বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা

শরীয়তপুর জেলা বাংলাদেশের একটি জেলা যা ঢাকা বিভাগ এর অন্তর্গত। শরীয়তপুর জেলার উত্তরে মুন্সিগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরিশাল জেলা, পূর্বে চাঁদপুর জেলা, পশ্চিমে মাদারীপুর জেলা। বর্তমান শরীয়তপুর জেলা গঠিত হয়েছে ইতিহাস সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের দক্ষিণাঞ্চল এবং প্রাচীন বরিশালের ইদিলপুর পরগণার কিছু অংশ নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শরীয়তপুরবাসী উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শরীয়তপুর জেলা ফরিদপুরের মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। শরীয়তপুর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর জন্মস্থান। তাঁর নাম অনুসারে ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর এই জেলার নাম শরীয়তপুর করা হয়।এটি ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত করা হয়।

কীভাবে যাবেন?

সম্পাদনা

স্থলপথে

সম্পাদনা

সড়ক পথের চাইতে নৌ পথে যাতায়াতই বেশি সুবিধাজনক। সুবিধাজনক হলেও সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে বেশি সময় লাগে। সড়ক পথে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর জেলা সদরে সর্বনিন্ম দুই ঘণ্টা পনের মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা ত্রিশ মিনিটের পৌছানো সম্ভব।

বৃহত্তর পদ্মা নদী ঢাকা ও শরীয়তপুর রুটের মাঝে অবস্থিত হওয়ার কারণে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর রুটে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এখনও তৈরি হয় নি। তবে ফেরি যোগে সরাসরি ঢাকা থেকে শরীয়তপুর যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার সায়েদাবাদের পশ্চিম কর্নার থেকে প্রতিদিন গ্লোরী পরিবহনের দুটি করে বাস শরীয়তপুর ঢাকা–শরীয়তপুর রুটে চলাচল করে। সকাল ১০.০০ টায় এবং বিকাল ০৫.০০ টায় গাড়িদুটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। সরাসরি বাস যোগাযোগ শুধুমাত্র শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত রয়েছে। এছাড়া লোকাল বাস যোগে মাওয়া হয়ে সড়কপথে শরীয়তপুর যাওয়া যায়। ঢাকার গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে মাওয়ার বাসগুলো প্রতি ১৫ মিনিট পরপর ছেড়ে যায়। ঢাকা–মাওয়া রুটের যাত্রাবাহী উল্লেখযোগ্য বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে – বিআরটিসি, ইলিশ পরিবহন, আনন্দ পরিবহন, গাংচিল পরিবহন, গ্রেট বিক্রমপুর পরিবহন, গোধুলী পরিবহন ইত্যাদি। এসকল পরিবহনের বাসগুলো ঢাকা–মাওয়া রুটে কাউন্টার ভিত্তিতে সরাসরি চলাচল করে। উপরিউক্ত বাসগুলো ছাড়া ভুলেও কোনো লোকাল বাসে উঠবেন না। তাহলে আপনার যাত্রা বিরক্তিকর হয়ে উঠবে। গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ারের পূর্ব পাশ থেকে এবং যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার দক্ষিণ-পূর্ব পাশ থেকে মাওয়ার বাসগুলো ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে মাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা।

মাওয়া থেকে লঞ্চ, ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ও স্পিডবোট যোগে নদী পারাপারের ব্যবস্থা রয়েছে। তেমন কোনো তাড়া না থাকলে লঞ্চে যাতায়াতই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। লঞ্চযোগে মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। ভাড়া জনপ্রতি ঘাটে দিতে হয় ৫ টাকা এবং লঞ্চ ভাড়া ২০ টাকা। স্পিডবোটে নদী পার হতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা। তবে লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চে উঠার সময় একটু জেনে নিবেন আপনি যেই লঞ্চে উঠছেন সেটি মাঝিরঘাটের লঞ্চ কিনা। কেননা একই লঞ্চ ঘাট থেকে কাওড়াকান্দি রুটের লঞ্চও ছাড়ে। তাই আপনি যদি অসর্তকতাবশত ভুল লঞ্চে উঠে পড়েন তাহলে আপনার সময় ও অর্থ দুই-ই নষ্ট হবে।

শরীয়তপুর মাঝিরঘাট থেকে বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের জন্য রুটভিত্তিক আলাদা আলাদা বাস রয়েছে। রুটগুলো হলো: মাঝিরঘাট – শরীয়তপুর সদর; মাঝিরঘাট – ভেদরগঞ্জ; মাঝিরঘাট – নড়িয়া; মাঝিরঘাট – সখিপুর। শরীয়তপুর সদর ও নড়িয়া রুটে লোকাল ও গেটলক উভয় ধরনের বাস রয়েছে। প্রতি ২০/২৫ মিনিট পরপর বাসগুলো ছেড়ে যায়।

আকাশ পথে

সম্পাদনা

এই জেলাটিতে কোনো ট্রেন বা মান যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো তৈরি হয় নি।

নৌ পথে ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও রাতে একাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ এই জেলার বিভিন্ন উপজেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

ঢাকা – ভেদরগঞ্জ

এটি ঢাকা-শরীয়তপুর নৌ যোগাযোগের একটি রুট। নাব্যতা সংকটের কারণে এই রুটটি শুধুমাত্র বর্ষাকালে চালু থাকে। অন্যান্য সময় এই রুটের লঞ্চগুলো সুরেশ্বর ঘাট পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে থাকে। সুরেশ্বর ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বা অটো রিক্সা যোগে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্ষাকালে প্রতিদিন সকালে ১টি ও রাতে ১/২ টি করে লঞ্চ নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে। পথিমধ্যে এই রুটের লঞ্চগুলো কার্তিকপুর, রামভদ্রপুর সহ আরও কয়েকটি ঘাটে যাত্রী উঠানামা করে থাকে। এই রুটের লঞ্চগুলোর ডেকের ভাড়া ১৫০ টাকা; সিঙ্গেল কেবিন ৪০০ টাকা ও ডাবল কেবিন ৮০০ টাকা।

ঢাকা – ওয়াপদা

ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের আরেকটি নৌ রুট হচ্ছে ঢাকা–ওয়াপদা। সারা বছরব্যাপীই এই রুটটি চালু থাকে। প্রতিদিন সকালে ১টি, দুপুরে ১টি এবং রাতে ২/৩টি লঞ্চ এই রুটে চলাচল করে। যাত্রাপথে এই রুটের লঞ্চগুলো পথিমধ্যে সুরেশ্বর ও চন্ডিপুর ঘাটে যাত্রী উঠানামা করে থাকে। এই রুটের লঞ্চগুলোর ডেকের ভাড়া ১৫০ টাকা; সিঙ্গেল কেবিন ৪০০ টাকা ও ডাবল কেবিন ৮০০ টাকা।

ঢাকা – ডামুড্যা

ডামুড্যা শরীয়তপুর জেলার অন্যতম একটি উপজেলা। এই উপজেলার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন রাত ১০ টায় ১টি এবং রাত ১১ টায় একটি করে মোট ২টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এই রুটে দিনের বেলা কোনো লঞ্চ নেই। এই রুটের লঞ্চগুলো পথিমধ্যে পট্টি, গোসাইরহাট, তালতলা, কোদালপুর, হাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী উঠানামা করে থাকে। এই রুটের লঞ্চগুলোর ডেকের ভাড়া ১৫০ টাকা; সিঙ্গেল কেবিন ৪০০ টাকা ও ডাবল কেবিন ৮০০ টাকা।

ঢাকা – ভোজেশ্বর

নাব্যতা সংকটের কারণে শুধুমাত্র বর্ষাকালে এই রুটে লঞ্চ চলাচল করে। বর্ষাকালে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর জেলার এই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকালে ও রাতে ১টি করে লঞ্চ যাতায়াত করে। নদীতে পানি বেশি থাকলে এই রুটের লঞ্চগুলো শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত যাতায়াত করে। পথিমধ্যে এই রুটের লঞ্চগুলো সুরেশ্বর, চন্ডিপুর ও ওয়াপদা ঘাটে যাত্রী উঠানামা করে থাকে। এই রুটের লঞ্চগুলোর ডেকের ভাড়া ১৫০ টাকা; সিঙ্গেল কেবিন ৪০০ টাকা ও ডাবল কেবিন ৮০০ টাকা।

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা
  • সুরেশ্বর দরবার শরীফ, নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর
  • মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম, নড়িয়ার কেদারপুর ইউনিয়নের কলুকাঠি নামক গ্রামে এটি আবস্তিত এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাছের একুরিয়াম। এখানে চিড়িয়াখানা সহ শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। শরীয়তপুর জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত।
  • বুড়ির হাট মসজিদ - ডামুড্যা উপজেলার বুড়ির হাট;
  • বুড়ির হাট মুন্সী বাড়ি - ডামুড্যা উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়ন;
  • লাকার্তা শিকদার বাড়ি - ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়ন;
  • পন্ডিতসার;
  • রুদ্রকর মঠ - সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়ন;
  • মগর;
  • শিবলিঙ্গ - নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়ন;
  • মহিষারের দীঘি - দক্ষিণ বিক্রমপুর;
  • রাজনগর;
  • কুরাশি;
  • হাটুরিয়া জমিদার বাড়ি - গোসাইরহাট উপজেলা;
  • রাম সাধুর আশ্রম - নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন;
  • মানসিংহের বাড়ি - নড়িয়া উপজেলায় ফতেজংগপুর;
  • ধানুকার মনসা বাড়ি।