মহেশখালী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ এলাকা।

অনুধাবন সম্পাদনা

কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ২১°২৮′ থেকে ২১°৪৬′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫১′ থেকে ৯১°৫৯′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত মহেশখালী উপজেলার আয়তন ৩৮৮.৫০ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৫৪ সালে মহেশখালী থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। এ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে।

নামকরণ সম্পাদনা

কিংবদন্তি অনুসারে, ছোট মহেশখালীর তৎকালীন এক প্রভাবশালী বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ সিকদার, মাঝে মাঝেই পাহাড়ে হরিণ শিকার করতে যেতেন। একদিন হরিণ শিকার করতে গিয়ে সারা দিন এদিক-ওদিক ঘুরেও শিকারের সন্ধান না পেয়ে একটি গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ কিছু একটার শব্দে তার তন্দ্রা টুটে যায়। শব্দ অনুসরণ করে তিনি দেখতে পান যে, একটি গাভী একটি মসৃণ শিলাখণ্ডের উপর বাট থেকে দুধ ঢালছে; এই গাভীটি তারই গোয়ালঘর থেকে কিছুদিন আগে হারিয়ে যায়। গাভী আর সেই সুন্দর শিলাখণ্ডটি নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। সেদিন রাতেই তিনি স্বপ্নে দেখতে পান, এক মহাপুরুষ তাকে বলছেন যে, শিলাখণ্ডটি একটি দেব বিগ্রহ। এ বিগ্রহ যেখান থেকে নিয়ে এসেছেন সেখানে রেখে তার উপর একটি মন্দির নির্মাণ করতে হবে। মন্দিরের নাম হবে আদিনাথ মন্দির। এ আদিনাথের (শিবের) ১০৮ নামের মধ্যে "মহেশ" অন্যতম। আর এই মহেশ নাম হতেই এই স্থান পরবর্তীকালে মহেশখালী হয়ে যায়। আবার, এটি প্রায় ২০০ বছর আগে মহেশখালী নামে পরিচিত হয়ে উঠে, বৌদ্ধ সেন মহেশ্বর দ্বারাই এটির নামকরণ হয়েছিল বলেও অনেকের ধারণা।

জনসংখ্যা সম্পাদনা

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহেশখালী উপজেলার জনসংখ্যা ৩,২১,২১৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৬৯,৩১০ জন এবং মহিলা ১,৫১,৯০৮ জন। এ উপজেলার ৯০.০৮% মুসলিম, ৭.৮০% হিন্দু, ১.৩০ বৌদ্ধ এবং ০.৮২% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পাদনা

কক্সবাজার থেকে গিয়ে দিনে ঘুরে চলে আসা সম্ভব। ফেরার সময় বিকালে ট্রলার পাবেন, তবে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নয়। পেকুয়া, মগনামা ঘাট পার করে দিবে, সেখান থেকে বাসে করে চট্টগ্রাম আসতে পারেন।

কেউ কক্সবাজার ভ্রমণে গেলে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় মহেলখালী রাখতে পারেন।

প্রবেশ সম্পাদনা

মহেশখালীতে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসগুলোর মধ্যে গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, দেশ ট্রাভেলস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শ্রেণী ভেদে বাসগুলোর প্রতি সীটের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার পর্যন্ত। ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশেন হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্রগ্রাম মেইলে করে চট্রগ্রাম রেল স্টেশন এ নেমে সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, নভো এয়ার,ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজসহ বেশকিছু বিমান ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান পরিচালনা করে থাকে। কক্সজবাজার শহরের যেকোন জায়গা থেকে মহেশখালী যাবার জেটিতে (৬ নং ঘাট) চলে আসুন। তারপর লোকাল ট্রলার বা স্পীড বোটে ৭০-৮০ টাকা ভাড়ায় মহেশখালী আসবেন। চাইলে স্পিডবোট রিজার্ভ নিতে পারবেন। মহেশখালি এসে সবকিছু ঘুরে দেখতে এক বা দুজন হলে একটা রিক্সা (ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা) অথবা ৫-৭ জন হলে অটো/ইজিবাইক ভাড়া (৩০০-৩৫০ টাকা) করে নিবেন। তবে ভালো করে দরদাম করে নেবেন, নইলে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।

দেখুন সম্পাদনা

স্থাপত্য সম্পাদনা

  • 1 আদিনাথ মন্দির, মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামে এই মন্দিরটি অবস্থিত।মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত মন্দিরটি বাংলাদেশের বিখ্যাত অন্যতম হিন্দু মন্দির। মন্দিরে যেতে হলে সমতল থেকে ৬৯টি সিঁড়ি ভেঙে মন্দিরে উঠতে হয়। আদিনাথের অপর নাম মহেশ। এই মহেশের নামানুসারে জায়গাটির নাম মহেশখালী। আদিনাথের গোড়াপত্তন কয়েক হাজার বৎসর পূর্বে ত্রেতাযুগে। এর একটি ঐতিহাসিক সত্যতা রয়েছে যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ, রামায়ণ, পুরাণ ও ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে জানা যায়। মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের মতানুসারে আদিনাথ মন্দিরই একমাত্র মন্দির যা, মুসলিম ধর্মালম্বী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।    

এছাড়া মহেশখালীর আদিনাথ বাজার, জয়ের খাতা, হরিয়ার চরা, জেমঘাট, পাকুয়া, মাতার বাড়ি, পশ্চিমপাড়া প্রভৃতি জায়গাগুলোও চমৎকার।

আহার সম্পাদনা

আদিনাথ মন্দির থেকে নেমে আসলেই জেলে পাড়া। জেলেদের জীবনযাপনের সাথে মেশার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। সমুদ্রের পাড়ে দেখা যায় বিচিত্র শামুক আর ঝিনুক। যে-কোন রেস্তোঁরায় কম দামে মজাদার রূপচাঁদা কিংবা কোরালের ন্যায় মজার মজার সামুদ্রিক মাছ খাবার ব্যবস্থা আছে। শুঁটকিও খাওয়া যায়।

রাত্রিযাপন সম্পাদনা

মহেশখালীতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে। হোটেল সি গার্ডেন ভালোমানের হোটেল। কক্সবাজার শহরের কলাতলীতেও ভালোমানের হোটেল আছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল শৈবাল, লাবণী, প্রবাল ছাড়াও বেসরকারি হোটেলগুলোর মধ্যে হোটেল সী গাল, হোটেল সী প্যালেস, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, জিয়া গেস্ট হাউজ, সোহাগ গেস্ট হাউজ, গ্রীন অবকাশ রিসোর্ট, নিট বেল রেস্টহাউজ রয়েছে। এ সকল হোটেলে ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রাত্রিযাপন করা যায়।