জরথুষ্ট্রবাদে বিশ্বাসী ছিল ও কিছু সংখ্যালঘু ইরানী খ্রিস্ট- ও ইহুদী ধর্মাবলম্বী ছিল। ১০ম শতকের মধ্যেই ইরানের অধিকাংশ জনগণ মুসলিমে রূপান্তরিত হয়, এবং এদের আধিকাংশই ছিল সুন্নী মুসলিম, তবে কেউ কেউ শিয়া ইসলামের ভিন্ন ভিন্ন ধারা অনুসরণ করত। এদের মধ্যে ইসমাইলি নামের একটি শিয়া গোত্র এলবুরুজ পর্বত এলাকার রুদাবার অঞ্চলে ১১শ থেকে ১৩শ শতক পর্যন্ত একটি ছোট কিন্তু স্বাধীন রাজ্যে বসবাস করত। ১৬শ শতকের আগে ইরানের বর্তমান জাফরি শিয়া ইসলাম-ভিত্তিক পরিচিতি গঠন করেনি।

জাফরি শিয়া ইসলাম ১৬শ শতক থেকে ইরানের রাষ্ট্রধর্ম। শিয়া মুসলিমেরা আরব ও মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য সুন্নী মুসলিমদের সাথে হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) উত্তরাধিকারী কে হবেন তা নিয়ে মতভেদ প্রকাশ করেন। ইরানের ১৯৭৯ সালের সংবিধান শিয়া ধর্মগুরুদের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বমূলক পদে স্থান দেয়। ইরানের প্রায় ৯৩% মুসলিম শিয়া ধর্মাবলম্বী এবং এদের প্রায় সবাই জাফরি শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী। জাফরি শিয়ারা মনে করেন মুহাম্মদের ১২ জন উত্তরাধিকারী ইমাম আছেন। ইরানের বাকী জনগণ সুন্নী ধর্মাবলম্বী। অনেক সময় মিশ্র ধর্মের লোক নিয়ে গঠিত শহরে ধর্মীয় উৎসবের সময় ধর্মীয় উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়। সুফিবাদ বা ইসলামী আধ্যাত্ম্যবাদ ইরানীদের মধ্যে জনপ্রিয়। এছাড়াও ইরানে আর্মেনীয় ও আসিরীয় খ্রিস্টান, ইহুদী ও জরথুষ্ট্রবাদীদের ছোট ছোট সম্প্রদায় আছে। ১৯শ শতকে বাহাইবাদের আবির্ভাব ঘটে এবং এর কয়েক হাজার অনুসারী আছে।

ইরানে মূলত তিনটি ভাষাপরিবারের ভাষা প্রচলিত: ইরানীয় ভাষাসমূহ, তুর্কীয় ভাষাসমূহ এবং সেমিটীয় ভাষাসমূহ।সবচেয়ে বেশি ভাষাভাষীবিশিষ্ট ও ভৌগোলিকভাবে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত হল ইরানীয় ভাষাপরিবারের সদস্য ভাষাগুলি। এদের মধ্যে ফার্সি ভাষা প্রধানতম ভাষা। ফার্সি ইরানের জাতীয় ভাষা। ইরানের ফার্স প্রদেশে প্রচলিত ভাষা থেকে এর উৎপত্তি এবং এর লিখিত ভাষার ইতিহাস ১০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। অন্যান্য ইরানীয় ভাষাগুলির মধ্যে পশ্চিম ইরানে কুর্দী ভাষা, উত্তর-পশ্চিমে তাতি ওতালিশি ভাষা, এলবুর্জ পর্বতমালার উত্তরে মাজান্দারানি ও গিলাকি ভাষা, ও দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে বেলুচি ভাষা অন্যতম।ইরানে প্রচলিত তুর্কীয় ভাষাগুলির মধ্যে উত্তর-পশ্চিমের আজারবাইজানি ভাষা এবং উত্তর-পূর্বের তুর্কমেন ভাষা প্রধান। এছাড়া ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে খুজেস্তান প্রদেশে এবং পারস্য উপসাগরের উপকূল ধরে সেমিটীয় ভাষাপরিবারের আরবি ভাষা প্রচলিত। আধুনিক ফার্সি ইরানের সরকারি ভাষা। ফার্সি একটি প্রাচীন সাহিত্যিক ভাষা। ৭ম শতাব্দীতে আরবদের আক্রমণের আগে এটি পাহলভী লিপিতে লেখা হত। ৯ম ও ১০ম শতাব্দীতে ভাষাটি আরবি লিপি ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৯৫০ সাল পর্যন্তও কথ্য ফার্সির অনেকগুলি স্বতন্ত্র উপভাষা ছিল, তবে এর পর সরকারি শিক্ষা ও গণমাধ্যমের প্রসারের ফলে একটি মান্য কথ্য ফার্সির উদ্ভব ঘটেছে। এছাড়া কিছু সংখ্যালঘু ভাষাভাষী আছে যাদের নিজস্ব প্রচার মাধ্যম ও প্রকাশনা আছে। এদের মধ্যে তুর্কী ভাষা আজেরি, কুর্দী, আরবি ও আর্মেনীয় প্রধান।

যোগাযোগব্যবস্থা

সম্পাদনা

সাধারণত ইরানের প্রধান খাবারের মধ্যে আছে চাল, মাংস (যেমন ভেড়ার, মুরগিবা মাছ), সবজির (যেমন পেঁয়াজ এবং বিভিন্ন শাক) সাথে বাদামের মিশ্রণ এবং বাদাম। তাল, ডালিম, কুইন, প্রুনিস, খুরফু, এবং রেসিনসের মতো ফলের সাথে প্রায়শই সবুজ গুল্ম ব্যবহার করা হয়। ইরানীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মশলার মধ্যে আছে জাফরান, শুকনো লেবু, দারুচিনি এবং পেসলে যা বিশেষ খাবারের সাথে ব্যবহৃত হয়।

৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন ইরানিরা একটি বিশেষ মজার খাবার তৈরি করেছিল যা গোলাপের পানি ও সেমাই দিয়ে তৈরি করা হতো। যা গ্রীষ্মকালে রাজপ্রাসাদে পরিবেশন করা হতো। বরফকে জাফরান এবং ফল ও অন্যান্য স্বাদের সঙ্গে মিশ্রিত করা হতো। আজকের দিনে সর্বাধিক জনপ্রিয় ইরানী মিষ্টি জাতীয় খাবার হচ্ছে আধা জমায়িত নুডলস দিয়ে তৈরী ফালুদা যার শিকড় সাবেক রাজধানী শিরাজ শহরে। বাস্তানি ই জামেরানী ফার্সি শব্দের অর্থ জাফরান আইসক্রিম একটি ঐতিহ্যবাহী ইরানী আইসক্রিম যা সাধারণত "ঐতিহ্যবাহী আইসক্রিম" নামে পরিচিত। অন্যান্য প্রকারের ইরানী ডেজার্টগুলি বিভিন্ন ধরনের চাল, গম ও দুগ্ধবৈচিত্র্যে তৈরি হয়।

রাত্রিযাপন

সম্পাদনা