বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শহর ও পর্যটন কেন্দ্র
কক্সবাজার জেলা > কক্সবাজার

কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি উল্লেখযোগ্য শহর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত।

অনুধাবন

সম্পাদনা

কক্সবাজার ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দীর্ঘ, যা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।

নামকরণ

সম্পাদনা

কক্সবাজার নামটি এসেছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম থেকে। কক্সবাজারের পূর্বনাম ছিল পালংকি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাংলার গভর্নর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তখন হিরাম কক্স পালংকির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরেরও পুরানো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন, কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই তিনি ১৭৯৯ সালে মারা যান। তাঁর পূর্নবাসন অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর নাম দেয়া হয় কক্স সাহেবের বাজার।

প্রবেশ

সম্পাদনা

আকাশপথে

সম্পাদনা
২০১৬ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দর

ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের সাথে বিমান যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট প্রতিদিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করে।

স্থলপথে

সম্পাদনা

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও বিমান সকল পথেই কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪৪০ কি.মি.। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজার রুটের বাসগুলো ছেড়ে যায়। তবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর, মতিঝিল ও আরামবাগ থেকে অধিকাংশ বাস ছেড়ে যায়।

এই রুটে এসি ও নন-এসি উভয় ধরনের বাস রয়েছে। এই রুটে চলাচলকারী উল্লেখযোগ্য পরিবহনগুলোর মধ্যে রয়েছে – গ্রীন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া, এস.আলম. পরিবহন, মডার্ন লাইন, শাহ বাহাদুর, সেন্টমার্টিন প্রভৃতি।

ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের সাথে এখনো কোনো রেল যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। রেলে করে কক্সবাজার যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে বিভিন্ন পরিবহনের অসংখ্য বাস রয়েছে সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়ার। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৬০ কি.মি.।

রেলপথে

সম্পাদনা

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেনেও যাওয়া যায়। এই রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন চলে। পর্যটক এক্সপ্রেস ঢাকায় প্রতিদিন সকাল ৬:১৫-এ ছাড়ে এবং কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৮:০০-এ ফিরে আসে, সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার। অন্যদিকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস প্রতিদিন রাত ১০:৩০-এ ঢাকায় ছাড়ে এবং দুপুর ১২:৩০-এ কক্সবাজার থেকে ছাড়ে, সাপ্তাহিক ছুটি সোমবার।

ঘুরে দেখুন

সম্পাদনা
মানচিত্র
কক্সবাজারের মানচিত্র

রিকশা করে

সম্পাদনা

সাইকেল-রিক্সা প্রচুর পাওয়া যায়। প্রধান সড়কে হোটেল মোটেল জোন এবং লালদিঘি লেক এলাকার মধ্যে যাতায়াতের খরচ ১২ টাকা, যদিও বিদেশিদের থেকে ভাড়া বেশি আদায়ের চেষ্টা করে থাকে। তারা কমপক্ষে ২০ টাকা চাইবে, ১৫ টাকা একটি মোটামুটি মধ্যম ভাড়া।

কক্সবাজার পরিদৃশ্য
কক্সবাজার পরিদৃশ্য
  • কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষন হচ্ছে সমুদ্র সৈকত। সবচেয়ে জাঁকজমক হচ্ছে লাবনী সমুদ্র সৈকত। পরিষ্কার ঝকঝকে পরিবেশ আর নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। সমুদ্র সৈকতের তীর ঘেষে রয়েছে ইজি চেয়ারে শোবার ব্যবস্থা। চা-কফি-ডাব-মুড়ি-বাদাম সবই পাওয়া যায়। এছাড়া স্পীডবোট, বিচকার, ঘোড়ায় চড়ার ব্যাবস্হা এসব তো রয়েছেই।
এছাড়া একটু দূরে ইনানী সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যও অবশ্যই প্রশংসনীয়। এখানে পানির মধ্যে রয়েছে বড় বড় সব পাথর। ইনানী যাবার পথে দীর্ঘ সি-ড্রাইভ অবশ্যই মুগ্ধ করবে আপনাকে। রাস্তার একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত পুরোটা পথ সঙ্গ দিবে আপনাকে।
ইনানী সমুদ্র সৈকতে যাবার পথেই দেখা মেলে হিমছড়ির, এখানে রয়েছে মনোমুগ্ধকর এক ঝর্না। সিড়ি বেয়ে অনেক উঁচু পাহাড়ে উঠে কক্সবাজারের দৃশ্য দেখার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও এখানে ছোট মার্কেট ও সুন্দর করে সাজানো সমুদ্র সৈকত রয়েছে যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষন।
এই পথেই রয়েছে সামুদ্রিক জীব-জন্তুর জাদুঘর। বেশ কিছু জানা-অজানা জীবিত-মৃত প্রানী রয়েছে তাদের সংরক্ষণে। টিকিট জনপ্রতি ৩০০/-টাকা।
  • রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড, ঝাউতলা আন্তর্জাতিক মানের ফিস অ্যাকুরিয়াম। লোনা পানি ও মিঠা পানির মাছ সহ বিদেশি মাছের সংগ্রহ শালা এটি। এখানে রয়েছে প্রায় ২৫০ প্রজাতির বিরল প্রকৃতির মাছ। যার মধ্যে আছে হাঙ্গর, পাঙ্গাস, থাই সরপুটি, মহাশোল বা গজার, কোরাল, পুঁটি, কুরুমা স্প্রিং, লাল কাঁকড়া, রাইল্যা, কামিলা, বাগদা, গলদা, চিংড়ি, স্টিং রে, আফ্রিকান মাগুর, দেশীয় মাগুর, ফলি, পটকা, ভোল কোরাল, অক্টোপাস, কামিলা, বিদ্যুৎ মাছ, ব্ল্যাক কিং, নীলরঙা ভোল, বাইল্লা, রাজকাঁকড়া, স্টার ফিস, স্টোন ফিস, জেলি ফিস ইত্যাদি। মাছের এই রাজ্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ৩০০ টাকা উইকিপিডিয়ায় রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড
  • মাহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ মন্দির কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বৌদ্ধমন্দির কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স এর পাশে রাখাইন পল্লীতে অবস্থিত। রিক্সা ও ব্যাটারী চালিত গাড়ি যোগে যাওয়া যায়। যাতায়াত ভাড়া প্রায় ৩০-৪০ টাকা।
  • মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বাজার কক্সবাজার সদর উপজেলার পশ্চিমে ৮ কিলোমিটার দূরে বিমান বন্দর সড়কে অবস্থিত। রিক্সা ও ব্যাটারী চালিত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। ভাড়া আনুমানিক ৫০-৬০ টাকা।
  • রাখাইন পাড়া কক্সবাজার সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যাওয়া যায়।
  • চৌফলদণ্ডী-খুরুশকুল সংযোগ সেতু কক্সবাজার শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নে নির্মিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, বাস ও রিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • বার্মিজ মার্কেট কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়।
  • ইনানী সৈকত কক্সবাজার থেকে চান্দের গাড়ি করে এক বা দেড় ঘণ্টার পথ পেরিয়ে যাওা যায় এক সুন্দর সৈকত এ, যেখানে কোরাল পাথরগুলো আর বিভিন্ন আকৃতির শামুক, ঝিনুক হল মূল আকর্ষণ। ইনানী বিচ এ যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। তবে সমস্যা হল পর্যটকদের আগে থেকেই খাবারদাবার সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। যদিও বর্তমানে ইনানী বিচ এ কিছু রিসর্ট বা রেস্তোরাঁ হয়েছে। কিন্তু সেগুলো ব্যয়বহুল হতে পারে অনেকের কাছে।
  • হিমছড়ি ঝর্ণা কক্সবাজার থেকে ১২ কিমি দক্ষিনে অবস্থিত এই প্রাকৃতিক ঝর্না অনেককেই আকর্ষণ করে থাকে। শীতকালে যদিও এ ঝর্নার পানি কমে যায়। আর দুঃখের কথা এই যে, বর্তমানে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় সেখানে ময়লার ভাগাড় হয়ে গিয়েছে।

খাওয়া দাওয়া

সম্পাদনা

প্রায় প্রতিটি আবাসিক হোটেল বা হোটেলের সন্নিকটে রেস্তোরাঁ বা খাবার হোটেল রয়েছে। কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ থাকে সাগরের বিভিন্ন মাছের মেন্যুর প্রতি। বিশেষ করে চিংড়ি, রূপচাঁদা, লাইট্যা, ছুরি মাছসহ মজাদার শুটকি মাছের ভর্তার প্রতিই পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি থাকে। খাবারের মেন্যু অনুযায়ী একে রেস্তোরাঁতে একেক ধরনের মূল্য তালিকা দেখা যায়। তবে বর্তমানে সরকার নির্ধারিত কিছু কিছু তালিকা ভোজন রসিকদের আশ্বস্ত করেছে। মোটামুটি ১০-৫০০ টাকার মধ্যে সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী মজাদার খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। তবে খাবার গ্রহণের পূর্বে খাবারের নাম, মূল্য এবং তৈরির সময় সম্পর্কে জেনে নিন। প্রয়োজনে খাদ্যের তালিকা ও মূল্য টুকে রাখুন। তালিকা সঙ্গে মিলিয়ে বিল প্রদান করুন।

রাত্রিযাপন

সম্পাদনা
  • 1 সিগাল হোটেল, হোটেল মোটেল জোন আগমন: ১৪০০, প্রস্থান: ১২০০ ৩০০০ টাকা