ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের একটি সংসদীয় গণতন্ত্র। ভূমধ্য সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই রাষ্ট্রের রাজধানী জেরুসালেম। ইসরায়েলের অর্থনীতি খুবই শক্তিশালী এবং তেল আবিব হচ্ছে দেশটির অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
শহর
সম্পাদনা- জেরুজালেম
- তেল আবিব
পর্যটন
সম্পাদনাইসরায়েলের পর্যটন মূলত ইহুদী ধর্মের পবিত্র ও ঐতিহাসিক স্থানগুলিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। দেশটির সর্বত্র ইহুদী ধর্মের ও সভ্যতার স্মৃতিবিজড়িত নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইহুদীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় শহর এবং মুসলিম ও খ্রিস্টানদেরও গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হল জেরুজালেম শহর। জেরুজালেমের ইহুদী মন্দির ও পশ্চিম দেওয়াল বিখ্যাত। এছাড়া আছে যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান বেথেলহেম, বাসস্থান নাজারেথ।এখানে হারাম আল শরীফ তথা আল-আকসা মসজিদ অবস্থিত।ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা হিসাবে পরিচিত। ভূমধ্যসাগরের তীর জুড়ে রয়েছে অনেক অবকাশ যাপন কেন্দ্র। আরও আছে লবণাক্ত মৃত সাগর, যার পানিতে ভেসে থাকা যায়। লোহিত সাগরের উপকূল এবং গ্যালিলির সাগরের উপকূলেও অনেক অবকাশ কেন্দ্র আছে।
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাভূগোল
সম্পাদনাইসরায়েল পশ্চিম এশিয়াতে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এই ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে সমভূমি অবস্থিত। ইসরায়েলের দক্ষিণে রয়েছে বিশাল নেগেভ মরুভূমি আর উত্তরে আছে বরফাবৃত পর্বতমালা। দক্ষিণে লোহিত সাগরে এক চিলতে প্রবেশপথ আছে।
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিনসহ বেশিরভাগ আরব এলাকা চলে যায় ইংল্যান্ড- ফ্রান্সের ম্যান্ডেটে। ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। বেলফোর ঘোষণার মাধমে ফিলিস্তিন এলাকায় ইহুদিদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয় এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন করতে থাকে। ১৯০৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। কিন্তু ১৯১৪ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত বৃটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা পনের হাজারে উন্নীত হয়। এরপর প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীদের ধরে এনে জড়ো করা শুরু হলে ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়। ১৯৩১ সালে ইহুদীদের এই সংখ্যা প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছায়। এভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়। ১৯১৮ সালে বৃটেনের সহযোগিতায় গুপ্ত ইহুদী বাহিনী "হাগানাহ" গঠিত হয়। এ বাহিনী ইহুদীবাদীদের রাষ্ট্র তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে ফিলিস্তিনী জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদীবাদীদের সহায়তা করা হাগানাহ বাহিনীর দায়িত্ব হলেও পরবর্তীকালে তারা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়। ফিলিস্তিনী জনগণের বাড়িঘর ও ক্ষেতখামার দখল করে তাদেরকে ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত করা এবং বাজার ও রাস্তাঘাটসহ জনসমাবেশ স্থলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফিলিস্তিনীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের বিতাড়নের কাজ ত্বরান্বিত করা ছিল হাগানাহ বাহিনীর কাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডকে দ্বিখন্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখন্ডিত করার প্রস্তাব পাশ করে ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ড্যাভিড বেন গুরিয়ন ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
ভাষা
সম্পাদনাইসরায়েল ভাষাগত ও সংস্কৃতিগতভাবে বিচিত্র। এথনোলগের ১৫শ সংস্করণ অনুসারে ইসরায়েলে ৩৩টির মত ছোট-বড় ভাষা ও উপভাষা প্রচলিত। ইসরায়েলি নাগরিকেরা নিজেদের মধ্যে ভাব আদান প্রদানের জন্য মূলত আধুনিক হিব্রু ভাষা ব্যবহার করেন। আধুনিক হিব্রু ভাষাটি ১৯শ শতকের শেষ দিকে প্রাচীন হিব্রু ভাষার বিভিন্ন উপভাষার উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এতে স্লাভীয় ও জার্মানীয় ভাষাসমূহের কিছু প্রভাব আছে। ভাষার সরকারি মর্যাদা ও ভাষা সংক্রান্ত নীতিমালার উপর ইসরায়েলে বেশ কিছু আইন আছে। বর্তমানে হিব্রু ও আরবি ইসরায়েলের সরকারি ভাষা।
যোগাযোগব্যবস্থা
সম্পাদনাখাদ্য
সম্পাদনাভূগোল ইসরাইলের খাবারের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এবং ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সাধারণ খাবার যেমন যেমন জলপাই, গম, ছোলা, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছ এবং সবজি যেমন টমেটো, বেগুন এবং জকচিনি ইজরায়েলি খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তাজা ফল এবং সবজি ইসরায়েলে প্রচুর পরিমাণে হয় এবং বিভিন্নভাবে রান্না ও পরিবেশন করা হয়। ইসরায়েল বিভিন্ন জলবায়ু এলাকা আছে এবং এর ফলে বিভিন্ন প্রকারের সব্জি উৎপন্ন হয়। উপকূলীয় সমভূমিতে সাইট্রাস গাছ যেমন কমলা, লেবু এবং আঙ্গুর জন্মে। ডুমুর, ডালিম ও জলপাই গাছ শীতল পাহাড়ী এলাকায় জন্মে। গালীল সমুদ্রের কাছাকাছি এবং জর্ডান নদী উপত্যকায় নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু আম, কিয়ি এবং কলার জন্য উপযুক্ত, অন্যদিকে গালীলের পাহাড়ী গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া এবং গোলান আঙ্গুর, আপেল এবং চেরির জন্য উপযুক্ত। ইসরায়েলি খাবারের রীতি বৃহত্তর ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সাথে মিলে যায়। দৈনন্দিন জীবনে নৈশভোজের পরিবর্তে মধ্যাহ্নভোজ প্রধান খাবার। "কিব্বুৎজ খাবার" অনেক ইসরায়েলী তাদের সন্ধ্যায় হালকা খাবার এবং প্রাতঃরাশে খেয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরণের পনির (নরম ও শক্ত), দই, ল্যাবনি এবং টক মাখন, সবজি ও স্যালাদ, জলপাই, সিদ্ধ ডিম অথবা আমুলেট, আচার, বিভিন্ন ধরণের রুটি এবং তাজা কমলা রস এবং কফি ইজরায়েলী হাল্কা খাবারের অংশ। বাকলাভা একটি বাদামে ভরা প্যাস্ট্রি যা সিরাপ দিয়ে মিষ্টি করা হয় এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের উৎসবে পরিচর্যা করা হয়। এটা প্রায়ই রেস্তোরাতে ছোট কাপে তুর্কি কফির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।