বাংলাদেশের একটি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
টেকনাফ উপজেলা > টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান, যা কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত। এটি দেশের রাজধানী ঢাকা হতে ৩৫০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত যা ১৯৮৩ সালে হাতীর অভয়ারণ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বিশেষত্ব

সম্পাদনা

কক্সবাজার জেলার সমুদ্রের কোলঘেষে এই অভয়ারণ্যটি অবস্থিত। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় টেকনাফ উপদ্বীপের বাহারছড়া, হ্নীলা, সুবরাং, টেকনাফ এবং হোয়াইক্যং - এই পাঁচটি ইউনিয়ন জুড়ে এর বিস্তৃতি। টেকনাফ উপজেলার ১১,৬১৫ হেক্টর এলাকা নিয়ে এই অভয়ারণ্যটি বিস্তৃত। কক্সবাজার শহর থেকে এর দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। এই বনের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নাফ নদী; এর ঠিক পরপরই মায়ানমার সীমান্ত এবং পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগর। টেকনাফ অভয়ারণ্য একটি সরল পাহাড় শ্রেনীর অংশ, যার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৭০০ মিটার। এই অভয়ারণ্যের দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে ২৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার।

টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে বিচরণকারী এশীয় হাতি

বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েকটি স্থানে বন্য হাতির দেখা মেলে তার মধ্যে এটি অন্যতম। বন্য ভারতীয় হাতির অভয়ারণ্য হিসাবে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যথেষ্ট বিস্তীর্ণ এই গেম রিজার্ভে বন ছাড়াও এখানে আছে নাইটং পাহাড়, কুদুম গুহা, কুঠি পাহাড় প্রভৃতি আকর্ষণীয় স্থান। বনের উঁচু পাহাড় আর বঙ্গোপসাগরের মাঝে রয়েছে বিশাল গর্জন বন। আছে ১০০০ ফুট উঁচু তৈঙ্গা চূড়া। প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে আছে ফুল, ফল, বাহারি গাছ। সড়কপথে সহজ যোগাযোগের কারণে পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষনীয় ভ্রমণ স্থান। কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের তিনটি ফরেষ্ট রেঞ্জঃ হোয়াইক্যং, শীলখালী এবং টেকনাফ-এর ১০ টি ব্লক এ অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত। বন্য এশীয় হাতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

টেকনাফ অভয়ারণ্যের প্রায় পুরোটাই একটি সরল পাহাড় শ্রেণীর অংশ। টেকনাফ উপদ্বীপের প্রায় মাঝ বরাবর পাহাড় গুলোর চূড়া উঠে গেছে। আছে বেশ কিছু সংকীর্ণ উপত্যকা ও গিরিখাত। এসব উপত্যকা আর গিরিখাত দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া বা ঝর্ণা, যা শেষে মিশেছে পূর্বদিকে নাফ নদীতে এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে। এসব ছড়ার বেশির ভাগই মৌসুমী; বর্ষাকালে পানি থাকে এবং শীতে শুকিয়ে যায়।

অভয়ারণ্যের বড় অংশ পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। পূর্ব পাশে নাফ নদীর তীর ঘেষে আছে জোয়ার ভাটায় সৃষ্ট কাদা মাটির ম্যানগ্রোভ বন। পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের তীরে আছে বালুকাবেলা গঠিত সৈকত।

অভয়ারণ্য জীব বৈচিত্রে ভরপুর এবং এই বনের জীববৈচিত্রকে বাংলাদেশের মধ্যে সবার্ধিক বলে ধারণা করা হয়। এই বনে ২৯০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৩ প্রজাতির উভচর প্রানী রয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের গাছের মধ্যে আছে চাপালিশ, তেলি গর্জন, জলপাই, হরগজা, সিভিট, বুনো অশোক, জারুল প্রভৃতি। পাখির মধ্যে আছে ছোট কানাকুবো, নীলকান বসন্তবাউরি, বড়হলদেঝুঁটি কাঠকুড়ালী, এশীয় দাগি কুঁটি পেঁচা, কালাগলা টুনটুনি, লালমৌটুসী ইত্যাদি।

টেকনাফ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে সাময়িকভাবে বিচরণকারী ভারতীয় হাতির দেখা পাওয়া যায়, যেটি বাংলাদেশের বুনো হাতির একটি বড় অংশ। এখানে বাস করা বাংলাদেশে বুনো মোট হাতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া বিলুপ্তপ্রায় বুনোকুকুর, উল্লুক, সম্বর হরিণ, উড়ক্কু কাঠবিড়ালী, সজারু প্রভৃতি প্রাণীরও দেখা মেলে।

কীভাবে যাবেন

সম্পাদনা

রাজধানী ঢাকা থেকে টেকনাফের দূরত্ব ৩৪৭ কিলোমিটার আর কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার দক্ষিণে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সড়ক ও বিমান সকল পথেই কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজার থেকে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে টেকনাফ যাওয়া যায়। পালকি নামক বাস কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে টেকনাফে বিরতিহীনভাবে চলাচল করে। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বা হাইস গাড়িতেও আসা যায়; এই গড়িগুলো মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলাচল করে। এতে সময় কম লাগে এবং ভ্রমণ হয় আরামদায়ক। এছাড়া নীল দরিয়া নামে পর্যটকবাহী গাড়ি মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টেকনাফে সরাসরি এসি ও ননএসি বাস পাওয়া যায়।

ঘুরে দেখুন

সম্পাদনা

টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো কিছু স্থান হলো-

  • তৈঙ্গা চূড়া টেকনাফ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের সর্বোচ্চ চূড়া।
  • কালো রাজার সুড়ঙ্গ টেকনাফের হোয়াইক্যং-এ অবস্থিত। হোয়াইক্যং বাজার থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরত্ব। মূলত ঝিরি বা পাহাড়ী নালা পার হয়ে কালো রাজার সুড়ঙ্গে পৌঁছতে হয়।
  • কুদুমগুহা হোয়াংক্যংয়ের পাহাড়ে কুদুম গুহা অবস্থিত। টেকনাফ গেম রিজার্ভের কয়েকটি প্রধান আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কুদুম গুহা। খুব সম্ভব এটি বাংলাদেশের একমাত্র বালু-মাটির গুহা। কুদুম গুহায় প্রচুর বাদুড় বাস করে, তাই এটি "বাদুর গুহা" নামেও পরিচিত। এখানে দুই প্রজাতির বাদুড় থাকে। বাদুড় ছাড়াও এই গুহায় বাস করে ৪ প্রজাতির শামুক, গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিরিতে থাকে ৪ প্রজাতির মাছ আর আছে তিন প্রজাতির মাকড়শা। গুহার বাইরে থেকে পাখিদের এসে গুহার শামুক খেতে দেখা যায়। সেখানে যেতে হলে নিরাপত্তা জনিত কারনে সহযোগিতা নিতে পারেন পুলিশ অথবা হোয়াইক্যং বন বিভাগের বন প্রহরীদের।
  • নেটং পাহাড় টেকনাফ শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নেটং পাহাড়ে গিয়ে বন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এ পাহাড়ে যাওয়ার পথে পড়বে পাহাড়ের গা বেয়ে নামা ঝিরি-ঝরনা। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে দেখা মিলে পাহাড় সারি আর নাফ নদীর অপরূপ দৃশ্য। এই পাহাড়ের খুব নিকটেই রয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তৈরি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বাংকার ও ব্রিটিশ স্থাপনা টি অ্যান্ড টি ভবন। এর সরু পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে প্রাচীন বৌদ্ধমন্দিরও দেখে আসতে পারেন। নেটং পাহাড়ের প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মোছনী নামক স্থানে প্রান্তিক লেক ও ন্যাচারাল পার্ক অবস্থিত। যদিও বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখানে অবস্থান করার ফলে জীব বৈচিত্র্য এবং নিরাপত্তা অনেক ক্ষেত্রে হ্রাস পেয়েছে।
  • নোয়াখালী পাড়া এখানে বর্ষাকালে ছোট-বড় বেশ কিছু পাহাড়ী ঝিরি ঝর্ণার দেখা পাওয়া যায়। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে এসব ঝর্ণায় পানি পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

কোথায় থাকবেন

সম্পাদনা
  • 1 সেন্ট্রাল রিসোর্ট, মেরিন ড্রাইভ রোড, টেকনাফ, +৮৮০১৮৩৮৩৭৯৩৭২, ইমেইল: রেঁস্তোরা, সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, সম্মেলন কক্ষ, গাড়ি পার্কিংসহ অন্যান্য সুবিধা বিদ্যমান। ৳ ৪,০২৫.০০-৳ ৯,৭৭৫.০০
  • 2 হোটেল নেটং, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, কিরণতলী, টেকনাফ, কক্সবাজার, +৮৮০১৯৯১১৩৯২১৯, ফ্যাক্স: +৮৮০৩৪২৬-৭৫১০৪ সকালের নাস্তা, টেলিভিশন, টেলিফোন, গরম এবং ঠান্ডা পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা। ৳ ১,৪০০.০০-৳ ৩,৫০০.০০
  • 3 আলো রিসোর্ট, টেকনাফ, +৮৮০১৭০৯৩৯৯১৯১, ইমেইল:
  • 4 সী কোরাল রিসোর্ট, মূল সড়ক, টেকনাফ, +৮৮ ০১৩১২ ৬০৯৮২৯, +৮৮ ০১৮১১ ৫৬৪৭৫০

কী খাবেন

সম্পাদনা

টেকনাফে খাবারের জন্য বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে সবধরণের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।

সতর্কতা

সম্পাদনা

যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে পারেন -

জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
  • ওসি, টেকনাফঃ মোবাইল: ০১৭১৩-৩৭৪ ৩৫৪।