তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুর শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে মাহিগঞ্জের তাজহাট গ্রামে অবস্থিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রত্ন ব্যবসায়ী মান্নালাল ব্যবসায়িক কারণে মাহিগঞ্জে এসে বসবাস এবং পরবর্তীকালে তাজহাট জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা করেন। জমিদার মান্নালাল মারা যাবার পর তাঁর দত্তক পুত্র গোপাল লাল রায় বাহাদুর জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রায় ২০০০ রাজমিস্ত্রির নিরলস পরিশ্রমে বর্তমান তাজহাট জমিদার বাড়ি পূর্ণতা লাভ করে। ১৯১৭ সালে সম্পূর্ণ হওয়া এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করতে তৎকালীন সময়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয়।

সংগ্রহ সম্পাদনা

তাজহাট জমিদার বাড়ির চত্বরে রয়েছে গাছের সারি, বিশাল মাঠ এবং প্রাসাদের দুই পাশে আছে দুইটি পুকুর। আর আছে বিভিন্ন রকম ফুল ও মেহগনি, কামিনী, আম এবং কাঁঠাল বাগান। জমিদার বাড়িটি দেখতে ঢাকার আহসান মঞ্জিলের মতো। লাল ইট, শ্বেত ও চুনা পাথর দ্বারা নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট তাজহাট জমিদার বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় জমিদার গোপালের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস রাখা আছে। এছাড়া রয়েছে থাকার কক্ষ, গোসলখানা ও অতিথিদের জন্য কক্ষ। প্রায় ২১০ ফুট প্রস্থের প্রাচীন মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত তাজহাট জমিদার বাড়িতে ইতালীয় মার্বেল পাথরে তৈরী ৩১ টি সিঁড়ি আছে। রাজবাড়ীর পেছনদিকে রয়েছে গুপ্ত সিঁড়ি পথ, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাজহাট জমিদার বাড়িকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করে এবং ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে তাজহাট জমিদার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তরিত করে। জাদুঘরের প্রদর্শনী কক্ষে দশম ও একাদশ শতাব্দীর বেশকিছু টেরাকোটা শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এছাড়াও জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে মুঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআন, মহাভারত ও রামায়ণসহ বেশকিছু আরবি এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। রয়েছে ৬৯ হিজরিতে তৈরি মসজিদের 'সনফলক', কালো পাথরের বিষ্ণুর প্রতিকৃতি ছাড়াও জাদুঘরে প্রায় ৩০০ টি মূল্যবান নিদর্শন রয়েছে।

পরিদর্শনের সময়সূচী সম্পাদনা

গ্রীষ্মকালীন সময়ে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস ব্যাপী রংপুর জাদুঘর তথা তাজহাট জমিদার বাড়ি সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকালীন সময় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত পরিদর্শনের জন্য খোলা থাকে। দুপুর ১ টা থেকে ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত রংপুর জাদুঘরে মধ্যাহ্ন বিরতির বন্ধ থাকে। সপ্তাহের প্রতি রবিবার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবসের জন্য জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। এছাড়াও সমস্ত সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘরটিতে পরিদর্শন বন্ধ থাকে।

প্রবেশের টিকেট মূল্য সম্পাদনা

প্রাপ্তবয়স্ক সকল বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য রংপুর জাদুঘরে প্রবেশ করতে ২০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের তাজহাট জমিদার বাড়ি প্রবেশ করতে ৫ টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়, তবে ৫ বছরের কম বাচ্চাদের প্রবেশ করতে কোন টিকেট লাগে না। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীর প্রবেশের টিকেট মূল্য ১০০ টাকা এবং অন্য যেকোন বিদেশীদের প্রবেশ টিকেটের মূল্য ২০০ টাকা।

যাতায়াত সম্পাদনা

রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল হতে নিয়মিত ভাবে বিভিন্ন পরিবহণের বাস রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এসব বাসে চড়ে রংপুর যেতে জনপ্রতি ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা ভাড়া লাগে। রংপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে রিকশাযোগে তাজহাট জমিদার বাড়ি যেতে মাত্র ২০ টাকা ভাড়া লাগে। তবে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামগামী বাসে চড়লে সরাসরি তাজহাট জমিদার বাড়ির সামনে নামা যায়।

রাত্রিযাপন সম্পাদনা

রংপুর শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশকিছু হোটেল/মোটেল রয়েছে। রংপুরে উল্লেখযোগ্য হোটেলের মধ্যে রয়েছে।

  • হোটেল নর্থভিউ, ০৫২১-৫৫৪০৫, ০৫২১-৫৫৪০৬
  • পর্যটন মোটেল, ০৫২১-৬২১১১
  • দি পার্ক হোটেল, ০৫২১-৬৫৯২০
  • হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, ০৫২১-৬৫৯২০
  • হোটেল তিলোত্তমা, ০৫২১-৬৩৪৮২, ০১৭১৮৯৩৮৪২৪
  • হোটেল কাশপিয়া, ০৫২১-৬১১১১, ০১৯৭৭-২২৭৭৪২

খাওয়াদাওয়া সম্পাদনা

বিভাগীয় শহর রংপুরে বিভিন্ন মানের হোটেল/রেস্তোরাঁ আছে খাওয়ার জন্য। রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম খাওয়া যাবে আমের মৌসুমে।