মিরপুর পাকিস্তানের একটি শহর। এর জনসংখ্যার ১২৫,০০০ (২০১৭)। মিরপুর তার বিশাল ভবন এবং বড় বাংলোর জন্য পরিচিত। প্রাথমিকভাবে এর প্রবাসীদের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়। আশেপাশের বেশিরভাগ এলাকাই কৃষিনির্ভর।
জেনে রাখুন
সম্পাদনানিউ মিরপুর সিটি নামেও পরিচিত মিরপুর বছরের পর বছর ধরে সামরিক এবং হাইড্রোলজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থানে এসেছে।
১৯৪৭ সালের কাশ্মীর যুদ্ধের আগে অনেক হিন্দু উদ্বাস্তু মিরপুর এবং এর আশেপাশে বসতি স্থাপন করে, কিন্তু তারপরে সেই বছরের ২৫শে নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এসে তাদের হত্যা করে বা বিতাড়িত করে, শেষ পর্যন্ত তারা জম্মু বা ভারতের অন্যান্য অংশে পুনর্বাসিত হয়।
১৯৬০ সালে মাংলা বাঁধ প্রকল্প নির্মান করা হয় এবং এর ফলে পুরোনো মিরপুর শহর জলাধারে নিমজ্জিত হয় এবং কাছাকাছি মংলা বাঁধ নির্মাণের জন্য ধ্বংস হয়। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে যখন হ্রদের পানির স্তর কিছুটা কমে যায় তখন প্রাক-স্বাধীনতার সময়ের একটি হিন্দু মন্দির সহ পুরানো শহরের কিছু অংশ চোখে পড়ে। শহরটিতে স্বাধীনতার পূর্বের সময়ে জাতিগত গোষ্ঠীগুলি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করত।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসী হওয়া পাকিস্তানিদের একটি বড় অংশ মিরপুর থেকে এসেছে, শহরটিকে প্রায়ই 'লিটল ইংল্যান্ড' বলা হয় এবং অনেক ব্রিটিশ পণ্য এই শহরে পাওয়া যায়।
নতুন মিরপুর সুপরিকল্পিত ভাবে নির্মান করা হয় এবং শহরের প্রতিটি অংশে আধুনিক ভবন এবং প্রশস্ত রাস্তা নির্মান করা হয়। অভিবাসন থেকে আসা অর্থ এর আবাসিক ভবনের গঠন এবং বিশালত্বে প্রতিফলন ঘটেছে। যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী প্রবাসী সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের সুস্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে। এখানে ভালো হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিং মল এবং অন্যান্য শহুরে সুবিধা রয়েছে।
প্রবেশ করুন
সম্পাদনাবিমানে
সম্পাদনাএর নিকটতম বিমানবন্দর হল ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ISB আইএটিএ), এটি মিরপুর শহর থেকে সড়কপথে প্রায় ৮০ মাইল (১৩০ কিমি) দূরে। শিয়ালকোট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখান থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বাসে
সম্পাদনাদেশের বিভিন্ন স্থান এবং ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে মিরপুর যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।
গাড়িতে
সম্পাদনাগাড়িতে মিরপুর লাহোর থেকে ২৩০ কিলোমিটার উত্তরে।
ঘুরে বেড়ানো
সম্পাদনাবাসে
সম্পাদনামিরপুরে আজাদ কাশ্মীরের সবচেয়ে ব্যস্ত বাস নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলাচল করে। প্রতিদিনের গমনপথের মধ্যে রয়েছে ভিম্বার জেলা, দিনা, গুজরাট, ঝিলম, খারিয়ান এবং কোটলি জেলা।
মিরপুরের নতুন কোচগুলি বাহাওয়ালপুর, ফয়সালাবাদ, গুজরানওয়ালা, করাচি, লাহোর, মুলতান, মুজাফফরাবাদ, পেশোয়ার, কোয়েটা, রাওয়ালপিন্ডি এবং শিয়ালকোট সহ পাকিস্তানের বড় শহরে যাতায়াত করে।
অটোরিকশায়
সম্পাদনাশহরের অভ্যন্তরের রুটে অটো রিকশা খুব জনপ্রিয় পরিবহনের মাধ্যম। শহরের অনেক নতুন রিকশাতে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ব্যবহার করা হয়।
ট্যাক্সিতে
সম্পাদনাএছাড়াও গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে বেড়ানো যায়।
যা দেখবেন
সম্পাদনা- খারি শরীফ দরবার (দরবার শরীফ হযরত পীর শাহ গাজী রহ.), দরবার প্রধান সড়ক, خاص دربار کھڑی شریف (চেচিয়ান রোডে মিরপুর থেকে ৯ কিমি দক্ষিণে এবং এরপর দরবার মেইন সড়কের পূর্ব দিকে)। এটি একটি ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সুফি বাবা পীর-ই-শাহ গাজী এবং মিয়া মোহাম্মদ বক্সের মাজারের কারণে এই স্থানটি সুপরিচিত।
- মাংলা দুর্গ (মাংলা/মিরপুর রোডে প্রায় ১১ কিমি পশ্চিমে যাবেন, এরপরে উত্তরে পাওয়ারহাউস রোড (সীমাবদ্ধ প্রবেশ এলাকা) এর দিকে যাবেন।)। সোম থেকে শনিবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে, রবিবার বন্ধ থাকে। কথিত আছে যে, পরিদর্শনের জন্য আপনার পাক আর্মি বা মাংলা বিশেষ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হবে, এটি ঐতিহাসিক গাক্কর দুর্গ ও এক কক্ষ বিশিষ্ট জাদুঘর, প্রেস শরীফের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে গঠিত তবে মাংলা বাঁধ হ্রদ ছাড়া। কাছাকাছি রয়েছে বিশাল বাঁধ (যা বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম) এবং সেতু যা পাঞ্জাব প্রদেশকে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের সাথে সংযুক্ত করেছে এবং যেখানে মহান আলেকজান্ডার ঝিলম নদী অতিক্রম করেছিলেন বলে দাবি করা হয়। একটি আকর্ষণীয় ফটো-অপ তৈরি করতে পারেন যদি এটি পুলিশ/সামরিক ব্যাক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে।
- রামকোট দুর্গ। একটি পুরানো হিন্দু মন্দিরের জায়গার উপর নির্মিত দুর্গ। এই পাহাড় চূড়ার তিন দিক ঝিলাম নদী (মাংলা হ্রদ) দ্বারা বেষ্টিত। খননের সময় খ্রিস্টীয় ৫ম-৯ম শতকের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। মিরপুর থেকে লেকের উল্টো দিকে এটি অবস্থিত। মিরপুর থেকে সড়কপথে ১০ মিনিটের যাত্রায় সুখিয়ান এবং নিকটবর্তী মাংলা ভিউ রিসোর্ট/আর্মি ওয়াটার স্পোর্টস ক্লাবে চলে যাবেন, সেখান থেকে রামকোট দুর্গে যাওয়ার জন্য নৌকা পাওয়া যায়। সেখানে পৌঁছাতে ৪৫ মিনিট সময় লাগে।
- বাগসার লেক ও দুর্গ (শেষ অংশে সম্ভবত মোটরবাইক বা হাইকিংয়ের প্রয়োজন হবে)। সামাহনি উপত্যকার একটি মনোরম হ্রদ, এখানে প্রায়শই পরিযায়ী পাখি এবং লিলি বাস করে। সেখানে ১৮শতকের মাঝামাঝি সময়ের একটি পুরোনো মুঘল দুর্গ দেখা যায়। কথিত আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীর কাশ্মীর উপত্যকা থেকে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এখানেই মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ রেখার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এই এলাকাটি বন্ধ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
- ভুট্টো উদ্যান, ভুট্টো উদ্যান রোড (শহরের পশ্চিম প্রান্তে), আপনি যদি লেকের ধারে কিছু সময় কাটাতে চান বা বাঁধের কিছু দৃশ্য দেখতে চান তবে এটি একটি ভাল জায়গা।
- বাশারাত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
- রগু নাথ মন্দির
- শিবালা মন্দির
যা করতে পারেন
সম্পাদনা- মাংলা ভিউ রিসোর্ট। মাংলা বাঁধ হ্রদে একটি লেকসাইড রিসোর্টে প্যারাসেলিং ও জেট স্কিইং এবং অন্যান্য জলক্রীড়া করা যায়। এটি পাকিস্তানি সামরিক কর্মীদের এবং বেসামরিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
- জারি কাস, কোটলী রোড, খালেকাবাদ (মিরপুর থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্ব দিকে)। নৌকা এবং বাচ্চাদের রাইড সহ একটি বিনোদন কেন্দ্র। যদিও কারো কারো কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এছাড়াও লেকের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
এপ্রিল মাসে সাইফ উল মালুক উৎসব শহরের কেন্দ্রস্থলে অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে স্থানীয় একজন সুফি সাধকের (মিয়াঁ মুহম্মদ বখশ) আধ্যাত্মিক শিক্ষক উদযাপন করা হয়। পাহাড়ি মুশাহিরা হল আরেকটি উৎসব, যেখানে সাহিত্যিক প্রকৃতির, কবিতা পাঠ হয়। গ্রীষ্মকালে সংস্কৃতি ও পরমতসহিষ্ণুতা উদযাপনের জন্য বাঁধের কাছে রথোয়া মেলা উৎসব হয়।
যা করতে পারেন
সম্পাদনাক্রয়
সম্পাদনামিরপুর আজাদ কাশ্মীরের শপিং রাজধানী হিসেবেও পরিচিত, মিরপুরের একটি বৃহৎ এবং বৈচিত্র্যময় শপিং এলাকা রয়েছে, যা চক শাহেদা ও মিয়ান মোহাম্মদ রোডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এই রাস্তাগুলিতে অনেক দোকান, প্লাজা, শপিং মল এবং বাজার রয়েছে, সেখানে হাতের তৈরি মৃৎপাত্র থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সমস্ত কিছু বিক্রি হয়।
- ক্রাউন প্লাজা, আল্লামা ইকবাল রোড। মিরপুরের প্রধান শপিং সেন্টার, এটি একটি বহুতল কাঁচের ভবন।
খাওয়া-দাওয়া
সম্পাদনা- নাফীস কোয়ালিটি ফুড, আল্লামা ইকবাল রোড। সালাদ, সমোসা এবং বেকারি আইটেমসহ পাকিস্তানি খাবারের একটি বড় দোকান।
এছাড়াও যদি আপনি আরও প্রচলিত পাকিস্তানি খাবারের অভিজ্ঞতা নিতে চান তাহলে ক্রাউন প্লাজা মলের ভিতরে ডেরা রেস্তোরাঁ রয়েছে ।
ঘুমানো
সম্পাদনাবেশিরভাগ পর্যটন স্পটে বিভিন্ন গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউস, মোটেল এবং হোটেল রয়েছে যেগুলি মুজাফফরাবাদে তাদের অফিস থেকে অগ্রিম বুক করা যায়। (টেলিফোন: ০৫৮৮১০-৩২৬২৫)।
- গ্র্যান্ড রিজেন্সি হোটেল মিরপুর, আল্লামা ইকবাল রোড (শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্রাউন প্লাজা মলের পাশে), ☏ +৯২৫৮৬১০৪৬৭০১। পুল, রেস্টুরেন্ট, বার, ওয়াইফাই সুবধাসহ ৬ তলা বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠিত হোটেল। ভাড়া ~৬৪ ডলার।
- হলিডে ইন কাশ্মীর, আল্লামা ইকবাল রোড (শহরের পশ্চিম দিকে), ☏ +৯২৫৮২৭৪৪৫৪৫৪। রেস্তোরাঁ এবং ওয়াইফাই সহ মাঝারি দামের হোটেল এবং এখান থেকে বাঁধের ভাল দৃশ্য দেখা যায়।
- উন্দ্রাহ ইন হোটেল, আল্লামা ইকবাল রোড (গ্র্যান্ড রিজেন্সি থেকে ক্রাউন প্লাজা মলের অপর পাশে)। ওয়াইফাই সুবিধাসহ আধা-আধুনিক হোটেল।
- হোটেল জাবির, আল্লামা ইকবাল রোড, ☏ +৯২৫৮২৭৪৪৩০৯২। গ্র্যান্ড রিজেন্সি মিরপুরের ঠিক পাশেই রেস্টুরেন্ট, বার এবং ওয়াইফাই সবিধাসহ হোটেল।