সামোয়া দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ দেশ, এটি পলিনেশিয়ার অংশ। এটি ১০টি দ্বীপের সমন্বয়ে একটি দ্বীপপুঞ্জ, এখানকার প্রাচীন সংস্কৃতি, চমকপ্রদ প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য এবং সামোয়ার প্রাণবন্ত প্রবাল উদ্যানে স্নরকেলিং করার মতো বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়াকলাপ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

দেশটি মূলত দুটি প্রধান দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যার অভ্যন্তরভাগে আগ্নেয়গিরি, পাথুরে, রুক্ষ পর্বত সহ সরু উপকূলীয় সমভূমি রয়েছে। এছাড়া বাকীগুলো ছোট জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ এবং এমনকি জনবসতিহীন দ্বীপও রয়েছে, যেগুলিতে আপনি নৌকায় গিয়ে এক দিনেই ভ্রমণ করতে পারবেন।

অঞ্চলসমূহ

সম্পাদনা
 
সামোয়ার মানচিত্র
  উপোলু
এখানে দেশটির রাজধানী অবস্থিত, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে এবং দেশের বেশিরভাগ জনসংখ্যা এখানেই বসবাস করে, পাশাপাশি উপকূল থেকে কিছুটা দূরে বেশ কয়েকটি ছোট দ্বীপ রয়েছে এখানে।
  সাভাই
এটি সামোয়ার বৃহত্তম দ্বীপ; আনুমানিক মোট জনসংখ্যার ২৪% এখানে বাস করে, তবে এটি উপোলুর থেকে অনুন্নত। বেশিরভাগ পরিষেবা স্যালেলোগা এবং রিসোর্টে পাওয়া যায়।

  • 1 আপিয়া - কিছুটা নিচের দিকে শান্ত শহর পাবেন, সেখানে কিছু ভাল হোটেল, কেনাকাটার জন্য ভাল দোকান, রেস্টুরেন্ট, বার এবং একটি পাবলিক মার্কেট আছে।


জেনে রাখুন

সম্পাদনা
 

অগণিত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে প্রধান দ্বীপগুলি গড়ে উঠেছে, উভয় দ্বীপজুড়েই সহজে দৃশ্যমান আগ্নেয়গিরির শঙ্কু রয়েছে। বর্তমানে কোন আগ্নেয়গিরিই সক্রিয় নয়, তবে ছোট ছোট ভূমিকম্প প্রায়ই দ্বীপটিকে নাড়িয়ে দেয়, যা মানুষকে আগ্নেয়গিরির উপস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে উপোলু দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে একটি বিধ্বংসী সুনামি আঘাত হানে, এতে অনেক প্রাণহানি ঘটে।

সর্বশেষ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ১৯১১ সালে সাভাইয়ে। এই অগ্ন্যুৎপাত থেকে রয়ে যাওয়া ভয়ঙ্কর, প্রাণহীন লাভা ক্ষেত্রগুলি সহজেই দেখতে পাবেন, যেহেতু সাভাইয়ের একমাত্র সিল করা রাস্তাটি এর মাঝখান দিয়েই গিয়েছে।

উভয় দ্বীপই প্রায় সম্পূর্ণরূপে সবুজ গাছপালায় আচ্ছাদিত, যদিও এর প্রায় কোনটিই আসল রেইনফরেস্ট নয় যা মানুষের আগমনের আগে দ্বীপটিকে ঢেকে রেখেছিল। ভূমির বেশিরভাগ অংশ খামার বা আধা-চাষিত বনে পূর্ণ, যা স্থানীয়দের খাদ্য এবং অর্থকরী ফসলের যোগান দেয়। যেহেতু সামোয়ায় তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ বসবাস করছে, তাই গ্রামের চারপাশে চাষের জমিগুলি প্রায়ই গভীর, অন্ধকার জঙ্গলের মতো মনে হতে পারে।

২০২১ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০৫,০০০। তবে এর বাইরেও অনেক সামোয়ান দেশের বাইরে, বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে।

জলবায়ু

সম্পাদনা

গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু এবং অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টির (এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়) মৌসুম এবং মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুম। দেশটির বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে বসবাসকারী পর্যটকদের শীতকালীন ছুটি কাটানোর জন্য সামোয়া একটি আদর্শ গন্তব্য।

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
মাউ এ পুলে নেতা তৃতীয় তুপুয়া তামাসেসে লিয়ালোফি -এর সমাধিস্থল

সামোয়ানরা ১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে এসেছিল। সেই সময়কার মানুষের পেশার প্রাচীনতম পরিচিত স্থানটি উপোলু দ্বীপের মুলিফানুয়াতে অবস্থিত।

১৮৩০ সালে লন্ডন মিশনারি সোসাইটির মিশনারিরা, বিশেষ করে জন উইলিয়ামস এখানে ধর্মপ্রচারের জন্য আসেন এবং সামোয়া দ্রুত খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ ল্যাটার-ডে সেন্টস (কখনও কখনও মরমন হিসাবে উল্লেখ করা হয়) বেশ কয়েকটি বড় গীর্জা নির্মাণ করেছে।

১৯ শতকের শেষের দিকে সামোয়ানরা যুদ্ধবাজ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে, কারণ তারা ব্রিটিশ, জার্মান এবং আমেরিকানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ত্রয়ি বাহিনী সামোয়াকে কয়লা চালিত জাহাজে পুনরায় জালানী সরবরাহ করার স্টেশন এবং তিমি শিকার ও পণ্যগুলির জন্য একটি জ্বালানি কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। উপোলু দ্বীপে জার্মান সংস্থাগুলি কোপরা এবং কোকো বিন উৎপাদনে একচেটিয়া অধিকারী হয়, অপরদিকে প্রধানত পূর্ব দিকের দ্বীপগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় নেতাদের সাথে জোট গঠন করে, যেগুলিকে পরবর্তীতে আমেরিকান সামোয়া হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় ব্রিটেনও সৈন্য পাঠায়। জার্মানি, আমেরিকা এবং ব্রিটেন যুদ্ধরত সামোয়ানদের অস্ত্র সরবরাহ করে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে উপজাতীয়দের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। সেসময় এই তিন দেশই আপিয়া বন্দরে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়, কিন্তু সামোয়ার জন্য সৌভাগ্যবশত , ১৮৮৯ সালে একটি বড় ঝড়ে যুদ্ধজাহাজগুলি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয় এবং সংঘর্ষের অবসান ঘটে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ আগমন ছিল স্কটিশ লেখক রবার্ট লুই স্টিভেনসন এর আগমন, তিনি তার স্বাস্থোদ্ধারের জন্য দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ভ্রমণ করেন এবং ১৮৯০ এর দশকের প্রথম দিকে সামোয়াতে বসতি স্থাপন করেন। উপোলুর ভাইলিমায় তার বাড়ি এবং তার উপরে পাহাড়ে অবস্থিত তার সমাধি পরিদর্শন করা যেতে পারে। স্টিভেনসন "টুসিতালা" (গল্পের কথক) নামে পরিচিত ছিলেন এবং এই নামে অপিয়ায় এটি হোটেল আছে।

১৯০০ এর দশকের গোড়ার দিকে সাভাই দ্বীপে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। মাউ এ পুলে নামে পরিচিত এই আন্দোলনটি ১৯২০ এর দশকের শেষের দিকে সারা দেশে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল। আন্দোলনের সমর্থকরা সাদা ডোরা সহ একটি নেভি ব্লু লাভালাভের একটি মাউ ইউনিফর্ম পরতেন, যা পরে ঔপনিবেশিক প্রশাসন নিষিদ্ধ করে। ২৮ ডিসেম্বর ১৯২৯ সালে নিউজিল্যান্ডের সামরিক বাহিনী একটি শান্তিপূর্ণ মাউ মিছিলে গুলি চালিয়ে ১১ জন সামোয়ানকে হত্যা করে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় ব্রিটিশদের পক্ষে নিউজিল্যান্ড পশ্চিম সামোয়ার জার্মান আশ্রিত অঞ্চল দখল করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে ভার্সাই চুক্তির অংশ হিসাবে পশ্চিম সামোয়া যুক্তরাজ্যের দখলে যায়, নিউজিল্যান্ড ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের পক্ষে দ্বীপগুলি তদারকি করে, এসময় সামোয়া ২০ শতকের প্রথম পলিনেশিয়ান জাতি হিসাবে স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। দেশটি ১৯৯৭ সালে সামোয়া তার নাম থেকে "পশ্চিম" (যা আমেরিকান সামোয়া থেকে আলাদা করে) শব্দটি বাদ দেয়। দেশটি ১ জুন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে।

সামোয়া তার বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডান দিকে গাড়ি চালনার পরিবর্তে বাম দিকে গাড়ি চালনা শুরু করে। বহু বছরের মধ্যে এটিই প্রথম দেশ যারা রাস্থার পাশ পাল্টেছে, যদিও দেশটির আয়তন ছোট হওয়ায় এতে বিশৃঙ্খলা কম হয়েছে। এরপর২০১১ সালের ডিসেম্বরে, সামোয়া আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার পূর্ব দিকে (ইউটিসি -১১) থেকে পশ্চিম দিকে (ইউটিসি +১৩) চলে যাওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার পাশ পরিবর্তন করে। এই পদক্ষেপটি নিউজিল্যান্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যবসায়িকদের সাহায্য করার জন্য নেওয়া হয়। এতে সপ্তাহে মাত্র ৩ কার্যদিবস ভাগাভাগি করে (নিউজিল্যান্ডের সোমবার সামোয়াতে রবিবার এবং সামোয়াতে শুক্রবার ছিল নিউজিল্যান্ডে শনিবার)।

অর্থনীতি

সম্পাদনা
 
Blowhole on Savaii


সংস্কৃতি

সম্পাদনা

পর্যটন তথ্য কেন্দ্র

সম্পাদনা

সামোয়া পর্যটন কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের জন্য মানচিত্র, ক্ষুদ্র পুস্তিকা এবং অন্যান্য তথ্য প্রদানকারী তথ্য কেন্দ্র পরিচালনা করে।