বিলাইছড়ি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

জানুন সম্পাদনা

রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে ২১°৫৪´ থেকে ২২°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১৭´ থেকে ৯২°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত বিলাইছড়ি উপজেলার আয়তন ৭৪৫.৯২ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৭৬ সালে বিলাইছড়ি থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এ উপজেলায় বর্তমানে ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।

নামকরণ সম্পাদনা

বিলাইছড়ি চাকমা শব্দ থেকে উৎপত্তি। চাকমা উপজাতীয় অর্থে বিলাই এর অর্থ বিড়াল আর ছড়ি এর অর্থ পাহাড় হতে প্রাবাহিত ঝর্ণা বা ছড়া। বিলাইছড়ি নামের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও এলাকার বয়ো বৃদ্ধদের মতে বহু বছর পূর্বে এ এলাকা অরণ্য ঘেরা ছিল। একদিন কিছু সংখ্যক পাহাড়ী লোক কাঠ কাটার উদ্দেশ্যে এ এলাকায় আসে এবং সে সময়ে এক বিরাট বন বিড়ালের মুখোমুখি হয়। বিড়ালের ভাবমূর্তি হিংস্র মনে করে তারা তাকে তাড়াবার চেষ্টা করলে বিড়ালটিও তাদেরকে আক্রমণ করে এবং উভয়ের মধ্যে ধস্তাধিস্ত শুরু হয়। শেষ পর্যায়ে বিড়ালটিকে মেরে ফেলা হয়। পরে এই বিড়ালটিকে পাড়ায় নিয়ে আসা হয়। পাড়া প্রতিবেশীরা এতবড় বন বিড়াল দেখে আশ্চর্য হয় এবং বিরাট সামাজিক অনুষ্ঠান করা হয়। এরপর থেকেই এলাকাটি বিলাইছড়ি নামে আখ্যায়িত হয়।

জনসংখ্যা সম্পাদনা

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিলাইছড়ি উপজেলার জনসংখ্যা ২৮,৫২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫,৬২৭ জন এবং মহিলা ১২,৮৯৮ জন। মোট জনসংখ্যার ১৫.১৪% মুসলিম, ১.৮৮% হিন্দু, ৬৯.২৬% বৌদ্ধ এবং ১৩.৭২% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, বম, মুরং, পাংখোয়া, চাক, রিয়াংখুমি, ম্রো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

কীভাবে যাবেন সম্পাদনা

ঢাকা থেকে শ্যামলী, মডার্ন বা এস আলম বাসে করে কাপ্তাই এসে কাপ্তাই জেটিঘাটস্থ লঞ্চঘাট থেকে ইঞ্জিনবোটে করে বিলাইছড়ি আসবেন। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে বিলাইছড়ি আসা যায়। কেউ চট্টগ্রাম থেকে বিলাইছড়ি আসলে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রথমত কাপ্তাই জেটিঘাটে আসবেন। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকেও ইঞ্জিনবোটে করে বিলাইছড়ি যাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭ টায় রাঙ্গামাটির তবলছড়ি ঘাট থেকে ইঞ্জিনবোট যাত্রী নিয়ে সকাল ১০টার মধ্যে বিলাইছড়ি পৌঁছে। ওই বোটটি আবার বিলাইছড়ি থেকে দুপুর ২টার মধ্যে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। তাছাড়া বিলাইছড়ি থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনবোট ছেড়ে ওইটি রাঙ্গামাটি তবলছড়ি ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে দুপুর ২টায় বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। বিলাইছড়ি থেকে অন্য একটি ইঞ্জিনবোট সকাল সাড়ে ৮টায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ওইটি রাঙ্গামাটি রিজার্ভ বাজার মসজিদ ঘাট থেকে ৩টায় বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে ছাড়ে।

দর্শনীয় স্থান সম্পাদনা

 
বিলাইছড়ি উপজেলার মানচিত্র
  • ধুপপানি ঝর্ণা বড়থলি ইউনিয়নের ওড়াছড়ি নামক স্থানে অবস্থিত এ ঝর্ণাটিকে স্থানীয়রা দুপপানি ঝর্ণা নামেও ডেকে থাকে। স্থানীয় শব্দে ধুপ অর্থ সাদা আর পানি যুক্ত করে এটিকে সাদা পানির ঝর্ণাও বলা হয়।
  • মুপ্পোছড়া ঝর্ণা বিলাইছড়ির অন্যতম বৃহত্তম এ ঝর্ণাটির অবস্থান বাঙ্গালকাটায় বিলাইছড়ি থেকে শুধুমাত্র নৌপথেই যাওয়া সম্ভব। আর বাঙ্গালকাটা থেকে মুপ্পোছড়া ঝর্ণা শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব।
  • ন-কাবা ছড়া ঝর্ণা বিলাইছড়ি সদরস্থ লঞ্চঘাট নতুবা নলছড়ি নামক স্থান থেকে ইঞ্জিন বোটে করে বিলাইছড়ি ডেবার মাথায় এসে ওখান থেকে ন-কাবা ছড়া ঝর্ণায় যেতে হয়।
  • রাইংখ্যং পুকুর এটি বিলাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত হলেও বিলাইছড়ি-ফারুয়া হয়ে এখানে যোগাযোগ করা অত্যন্ত কষ্টকর। কেউ চাইলেও পায়ে হাঁটা ছাড়া বিকল্প নেই। বিলাইছড়ি থেকে বড়থলি যেতে প্রায় ৭ দিন সময় লাগে। তাই এখানকার লোকজন বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা দিয়ে এখানে আসা যাওয়া করে।
  • কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম এ হ্রদ রাঙ্গামাটি জেলার রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচর উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত।

থাকার ব্যবস্থা সম্পাদনা

বিলাইছড়িতে রাত্রিযাপনের জন্য জেলা পরিষদ রেস্ট হাউস ছাড়াও বিলাইছড়ি বাজারস্থ নিরিবিলি বোডিং উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, খুব সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত নীলাদ্রি রিসোর্ট ও শিশু পার্কের উদ্ভোধন করা হয়েছে।

খাওয়া দাওয়া সম্পাদনা

বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে স্বল্পপরিসরে কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। খাবার হোটেল গুলো মাঝারি মানের। খুব বেশি কিছু আশা করা ভুল হবে।