বিদেশ ভ্রমণের সময় কোনো না কোনো পর্যটককে একসময় জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। গুরুতর আঘাত, অসুস্থতা, হামলা, বা এমনকি অর্থ শেষ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়া কখনোই আনন্দদায়ক নয়। তবে সামান্য প্রস্তুতি নিলে এমন পরিস্থিতি ভালোভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

প্রস্তুতি

সম্পাদনা
ইউরোপীয় স্বাস্থ্য বীমা কার্ড
  • স্বাস্থ্য বীমা – যদি আপনার মেডিকেল বীমা থাকে, তাহলে বীমার কার্ডটি সবসময় সাথে রাখুন। আন্তর্জাতিকভাবে আপনার কী ধরনের কাভারেজ আছে তা জেনে নিন, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভ্রমণ বীমা প্রয়োজন হতে পারে। কিছু দেশে চিকিৎসা ব্যয় অনেক কম, তবে অনেক বিদেশি হাসপাতাল সেবা দেওয়ার আগে বা চালিয়ে যেতে অগ্রিম অর্থ দাবি করে। বীমার তথ্য প্রদান করলে হাসপাতাল বুঝতে পারে যে আপনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম, এমনকি হাতে টাকা না থাকলেও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল (EEA), সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় স্বাস্থ্য বীমা কার্ড বা GHIC থাকলে জরুরি পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মতো চিকিৎসা পাওয়া যায়, যা অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে হতে পারে।
  • মেডিভ্যাক বীমা – মেডিভ্যাকের অর্থ "মেডিকেল ইভাকুয়েশন" বা চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে আনা-নেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় বিশেষ বিমানভাড়া এবং চিকিৎসক দল পাঠানো হয়। এটি বিশেষ করে মহাসাগর পাড়ি দিতে হলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে, যা ৫ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তাই অনেকে ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত কভারেজ রাখার পরামর্শ দেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদেশে থাকলে এই ধরনের বীমা অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।
  • যোগাযোগ ব্যবস্থা – যেখানেই থাকুন, যোগাযোগের মাধ্যম সাথে রাখুন। মোবাইল ফোনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনে স্যাটেলাইট ফোন বিবেচনা করুন।
  • জরুরি ফোন নম্বর – যে দেশেই যান, সেই দেশের জরুরি নম্বরগুলো জানুন এবং সাথে রাখুন। প্রয়োজন হলে অ্যাম্বুলেন্স বা পুলিশের নম্বরগুলি সহজে পেতে মানিব্যাগে লিখে রাখুন। জিএসএম ফোনে ১১২ নম্বরে কল করলে যে কোনো দেশে জরুরি পরিষেবায় যোগাযোগ করা যায়। অনেক দেশে ৯১১ নম্বরও স্থানীয় জরুরি নম্বরে রিডাইরেক্ট হয়। এছাড়া, ভ্রমণ বীমা কোম্পানিগুলির ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন নম্বরও সাথে রাখুন।
  • ভ্রমণ পরিকল্পনার কপি ঘরে রেখে যান – আপনার ভ্রমণসূচি, পরিচয়পত্রের কপি এবং বীমার বিস্তারিত তথ্য পরিবারের কারো কাছে দিন। কতবার যোগাযোগ করবেন সে ধারণাও দিন। এর ফলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা সহজ হবে এবং প্রয়োজনে কনস্যুলার বা চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া সম্ভব হবে।
  • টাকা বহনের সঠিক কৌশল – সব টাকা এক জায়গায় রাখলে হারিয়ে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন। আপনার টাকা শরীর এবং ব্যাগের বিভিন্ন জায়গায় ভাগ করে রাখুন। জরুরি প্রয়োজনে নগদ টাকা, এটিএম বা ডেবিট কার্ড, এবং একটি ক্রেডিট কার্ড রাখুন।
  • স্থানীয় ভাষা জানুন – অন্তত "আমার সাহায্য দরকার, পুলিশ ডাকুন" এই কথাটি স্থানীয় ভাষায় বলতে শিখুন বা একটি কার্ডে লিখে রাখুন।
  • পরিস্থিতি এবং স্থান সম্পর্কে সচেতন থাকুন – ভিন্ন দেশগুলোতে চিকিৎসা এবং জরুরি সেবার মান ভিন্ন হতে পারে। যুদ্ধকবলিত এলাকা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে যাওয়ার আগে সতর্ক থাকুন এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিন।
  • সতর্কবার্তা ব্যবস্থা – অনেক দেশে ভূমিকম্প, সুনামি বা দুর্যোগের পূর্বাভাসের জন্য সতর্কবার্তা ব্যবস্থা থাকে। রেডিও, এসএমএস বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এসব বার্তা পাঠানো হতে পারে।
  • স্থানীয় আইন জানুন – প্রতিটি দেশে আইন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আইন ভাঙলে স্থানীয় আইনের আওতায় শাস্তি পেতে হবে, এমনকি সেটি আপনার দেশের তুলনায় বেশি কঠোর হলেও।

চিকিৎসা জরুরি পরিস্থিতি

সম্পাদনা
  • আকস্মিক আঘাত বা হামলার শিকার হলে যত দ্রুত সম্ভব সাহায্য চেয়ে নিন। প্রাথমিকভাবে যে কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে যান এবং প্রয়োজন হলে পরে অন্যত্র স্থানান্তর করুন।
  • সময় থাকলে আপনার দূতাবাস বা কনস্যুলেটের পরামর্শ নিয়ে ভালো মানের কোনো হাসপাতাল বেছে নিন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

সম্পাদনা
আরও দেখুন: তীব্র আবহাওয়া, ভূমিকম্প
  • ভ্রমণের আগে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে জেনে নিন।
  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসরণ করুন এবং ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তার খবর রাখুন।
  • দুর্যোগের সময় কীভাবে সুরক্ষিত থাকতে হবে, তা আগে থেকেই জেনে নিন।

হামলা বা ডাকাতি

সম্পাদনা
আরও দেখুন: নিরাপদ থাকুন
  • অপরাধের শিকার হলে পুলিশে রিপোর্ট করুন। প্রয়োজন হলে প্রথমে আপনার দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র বা সাহায্য সংস্থা ব্যবহার করতে পারেন।

ভ্রমণ সহায়তা

সম্পাদনা

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় ট্রাভেলার্স এইড সংস্থা ভ্রমণকারীদের সহায়তা করে।

দূতাবাস কী করতে পারে

সম্পাদনা
আরও দেখুন: কূটনৈতিক মিশন

দূতাবাস কিছু নির্দিষ্ট সহায়তা দিতে পারে, তবে তারা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে না।

  • পাসপোর্ট হারালে দ্রুত নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারে।
  • অপরাধের শিকার হলে আইনজীবী এবং অনুবাদকের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে।
  • টাকা হারালে দূতাবাস আপনাকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে, তবে এটি শেষ উপায়।
  • গ্রেপ্তার হলে কনস্যুলার সহায়তা প্রদান করতে পারে।
  • হাসপাতালে ভর্তি হলে বীমা কোম্পানি বা আত্মীয়দের জানিয়ে দিতে পারে।
  • যুদ্ধ বা অস্থিরতার সময় দূতাবাস জরুরি বিমানের ব্যবস্থা করতে পারে।

জরুরি অর্থ

সম্পাদনা
আরও দেখুন: অর্থ
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা – আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে এটিএম থেকে তুলে নিতে পারেন।
  • ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন – দ্রুত টাকা পাঠানোর জন্য এটি জনপ্রিয়।
  • ক্রেডিট কার্ড ক্যাশ অ্যাডভান্স – ব্যাংক বা এটিএম থেকে ক্যাশ তুলতে পারেন।
  • ফেডেক্স – কিছু মানুষ কুরিয়ারে টাকা পাঠালেও এটি কিছু দেশে বেআইনি।
  • OCS ট্রাস্ট অ্যাকাউন্ট – জরুরি পরিস্থিতিতে দূতাবাসের মাধ্যমে টাকা গ্রহণের একটি পদ্ধতি।
এই নমুনা জরুরী অবস্থা মোকাবেলা একটি ব্যবহারযোগ্য নিবন্ধ লেখা১ একজন রোমাঞ্চকর ব্যক্তি এই নিবন্ধটি ব্যবহার করতে পারেন, তবে অনুগ্রহ করে পাতাটি সম্পাদনা করে উন্নত করতে নির্দ্বিধায় সহায়তা করতে পারেন।

{{#মূল্যায়ন:প্রসঙ্গ|ব্যবহারযোগ্য}}