জাহাজপুরা বাংলাদেশের কক্সবাজার শহর থেকে সমুদ্র উপকূলীয় মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে দক্ষিণ দিকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে একটি নির্জন গ্রাম। জাহাজপুরা গ্রামের পূর্ব পাশে উঁচু পাহাড়ের নিচে আকাশছোঁয়া পাঁচ হাজারের বেশি শতবর্ষী গর্জনগাছ দাঁড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই গর্জনগাছের ফল থেকে চারা সৃজন করে সারা দেশে বনায়ণ করে বনবিভাগ। গর্জন বনের ভেতর হরিণ, হাতিসহ নানা বণ্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছে বনবিভাগের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প। গাছে গাছে দেখা মেলে শত শত বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির। বর্ষায় হাঁটাহাঁটির সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বনে প্রবেশের পূর্বে বনকর্মীদের পরামর্শ নেয়া উচিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পাহাড়ের ওপর একটি যুদ্ধবিমান (জাহাজ) ছিটকে পড়েছিল। দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনে বিধ্বস্ত জাহাজটি পুড়ে যায়। সেই থেকে গ্রামের নামকরণ হয় জাহাজপুরা। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের একটি ছোট গ্রাম জাহাজপুরা। কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষায় পুরা শব্দের অর্থ পুড়ে যাওয়া। অনেকে বলে, জাহাজ পড়ে গিয়েছিল বলে জাহাজপড়া থেকে জাহাজপরা বা জাহাজপুরা হয়েছে।

একদিকে পাহাড়, অপরদিকে বঙ্গোপসাগর, মাঝখানে প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি গর্জন বন। নৈসর্গিক এ সৌন্দর্য্য যে কারো মন কেড়ে নেবে। পাহাড়, সাগর আর প্রকৃতির অপরূপ এ মেলবন্ধন টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা গ্রাম। পাশেই ৮৮০ ফুট উঁচু পাহাড় তুনঙ্গানঙ্গা। কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এ পাহাড়ের নিচে সুন্দর নিরিবিলি গ্রাম জাহাজপুরা। গ্রামের পশ্চিম পাশে বিশাল বঙ্গোপসাগর। সাগরের বিশাল চরে হাজারো পাখির মেলা। শত শত জেলে নৌকা নিয়ে মাছ ধরে। মাছ বিক্রি থেকে জাহাজপুরা গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়। প্রায় ২০,০০০ মানুষের বসবাস এই গ্রামে। গ্রামের চতুর্দিকে দেখা মেলে শুধু মাছ আর মাছ। মেয়েরা খোলা মাঠে মাচা বানিয়ে কিংবা ঘাসের ওপর রেখে কাঁচা মাছ রদে শুকিয়ে শুঁটকি করছে। এককথায় বলা যায়, পুরো গ্রামটি মাছের রাজ্য।

পাহাড়ের নিচে শত শত পানের বরজ, হাজার হাজার গাছে ভর্তি অসংখ্য সুপারিবাগান। এই পান-সুপারি বিক্রি করেই সারা বছর চলে যায় গ্রামের শত শত মানুষের সংসার। গর্জন বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলেই প্রথম পাহাড়, তারপর সমুদ্রসৈকত। বালুচরে চলাচল করে চান্দেরগাড়ি নামে পরিচিত খোলা জিপ গাড়ি। এ গাড়িতে করেই সাগর থেকে ধরে আনা মাছ শহরে পাঠানো হয়। জোয়ারের সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে আর ভাটায় চলাচল করে।

সমুদ্র উপকূল থেকে দেখা যায়, শত শত জেলে সারিবদ্ধভাবে জাল টেনে সাগর থেকে মাছ ধরে আনছেন। অসংখ্য গাঙচিল নৌকার ওপর উড়ে উড়ে সেই মাছ খাচ্ছে। বালুচরে রেখে মাছের দাম হাঁকানো হয়। ফড়িয়া বা ব্যবসায়িরা মাছকে ঘিরে গোল করে দাঁড়িয়ে ওজন না করেই মাছের দরদাম ঠিক করেন। জেলেরা অনুমাননির্ভর দাম বলেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করা হয়।

কীভাবে যাবেন

সম্পাদনা

প্রথমে কক্সবাজার যেতে হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার স্থলপথ, রেলপথ কিংবা আকাশপথে যাওয়া যায়। গ্রীন লাইন, নেপচুন, সোহাগ পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৬৮০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকা; সৌদিয়া, এস আলম, ইউনিক, চ্যালেঞ্জার প্রভৃতি নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০ টাকা। কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানি, মনখালি হয়ে জাহাপুর গর্জনবনে পৌঁছানো যায়। সময় লাগে প্রায় ঘন্টাখানেক। কক্সবাজার শহর থেকে মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি অথবা চান্দেরগাড়ি ভাড়া নিয়ে দিনের বেলায় আসা-যাওয়া করা যায়। ভাড়া নেবে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।

থাকা ও খাওয়া

সম্পাদনা

জাহাহজপুরা যে জায়গাটায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিমানটি বিদ্ধস্ত হয় তার পাশেই গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের ছুটি রিসোর্ট। যেখানে থাকা এবং খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। রিসোর্টটি মেরিন ড্রাইভ এর উপর অবস্থিত।