উজবেকিস্তান মধ্য এশিয়ার একটি প্রজাতন্ত্র। এর পশ্চিম ও উত্তরে কাজাকিস্তান, পূর্বে কিরগিজস্তান, দক্ষিণ-পূর্বে তাজিকিস্তান, এবং দক্ষিণে আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান। উজবেকিস্তানের পশ্চিম অংশে দেশটির প্রায় ৩৭% এলাকা নিয়ে স্বায়ত্বশাসিত কোরাকালপোগ প্রজাতন্ত্র অবস্থিত। উজবেকিস্তানের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তাশখন্দ দেশটির রাজধানী শহর এবং শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। উজবেকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ উজবেক জাতির লোক।
শহর
সম্পাদনা- তাশখন্দ
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাভূগোল
সম্পাদনাউজবেকিস্তানের ৮০% এলাকা সমতল মরুভূমি। দেশের পূর্বভাগে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতমালা যেগুলি ৪,৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উঠে গেছে। উজবেকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত তিয়ান শান পর্বতমালার পশ্চিম পাদদেশ নিয়ে গঠিত। উজবেকিস্তানের উত্তরের নিম্নভূমি কিজিল কুম নামের এক বিশাল মরুভূমি, যা দক্ষিণ কাজাকিস্তানেও প্রসারিত হয়েছে। ফের্গানা উপত্যকা উজবেকিস্তানের সবচেয়ে উর্বর অঞ্চল; এটি কিজিল কুম মরুভূমির ঠিক পূর্বে অবস্থিত এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। সির দরিয়া নদী এই অঞ্চলটিকে কিজিল কুম মরুভূমি থেকে পৃথক করেছে। আমু দরিয়া অপর গুরুত্বপূর্ণ নদী। উজবেকিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। ১৯৬৬ সালে এমনই এক ভূমিকম্পে রাজধানী তাশখন্দের বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
ইতিহাস
সম্পাদনারুশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বর্তমান উজবেকিস্তান বুখারা আমিরাত, খিভা খানাত এবং কোকান্দ খানাতের মধ্যে বিভক্ত ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে উজবেকিস্তান রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। এসময় প্রচুরসংখ্যক রুশ এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। ১৯১২ সালের হিসাব অণুযায়ী, জারশাসিত উজবেকিস্তানে বসবাসকারী রুশদের সংখ্যা ছিল ২,১০,৩০৬ জন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে রুশ কর্তৃপক্ষ উজবেকিস্তানসহ কেন্দ্রীয় এশিয়া থেকে সৈন্য সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা চালালে এ অঞ্চলব্যাপী বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় জারতন্ত্রের পতন ঘটে এবং রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এমতাবস্থায় রুশ সরকার উজবেকিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
১৯২০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় এশিয়ায় রুশ কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, এবং কিছু প্রতিরোধ সত্ত্বেও উজবেকিস্তানসহ সমগ্র মধ্য এশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯২৪ সালের ২৭ অক্টোবর উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হিটলারের নেতৃত্বাধীন জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে ১৪,৩৩,২৩০ জন উজবেক সৈন্য সোভিয়েত রেড আর্মির পক্ষে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়। ২,৬৩,০০৫ জন উজবেক সৈন্য যুদ্ধ চলাকালে নিহত হন এবং ৩২,৬৭০ জন নিখোঁজ হন।
১৯৯১ সালের ৩১ আগস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকালে উজবেকিস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১ সেপ্টেম্বরকে উজবেকিস্তানের জাতীয় স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়।
ভাষা
সম্পাদনাউজবেকিস্তানের প্রধান ভাষা হল উজবেক ভাষা (উত্তর উপভাষাটি)। এতে উজবেকিস্তানের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোক কথা বলেন। প্রায় ১৪% লোক রুশ ভাষায় এবং প্রায় ৪% লোক তাজিকি ভাষায় কথা বলেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে থেকে আগত অনেকগুলি ভাষা, যেমন তুর্কমেন, কাজাক ওকিরঘিজ ভাষা এখানে প্রচলিত। উজবেক ভাষা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আরবি লিপিতে লেখা হত। সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হবার পর লেনিনের অধীনে এটি লাতিন লিপিতে লেখা শুরু হয়। কিন্তু স্তালিন ক্ষমতা দখলের পর ১৯৪০-এর দশক থেকে এটি সিরিলীয় লিপিতে লেখা হতে থাকে। ১৯৯১ সালে উজবেকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলে প্রাক্তন সোভিয়েত দেশগুলির থেকে রাষ্ট্রীয় স্বাতন্ত্র্য্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উজবেক সরকার ১৯৯৩ সালে উজবেক ভাষা সরকারিভাবে আবার লাতিন লিপিতে লেখার আদেশ জারি করে। উজবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ধাপে ধাপে এই লিপি সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয় এবং ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি এই সংস্কার সম্পূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এই লিপি সংস্কার সিরিলীয় লিপিতে অভ্যস্ত বয়স্ক ও প্রবাসী উজবেকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাছাড়া এতে দেশটির নবীন প্রজন্মের সিরিলীয় লিপিতে লেখা ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
খাদ্য
সম্পাদনাউজবেকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে শস্যের চাষ হয়। তাই রুটি এবং নুডলস গুরুত্বপূর্ণ এবং উজবেক রন্ধনশৈলীকে "নুডলসে সমৃদ্ধ" হিসাবে উল্লেখ করা হয। দেশে প্রচুর পরিমাণে ভেড়া থাকায় মাটন খুব জনপ্রিয় মাংস এবং এটি বিভিন্ন উজবেক খাবারের একটি অংশ।
উজবেকিস্তান এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পদ হল পালোভ (প্লোভ বা ওশ বা "পিলাফ"), একটি প্রধান খাবার যা চাল, টুকরা মাংস, কোঁচানো গাজর এবং পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত একটি কাজান (বা দেঘি) তে খোলা আগুনে তৈরি করা হয়। বৈচিত্র্যের জন্য বিভিন্ন ফল যোগ করা হয়। অতিথি ও পরিবারের জন্য ঘরে এটা প্রায়ই প্রস্তুত করা হয়। তবে পালভ বিশেষ অনুষ্ঠানগুলিতে ওশফাজ বা ওশ মাস্টার শেফ দ্বারা তৈরি করা হয়। ওশ পাচক খোলা আগুনে এই জাতীয় খাবারটি রান্না করেন। ছুটির দিনে কিংবা অনুষ্ঠান যেমন বিবাহ অনুষ্ঠানে এক পাত্র বা হাঁড়িতে প্রায় ১০০০ জনের জন্য একত্রে রান্না করা হয়। ওশি নাহর বা সকালের প্লভ খুব সকালে (৬ টা থেকে ৯ টার মধ্যে) পরিবেশন করা হয় যা একটি চলমান বিবাহের অংশ।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে: শরপা (শুরভা বা শোরভা), চর্বিযুক্ত মাংস (সাধারণত মাটন দিয়ে তৈরী) এবং তাজা শাকসব্জি দিয়ে তৈরী স্যুপ, নরেন এবং ল্যাগম্যান, নুডল-ভিত্তিক খাবার যা একটি স্যুপ বা একটি প্রধান কোর্স হিসাবে পরিবেশিত হয়; ম্যান্টি (কাস্কোনি নামেও পরিচিত), চুচভাড়া এবং সোমসা, হজমীকারক হিসেবে মূল খাবারের সঙ্গে পরিবেশিত; ডিমলামা (একটি মাংস এবং উদ্ভিজ্জ স্ট্যু) এবং বিভিন্ন কাবাব, সাধারণত যা প্রধান কোর্স হিসেবে পরিবেশিত হয়।