রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগরী ও রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় শহর। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর শহর, যা সিল্কসিটি, গ্রীণসিটি, ক্লিনসিটি ও শিক্ষা নগরী নামে পরিচিত।

জানুন সম্পাদনা

পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত রাজশাহী প্রাচীন বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। বিখ্যাত সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের সময়ের রাজধানী রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৯ কি:মি: দূরে পুঠিয়ায় অবস্থিত অবস্থিত ছিল। মধ্যযুগে বর্তমান রাজশাহী 'রামপুর বোয়ালিয়া' নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ রাজত্বের সময়েও রাজশাহী 'বোয়ালিয়া' নামে পরিচিত ছিল। তখন এটি ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম অঞ্চলের অর্ন্তগত রাজশাহী জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। রাজশাহীকে সে সময়ে রেশম চাষের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল।

আকাশ পথে সম্পাদনা

'শাহ মখদুম বিমানবন্দর' রাজশাহীতে অবস্থিত। এটি রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একমাত্র বিমান বন্দর। শুধু আভ্যন্তরীন রুটের উড়োজাহাজ উঠা-নামা করে। বর্তমানে শুধু রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করে। বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এই রুটে সেবা দিয়ে থাকে।

ঘুরে বেড়ানো সম্পাদনা

রাজশাহী শহরের স্থানীয় পরিবহন মূলত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার উপর নির্ভরশীল। শহরের সর্বত্রই এটি পাওয়া যায় এবং তুলনামূলক কম খরচে এতে যাতায়াত করা যায়। কিছু কিছু গন্তব্যে যাওয়ার জন্য টেম্পু জাতীয় যানবাহন পাওয়া যায়। শহরের আশেপাশে বা অন্য জেলায় যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যায়। অন্যদিকে ভাড়ায় ব্যক্তিগতভাবে যাতায়াতের জন্যও গাড়ি পাওয়া যায়, ভাড়া তুলনামূলকভাবে একটু বেশি পড়বে। ভাড়ার গাড়িগুলো স্ট্যান্ড রাজশাহী রেলওয়ে ষ্টেশনের দক্ষিণ দিকে সাগরপাড়ার রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে শিরোইলে অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোর তুলনায় রাজশাহীর বেশ ভালো মানে ফুটপাত বা পায়ে চলার পথ রয়েছে।

দেখুন সম্পাদনা

 
রাজশাহীর মানচিত্র
  • 1 শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানাব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা আমাদের দেশে ঘোড়দৌড় বা রেস খেলার প্রচলন করে। খেলা দেখা ও বাজি ধরায় প্রচন্ড উত্তেজানা সৃষ্টি হত। শহরাঞ্চলেই ঘোড়দৌড় মাঠ বা রেসকোর্স ছিল। রেসের নেশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসতেন। অনেকে এ খেলায় সর্বস্বান্ত হয়েছে। কার্যত আয়োজকরাই লাভবান হয়েছে। রাজশাহী শহরের রেসকোর্স ছিল পদ্মার পাড়ে। সেই রেসকোর্স ময়দান এখন রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা।    
  • 2 রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মতিহার (রাজশাহী শহরের থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৫ কি.মি. পূর্ব দিকে অবস্থিত)। রাজশাহী শহরের যেকোন যায়গা থেকে খুব সহজে অটো রিক্সাযোগে যাওয়া যায়। এছাড়া রেলযোগেও যাওয়া যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি রেল স্টেশন রয়েছে। যেখানে লোকাল ট্রেনগুলো থামে, তবে কোন আন্তঃনগর রেল থামে না।    

পদ্মার পাড় সম্পাদনা

  • 3 ওডভার মুনক্সগার্ড পার্ক (পদ্মা নদীর পাশে অবস্থিত হওয়ায় এটি পদ্মা গার্ডেন নামেও পরিচিত) (সাহেব বাজার বা জিরো পয়েন্ট থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত)। পদ্মা নদীর তীর ঘেষে পুর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত এই পার্ক থেকে পদ্মা নদীর অপরূপ শোভা দেখতে পাওয়া যায়। এর অবকাঠামো পর্যটকার্ষক। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে রেস্তোরা, বসার জায়গা, উন্মুক্ত ওয়াইফাই, নৌকা ভ্রমণ, মুক্তমঞ্চ ইত্যাদি সুবিধা আছে। এই পার্কে প্রবেশ করার জন্য কোন প্রবেশমূল্য দেওয়া লাগে না।    
  • 4 টি-বাঁধ (চিড়িয়াখানার ঠিক পেছনে এর অবস্থান।)। এখান থেকে পদ্মা নদীর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
  • 5 লালন শাহ পার্ক, পাঠানপাড়া (শহরের যেকোন জায়গা থেকে রিক্সাযোগে বা ওডভার মুনক্সগার্ড পার্ক থেকে পদ্মার পাড় দিয়ে পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায়)। রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়ায় পদ্মা নদীর কূল ঘেঁষে নির্মিত একটি উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র। এই পার্কে একসঙ্গে প্রায় ৫-৭ হাজার মানুষ অবস্থান করতে পারে। পার্কের অভ্যন্তরকে গ্রিন জোন, ল্যান্ডস্কেপ এবং পর্যটন ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের আইটেমে তৈরি করা হয়। এখানে একটি মুক্তমঞ্চ রয়েছে। যেখানে মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুবিধা রয়েছে। পদ্মা নদীর আবহে ৭৫০ জন বিনোদনপ্রেমী মানুষ এই উন্মুক্ত থিয়েটারে অনায়াসে এক সঙ্গে বসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। পদ্মা নদীর পাড়ে প্রাকৃতির নির্মল পরিবেশে মুক্ত হাওয়া উপভোগ করার জন্য চমৎকার একটি জায়গা।

    এখানে পদ্মার পাড় ঘেঁষে 'নোঙর' ও বিজিবি পরিচালিত 'সীমান্তে নোঙর' নামে খোলা পরিবেশে খাওয়ার জন্য দুইটি রেস্তোরাঁ রয়েছে।    

জাদুঘর সম্পাদনা

  • 6 বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরবাংলাদেশের প্রাচীনতম জাদুঘর হলো রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল এটি উদ্বোধন করেন। বাঙালি ইতিহাস, ঐতিহ্য আর স্থাপত্যশিল্পের বিশাল সম্ভার রয়েছে এই বরেন্দ্র যাদুঘরে।    

একটু দূরে সম্পাদনা

  • 7 পুঠিয়া রাজবাড়ী (পাঁচআনি জমিদারবাড়ী), পুঠিয়া (রাজশাহী শহর থেকে ৩২ কি.মি. উত্তর- পূর্বে নাটোর মহাসড়ক থেকে ১ কি:মি: দক্ষিণে অবস্থিত)।   ০৯:০০-১৭:০০ (শীতকালীন); ১০:০০-১৮:০০ (গ্রীষ্মকালীন)১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন। ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলংকরন, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে ও দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ীর ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল। পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশে পাশে ছয়টি রাজদিঘী আছে। প্রত্যেকটা দিঘীর আয়তন ছয় একর করে। মন্দিরও আছে ছয়টি।   ৳২৩    
  • 8 বড় আহ্নিক মন্দির, পুঠিয়া (পুঠিয়া রাজবাড়ি থেকে ৫ মিনিট পায়ে হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত)। পুঠিয়া রাজবাড়ির তৎসংলগ্ন মন্দিররগুলোর একটি এটি    
  • 9 কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দির (সালামের মঠ), পুঠিয়া (পুঠিয়া রাজবাড়ির সন্নিকটেই এর অবস্থান)। মন্দিরটি বর্গাকারে নির্মিত। মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৪.২৫ মিটার। মন্দিরের পূর্ব ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে দরজা আছে। তবে পূর্ব প্রবেশ পথটির বাইরের দুপাশে এবং উপরে পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা নান্দনিকভাবে অলংকৃত। অলংকুত পূর্ব পাশের খিলান দরজাটিই মূলত প্রধান প্রবেশ পথ। পূর্ব পাশের প্রবেশ প্রথের পাশে ও উপরে তেমন কোন অলংকরণ নেই। মন্দিরের উপরে একটি উঁচু শিখর ছাদ আছে এবং এর উপরে ফিনিয়েল বিদ্যমান।

    ছাদের কার্ণিশ এবং কর্ণারসমূহ পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা চমৎকারভাবে সজ্জিত। পশ্চিম পাশের দেয়ালের বহিরাংশ সমতল এবং কোন অলংকরণ নেই। মন্দিরের ভিতরে পশ্চিম ও উত্তর পাশের দেয়ালে ১টি করে নিস বা কুলঙ্গি আছে। সাধারনত বাতি রাখার জন্য এ ধরনের নিস বা কুলঙ্গি ব্যবহৃত হতো।    

  • 10 কিসমত মারিয়া মসজিদ, দূর্গাপুর, রাজশাহী (রাজশাহী সদর হতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক ধরে প্রায় ১৩ কি.মি. গেলে শিবপুর বাজার নামক স্থান হতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড ধরে এগিয়ে ৪-৫ কি.মি. গেলে এই মসজিদ পাওয়া যাবে।)। রাজশাহী শহরের অদূরে দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। আনুমানিক ১৫০০ সালে এটি নির্মিত হয়েছিল। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।    
  • 11 বাঘা মসজিদ, বাঘা, রাজশাহী (রাজশাহী জেলা সদর হতে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত)। ১০টি গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের দেয়ালে ঐতিহ্যবাহী আম, গোলাপ ফুলসহ নানা রকম নকশা রয়েছে। বাংলাদেশের ৫০ টাকার নোট আর ১০ টাকার স্মারক ডাকটিকিটে দেখা যায় প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন বাঘা শাহি মসজিদ। মসজিদের বাসেই বড় একটি দীঘি রয়েছে। এছাড়া মসজিদের পাশেই রয়েছে আউলিয়াদের মাজার, মূল দরগাহ শরিফ ও জাদুঘর।    

যেভাবে যাবেন সম্পাদনা

রাজধানী ঢাকা থেকে রাজশাহী শহরের দূরত্ব প্রায় ২৫০ কি.মি.। সড়ক, রেল ও আকাশ এই তিনটি পথেই রাজধানী ঢাকা থেকে যাতায়াত করা যায়।

 
শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

স্থলপথে সম্পাদনা

বাস

ঢাকার গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে রাজশাহী যাবার জন্য এসি-ননএসি বাস আছে। এর মধ্যে দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, তুহিন এলিট, গ্রামীণ ট্রাভেলস উল্লেখযোগ্য। নন-এসি বাসের ভাড়া ৭১০ টাকা এবং এসি বাসের ১৪০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া বাসের ধরন ও সময়ভেদে কম বেশি হয়।

রেল

ঢাকা থেকে রাজশাহী নিয়মিত ৩ টি রেল যাওয়া আসা করে। রেলগুলোতে শোভন চেয়ার, স্নিগ্ধা এবং এসি আসনের মূল্য যথাক্রমে ৩১৫, ৬০৪ এবং ৭২৫ টাকা।

ট্রেনের সময়সূচী
ট্রেন নং নাম বন্ধের দিন হইতে ছাড়ে গন্তব্য
৭৫৩ সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রবিবার ঢাকা ১৪৪০ রাজশাহী
৭৫৯ পদ্মা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ঢাকা ২৩১০ রাজশাহী
৭৬৯ ধূমকেতু এক্সপ্রেস শনিবার ঢাকা ০৬০০ রাজশাহী

খাওয়া দাওয়া সম্পাদনা

রাজশাহীর কালাই-রুটি খুব বিখ্যাত। শহরের বিভিন্ন জায়গাতে এই খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া শহর জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ফাস্ট ফুড ও বাংলা খাবারের রেস্তোরাঁ।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্টেশন বাজারে সিস্টেম এক ধরণের প্যাকেজ খবার পাওয়া যায়। যেখানে ছয় পদের দুপুর বা রাতের খাবার মাত্র ২৫ টাকায় পাওয়া যায়।

কেনাকাটা সম্পাদনা

সাহেব বাজারে কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন দোকানপাট রয়েছে, রাজশাহীর সবচেয়ে বড় মার্কেট আরডিএ এখানেই অবস্থিত। এই মার্কেটে বা এর আশেপাশে কাপড়, ক্রোকারিজ, প্রসাধনীসহ, খেলনাসহ বিভিন্ন ধরণের জিনিস পাওয়া যায়। গনকপাড়া-নিউ মার্কেট সড়কের দুই পাশ দিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম চোখে পড়বে। নিউ মার্কেটের পাশেই সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেট থিম ওমর প্লাজা অবস্থিত। রাজশাহীর বিখ্যাত সিল্ক এর উৎপাদন দেখতে ও কিনতে চাইলে যেতে সপুরায় অবস্থিত বিসিক সিল্ক বাজারে।

রাত্রিযাপন সম্পাদনা

পরবর্তিতে যান সম্পাদনা