লালবাগ কেল্লা (কেল্লা আওরঙ্গবাদ নামেও পরিচিত ছিল) ১৭ শ শতকে নির্মিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ স্থাপনা। এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে, মুঘল সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ কর্তৃক, যিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙগজেবের পুত্র এবং পরবর্তীতে নিজেও সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার উত্তরসুরী, মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করেননি।

লালবাগ কেল্লার সম্মুখ দৃশ্য
লালবাগ কেল্লা
পরি বিবির সমাধি

অবস্থান সম্পাদনা

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত।

পর্যটন সম্পাদনা

পরী বিবির সমাধি সম্পাদনা

লালবাগ কেল্লার তিনটি স্থাপনার মধ্যে অন্যতম এটি। এখানে পরিবিবি সমাহিত আছেন। শায়েস্তা খান তাঁর কন্যার স্মরণে এই মনমুগ্ধকর মাজারটি নির্মাণ করেন। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে বর্তমানে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত মাত্র একটি দরজা। এই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরী বিবির সমাধি। পরিবিবির অন্য নাম ইরান দুখত রাহমাত বানু, তিনি ছিলেন বাংলার মুঘল শায়েস্তা খানের কন্যা। মুঘল সম্রাট আওরংগজেবের পুত্র শাহজাদা আজম এর সাথে ১৬৬৮ ইং সালের ৩ মে পরিবিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ সালে পরিবিবির অকাল মৃত্যুর পর তাঁকে নির্মাণাধীন লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। তাঁর সমাধীস্থলকে চিনহিত করে পরিবিবির মাজার নির্মিত হয়। পরিবিবির মাজার এর স্থাপনাটি চতুষ্কোন। মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রং এর ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলংকৃত করা হয়েছে। মাঝের একটি ঘরে পরিবিবির সমাধিস্থল এবং এই ঘরটি ঘিরে আটটি ঘর আছে। স্থাপনাটির ছাদ করবেল পদ্ধতিতে কষ্টি পাথরে তৈরী এবং চারকোণে চারটি অষ্টকোণ মিনার ও মাঝে একটি অষ্টকোণ গম্বুজ আছে। মূল সমাধি সৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের উপরের এই গম্বুজটি একসময়ে স্বর্ণখচিত ছিল, পরবর্তীতে পিতলের/তামার পাত দিয়ে পুরো গম্বুজটিকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।স্থাপনাটির অভ্যন্তর ভাগ সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত। ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির এই সমাধিটি ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের পুর্বে নির্মিত। তবে এখানে পরীবিবির মরদেহ বর্তমানে নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

তিন গম্বুজওয়ালা দুর্গ মসজিদ (শাহী মসজিদ) সম্পাদনা

লালবাগ কেল্লা মসজিদ, সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র শাহজাদা আজম বাংলার সুবাদার থাকাকালীন এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন ১৬৭৮-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। আয়তাকারে (১৯.১৯ মি: × ৯.৮৪ মি) নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি এদেশের প্রচলিত মুঘল মসজিদের একটি আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানেও মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।

পানির ট্যাংক সম্পাদনা

একটি বর্গাকৃতির পানির ট্যাংক (প্রতি পাশে ৭১.৬৩ মি) দেওয়ান-ই-আমের পূর্বদিকে স্থাপন করা হয়। সেখানে ট্যাংকে নামার জন্য চার কোণার সিঁড়ি আছে।

যাতায়াত সম্পাদনা

আকাশপথ সম্পাদনা

পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকে আকাশপথে ঢাকাতে আসার পর বাস, সিএনজি, ট্যাক্সি ইত্যাদিতে মাধ্যমে এখানে আসা যাবে।

স্থলপথ সম্পাদনা

বাস বা ট্রেনে ঢাকাতে আসার পর বাস, সিএনজি, ট্যাক্সি ইত্যাদিতে মাধ্যমে এখানে আসা যাবে। আজিমপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে রিক্সা যোগে আসা যাবে।

নৌপথ সম্পাদনা

নৌপথে ঢাকাতে আসার পর বাস, সিএনজি, ট্যাক্সি ইত্যাদিতে মাধ্যমে এখানে আসা যাবে।

আবাসন ব্যবস্থা সম্পাদনা

ঢাকায় প্রচুর উন্নতমানের আবাসিক হোটেল, মোটেল ও বাংলো আছে।

থাকা খাওয়া সম্পাদনা

এর পাশেই অনেক ভালো মানের রেস্তোরা আছে। এখানে সব ধরনের খাবারই পাওয়া যায়।