মধ্য ভুটান হল ভুটানের একটি অঞ্চল।
শহরসমূহ
সম্পাদনা- 1 চুমে- এর বোনা পশমী পণ্যের জন্য বিখ্যাত।
- 2 দামফু— সিরাং জেলার প্রশাসনিক শহর।
- 3 জাকার— জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং প্রথম স্থান যেখান থেকে বৌদ্ধ ধর্ম ভুটানে প্রবেশ করেছিল।
- 4 জিলেপো— ভারতীয় সীমান্তে একটি বড় শহর এবং রাজকীয় মানস জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি অবস্থিত।
- 5 তাং- এখানে অনেক পবিত্র স্থান রয়েছে।
- 6 ত্রংসা-
- 7 উরা- পর্বতের উচ্চতায় অবস্থিত একটি মনোমুগ্ধকর গ্রাম।
অন্যান্য গন্তব্য
সম্পাদনাঅনুধাবন
সম্পাদনাসাংস্কৃতিকভাবে মধ্য ভূটান পূর্ব ভূটানের কাছাকাছি এবং পূর্বের মত এখানেও প্রধানত নিংমা (Nyingma) বৌদ্ধ ধর্ম প্রচলিত। তবে শহরগুলিতে পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ ত্রংসা পূর্ব ভূটানের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাহাড়ের পাশে অবস্থিত; আর জাকার একটি বিস্তৃত সবুজ উপত্যকায় অবস্থিত, যা পশ্চিমের শহরগুলোর মত।
বুমথাং জেলা
সম্পাদনা"বুমথাং" শব্দটির "বুম্পা আকারের উপত্যকা" হিসেবে অনুবাদ করা হয়। "থাং" মানে উপত্যকা বা সমতল এবং "বুম" অর্থ হলো "বুম্পা" (একটি পাত্র, যা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়) শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। বুমথাং অঞ্চলকে রাজ্যের আধ্যাত্মিক হৃদয় হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ এখানে ৮ম শতকে গুরু রিনপোচে একজন স্থানীয় রাজাকে আত্মিকব্যাধি থেকে মুক্ত করেছিলেন। এর ফলে রাজা এবং পরে পুরো দেশ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে। বিখ্যাত বৌদ্ধ সাধক পেমা লিগ্পা এখানেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং আরও অনেক বিখ্যাত বৌদ্ধ সাধক এখানে বাস এবং সাধনা করেছেন। ফলে এই অঞ্চলটি পবিত্রতার প্রতীক এবং মঠের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত।
এছাড়াও এ অঞ্চলটি সবুজ উপত্যকার জন্য পরিচিত এবং এটি প্রধানত আপেল ও আপেল জুস উৎপাদন করে। পূর্বে এখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রুটি জাতীয় শস্য চাষ হতো; কিন্তু বর্তমানে ধান চাষ করা হয় এবং এটি প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বুমথাং তার উজ্জ্বল রঙিন ও অনন্য বোনা উলের পোশাকের জন্য বিখ্যাত, যা "ইথ্রা" নামে পরিচিত।
শীতকালে বুমথাং খুবই ঠাণ্ডা হয়ে থাকে এবং সেখানে ক্রমাগত প্রবল বাতাস ও ভারী তুষারপাত হয়। অন্য দিকে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও মনোরম এবং উচ্চ উচ্চতার কারণে অঞ্চলটি ভারী বর্ষা থেকে রেহাই পায়।
ভাষা
সম্পাদনাবুমথাংখা ভাষা বুমথাংয়ের প্রধান ভাষা এবং অন্যান্য এলাকায় দজংখা ও শার্চপখা প্রভাবিত ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে জাকারে সাধারণত মানুষ ইংরেজি ভাষা বলে ও বোঝে।
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনা- কুর্জে লাখাং, জাকার। এটি একটি গুহার চারপাশে নির্মিত একটি মন্দির, যেখানে দেওয়ালে গুরু রিনপোচের দেহের ছাপ রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। গুরু রিনপোচে ভুটানে নিজের প্রথম সফরে এখানে ধ্যান অনুশীলন করেছিলেন বলে জানা যায় এবং এটি দেশের প্রাচীনতম বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষ।
নির্দশন
সম্পাদনা- জাকার জং, জাকার। এটি মূলত ১৬৬৭ সালে নির্মিত হয়; কিন্তু ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে পুনর্নির্মিত হয়। এটি ভুটানের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক স্থান। এখানে বুমথাং জেলার প্রশাসনিক ও সন্ন্যাসীর অফিস রয়েছে।
পবিত্র স্থান
সম্পাদনা- কুরজে লাখাং, জাকার। এটি ভুটানের অন্যতম পবিত্র মঠ। একটি গুহায় গুরু রিনপোচের দেহের ছাপ সংরক্ষিত আছে বলে ধারণা করা হয়, যার চারপাশে তিনটি ভবনের মধ্যে প্রাচীনতমটি নির্মিত। মূল ভবনটি ১৬৫২ সালে ট্রংসা পেনলপ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবল সর্বশেষ সংযোজনটি ১৯৯০ সালে প্রয়াত রানী মা আশি কেসাং ওয়াংচুক দ্বারা যুক্ত করা হয়েছিল।
- জাম্বে লাখাং, জাকার। এটি ১০৮টি মঠের মধ্যে একটি, যা রাজা সোংটেন গাম্পো অলৌকিকভাবে এক রাতে তৈরি করেন বলে প্রচলিত আছে। মঠটি কুরজে লাকাং এবং জাকার জংয়ের মধ্যে অবস্থিত।
- থারপালিং গোয়েম্বা, চুমে। ১৩৫২ সালে জোগচেন মাস্টার লংচেন রবজাম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই মঠটি ১৮ শতকের বিখ্যাত নিংমা গুরু জিগমে লিংপার আবাসস্থল ছিল। এটি ৩,৬০০ মিটারে অবস্থিত এবং প্রায় ১৫০ জন এতে সন্ন্যাসী বাস করে। একটি কাঁচা রাস্তা দিয়ে এখানে পৌঁছানো যায়।
- থাংবি গোয়েম্বা, জাকার। ১৪৭০ সালে শামার রিম্পোচে প্রতিষ্ঠিত।
- মেবার তশো (বার্নিং লেক), তাং। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে গুরু রিনপোচের কিছু শাস্ত্রীয় ধন (টিব: টারমা) ১৫ শতকের বিখ্যাত গুপ্তধন আবিষ্কারক পেমা লিংপা আবিষ্কার করেছিলেন বলে প্রচলিত।
- তামশিং গোয়েম্বা, জাকার। স্থানীয় বৌদ্ধ সাধক পেমা লিংপা কর্তৃক ১৫০১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি মঠ। দোতলা ভবনে কিছু মনোরম ফ্রেস্কো রয়েছে এবং এর ছাদের উচ্চতা খুব কম (স্পষ্টত পেমা লিংপা খুব খাটো ছিলেন!) এছাড়াও প্রথম তলায় পেমা লিংপা দ্বারা তৈরি ধাতব চেনের ৫০০ বছরের পুরনো একটি স্যুট রয়েছে। পিঠে ও কাঁধে শিকল বেঁধে তিনবার মন্দির প্রদক্ষিণ করা শুভ বলে মনে করা হয়।
- সুমথ্রং লাখাং, শাইনার গ্রাম, উরা। অনেক সাধারণ কিন্তু সুন্দর শিল্পকর্মসহ কয়েকশ বছরের পুরনো একটি মঠ। জানুয়ারিতে যারা বেড়াতে আসবেন প্রধান ফটকের কাছে দুটি ফুলের গাছ তাদের লক্ষ্য করা উচিত, যখন একই জাতের অন্যান্য গাছগুলি শুষ্ক পড়ে আছে। লোককথা প্রচলিত যে, এই গাছগুলি মঠের প্রতিষ্ঠাতা গায়েলওয়া লাহানাংপা দ্বারা গেটে রাখা একটি হাঁটার লাঠি থেকে অঙ্কুরিত হয়েছিল।
বৌদ্ধধর্মের প্রথা এবং প্রতীক সম্পর্কে তথ্যের জন্য দেখুন: ভারতীয় উপমহাদেশের পবিত্র স্থান
করণীয়
সম্পাদনা- ডুয়ের উষ্ণ ঝর্ণা। রাস্তার মাথা থেকে একদিনের পর্বতারোহণ। চলার পথটি অত্যন্ত কঠিন; কিন্তু অত্যন্ত সুন্দর। নীল ভেড়া, কস্তুরী হরিণ ও হিমালয় ভাল্লুক ডুয়ের উষ্ণ ঝর্ণা এলাকায় একটি সাধারণ প্রাণী।
- তাঁত ঘর। ছুমে তার উলের তাঁতিদের জন্য বিখ্যাত। এখানে কাজটি দেখা এবং সরাসরি তাঁত থেকে জিনিসপত্র (যা ইথ্রা নামে পরিচিত) ক্রয় করা সম্ভব।
- উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণ। এই অঞ্চলটি পাহাড়ে দীর্ঘ ট্রেকের জন্য উপযুক্ত।
আহার
সম্পাদনাজাকারে আন্তর্জাতিক মানের রেস্তোরাঁ পাওয়া যায়; যদি প্রতিটি গ্রামে ছোটখাটো খাবারের দোকান আছে, যেখানে ভুটানের স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয়।
পানীয়
সম্পাদনাএই এলাকা তাজা আপেলের রসের জন্য বিখ্যাত।
নিরাপদে থাকুন
সম্পাদনা- ভালুক: বনের মধ্যে হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। কারণ এখানে প্রচুর ভাল্লুকের উপস্থিতি রয়েছে।