মঙ্গোলিয়া মধ্য এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম উলানবাটোর। এর উত্তরে রাশিয়া ও দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিমে গণচীন অবস্থিত। রাজধানী উলান বাটোরে মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ লোক বাস করে। মঙ্গোলিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত। সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত মঙ্গোলিয়ার বেশির ভাগ লোক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং তাদের অনেকেই যাযাবর, তবে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। রাজধানী উলানবাটোর দেশটির সর্ববৃহৎ শহর।
শহর
সম্পাদনাপর্যটন
সম্পাদনাবৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাভূগোল
সম্পাদনামঙ্গোলিয়ার আয়তন-১৫,৬৪,১১৬ বর্গ কি.মি. (৬,০৩,৯০৯ বর্গ মাইল)। মঙ্গোলিয়াতে তিনটি প্রধান পর্বতশ্রেণী আছে। আলতাই পর্বতমালা এদের মধ্যে সর্বোচ্চ; এটি পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম মঙ্গোলিয়াতে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বরাবর বিস্তৃত। খানগাই পর্বতশ্রেণীটিও একই দিক বরাবর মধ্য ও উত্তর-মধ্য মঙ্গোলিয়াতে অবস্থিত; এগুলি অপেক্ষাকৃত পুরাতন, ক্ষয়ে যাওয়া পর্বত এবং এখানে অরণ্য ও চারণভূমি দেখতে পাওয়া যায়। রুশ সীমান্তের কাছে, উলানবাতারের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত খেনতিল পর্বতমালা আরও কম উচ্চতাবিশিষ্ট। পূর্ব মঙ্গোলিয়ার অধিকাংশ এলাকা সমতল। পূর্বে এটি গোবি মরুভূমির সাথে মিশে গেছে। সেলেঙ্গে নদী মঙ্গোলিয়ার প্রধান নদী।
ভাষা
সম্পাদনামঙ্গোলীয় ভাষার খালখা উপভাষাটি মঙ্গোলিয়ার প্রধান ও জাতীয় ভাষা। আধুনিক লেখ্য মঙ্গোলীয় ভাষা এই কথ্য উপভাষাটিকে ভিত্তি করেই নির্মিত। মঙ্গোলিয়ার প্রায় ৯০% লোক এই ভাষায় কথা বলেন। মঙ্গোলিয়ার অন্যান্য ভাষাভাষীরা নিজ ভাষা ছাড়াও এই ভাষাটিতেও কথা বলতে পারেন এবং লেখার কাজে এটিকেই ব্যবহার করেন।মঙ্গোলীয় ভাষা তিনটি ভিন্ন লিপিতে লেখা হয়। ১৩শ শতকে উদ্ভাবিত ঐতিহ্যবাহী মঙ্গোলীয় লিপি, ১৯৪০-এর দশকে সাম্যবাদের সাথে আগত সিরিলীয় লিপি, এবং অধুনা ১৯৯০ সালে ইংরেজি শব্দ ও পদগুচ্ছ লেখার কাজে ব্যবহৃত লাতিন লিপি। মঙ্গোলীয় ভাষা ছাড়াও আরও ১০টি ভাষা মঙ্গোলিয়ায় প্রচলিত। ম্যান্ডারিন চীনা ভাষায় ৩৫ হাজার, ও রুশ ভাষায় ৪ হাজার লোক কথা বলেন। বাকী ভাষাগুলি মঙ্গোলীয় ভাষার সমগোত্রীয়, আলতায়ীয় ভাষাপরিবারের অন্তর্গত ভাষা। এদের মধ্যে আছে মঙ্গোলীয় শাখার বুরিয়াত, দারখাত ও কালমিক-ওইরাত ভাষা; তুঙ্গুস শাখার এভেনকি ভাষা, এবং তুর্কীয় শাখার কাজাখ, উইঘুর এবং তুভিন ভাষা। মঙ্গোলিয়ার প্রায় সর্বত্র শিক্ষার মাধ্যম মঙ্গোলীয় ভাষা। তবে কাজাখ-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে প্রাথমিক ও কিছু মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যম কাজাখ ভাষা। মঙ্গোলিয়াতে সবচেয়ে অধীত বিদেশি ভাষা রুশ ভাষা। তবে ইদানীং পশ্চিমমুখিতার ফলস্বরূপ ইংরেজি শিক্ষার হার বাড়ছে। ইংরেজির প্রচলনের সাথে সাথে লাতিন লিপি ব্যবহারও বাড়ছে।
যোগাযোগব্যবস্থা
সম্পাদনাখাদ্য
সম্পাদনাগ্রাম্যের সবথেকে প্রচলিত খাবারের পদ হচ্ছে রান্না করা ভেড়ার মাংস, যা প্রায়শই কোন প্রকার উপাদান ছাড়াই রান্না করা হয়। শহরের খাদ্যে, প্রতিটি স্থানীয় খাদ্য তালিকায় "বুউজ" নামের খাবারের চিহ্ন লেগে আছে। এগুলো হচ্ছে মাংসে ভর্তি সেদ্ধ পুডিং বা বড়া বিশেষ। অন্য ধরণের পুডিং যা পানিতে সেদ্ধ (বান্শ, মান্টি), বা গাঢ় করে ভেড়ার চর্বি (খূসূর) দিয়ে ভাঁজা। অন্যান্য খাবারের পদের মধ্যে আছে ভাতের সাথে মাংস বা টাটকা নুডলসের সংমিশ্রণে তৈরি বিভিন্ন জাতের ভাপে সিদ্ধ মাংস (জুইভান, বুদাতাই হূরগা) বা নুডলস স্যুপ (গুরিলতাই শোল)।
সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক রন্ধন প্রক্রিয়াগুলো শুধুমাত্র বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রয়োগ করা হয়। এই ক্ষেত্রে, মাংসগুলোকে (প্রায় সময় শাকসবজির সাথে) পাথরের সাহায্যে রান্না করা হয়ে থাকে, যা আগুনে পূর্ব থেকে গরম করে রাখা হয়। এই পদ্ধতিটা হয়তো দুধের আবদ্ধ পাত্রে (খরখগ) ভেড়ার মাংসের বড় তালে, অথবা হার-ছাড়ানো ছাগলের বা পার্বত্য মূষিকের (বোডগ) উদরিস্থ কোঠরে প্রয়োগ করে করা হয়।
দুধকে সিদ্ধ করতে করতে ক্রীম (ওরম, তঞ্চিত ননী) আলাদা করা হয়। অবশিষ্ট সর পড়া দুধকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পনীর ("ব্যাস্লাগ"), শুষ্ক দই (আরুল), ইয়ুগার্ট, কেফির, এবং এক ধরণের হালকা দুগ্ধ লিকারে (শিমীন আরখি) পরিণত করা হয়। সবথেকে জনপ্রিয় জাতীয় পানীয় হচ্ছে আইরাগ, যা ঘোড়ার দুধকে গাঁজনের মাধ্যমে বানানো হয়।[২] যব হচ্ছে একটি জনপ্রিয় শস্যদানা, যা ভাঁজা বা শুকানো হয়ে থাকে। এতে যে ময়দা (আরভাইন গুরিল) পাওয়া যায়, তা পরিজ (জাউ) হিসেবে দুগ্ধ চর্বি এবং চিনিতে মিশিয়ে খাওয়া হয় বা দুধ চায়ের সাথে পান করা হয়। প্রতিদিনকার পানীয় হচ্ছে নোনতা চা (সূতেই চায়ে), যেটার সাথে চাল, মাংস বা বান্শ যোগ করে শক্ত স্যুপেও পরিণত করা যেতে পারে। সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে রাশিয়ার প্রভাবের ফলশ্রুতিতে, ভদকাও কিছুটা জনপ্রিয়তা লাভ করে[২] বিপুল সংখ্যক স্থানীয় ব্র্যান্ডের (সাধারণত দানাদার স্পিরিট) সাথে। মঙ্গোলিয়ায় ঘোড়ার মাংস খাওয়া হয় এবং প্রতিটি মুদি দোকানে পাওয়া যায়। মঙ্গোলিয়ায় মিষ্ঠান খাবারের মধ্যে আছে বোর্টসগ, এক প্রকার বিস্কুট বা কুকি যা বিশেষ উপলক্ষ হিসেবে খাওয়া হয়।
ভদকা হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় শুরা জাতীয় পানীয়; চিঙ্গিস ভদকা (চেঙ্গিজ খানের নাম থেকে আগত) হল সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, যা পাতিত মদ্য বাজারের ৩০% জুড়ে আছে।